শ্রম আইন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''শ্রম আইন''' | '''শ্রম আইন''' শ্রমিক নিয়োগ, শ্রমিকের মজুরি, কাজের পরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আইন। কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, মাতৃত্ব সুবিধা, কোম্পানির মুনাফাতে শ্রমিকের অংশীদারিত্ব এবং এধরনের অন্যান্য বিষয় পরিচালনার সামাজিক আইনও শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত। এসব আইনি দলিলপত্রের অধিকাংশই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ করে। | ||
মধ্য-উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারত উপমহাদেশে ফ্যাক্টরি ও শিল্পকারখানার বিকাশ ও বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে শহর এলাকায় অবস্থিত ফ্যাক্টরি ও মিলসমূহে ধীরে ধীরে গ্রামীণ এলাকা থেকে শ্রমশক্তির অভিবাসন ঘটে। সে সময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ বা শ্রমিকদের কোনো সংগঠনের অনুপস্থিতির কারণে নিয়োগকর্তারা তাদের | মধ্য-উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারত উপমহাদেশে ফ্যাক্টরি ও শিল্পকারখানার বিকাশ ও বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে শহর এলাকায় অবস্থিত ফ্যাক্টরি ও মিলসমূহে ধীরে ধীরে গ্রামীণ এলাকা থেকে শ্রমশক্তির অভিবাসন ঘটে। সে সময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ বা শ্রমিকদের কোনো সংগঠনের অনুপস্থিতির কারণে নিয়োগকর্তারা তাদের কর্মচারিদের প্রয়োজনের প্রতি তেমন একটা মনোযোগী ছিলেন না; শ্রমিকদের নিয়োগের অসন্তোষজনক শর্ত ছাড়াও কর্ম-সময় ছিল অনেক বেশি, মজুরি ছিল জীবনযাত্রা নির্বাহের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। এ অবস্থায় ১৮৮১ সাল থেকে কিছু আইন প্রণয়নের সূত্রপাত হয়। সেগুলির মধ্যে ছিল ফ্যাক্টরি আইন (১৮৮১), শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আইন (১৯২৩), ট্রেড ইউনিয়ন আইন (১৯২৬), শ্রম বিরোধ আইন (১৯২৯), মজুরি প্রদান আইন (১৯৩৬), মাতৃত্ব সুবিধা আইন (১৯৩৯) এবং শিশু নিয়োগ আইন (১৯৩৮)। | ||
১৯৪৭ সালের পর পরিবর্তিত চাহিদার মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকার প্রশাসনিক আইনের আদলে এসব আইনের অধিকাংশই পরিমার্জন ও সংশোধন করে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে জারিকৃত এডপটেশন অফ বাংলাদেশ ল’জ অর্ডার (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৮) অনুসারে স্বাধীন বাংলাদেশেও এসব আইনের অধিকাংশই বহাল রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। | ১৯৪৭ সালের পর পরিবর্তিত চাহিদার মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকার প্রশাসনিক আইনের আদলে এসব আইনের অধিকাংশই পরিমার্জন ও সংশোধন করে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে জারিকৃত এডপটেশন অফ বাংলাদেশ ল’জ অর্ডার (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৮) অনুসারে স্বাধীন বাংলাদেশেও এসব আইনের অধিকাংশই বহাল রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৬ সালে সরকার এসবের অধিকাংশ আইনকে একত্রে সংকলিত করে শ্রম আইন ২০০৬ প্রণয়ন করে। এ আইনের একটি সংক্ষিপ্ত বিষয়ভিত্তিক বিবরণ নিম্নরূপ: | ||
''''' | '''''প্রতিষ্ঠান এবং কর্মঘণ্টা''''' ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী, ‘প্রতিষ্ঠান’ অর্থ কোনো দোকান, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়ি-ঘর বা আঙ্গিনা যেখানে কোনো শিল্প পরিচালনার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। এছাড়াকোনো ধরণের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২০০৬ সালের আইন প্রযোজ্য হবে না, তার একটি সূচিও এ আইনে দেয়া আছে। ২০০৬ সালের আইনে শ্রমিকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত বিধানাবলি আছে, সেই সাথে নারী এবং কিশোর শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বিধান আছে। এ আইনে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। কারখানায় শিশুদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধ আছে, এমনকি যদি তা মৌসুমি শ্রমিকও হয়ে থাকে। সাধারণ শ্রম ঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত শ্রমের জন্য সাধারণ মজুরির দ্বিগুণ হারে মজুরি দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারিত হবে যেন কোনো শ্রমিক একনাগাঢ়ে ছয় ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না, এবং সেক্ষেত্রে অন্তত এক ঘনতার বিরতি নেবেন, অথবা একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না এবং সেক্ষেত্রে তিনি অন্তত আধা ঘণ্টা বা তার বেশি বিরতি নেবেন। কর্মবিরতিসহ কর্মঘন্টার মোট সময় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাপ্ত হতে পারে। দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে ১.৫ (দেড়) দিনের এবং শিল্প-কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিক সপ্তাহে ১ (এক) দিনের ছুটি পাবেন। এছাড়া সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে তারা একটানা ২৪ ঘণ্টার একদিনের ছুটি পাবেন, এবং এর জন্য তার মজুরি কর্তন করা যাবে না। | ||
