শংকরপাশা মসজিদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
অ (Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]") |
||
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
৪ নং লাইন: | ৪ নং লাইন: | ||
মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির সন্নিহিত বুরুজ। এ ছাড়া রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে অনুরূপ সন্নিহিত বুরুজ। পরবর্তী সময়ে মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ছাদের বাঁকা রেলিং সমান্তরাল ছাদ-পাঁচিলে রূপান্তর করে চার কোণের সন্নিহিত বুরুজ ছাদ-পাঁচিলের ঊর্ধ্বে সম্প্রসারিত হয়। বুরুজ শীর্ষে সংযোজিত হয় কলস আকৃতির মোটিফ। মসজিদের আদি গম্বুজটি একসময় ধসে পড়ায় সমতল খিলান ছাদের উপর লোহার কড়ি-বরগার উপর ভর করে নতুন গম্বুজ নির্মিত হয়। | মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির সন্নিহিত বুরুজ। এ ছাড়া রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে অনুরূপ সন্নিহিত বুরুজ। পরবর্তী সময়ে মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ছাদের বাঁকা রেলিং সমান্তরাল ছাদ-পাঁচিলে রূপান্তর করে চার কোণের সন্নিহিত বুরুজ ছাদ-পাঁচিলের ঊর্ধ্বে সম্প্রসারিত হয়। বুরুজ শীর্ষে সংযোজিত হয় কলস আকৃতির মোটিফ। মসজিদের আদি গম্বুজটি একসময় ধসে পড়ায় সমতল খিলান ছাদের উপর লোহার কড়ি-বরগার উপর ভর করে নতুন গম্বুজ নির্মিত হয়। | ||
[[Image:ShankarpashaMosqueHabiganj.jpg|thumb|right|400px|শংকরপাশা মসজিদ]] | |||
মসজিদের পূর্বদিকের সদরে রয়েছে খাঁজ-খিলান শোভিত তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যবর্তী প্রবেশপথটি অপর দুটি প্রবেশপথ থেকে প্রশস্ততর ও উঁচু। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে বারান্দা বরাবর অনুরূপ খাঁজ-খিলান শোভিত একটি করে প্রবেশপথ। পূর্বদিকের সদরের বহির্ভাগে দেয়ালের উভয় প্রান্তে উপর থেকে পরপর সন্নিবেশিত হয়েছে তিনটি প্যানেল এবং প্রবেশপথের উপরিভাগে রয়েছে উক্ত প্যানেলের সঙ্গে সমান্তরালে সন্নিবেশিত দুটি প্যানেল। তিনটি প্রবেশপথের মধ্যবর্তী অবস্থানে দু’টি খর্বাকৃতি প্যানেলের উপরিভাগে রয়েছে পরস্পর সমান্তরালে একটি বড় আকারের প্যানেল। শিকলাকৃতি তরু শাখা থেকে ঝুলন্ত লতাপাতার নকশার মাধ্যমে শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খিলান পার্শ্বস্থ ত্রিকোণাকার পরিসরে পরস্পর সম্পৃক্ত শাখা প্রশাখা শীর্ষে গোলাপ নকশাসহ প্রদর্শিত হয়েছে কুঞ্চিত বৃক্ষ মোটিফ। | মসজিদের পূর্বদিকের সদরে রয়েছে খাঁজ-খিলান শোভিত তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যবর্তী প্রবেশপথটি অপর দুটি প্রবেশপথ থেকে প্রশস্ততর ও উঁচু। