গণি, খাজা আব্দুল: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Image:GhaniKhwajaAbdul.jpg|thumb|right|খাজা আব্দুল গণি]]
'''গণি, খাজা আব্দুল''' (১৮১৩-১৮৯৬)  ঢাকার নওয়াব, দাতা ও সমাজসেবী। তিনি ১৮১৩ সালের ৩০ জুলাই (১৫ শ্রাবণ, ১২২০ বাংলা) ঢাকার বেগম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা [[আলীমুল্লাহ, খাজা|খাজা আলীমুল্লাহ]] ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী ও ভূস্বামী। খাজা আব্দুল গণি কৈশোরে নিজগৃহে আরবি-ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু ছিল তাঁর প্রথম ভাষা। তবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও তার ব্যুৎপত্তি ছিল।
'''গণি, খাজা আব্দুল''' (১৮১৩-১৮৯৬)  ঢাকার নওয়াব, দাতা ও সমাজসেবী। তিনি ১৮১৩ সালের ৩০ জুলাই (১৫ শ্রাবণ, ১২২০ বাংলা) ঢাকার বেগম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা [[আলীমুল্লাহ, খাজা|খাজা আলীমুল্লাহ]] ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী ও ভূস্বামী। খাজা আব্দুল গণি কৈশোরে নিজগৃহে আরবি-ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু ছিল তাঁর প্রথম ভাষা। তবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও তার ব্যুৎপত্তি ছিল।


৭ নং লাইন: ৮ নং লাইন:


১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করে। তখন থেকে আব্দুল গণির সালিশি রায়কে সরকারের আদালতের সমান মর্যাদা দেওয়া হতো। সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসায় তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ।  
১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করে। তখন থেকে আব্দুল গণির সালিশি রায়কে সরকারের আদালতের সমান মর্যাদা দেওয়া হতো। সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসায় তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ।  
[[Image:GhaniKhwajaAbdul.jpg|thumb|right|খাজা আব্দুল গণি
]]


১৮৬৬ সালে খাজা আব্দুল গণিকে বাংলার ব্যবস্থাপক সভা এবং ১৮৬৭ সালে বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত করা হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকায় উদ্ভূত এক মারাত্মক শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা আব্দুল গণি সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা করেন। আব্দুল গণি ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। পঞ্চায়েত সভাপতি হিসেবে তিনি প্রত্যেক মহল্লার পঞ্চায়েত সর্দারকে স্বীকৃতি পাগড়ি দিতেন এবং তাঁদের মাধ্যমে নগরীর স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। খাজা আব্দুল গণিকে ১৮৭১ সালে সি.আই. ই এবং ১৮৭৫ সালে  [[নওয়াব|নওয়াব]] উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৭৬ সালে সরকার তাঁকে সাতজন তুর্কি সওয়ার (অশ্বারোহী গার্ড) রাখার অনুমতি দেন। ১৮৭৭ সালে খাজা আব্দুল গণিকে দেওয়া নওয়াব উপাধিটিকে বংশগত করা হয়। ১৮৮৬ সালে তাঁকে কে.সি.এস.আই এবং ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।
১৮৬৬ সালে খাজা আব্দুল গণিকে বাংলার ব্যবস্থাপক সভা এবং ১৮৬৭ সালে বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত করা হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকায় উদ্ভূত এক মারাত্মক শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা আব্দুল গণি সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা করেন। আব্দুল গণি ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। পঞ্চায়েত সভাপতি হিসেবে তিনি প্রত্যেক মহল্লার পঞ্চায়েত সর্দারকে স্বীকৃতি পাগড়ি দিতেন এবং তাঁদের মাধ্যমে নগরীর স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। খাজা আব্দুল গণিকে ১৮৭১ সালে সি.আই. ই এবং ১৮৭৫ সালে  [[নওয়াব|নওয়াব]] উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৭৬ সালে সরকার তাঁকে সাতজন তুর্কি সওয়ার (অশ্বারোহী গার্ড) রাখার অনুমতি দেন। ১৮৭৭ সালে খাজা আব্দুল গণিকে দেওয়া নওয়াব উপাধিটিকে বংশগত করা হয়। ১৮৮৬ সালে তাঁকে কে.সি.এস.আই এবং ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।