এ আইনে নির্ধারিত সময়সীমার অতিরিক্ত শ্রম দিলে সেক্ষেত্রে শ্রমিককে তার নির্ধারিত মজুরির দ্বিগুণ হারে মজুরি, খোরাকি ভাতা এবং খণ্ডকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা (যদি প্রযোজ্য হয়) দিতে হবে। | |||
১৯২৩ সালের খনি আইন খনিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। খনির | প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক সাধারণত এক সপ্তাহে ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। প্রাপ্ত বয়স্ক যদি শ্রমিক সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার মোট কর্মঘণ্টা সপ্তাহে ৬০ (ষাট) ঘণ্টার বেশি হবে না, এবং বৎসরে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৫৬ (ছাপ্পান্ন) ঘণ্টার বেশি হবে না। উপরন্তু,কোনো সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরতকোনো শ্রমিকের সর্বমোট অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা বৎসরে একশত পঞ্চাশ ঘণ্টার অধিক হবে না। বিশেষ বিশেষ শিল্পের ক্ষেত্রে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা আরোপিত শর্তে, এ ধারার বিধান শিথিল করতে অথবা এককালীন সর্বোচ্চ ছয় মাস মেয়াদের জন্য অব্যাহতি দিতে পারবে যদি সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, জনস্বার্থে/অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এমন শিথিল/অব্যাহতি প্রয়োজন। | ||
কর্ম ঘণ্টার ক্ষেত্রে শ্রম আইন ছাড়াও অন্যান্য আইন ও বিশেষ বিধান রয়েছে। ১৯২৩ সালের খনি আইন খনিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। খনির উপরি অংশে নিয়োজিত শ্রমিকদের শ্রম-ঘণ্টা দৈনিক দশ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে পঞ্চাশ ঘণ্টা। বিশ্রামের বিরতিসহ যেকোন দিন শ্রম-কাল দৈনিক বারো ঘণ্টার অধিক হবে না। ভূগর্ভে নিয়োজিত শ্রমিকের শ্রম-ঘণ্টা দৈনিক নয় ঘণ্টার মধ্যে সীমিত। এ আইনে অতিরিক্ত শ্রম-ঘণ্টার বিধান নেই। খনিতে কোনো শ্রমিকই সপ্তাহে ছয় দিনের বেশি কাজ করবে না। এ আইনে সাপ্তাহিক অবকাশ-দিনে মজুরির বিধান নেই। | |||
১৯৮৩ সালের মোটর গাড়ি অধ্যাদেশ অনুযায়ী মোটর গাড়ি চালকের শ্রম-কাল সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টা এবং দৈনিক ৯ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রমের অনুমোদন আছে। পাঁচ ঘণ্টা কাজের জন্য অন্ততঃপক্ষে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম বিরতির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৬১ সালের সড়ক পরিবহন অধ্যাদেশে সড়ক পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির আরও শর্ত যুক্ত করা হয়েছে; ১৯৬২ সালের সড়ক পরিবহন উপবিধি দ্বারা সেগুলি সম্পূরণ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকের বয়সসীমা, শ্রম-ঘণ্টা ও বিশ্রাম, অবকাশ এবং চাকুরির অন্যান্য শর্তের বিধান রয়েছে। এই অধ্যাদেশ মোতাবেক গাড়ি চালক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে বয়স আঠারো বছর পার হলেই কেবল কোনো সড়ক পরিবহন কাজে নিয়োগ করা যাবে এবং গাড়ি চালকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা আছে। ১৯৮৩ সালের দি মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৯২ সালের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন আইনে (নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ) নৌপরিবহন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির শর্তের বিধান রয়েছে। | ১৯৮৩ সালের মোটর গাড়ি অধ্যাদেশ অনুযায়ী মোটর গাড়ি চালকের শ্রম-কাল সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টা এবং দৈনিক ৯ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রমের অনুমোদন আছে। পাঁচ ঘণ্টা কাজের জন্য অন্ততঃপক্ষে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম বিরতির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৬১ সালের সড়ক পরিবহন অধ্যাদেশে সড়ক পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির আরও শর্ত যুক্ত করা হয়েছে; ১৯৬২ সালের সড়ক পরিবহন উপবিধি দ্বারা সেগুলি সম্পূরণ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকের বয়সসীমা, শ্রম-ঘণ্টা ও বিশ্রাম, অবকাশ এবং চাকুরির অন্যান্য শর্তের বিধান রয়েছে। এই অধ্যাদেশ মোতাবেক গাড়ি চালক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে বয়স আঠারো বছর পার হলেই কেবল কোনো সড়ক পরিবহন কাজে নিয়োগ করা যাবে এবং গাড়ি চালকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা আছে। ১৯৮৩ সালের দি মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৯২ সালের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন আইনে (নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ) নৌপরিবহন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির শর্তের বিধান রয়েছে। | ||
