খান, আখতার হামিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:AHKhan.jpg|thumb|400px|right|আখতার হামিদ খান]] | |||
'''খান, আখতার হামিদ''' (১৯১৪-১৯৯৯) সমাজবিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী, কুমিল্লার [[বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী]]র (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। আইসিএস-এর শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। একজন আইসিএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তিনি পূর্ববাংলায় চাকরি করেন। | '''খান, আখতার হামিদ''' (১৯১৪-১৯৯৯) সমাজবিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী, কুমিল্লার [[বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী]]র (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। আইসিএস-এর শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। একজন আইসিএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তিনি পূর্ববাংলায় চাকরি করেন। | ||
১৯৪৩-এর মহা মন্বন্তরের সময় ঔপনিবেশিক শাসকদের উদাসীনতা তাঁকে এতটাই ব্যথিত করে যে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আখতার হামিদ খান আলীগড়ের কাছে একটি গ্রামে একজন শ্রমিক ও তালাওয়ালা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ তলস্তয়সুলভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা দু বছর স্থায়ী হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি দিল্লির জামেয়া মিল্লিয়াতে শিক্ষকতার কাজ নেন এবং তিন বছর কাজ করেন। এর পর তিনি করাচিতে চলে আসেন এবং পরে [[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|কুমিল্লা ]][[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|ভিক্টোরিয়া কলেজ]]-এ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এ কলেজে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চাকুরি করেন। কুমিল্লা অবস্থানকালে গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ জাগে। ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পল্লী উন্নয়নের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন। পরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। | ১৯৪৩-এর মহা মন্বন্তরের সময় ঔপনিবেশিক শাসকদের উদাসীনতা তাঁকে এতটাই ব্যথিত করে যে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আখতার হামিদ খান আলীগড়ের কাছে একটি গ্রামে একজন শ্রমিক ও তালাওয়ালা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ তলস্তয়সুলভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা দু বছর স্থায়ী হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি দিল্লির জামেয়া মিল্লিয়াতে শিক্ষকতার কাজ নেন এবং তিন বছর কাজ করেন। এর পর তিনি করাচিতে চলে আসেন এবং পরে [[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|কুমিল্লা ]][[কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ|ভিক্টোরিয়া কলেজ]]-এ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এ কলেজে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চাকুরি করেন। কুমিল্লা অবস্থানকালে গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ জাগে। ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পল্লী উন্নয়নের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন। পরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। | ||
[[বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী]] (বার্ড) আখতার হামিদ খানকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং প্রথমে লায়ালপুরস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হিসেবে ১৯৭২-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৭৩-৭৯ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুইডেনের লুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্র উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০ সালে আখতার হামিদ খান করাচিতে ওরাঙ্গি পাইলট প্রজেক্ট (ওপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরিচালক হন। সে থেকে ওপিপি এশিয়ার বৃহত্তম ‘এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে চালু রয়েছে। বার্ড-এর মতোই ওপিপি একটি আদর্শ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। | [[বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী|বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী]] (বার্ড) আখতার হামিদ খানকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং প্রথমে লায়ালপুরস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হিসেবে ১৯৭২-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৭৩-৭৯ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুইডেনের লুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্র উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০ সালে আখতার হামিদ খান করাচিতে ওরাঙ্গি পাইলট প্রজেক্ট (ওপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরিচালক হন। সে থেকে ওপিপি এশিয়ার বৃহত্তম ‘এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে চালু রয়েছে। বার্ড-এর মতোই ওপিপি একটি আদর্শ সামাজিক প্রতিষ্ঠান। |
০৫:২৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
খান, আখতার হামিদ (১৯১৪-১৯৯৯) সমাজবিজ্ঞানী, উন্নয়নকর্মী, কুমিল্লার বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর (বার্ড) প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ভারতের আগ্রায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি আগ্রা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। এর পর তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে (আইসিএস) যোগ দেন। আইসিএস-এর শিক্ষানবিশ হিসেবে তিনি ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাহিত্য এবং ইতিহাস অধ্যয়ন করেন। একজন আইসিএস অফিসার হিসেবে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় তিনি পূর্ববাংলায় চাকরি করেন।
১৯৪৩-এর মহা মন্বন্তরের সময় ঔপনিবেশিক শাসকদের উদাসীনতা তাঁকে এতটাই ব্যথিত করে যে তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিস থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর আখতার হামিদ খান আলীগড়ের কাছে একটি গ্রামে একজন শ্রমিক ও তালাওয়ালা হিসেবে কাজ শুরু করেন। এ তলস্তয়সুলভ পরীক্ষা-নিরীক্ষা দু বছর স্থায়ী হয়। ১৯৪৭ সালে তিনি দিল্লির জামেয়া মিল্লিয়াতে শিক্ষকতার কাজ নেন এবং তিন বছর কাজ করেন। এর পর তিনি করাচিতে চলে আসেন এবং পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ-এ অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি এ কলেজে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত চাকুরি করেন। কুমিল্লা অবস্থানকালে গ্রামের উন্নয়ন সম্পর্কে তাঁর গভীর আগ্রহ জাগে। ১৯৫৮ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পল্লী উন্নয়নের উপর বিশেষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এই প্রশিক্ষণ বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যে ১৯৫৯ সালে তিনি কুমিল্লায় বার্ড প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর প্রথম পরিচালক নিযুক্ত হন। পরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কাজ করেন।
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড) আখতার হামিদ খানকে কিংবদন্তিতে পরিণত করে এবং তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানে চলে যান এবং প্রথমে লায়ালপুরস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ও পরে করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ফেলো হিসেবে ১৯৭২-১৯৭৩ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ১৯৭৩-৭৯ সালে তিনি মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি বগুড়ায় পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সুইডেনের লুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উড্র উইলসন স্কুল, প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়েও ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮০ সালে আখতার হামিদ খান করাচিতে ওরাঙ্গি পাইলট প্রজেক্ট (ওপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর পরিচালক হন। সে থেকে ওপিপি এশিয়ার বৃহত্তম ‘এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’ হিসেবে চালু রয়েছে। বার্ড-এর মতোই ওপিপি একটি আদর্শ সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
ইংরেজি, বাংলা, আরবি, ফারসি, উর্দু ও হিন্দি ভাষায় দক্ষ আখতার হামিদ খান বহু নিবন্ধ, প্রতিবেদন ও গ্রন্থ রচনা করেছেন। বার্ড তাঁর লেখাগুলিকে তিনটি খন্ডে দ্য ওয়ার্কস অব আখতার হামিদ খান (১৯৮২) শিরোনামে প্রকাশ করেছে। পল্লী উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার জন্য তাঁকে সিতারা-ই-পাকিস্তান (১৯৬১) ও ম্যাগসেসেই পুরস্কার প্রদান করা হয়। মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৪ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ’তে ভূষিত করে। ১৯৯৯ সালে আখতার হামিদ খানের মৃত্যু হয়। [সাজাহান মিয়া]