০৬:১৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

খাজা আব্দুল গণি

গণি, খাজা আব্দুল (১৮১৩-১৮৯৬)  ঢাকার নওয়াব, দাতা ও সমাজসেবী। তিনি ১৮১৩ সালের ৩০ জুলাই (১৫ শ্রাবণ, ১২২০ বাংলা) ঢাকার বেগম বাজারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা খাজা আলীমুল্লাহ ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী ও ভূস্বামী। খাজা আব্দুল গণি কৈশোরে নিজগৃহে আরবি-ফারসি শিক্ষা লাভ করেন। উর্দু ছিল তাঁর প্রথম ভাষা। তবে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায়ও তার ব্যুৎপত্তি ছিল।

আব্দুল গণির মেধা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে তাঁর পিতা ১৮৪৬ সালে ওয়াকফনামা করে তাঁকে নিজের ও খাজা পরিবারের অন্যান্যদের সমুদয় সম্পত্তির মুতাওয়াল্লি নিযুক্ত করেন। পরিবারের অন্যদেরকে অংশমতো ভাতা দানের ব্যবস্থা করা হয়। আব্দুল গণি পিতার ধন-সম্পদ ও জমিদারি আরও বৃদ্ধি করেন। তিনি ছিলেন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পূর্ববাংলার একজন অত্যন্ত ধনী, প্রভাবশালী ও সম্মানিত জমিদার।

১৮৫৭ সালে সিপাহি বিপ্লব এর সময় অন্যান্য ভূস্বামীর ন্যায় খাজা আব্দুল গণিও ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা করেন। তিনি ওই সময় হাতি, ঘোড়া, ও নৌযান দিয়ে সরকারকে সহায়তা করেন। অবশ্য তিনি ঢাকার বিদ্রোহী সিপাহিদের বিচারকালে তাদের দন্ড হ্রাসের চেষ্টা করেন।

১৮৬১ সালে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট নিযুক্ত করে। তখন থেকে আব্দুল গণির সালিশি রায়কে সরকারের আদালতের সমান মর্যাদা দেওয়া হতো। সালিশের মাধ্যমে বিবাদ মীমাংসায় তিনি ছিলেন অসাধারণ দক্ষ।

১৮৬৬ সালে খাজা আব্দুল গণিকে বাংলার ব্যবস্থাপক সভা এবং ১৮৬৭ সালে বড়লাটের আইন সভার সদস্য মনোনীত করা হয়। ১৮৬৯ সালে ঢাকায় উদ্ভূত এক মারাত্মক শিয়া-সুন্নি দাঙ্গা আব্দুল গণি সালিশির মাধ্যমে মীমাংসা করেন। আব্দুল গণি ঢাকার পঞ্চায়েত প্রথার ব্যাপক উন্নয়ন করেন। পঞ্চায়েত সভাপতি হিসেবে তিনি প্রত্যেক মহল্লার পঞ্চায়েত সর্দারকে স্বীকৃতি পাগড়ি দিতেন এবং তাঁদের মাধ্যমে নগরীর স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন। খাজা আব্দুল গণিকে ১৮৭১ সালে সি.আই. ই এবং ১৮৭৫ সালে  নওয়াব উপাধি দেওয়া হয়। ১৮৭৬ সালে সরকার তাঁকে সাতজন তুর্কি সওয়ার (অশ্বারোহী গার্ড) রাখার অনুমতি দেন। ১৮৭৭ সালে খাজা আব্দুল গণিকে দেওয়া নওয়াব উপাধিটিকে বংশগত করা হয়। ১৮৮৬ সালে তাঁকে কে.সি.এস.আই এবং ১৮৯২ সালে নওয়াব বাহাদুর উপাধি দেওয়া হয়।