১৮৯০ সালের রেলপথ আইনের ৬-ক অধ্যায় মোতাবেক রেলপথ শ্রমিকরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত; যথা বিরামহীন এবং আবশ্যিকভাবে সবিরাম। প্রথমোক্ত শ্রেণীর শ্রমিকরা যেকোন সপ্তাহে দৈনিক আট ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে এবং সপ্তাহে সবেতন কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ছুটির অনুমোদন আছে। অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার জন্য সাধারণ হারের | ১৮৯০ সালের রেলপথ আইনের ৬-ক অধ্যায় মোতাবেক রেলপথ শ্রমিকরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত; যথা বিরামহীন এবং আবশ্যিকভাবে সবিরাম। প্রথমোক্ত শ্রেণীর শ্রমিকরা যেকোন সপ্তাহে দৈনিক আট ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে এবং সপ্তাহে সবেতন কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ছুটির অনুমোদন আছে। অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার জন্য সাধারণ হারের ১.২৫% কম মজুরি পাবে না। | ||
আকাশ পরিবহন কর্মচারিদের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই। ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন দ্বারা তাদের চাকুরি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সে মোতাবেক চাকুরি বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। | |||
'''''তরুণ শ্রমিক''''' ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের কিশোর শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ১২ বছর পুর্ণ হয়েছে এমন শিশুকে ক্ষেত্রবিশেষে এমন কাজে নিযুক্ত করা যাবে যেখানে তার স্বাস্থ্য বা বিকাশের ঝুঁকি নেই এবং তার শিক্ষার ব্যাঘাত হবে না। কিশোর শ্রমিকেরাকোনো কারখানা বা খনিতে দিনে পাঁচ এবং সপ্তাহে ৩০ (ত্রিশ) ঘণ্টার অধিক কাজ করবে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিশোর শ্রমিক দিনে ৭ (সাত) এবং সপ্তাহে ৪২ (বিয়াল্লিশ) ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। যেকোন প্রতিষ্ঠানে কিশোর শ্রমিক সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা থেকে সকাল ৭ ঘটিকার মধ্যে কাজ করবে না। কিশোর শ্রমিক ওভারটাইম করলে অভারটাইমসহ মোট কর্মঘণ্টা কারখানা বা খনির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩৬ (ছত্রিশ) ঘণ্টার বেশি হবে না, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার বেশি হবে না। কোনো নারী শ্রমিক তার বিনা সম্মতিতে রাত ১০ ঘটিকা থেকে ভোর ৬ ঘটিকার মধ্যে কাজ করবেন না। | |||
'''''নারী শ্রমিক''''' নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকের কর্মঘন্টার তারতম্য নেই। তবে তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো নারী শ্রমিকে রাত ১০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭ ঘটিকার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। নারী শ্রমিকেরা মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং ভাতা পাবেন প্রসবের পূর্বে ও পরে ৮ সপ্তাহ। দুজন সন্তান পর্যন্ত মাতৃত্ব ভাতা দেয়া হয়। নারী শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনিকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। নারী শ্রমিকের প্রসবের ৬ মাস পূর্বে বা প্রসবপরবর্তী ৮ সপ্তাহের মধ্যে মালিক যথাযথ কারণ ছারা ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অপসারণ বা চাকুরিচ্যুতির নোটিশ দিলে ঐ নারী শ্রমিক তার মাতৃত্বভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন না। | |||
'''''ছুটি''''' প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরিতে দশ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পাবেন।কোনো কারণে এই ছুটি তিনি ভোগ না করলে তা জমা থাকবে না এবং এক বৎসরের ছুটি পরবর্তী বৎসর ভোগ করা যাবে না। এসব নিয়ম চা-বাগানে নিযুক্ত শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। সংবাদপত্র শ্রমিক ব্যতীত প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরিতে চৌদ্দ দিনের পীড়া ছুটি পাবেন। সংবাদ পত্র শ্রমিক তাঁর চাকুরির অন্যূন ১/৮ সময় অর্ধ-মজুরিতে পীড়া-ছুটি হিসেবে পাবেন। | |||
কোন প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে এক বৎসর চাকুরি পূর্ণ করেছেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিককে পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে মজুরিসহ নিম্নবর্ণিত হারে ছুটি মঞ্জুর করতে হবে, যথা: (ক) দোকান, ব্যবসায়িক, শিল্প প্রতিষ্ঠান,কারখানা অথবা সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন; (খ) চা বাগানের ক্ষেত্রে প্রতি ২২ দিন কাজের জন্য একদিন; (গ) সংবাদপত্র শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রতি ১১ দিন কাজের জন্য একদিন। | |||
এছাড়া, অবিচ্ছিন্নভাবে এক বৎসর চাকুরি পূর্ণ করা প্রত্যেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিককে পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে মজুরিসহ নিম্নবর্ণিত হারে ছুটি মঞ্জুর করতে হবে; যথা: (ক) কারখানার ক্ষেত্রে, প্রতি ১৫ দিন কাজের জন্য একদিন; (খ) চা-বাগানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন; গ) দোকান, বাণিজ্য অথবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৪ দিনের জন্য একদিন। প্রতি শ্রমিক এক পঞ্জিকা বৎসরে মজুরিসহ ১১ দিনের উৎসব ছুটি পাবেন। | |||