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে বারান্দা বরাবর অনুরূপ খাঁজ-খিলান শোভিত একটি করে প্রবেশপথ। পূর্বদিকের সদরের বহির্ভাগে দেয়ালের উভয় প্রান্তে উপর থেকে পরপর সন্নিবেশিত হয়েছে তিনটি প্যানেল এবং প্রবেশপথের উপরিভাগে রয়েছে উক্ত প্যানেলের সঙ্গে সমান্তরালে সন্নিবেশিত দুটি প্যানেল। তিনটি প্রবেশপথের মধ্যবর্তী অবস্থানে দু’টি খর্বাকৃতি প্যানেলের উপরিভাগে রয়েছে পরস্পর সমান্তরালে একটি বড় আকারের প্যানেল। শিকলাকৃতি তরু শাখা থেকে ঝুলন্ত লতাপাতার নকশার মাধ্যমে শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খিলান পার্শ্বস্থ ত্রিকোণাকার পরিসরে পরস্পর সম্পৃক্ত শাখা প্রশাখা শীর্ষে গোলাপ নকশাসহ প্রদর্শিত হয়েছে কুঞ্চিত বৃক্ষ মোটিফ। | ||
মসজিদের অভ্যন্তরে মিহরাবটি সুদৃশ্য ও অপরূপ নকশা শোভিত। মিহরাবের পার্শ্বদেশের আয়তাকার ফ্রেমে পরস্পর ছেদী তরঙ্গায়িত রেখায় অঙ্কিত ছোট ছোট আয়তক্ষেত্রের অভ্যন্তরভাগে চিত্রিত হয়েছে চার বা আট পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলেল নকশা। কুলঙ্গির খাঁজকাটা খিলান ইটের তৈরি স্তম্ভ শীর্ষে স্থাপিত। এই স্তম্ভগুলো খাঁড়াভাবে বিন্যস্ত সারিবদ্ধ নকশা শোভিত। এই নকশায় পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশিত হয়েছে উৎকীর্ণ গোলাপ এবং ফ্রেমবদ্ধ চার পাপড়ি বিশিষ্ট পুষ্প নকশা। | মসজিদের অভ্যন্তরে মিহরাবটি সুদৃশ্য ও অপরূপ নকশা শোভিত। মিহরাবের পার্শ্বদেশের আয়তাকার ফ্রেমে পরস্পর ছেদী তরঙ্গায়িত রেখায় অঙ্কিত ছোট ছোট আয়তক্ষেত্রের অভ্যন্তরভাগে চিত্রিত হয়েছে চার বা আট পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলেল নকশা। কুলঙ্গির খাঁজকাটা খিলান ইটের তৈরি স্তম্ভ শীর্ষে স্থাপিত। এই স্তম্ভগুলো খাঁড়াভাবে বিন্যস্ত সারিবদ্ধ নকশা শোভিত। এই নকশায় পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশিত হয়েছে উৎকীর্ণ গোলাপ এবং ফ্রেমবদ্ধ চার পাপড়ি বিশিষ্ট পুষ্প নকশা। | ||
স্থানীয় নকশাকারদের অভিনব শিল্পশৈলী ও রুচিবোধ এবং ইমারতের সদরের বহির্ভাগ ও মিহরাব বিন্যাস ও অলঙ্করণে তাদের মৌলিকত্ব ও উদ্ভাবনী শক্তির একটি চমৎকার নিদর্শন শংকরপাশা মসজিদ। এই মসজিদে অনুসৃত স্থাপত্যশৈলী একদিকে যেমন সমকালীন গৌড়ীয় স্থাপত্য রীতি থেকে ভিন্নতর, অন্যদিকে হোসেনশাহী যুগের ইমারতের যথেচ্ছ অলঙ্করণ রীতিরও একটি বিশিষ্ট ব্যতিক্রম। মসজিদটির পুরনো অলঙ্করণ এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে। [ | স্থানীয় নকশাকারদের অভিনব শিল্পশৈলী ও রুচিবোধ এবং ইমারতের সদরের বহির্ভাগ ও মিহরাব বিন্যাস ও অলঙ্করণে তাদের মৌলিকত্ব ও উদ্ভাবনী শক্তির একটি চমৎকার নিদর্শন শংকরপাশা মসজিদ। এই মসজিদে অনুসৃত স্থাপত্যশৈলী একদিকে যেমন সমকালীন গৌড়ীয় স্থাপত্য রীতি থেকে ভিন্নতর, অন্যদিকে হোসেনশাহী যুগের ইমারতের যথেচ্ছ অলঙ্করণ রীতিরও একটি বিশিষ্ট ব্যতিক্রম। মসজিদটির পুরনো অলঙ্করণ এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | ||
[[en:Shankarpasha Mosque]] | [[en:Shankarpasha Mosque]] |
১৬:০৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