খাজা আব্দুল গণি দীর্ঘদিন ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটির সদস্য ছিলেন। পঙ্গু ও অসহায় লোকদের জন্য তিনি ১৮৬৬ সালে ঢাকায় একটি লঙ্গরখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করেন। তিনি প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয়ে পানির জন্য ঢাকা শহরে পানির কল স্থাপন করেন। আধুনিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য নওয়াব আব্দুল গণি তাঁর এস্টেট অধ্যুষিত ঢাকা, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও বরিশাল জেলায় প্রচুর অর্থদান করেন। তিনি ১৮৬৩ সালে কুমারটুলিতে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যা পরবর্তীকালে নওয়াব সলিমুল্লাহ কলেজে উন্নীত হয়। ঢাকা মাদ্রাসা (বর্তমান কবি নজরুল কলেজ) প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নওয়াব আব্দুল গণির নেতৃত্বে ঢাকার মুসলমানগণ ১৮৭১ সালে সরকারের নিকট আবেদন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভূমি ক্রয় করে দেন, জামুর্কী (টাঙ্গাইল) আব্দুল গণি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন, স্যার সৈয়দ আহমদের অনুরোধে আলীগড় কলেজের জন্য দশ হাজার টাকা এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ এর জন্য ১২ হাজার টাকা দান করেন। তাঁর দান কাজের মধ্যে-বাকল্যান্ড বাঁধ নির্মাণে ৩৫ হাজার টাকা, হোসেনী দালান সংস্কারে ২০ হাজার টাকা, শাহ আলীর দরগার রাস্তা নির্মাণে ১০ হাজার টাকা, মক্কায় নহরে জুবাইদা সংস্কারে ৪০ হাজার টাকা, মিটফোর্ড হাসপাতালএ মহিলা ওয়ার্ড নির্মাণে ২৫ হাজার টাকা, ১৮৬৭ সালের দুর্ভিক্ষে ১০ হাজার টাকা, ১৮৮৫ সালের বন্যায় ১০ হাজার টাকা, লেডি ডাফরিন রিলিফ ফান্ডে ১০ হাজার টাকা, রুশ-তুর্কি যুদ্ধাহতদের জন্য (১৮৭৭) ২০ হাজার টাকা, কাশ্মীরের ভূমিকম্পে ২০ হাজার টাকা, আটিয়ার প্রজাদের সাহায্যে ১০ হাজার টাকা, ফ্রান্স-জার্মান যুদ্ধাহতদের জন্য ৫ হাজার টাকা, ইটালি ও ফ্রান্সে কলেরা রিলিফ ফান্ডে ২ হাজার টাকা করে, ইরানে দুর্ভিক্ষ পীড়িতদের জন্য ৩ হাজার টাকা, ল্যাঙ্কাশায়ার দুর্ভিক্ষে ৭ হাজার টাকা, আয়ারল্যান্ড দুর্ভিক্ষে ৩ হাজার টাকা, মি. মেকেঞ্জির মাধ্যমে বিবিধ ত্রাণ কাজে ৩৮ হাজার টাকা প্রদান উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর বহুলোক তাঁর দানে হজে যেতেন।

সুকুমার মনোবৃত্তি সম্পন্ন নওয়াব আব্দুল গণি কবিতা ও গানের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তিনি মহররম প্রভৃতি উৎসবে কবিদের মধ্যে প্রতিযোগিতার আয়োজন করতেন এবং বহু কবি-সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকাকে অর্থ সাহায্য করতেন। নাট্যমঞ্চে মেয়েদের অভিনয় সমর্থন করে সে যুগে আবদুল গণি কুসংস্কার মুক্ত প্রগতিশীল মনের পরিচয় দেন। তিনি ছিলেন ঢাকার প্রথম সংবাদপত্র সাপ্তাহিক ঢাকা নিউজের একজন স্বত্বাধিকারী। তাঁর নির্মিত আহসান মঞ্জিল প্রাসাদটি বাংলার স্থাপত্যশিল্পের একটি নিদর্শন। শাহবাগদিলখুশা, কোম্পানি বাগান প্রভৃতি বাগানবাড়ি ও পার্ক নির্মাণ করে তিনি ঢাকার পরিবেশকে নির্মল করতে সহায়তা করেন। শাহবাগে তিনি একটি চিড়িয়াখানাও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতি বছর খ্রিস্টীয় নববর্ষ উপলক্ষে তাঁর ব্যয়ে শাহবাগে কৃষি ও শিল্পমেলা হতো। নওয়াব আব্দুল গণি ১৮৯৬ সালের ২৪ আগস্ট সোমবার সকালে আহসান মঞ্জিলে মারা যান। বেগম বাজারে নওয়াবদের পারিবারিক গোরস্থানে তাঁর সমাধি রয়েছে।  [মোহাম্মদ আলমগীর]