''''' | '''''বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বিরোধ নিষ্পতি''''' বর্তমানে ২০০৬ সালের আইন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিধানাবলি দিয়েছে। নানারকম বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির পন্থা নির্ধারণ করে থাকে। বাণিজ্যিক বিরোধের সাথে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে এমন বিরোধের নিষ্পত্তি শ্রম আদালতে হওয়া জরুরি এবং তা হবে শ্রম ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিক ও মালিকের আস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে। | ||
কর্মক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখতে শ্রম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া আদালতের বাহিরে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি (Collective Bargaining Agent) বিশেষ ভূমিকা রাখেন। | |||
আদালত এবং আদালত বহির্ভূত উভয় পদ্ধতিতে শিল্প বিরোধের নিষ্পত্তি হতে পারে। এই আইনের ১৪শ অধ্যায়ের বিধান মোতাবেককোনো মালিক অথবা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি উত্থাপন না করলেকোনো শিল্প বিরোধ আছে বলে গণ্য হবে না। গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রম আদালত স্থাপন করতে পারে। কোনো জেলায় একাধিক শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার প্রতি আদালতের এখতিয়ার নির্ধারণ করে দেবে৷ কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজদের মধ্যে থেকে সরকার শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবে। শ্রম আদালতের ২ জন সদস্যের মধ্যে একজন মালিকের এবং অপরজন শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অপরাধ বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রম আদালত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করবে৷ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ন্যস্ত সকল ক্ষমতা শ্রম আদালতেরও থাকবে৷ এছাড়া শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতের ক্ষমতা সেশন আদালতের সমতুল্য হবে। শ্রম আদালতের সিদ্ধান্ত, রোয়েদা, দণ্ড বা রায়ে সংক্ষুব্ধ বোধ করলে যেকোন পক্ষ সেই রায় প্রদানের ষাট দিনের মধ্যে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপীল দায়ের করতে পারবেন। তবে আপীলের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে৷ | |||
'''''কর্মপরিবেশ''''' অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিকাশের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী নীতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন শ্রম আইনে তুলনামূলকভাবে একটি নতুন ধারণা। দোকান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারি নিয়োগের বিধিবিধান প্রসঙ্গে বলতে গেলে কোনো আইনি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ১৯৪৬ সালের শিল্প নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন প্রথমবারের মতো কার্যকর হতে থাকে যখন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন বা ততোধিক কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ আইনে বিধিবদ্ধ স্থায়ী আদেশের সঙ্গে সংগতি রেখে নিয়োগের শর্তাবলি প্রয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯২৩ সালের মার্চেন্ট শিপিং অ্যাক্ট চাকুরির শর্ত অনুসারে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে চুক্তির ব্যবস্থা চালু করে। ১৯৮৩ সালের মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি বদলানো হয়েছে। ১৯৪৬ সালের শিল্প নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের স্থলে ১৯৬০ সালে কার্যকর হয় শিল্প ও বাণিজ্যিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) অধ্যাদেশ। এ আইনটিও ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের মাধ্যমে বদলানো হয়। বর্তমানে, ২০০৬ সালের আইন লে-অফ, ছাঁটাই, অসদাচরণ, চাকুরি থেকে ডিসচার্জ, বরখাস্ত, প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। আইন অনুযায়ী, আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিপর্যয় বা জরুরি প্রয়োজনে মালিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন। | |||
''''' | '''''মজুরি''''' বলতে চাকুরির পারিশ্রমিক, নিয়োগের শর্ত মোতাবেক প্রদেয়কোনো বোনাস, অন্যকোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক; ছুটি, বন্ধ অথবা অধিকাল কর্মের জন্য প্রদেয়কোনো পারিশ্রমিক;কোনো আদালতের আদেশ বা নিষ্পত্তির অধীনে প্রদেয়কোনো পারিশ্রমিক; চাকুরির অবসান, ছাঁটাই, ডিসচার্জ, অপসারণ, পদত্যাগ, অবসর, বরখাস্ত এসব ক্ষেত্রে কোনো চুক্তি বা এই আইনের অধীন প্রদেয়কোনো অর্থ; এবং লে-অফ অথবা সাময়িক বরখাসতের কারণে প্রদেয়কোনো অর্থ বোঝায়। সরকার মজুরি নিশ্চিতের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করবে।কোনো শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী হার স্থির করা প্রয়োজন এবং যুক্তিসংগত বোধ করলে সরকার মজুরি বোর্ডকে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে ওই শ্রমিকশ্রেণির জন্য নিম্নতম মজুরি হার সুপারিশ করার নির্দেশ দেবে। | ||