শংকরপাশা মসজিদ হবিগঞ্জ সদর উপজেলার শংকরপাশায় অবস্থিত একটি একগম্বুজ মসজিদ। সুলতানি আমলের বর্গাকার এই মসজিদটির দেয়ালের দৈর্ঘ্য ২১র্ ৫র্। মসজিদের সম্মুখভাগে রয়েছে ৫র্ ৪র্ প্রশস্ত বারান্দা। সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের রাজত্বকালে সম্ভবত ১৪৯৪ থেকে ১৪৯৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় মসজিদটি নির্মিত হয়।
মসজিদের চারকোণে রয়েছে চারটি অষ্টভুজাকৃতির সন্নিহিত বুরুজ। এ ছাড়া রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি করে অনুরূপ সন্নিহিত বুরুজ। পরবর্তী সময়ে মসজিদটির সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ কাজের অংশ হিসেবে ছাদের বাঁকা রেলিং সমান্তরাল ছাদ-পাঁচিলে রূপান্তর করে চার কোণের সন্নিহিত বুরুজ ছাদ-পাঁচিলের ঊর্ধ্বে সম্প্রসারিত হয়। বুরুজ শীর্ষে সংযোজিত হয় কলস আকৃতির মোটিফ। মসজিদের আদি গম্বুজটি একসময় ধসে পড়ায় সমতল খিলান ছাদের উপর লোহার কড়ি-বরগার উপর ভর করে নতুন গম্বুজ নির্মিত হয়।
মসজিদের পূর্বদিকের সদরে রয়েছে খাঁজ-খিলান শোভিত তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যবর্তী প্রবেশপথটি অপর দুটি প্রবেশপথ থেকে প্রশস্ততর ও উঁচু। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে রয়েছে বারান্দা বরাবর অনুরূপ খাঁজ-খিলান শোভিত একটি করে প্রবেশপথ। পূর্বদিকের সদরের বহির্ভাগে দেয়ালের উভয় প্রান্তে উপর থেকে পরপর সন্নিবেশিত হয়েছে তিনটি প্যানেল এবং প্রবেশপথের উপরিভাগে রয়েছে উক্ত প্যানেলের সঙ্গে সমান্তরালে সন্নিবেশিত দুটি প্যানেল। তিনটি প্রবেশপথের মধ্যবর্তী অবস্থানে দু’টি খর্বাকৃতি প্যানেলের উপরিভাগে রয়েছে পরস্পর সমান্তরালে একটি বড় আকারের প্যানেল। শিকলাকৃতি তরু শাখা থেকে ঝুলন্ত লতাপাতার নকশার মাধ্যমে শিকল ও ঘণ্টার মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। খিলান পার্শ্বস্থ ত্রিকোণাকার পরিসরে পরস্পর সম্পৃক্ত শাখা প্রশাখা শীর্ষে গোলাপ নকশাসহ প্রদর্শিত হয়েছে কুঞ্চিত বৃক্ষ মোটিফ।
মসজিদের অভ্যন্তরে মিহরাবটি সুদৃশ্য ও অপরূপ নকশা শোভিত। মিহরাবের পার্শ্বদেশের আয়তাকার ফ্রেমে পরস্পর ছেদী তরঙ্গায়িত রেখায় অঙ্কিত ছোট ছোট আয়তক্ষেত্রের অভ্যন্তরভাগে চিত্রিত হয়েছে চার বা আট পাপড়ি বিশিষ্ট ফুলেল নকশা। কুলঙ্গির খাঁজকাটা খিলান ইটের তৈরি স্তম্ভ শীর্ষে স্থাপিত। এই স্তম্ভগুলো খাঁড়াভাবে বিন্যস্ত সারিবদ্ধ নকশা শোভিত। এই নকশায় পর্যায়ক্রমে সন্নিবেশিত হয়েছে উৎকীর্ণ গোলাপ এবং ফ্রেমবদ্ধ চার পাপড়ি বিশিষ্ট পুষ্প নকশা।
স্থানীয় নকশাকারদের অভিনব শিল্পশৈলী ও রুচিবোধ এবং ইমারতের সদরের বহির্ভাগ ও মিহরাব বিন্যাস ও অলঙ্করণে তাদের মৌলিকত্ব ও উদ্ভাবনী শক্তির একটি চমৎকার নিদর্শন শংকরপাশা মসজিদ। এই মসজিদে অনুসৃত স্থাপত্যশৈলী একদিকে যেমন সমকালীন গৌড়ীয় স্থাপত্য রীতি থেকে ভিন্নতর, অন্যদিকে হোসেনশাহী যুগের ইমারতের যথেচ্ছ অলঙ্করণ রীতিরও একটি বিশিষ্ট ব্যতিক্রম। মসজিদটির পুরনো অলঙ্করণ এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]