সামাজিক নিরাপত্তা চাকুরি চলাকালে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে যদিকোনো শ্রমিক শরীরে জখমপ্রাপ্ত হন তাহলে মালিক আইনের বিধান অনুযায়ী তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। জখম বা মৃত্যর ক্ষেত্রে প্রদেয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২০০৬ সালের আইনের তফসিলে বর্ণিত হয়েছে। | |||
নিম্নলিখিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠনের মুনাফার অংশের দাবিদার হবেন: (ক) বছরের শেষ দিন প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্যূন এক কোটি টাকা; অথবা (খ) হিসাব বছরের শেষ দিন স্থায়ী সম্পদের মূল্য অন্যূন দুই কোটি টাকা। এমন প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক অংশগ্রহণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন করবে। | |||
২০০৬ সালের শ্রম আইন শ্রমিকদের জন্য নানারকম কল্যাণমূলক ব্যবস্থার বিধান রেখেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের জন্য আবাসন সুবিধা, চাবাগানের শ্রমিকদের জন্য বিনোদনমূলক ও শিক্ষা সুবিধা, চাবাগানে আবাসন সুবিধা, সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা পরিচর্যা, যেসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক কর্মরত আছেন সেখানে বাধ্যতামূলক গ্রুপবীমা চালুকরণ প্রভৃতি। | |||
[ | '''''রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা''''' (ইপিজেড) ইপিজেডে কর্মরত অনেক শ্রমিক ২০০৬ সালের আইনের এখতিয়ারে আসেন না। এক্ষেত্রে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৮০ প্রযোজ্য হবে যার অধীনে সরকার চাইলে এসব এলাকা কিছু কিছু আইনের প্রয়োগ রদ করতে পারেন। [নির্মলেন্দু ধর] | ||
[[en:Labour Law]] | [[en:Labour Law]] |
১৬:২১, ১৬ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
শ্রম আইন শ্রমিক নিয়োগ, শ্রমিকের মজুরি, কাজের পরিবেশ, ট্রেড ইউনিয়ন এবং শ্রম ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত আইন। কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ, ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ, মাতৃত্ব সুবিধা, কোম্পানির মুনাফাতে শ্রমিকের অংশীদারিত্ব এবং এধরনের অন্যান্য বিষয় পরিচালনার সামাজিক আইনও শ্রম আইনের অন্তর্ভুক্ত। এসব আইনি দলিলপত্রের অধিকাংশই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার ও দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ করে।
মধ্য-উনিশ শতকের গোড়ার দিকে ভারত উপমহাদেশে ফ্যাক্টরি ও শিল্পকারখানার বিকাশ ও বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। এর ফলে প্রাথমিকভাবে শহর এলাকায় অবস্থিত ফ্যাক্টরি ও মিলসমূহে ধীরে ধীরে গ্রামীণ এলাকা থেকে শ্রমশক্তির অভিবাসন ঘটে। সে সময়ে রাষ্ট্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ বা শ্রমিকদের কোনো সংগঠনের অনুপস্থিতির কারণে নিয়োগকর্তারা তাদের কর্মচারিদের প্রয়োজনের প্রতি তেমন একটা মনোযোগী ছিলেন না; শ্রমিকদের নিয়োগের অসন্তোষজনক শর্ত ছাড়াও কর্ম-সময় ছিল অনেক বেশি, মজুরি ছিল জীবনযাত্রা নির্বাহের ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। এ অবস্থায় ১৮৮১ সাল থেকে কিছু আইন প্রণয়নের সূত্রপাত হয়। সেগুলির মধ্যে ছিল ফ্যাক্টরি আইন (১৮৮১), শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ আইন (১৯২৩), ট্রেড ইউনিয়ন আইন (১৯২৬), শ্রম বিরোধ আইন (১৯২৯), মজুরি প্রদান আইন (১৯৩৬), মাতৃত্ব সুবিধা আইন (১৯৩৯) এবং শিশু নিয়োগ আইন (১৯৩৮)।
১৯৪৭ সালের পর পরিবর্তিত চাহিদার মোকাবেলায় পাকিস্তান সরকার প্রশাসনিক আইনের আদলে এসব আইনের অধিকাংশই পরিমার্জন ও সংশোধন করে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭২ সালের প্রথমদিকে জারিকৃত এডপটেশন অফ বাংলাদেশ ল’জ অর্ডার (রাষ্ট্রপতির আদেশ নং ৪৮) অনুসারে স্বাধীন বাংলাদেশেও এসব আইনের অধিকাংশই বহাল রাখার সরকারি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৬ সালে সরকার এসবের অধিকাংশ আইনকে একত্রে সংকলিত করে শ্রম আইন ২০০৬ প্রণয়ন করে। এ আইনের একটি সংক্ষিপ্ত বিষয়ভিত্তিক বিবরণ নিম্নরূপ:
প্রতিষ্ঠান এবং কর্মঘণ্টা ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী, ‘প্রতিষ্ঠান’ অর্থ কোনো দোকান, বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান, পরিবহন, শিল্প প্রতিষ্ঠান অথবা বাড়ি-ঘর বা আঙ্গিনা যেখানে কোনো শিল্প পরিচালনার জন্য শ্রমিক নিয়োগ করা হয়। এছাড়াকোনো ধরণের প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ২০০৬ সালের আইন প্রযোজ্য হবে না, তার একটি সূচিও এ আইনে দেয়া আছে। ২০০৬ সালের আইনে শ্রমিকের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা সংক্রান্ত বিধানাবলি আছে, সেই সাথে নারী এবং কিশোর শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বিধান আছে। এ আইনে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ। কারখানায় শিশুদের নিয়োগের ক্ষেত্রে নিষেধ আছে, এমনকি যদি তা মৌসুমি শ্রমিকও হয়ে থাকে। সাধারণ শ্রম ঘণ্টার বাইরে অতিরিক্ত শ্রমের জন্য সাধারণ মজুরির দ্বিগুণ হারে মজুরি দিতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিকের কাজের সময় এমনভাবে নির্ধারিত হবে যেন কোনো শ্রমিক একনাগাঢ়ে ছয় ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না, এবং সেক্ষেত্রে অন্তত এক ঘনতার বিরতি নেবেন, অথবা একটানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না এবং সেক্ষেত্রে তিনি অন্তত আধা ঘণ্টা বা তার বেশি বিরতি নেবেন। কর্মবিরতিসহ কর্মঘন্টার মোট সময় ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যাপ্ত হতে পারে। দোকান বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত শ্রমিক প্রতি সপ্তাহে ১.৫ (দেড়) দিনের এবং শিল্প-কারখানায় নিযুক্ত শ্রমিক সপ্তাহে ১ (এক) দিনের ছুটি পাবেন। এছাড়া সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে তারা একটানা ২৪ ঘণ্টার একদিনের ছুটি পাবেন, এবং এর জন্য তার মজুরি কর্তন করা যাবে না।
এ আইনে নির্ধারিত সময়সীমার অতিরিক্ত শ্রম দিলে সেক্ষেত্রে শ্রমিককে তার নির্ধারিত মজুরির দ্বিগুণ হারে মজুরি, খোরাকি ভাতা এবং খণ্ডকালীন বা অন্তর্বর্তীকালীন ভাতা (যদি প্রযোজ্য হয়) দিতে হবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক সাধারণত এক সপ্তাহে ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার বেশি কাজ করবেন না। প্রাপ্ত বয়স্ক যদি শ্রমিক সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করেন, সেক্ষেত্রে অবশ্যই তার মোট কর্মঘণ্টা সপ্তাহে ৬০ (ষাট) ঘণ্টার বেশি হবে না, এবং বৎসরে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৫৬ (ছাপ্পান্ন) ঘণ্টার বেশি হবে না। উপরন্তু,কোনো সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরতকোনো শ্রমিকের সর্বমোট অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা বৎসরে একশত পঞ্চাশ ঘণ্টার অধিক হবে না। বিশেষ বিশেষ শিল্পের ক্ষেত্রে, সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা আরোপিত শর্তে, এ ধারার বিধান শিথিল করতে অথবা এককালীন সর্বোচ্চ ছয় মাস মেয়াদের জন্য অব্যাহতি দিতে পারবে যদি সরকার এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, জনস্বার্থে/অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এমন শিথিল/অব্যাহতি প্রয়োজন।
কর্ম ঘণ্টার ক্ষেত্রে শ্রম আইন ছাড়াও অন্যান্য আইন ও বিশেষ বিধান রয়েছে। ১৯২৩ সালের খনি আইন খনিতে নিয়োজিত শ্রমিকদের জন্য প্রযোজ্য। খনির উপরি অংশে নিয়োজিত শ্রমিকদের শ্রম-ঘণ্টা দৈনিক দশ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে পঞ্চাশ ঘণ্টা। বিশ্রামের বিরতিসহ যেকোন দিন শ্রম-কাল দৈনিক বারো ঘণ্টার অধিক হবে না। ভূগর্ভে নিয়োজিত শ্রমিকের শ্রম-ঘণ্টা দৈনিক নয় ঘণ্টার মধ্যে সীমিত। এ আইনে অতিরিক্ত শ্রম-ঘণ্টার বিধান নেই। খনিতে কোনো শ্রমিকই সপ্তাহে ছয় দিনের বেশি কাজ করবে না। এ আইনে সাপ্তাহিক অবকাশ-দিনে মজুরির বিধান নেই।
১৯৮৩ সালের মোটর গাড়ি অধ্যাদেশ অনুযায়ী মোটর গাড়ি চালকের শ্রম-কাল সপ্তাহে ৫৪ ঘণ্টা এবং দৈনিক ৯ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত রাখা হয়েছে। নির্দিষ্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রমের অনুমোদন আছে। পাঁচ ঘণ্টা কাজের জন্য অন্ততঃপক্ষে আধ ঘণ্টা বিশ্রাম বিরতির উল্লেখ রয়েছে। ১৯৬১ সালের সড়ক পরিবহন অধ্যাদেশে সড়ক পরিবহনে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির আরও শর্ত যুক্ত করা হয়েছে; ১৯৬২ সালের সড়ক পরিবহন উপবিধি দ্বারা সেগুলি সম্পূরণ করা হয়েছে। এতে শ্রমিকের বয়সসীমা, শ্রম-ঘণ্টা ও বিশ্রাম, অবকাশ এবং চাকুরির অন্যান্য শর্তের বিধান রয়েছে। এই অধ্যাদেশ মোতাবেক গাড়ি চালক ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তিকে বয়স আঠারো বছর পার হলেই কেবল কোনো সড়ক পরিবহন কাজে নিয়োগ করা যাবে এবং গাড়ি চালকের ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২১ বছর নির্ধারণ করা আছে। ১৯৮৩ সালের দি মার্চেন্ট শিপিং অর্ডিন্যান্স এবং ১৯৯২ সালের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন আইনে (নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ) নৌপরিবহন কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের চাকুরির শর্তের বিধান রয়েছে।
১৮৯০ সালের রেলপথ আইনের ৬-ক অধ্যায় মোতাবেক রেলপথ শ্রমিকরা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত; যথা বিরামহীন এবং আবশ্যিকভাবে সবিরাম। প্রথমোক্ত শ্রেণীর শ্রমিকরা যেকোন সপ্তাহে দৈনিক আট ঘণ্টা পর্যন্ত নিয়োজিত থাকবে এবং সপ্তাহে সবেতন কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা ছুটির অনুমোদন আছে। অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টার জন্য সাধারণ হারের ১.২৫% কম মজুরি পাবে না।
আকাশ পরিবহন কর্মচারিদের জন্য বিশেষ কোনো আইন নেই। ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন দ্বারা তাদের চাকুরি নিয়ন্ত্রিত হয় এবং সে মোতাবেক চাকুরি বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।
তরুণ শ্রমিক ২০০৬ সালের আইন অনুযায়ী, ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের কিশোর শ্রমিক হিসেবে বিবেচনা করা হবে। ১২ বছর পুর্ণ হয়েছে এমন শিশুকে ক্ষেত্রবিশেষে এমন কাজে নিযুক্ত করা যাবে যেখানে তার স্বাস্থ্য বা বিকাশের ঝুঁকি নেই এবং তার শিক্ষার ব্যাঘাত হবে না। কিশোর শ্রমিকেরাকোনো কারখানা বা খনিতে দিনে পাঁচ এবং সপ্তাহে ৩০ (ত্রিশ) ঘণ্টার অধিক কাজ করবে না। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কিশোর শ্রমিক দিনে ৭ (সাত) এবং সপ্তাহে ৪২ (বিয়াল্লিশ) ঘণ্টার বেশি কাজ করবে না। যেকোন প্রতিষ্ঠানে কিশোর শ্রমিক সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা থেকে সকাল ৭ ঘটিকার মধ্যে কাজ করবে না। কিশোর শ্রমিক ওভারটাইম করলে অভারটাইমসহ মোট কর্মঘণ্টা কারখানা বা খনির ক্ষেত্রে সপ্তাহে ৩৬ (ছত্রিশ) ঘণ্টার বেশি হবে না, অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে তা ৪৮ (আটচল্লিশ) ঘণ্টার বেশি হবে না। কোনো নারী শ্রমিক তার বিনা সম্মতিতে রাত ১০ ঘটিকা থেকে ভোর ৬ ঘটিকার মধ্যে কাজ করবেন না।
নারী শ্রমিক নারী শ্রমিক ও পুরুষ শ্রমিকের কর্মঘন্টার তারতম্য নেই। তবে তাদের সম্মতি ছাড়া কোনো নারী শ্রমিকে রাত ১০ ঘটিকা থেকে সকাল ৭ ঘটিকার মধ্যে কাজ করতে বাধ্য করা যাবে না। নারী শ্রমিকেরা মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং ভাতা পাবেন প্রসবের পূর্বে ও পরে ৮ সপ্তাহ। দুজন সন্তান পর্যন্ত মাতৃত্ব ভাতা দেয়া হয়। নারী শ্রমিক মৃত্যুবরণ করলে তার নমিনিকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। নারী শ্রমিকের প্রসবের ৬ মাস পূর্বে বা প্রসবপরবর্তী ৮ সপ্তাহের মধ্যে মালিক যথাযথ কারণ ছারা ডিসচার্জ, বরখাস্ত, অপসারণ বা চাকুরিচ্যুতির নোটিশ দিলে ঐ নারী শ্রমিক তার মাতৃত্বভাতা থেকে বঞ্চিত হবেন না।
ছুটি প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরিতে দশ দিনের নৈমিত্তিক ছুটি পাবেন।কোনো কারণে এই ছুটি তিনি ভোগ না করলে তা জমা থাকবে না এবং এক বৎসরের ছুটি পরবর্তী বৎসর ভোগ করা যাবে না। এসব নিয়ম চা-বাগানে নিযুক্ত শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। সংবাদপত্র শ্রমিক ব্যতীত প্রত্যেক শ্রমিক প্রতি পঞ্জিকা বৎসরে পূর্ণ মজুরিতে চৌদ্দ দিনের পীড়া ছুটি পাবেন। সংবাদ পত্র শ্রমিক তাঁর চাকুরির অন্যূন ১/৮ সময় অর্ধ-মজুরিতে পীড়া-ছুটি হিসেবে পাবেন।
কোন প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে এক বৎসর চাকুরি পূর্ণ করেছেন এমন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিককে পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে মজুরিসহ নিম্নবর্ণিত হারে ছুটি মঞ্জুর করতে হবে, যথা: (ক) দোকান, ব্যবসায়িক, শিল্প প্রতিষ্ঠান,কারখানা অথবা সড়ক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন; (খ) চা বাগানের ক্ষেত্রে প্রতি ২২ দিন কাজের জন্য একদিন; (গ) সংবাদপত্র শ্রমিকের ক্ষেত্রে প্রতি ১১ দিন কাজের জন্য একদিন। এছাড়া, অবিচ্ছিন্নভাবে এক বৎসর চাকুরি পূর্ণ করা প্রত্যেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রমিককে পরবর্তী বারো মাসের মধ্যে মজুরিসহ নিম্নবর্ণিত হারে ছুটি মঞ্জুর করতে হবে; যথা: (ক) কারখানার ক্ষেত্রে, প্রতি ১৫ দিন কাজের জন্য একদিন; (খ) চা-বাগানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য একদিন; গ) দোকান, বাণিজ্য অথবা শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, প্রতি ১৪ দিনের জন্য একদিন। প্রতি শ্রমিক এক পঞ্জিকা বৎসরে মজুরিসহ ১১ দিনের উৎসব ছুটি পাবেন।
বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং বিরোধ নিষ্পতি বর্তমানে ২০০৬ সালের আইন ট্রেড ইউনিয়ন গঠন এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিধানাবলি দিয়েছে। নানারকম বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির পন্থা নির্ধারণ করে থাকে। বাণিজ্যিক বিরোধের সাথে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বলে এমন বিরোধের নিষ্পত্তি শ্রম আদালতে হওয়া জরুরি এবং তা হবে শ্রম ব্যবস্থাপনা এবং শ্রমিক ও মালিকের আস্থা বিনির্মাণের মাধ্যমে।
কর্মক্ষেত্রে শান্তি বজায় রাখতে শ্রম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া আদালতের বাহিরে বিরোধ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি (Collective Bargaining Agent) বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
আদালত এবং আদালত বহির্ভূত উভয় পদ্ধতিতে শিল্প বিরোধের নিষ্পত্তি হতে পারে। এই আইনের ১৪শ অধ্যায়ের বিধান মোতাবেককোনো মালিক অথবা যৌথ দরকষাকষি প্রতিনিধি উত্থাপন না করলেকোনো শিল্প বিরোধ আছে বলে গণ্য হবে না। গেজেট প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক শ্রম আদালত স্থাপন করতে পারে। কোনো জেলায় একাধিক শ্রম আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে সরকার প্রতি আদালতের এখতিয়ার নির্ধারণ করে দেবে৷ কর্মরত জেলা জজ অথবা অতিরিক্ত জেলা জজদের মধ্যে থেকে সরকার শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করবে। শ্রম আদালতের ২ জন সদস্যের মধ্যে একজন মালিকের এবং অপরজন শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব করবেন। অপরাধ বিচারকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে শ্রম আদালত ফৌজদারি কার্যবিধিতে বর্ণিত সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি অনুসরণ করবে৷ প্রথম শ্রেণির জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের উপর ন্যস্ত সকল ক্ষমতা শ্রম আদালতেরও থাকবে৷ এছাড়া শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শ্রম আদালতের ক্ষমতা সেশন আদালতের সমতুল্য হবে। শ্রম আদালতের সিদ্ধান্ত, রোয়েদা, দণ্ড বা রায়ে সংক্ষুব্ধ বোধ করলে যেকোন পক্ষ সেই রায় প্রদানের ষাট দিনের মধ্যে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আপীল দায়ের করতে পারবেন। তবে আপীলের ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে৷
কর্মপরিবেশ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও বিকাশের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদী নীতি সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন শ্রম আইনে তুলনামূলকভাবে একটি নতুন ধারণা। দোকান, শিল্প প্রতিষ্ঠান বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মচারি নিয়োগের বিধিবিধান প্রসঙ্গে বলতে গেলে কোনো আইনি নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ১৯৪৬ সালের শিল্প নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইন প্রথমবারের মতো কার্যকর হতে থাকে যখন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন বা ততোধিক কর্মচারি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ আইনে বিধিবদ্ধ স্থায়ী আদেশের সঙ্গে সংগতি রেখে নিয়োগের শর্তাবলি প্রয়োগের বিধান বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯২৩ সালের মার্চেন্ট শিপিং অ্যাক্ট চাকুরির শর্ত অনুসারে শ্রমিক ও মালিকের মধ্যে চুক্তির ব্যবস্থা চালু করে। ১৯৮৩ সালের মার্চেন্ট শিপিং অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনটি বদলানো হয়েছে। ১৯৪৬ সালের শিল্প নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের স্থলে ১৯৬০ সালে কার্যকর হয় শিল্প ও বাণিজ্যিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) অধ্যাদেশ। এ আইনটিও ১৯৬৫ সালের শ্রমিক নিয়োগ (স্থায়ী আদেশ) আইনের মাধ্যমে বদলানো হয়। বর্তমানে, ২০০৬ সালের আইন লে-অফ, ছাঁটাই, অসদাচরণ, চাকুরি থেকে ডিসচার্জ, বরখাস্ত, প্রভৃতি বিষয়ে নির্দেশনা দেয়। আইন অনুযায়ী, আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মানুষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত বিপর্যয় বা জরুরি প্রয়োজনে মালিক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করতে পারেন।
মজুরি বলতে চাকুরির পারিশ্রমিক, নিয়োগের শর্ত মোতাবেক প্রদেয়কোনো বোনাস, অন্যকোনো অতিরিক্ত পারিশ্রমিক; ছুটি, বন্ধ অথবা অধিকাল কর্মের জন্য প্রদেয়কোনো পারিশ্রমিক;কোনো আদালতের আদেশ বা নিষ্পত্তির অধীনে প্রদেয়কোনো পারিশ্রমিক; চাকুরির অবসান, ছাঁটাই, ডিসচার্জ, অপসারণ, পদত্যাগ, অবসর, বরখাস্ত এসব ক্ষেত্রে কোনো চুক্তি বা এই আইনের অধীন প্রদেয়কোনো অর্থ; এবং লে-অফ অথবা সাময়িক বরখাসতের কারণে প্রদেয়কোনো অর্থ বোঝায়। সরকার মজুরি নিশ্চিতের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করবে।কোনো শিল্পে নিযুক্ত শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী হার স্থির করা প্রয়োজন এবং যুক্তিসংগত বোধ করলে সরকার মজুরি বোর্ডকে প্রয়োজনীয় তদন্ত সাপেক্ষে ওই শ্রমিকশ্রেণির জন্য নিম্নতম মজুরি হার সুপারিশ করার নির্দেশ দেবে। সামাজিক নিরাপত্তা চাকুরি চলাকালে উদ্ভূত দুর্ঘটনার ফলে যদিকোনো শ্রমিক শরীরে জখমপ্রাপ্ত হন তাহলে মালিক আইনের বিধান অনুযায়ী তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। জখম বা মৃত্যর ক্ষেত্রে প্রদেয় ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ২০০৬ সালের আইনের তফসিলে বর্ণিত হয়েছে।
নিম্নলিখিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা প্রতিষ্ঠনের মুনাফার অংশের দাবিদার হবেন: (ক) বছরের শেষ দিন প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ অন্যূন এক কোটি টাকা; অথবা (খ) হিসাব বছরের শেষ দিন স্থায়ী সম্পদের মূল্য অন্যূন দুই কোটি টাকা। এমন প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক অংশগ্রহণ ও কল্যাণ তহবিল গঠন করবে।
২০০৬ সালের শ্রম আইন শ্রমিকদের জন্য নানারকম কল্যাণমূলক ব্যবস্থার বিধান রেখেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের জন্য আবাসন সুবিধা, চাবাগানের শ্রমিকদের জন্য বিনোদনমূলক ও শিক্ষা সুবিধা, চাবাগানে আবাসন সুবিধা, সংবাদপত্র শ্রমিকদের জন্য চিকিৎসা পরিচর্যা, যেসব প্রতিষ্ঠানে অন্তত ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক কর্মরত আছেন সেখানে বাধ্যতামূলক গ্রুপবীমা চালুকরণ প্রভৃতি।
রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) ইপিজেডে কর্মরত অনেক শ্রমিক ২০০৬ সালের আইনের এখতিয়ারে আসেন না। এক্ষেত্রে রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ আইন ১৯৮০ প্রযোজ্য হবে যার অধীনে সরকার চাইলে এসব এলাকা কিছু কিছু আইনের প্রয়োগ রদ করতে পারেন। [নির্মলেন্দু ধর]