নিরীক্ষা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
৬৩ নং লাইন: | ৬৩ নং লাইন: | ||
সিঅ্যান্ডএজি-র অনুমোদনের পর গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়মসমূহ নিরীক্ষা মন্তব্য সহকারে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সিঅ্যান্ডএজি কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির নিকট সংসদে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পাবলিক একাউন্টস (পিএসি) কমিটি কর্তৃক আলোচিত হয়। সংসদের একটি স্থায়ী কমিটি যা পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি (পিইউসি) নামে পরিচিত সে কমিটি ‘সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি’র বিধি ২৩৮ মোতাবেক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও কার্যকরিতা সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখেন। [এম শামসুল আলম খান] | সিঅ্যান্ডএজি-র অনুমোদনের পর গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়মসমূহ নিরীক্ষা মন্তব্য সহকারে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সিঅ্যান্ডএজি কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির নিকট সংসদে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পাবলিক একাউন্টস (পিএসি) কমিটি কর্তৃক আলোচিত হয়। সংসদের একটি স্থায়ী কমিটি যা পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি (পিইউসি) নামে পরিচিত সে কমিটি ‘সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি’র বিধি ২৩৮ মোতাবেক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও কার্যকরিতা সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখেন। [এম শামসুল আলম খান] | ||
[[en:Auditing]] | [[en:Auditing]] | ||
০৫:০৭, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
নিরীক্ষা (অডিটিং) আর্থিক কাজকর্ম ও ঘটনাবলী সম্পর্কে নিয়মানুগ পন্থায় নিরপেক্ষ মূল্যায়ন- যার লক্ষ্য হচ্ছে বিদ্যমান নীতিমালা ও সম্পাদিত কাজকর্মের মধ্যে কতটুকু সঙ্গতি রয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। নিরীক্ষা কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী ও সে সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্যের পরীক্ষা মাত্র এবং এ পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ মতামত হিসেবে সংশ্লিষ্ট পক্ষের নিকট প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত কোম্পানির হিসাব নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক। ২১৩ (৩) ধারা অনুযায়ী নিরীক্ষককে বার্ষিক সাধারণ সভায় পরীক্ষিত হিসাব-সম্পর্কিত মতামত প্রদান করতে হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস ইনস্টিটিউট কর্তৃক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষামান গ্রহণের পূর্বে নিরীক্ষার দুটি প্রধান উদ্দেশ্য ছিল: ১. হিসাবে ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্নীতি নির্ধারণ ২. ভুল-ভ্রান্তি ও দুর্নীতি সংঘটন বন্ধকরণ। বর্তমানে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান অনুসরণ করা হয় এবং নিরীক্ষা পেশা কতকগুলি আইন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়, যেমন- ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন, ১৯৯১ সালের ব্যাংকিং কোম্পানি আইন, ১৯৩৮ সালের বীমা আইন, ১৯৯৩ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৮৭ সালের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৭৮ সালের বৈদেশিক অনুদান নিয়ন্ত্রণ রুলস এবং ১৯৮৪ সালের কো-অপারেটিভ সোসাইটি অধ্যাদেশ।
১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে এ আইনের অধীনে রেজিস্ট্রিকৃত কোম্পানির হিসাব বাংলাদেশ চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অর্ডার ১৯৭৩ অনুসারে চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস কর্তৃক নিরীক্ষা করাতে হয়। একইভাবে এনজিওর হিসাবপত্রও চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট কর্তৃক নিরীক্ষা করা হয়। কো-অপারেটিভ সোসাইটির হিসাব প্রতিবৎসর নিরীক্ষা করাতে হয়। এই নিরীক্ষা কো-অপারেটিভ সোসাইটির রেজিস্ট্রার অথবা তার অনুমোদিত অন্য কোন অফিসার সম্পাদন করে থাকেন। রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশনের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলির হিসাব তিন স্তরে নিরীক্ষা করা হয়: ১. প্রাথমিক কর্পোরেশনের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা বিভাগ, ২. মাধ্যমিক স্বাধীন পেশাজীবী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩. বাংলাদেশের কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল (সিঅ্যান্ডএজি)। অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অনেকাংশে অনুসন্ধানের সমকক্ষ এবং অনেক সময় একে ব্যবস্থাপনা নিরীক্ষাও বলা হয়। বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী কর্তৃক এ নিরীক্ষা পরিচালিত হয়। এ নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো কোম্পানির কোন রীতি প্রয়োগকালে কোম্পানির নীতি ও রেগুলেশন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা। পেশাগত স্বাধীন নিরীক্ষাকে আইনি নিরীক্ষাও বলা যায়, এটি চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট কর্তৃক পরিচালিত। এ নিরীক্ষা বার্ষিক আর্থিক হিসাবের ওপর মতামত দানের জন্য সম্পাদন করা হয়। যে সকল প্রতিষ্ঠানে সরকারের স্বার্থ জড়িত যেমন, মালিকানা, বিনিয়োগ বা অনুদান সেখানে সিঅ্যান্ডএজি সরকারি বাণিজ্যিক নিরীক্ষা পরিচালনা করেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৮ ধারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের হিসাব নিরীক্ষার দায়িত্ব সিঅ্যান্ডএজি-কে প্রদান করেছে। সিঅ্যান্ডএজি-কে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। প্রজাতন্ত্রের ও কোর্ট অব ল’-এর হিসাব, অন্যান্য কর্তৃপক্ষ ও সরকারি অফিসারদের হিসাব সিঅ্যান্ডএজি-কে নিরীক্ষা করতে হয়। এই উদ্দেশ্যে তার অথবা তার অনুমোদিত অন্য কোন প্রতিনিধির সকল হিসাব বই, ভাউচার, দলিল, নগদান, স্ট্যাম্প, সিকিউরিটিজ, গুদাম ও অন্যান্য সরকারি সম্পত্তি দেখার অধিকার আছে। কাজ চালানোর ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএজি কোন ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের অধীনস্থ নন। সংবিধান কর্তৃক প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এবং অধীনস্থ দশজন ডাইরেক্টর জেনারেলের সহায়তায় তিনি সরকারি সকল বিভাগ, এজেন্সি, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং যে সকল পাবলিক কোম্পানিতে সরকারের ৫০% মালিকানা আছে তার নিরীক্ষা করে থাকেন।
সরকারি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় সম্পদ ব্যবহারের স্বচ্ছতা ও দায়িত্বের নিশ্চয়তা দান করা। এই উদ্দেশ্য সম্পাদনে নিরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত কাজগুলি হলো: হিসাব, আয়-ব্যয় বিবরণ সঠিকভাবে তৈরি করা হয়েছে কিনা তা যাচাই করা, নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার যথার্থতা বিচার-বিবেচনা করা, প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহারে কার্যকারিতা, দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার নিশ্চয়তা প্রদান, সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদ্বর্তপত্র ক্রয়-বিক্রয় হিসাব, উৎপাদন হিসাব, লাভ-ক্ষতি হিসাব ও সহকারি হিসাব বই পরীক্ষা করা এবং বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা জানার জন্য বিশেষ অনুসন্ধান কাজ সম্পাদন। সিঅ্যান্ডএজি-র অধীনে নিম্নলিখিত অডিট ডাইরেক্টরেট ও প্রশিক্ষণ একাডেমি ন্যস্ত করা হয়েছে:
বাণিজ্যিক নিরীক্ষা, পূর্ত নিরীক্ষা, বৈদেশিক সাহায্যাধীন প্রকল্প নিরীক্ষা, বেসামরিক নিরীক্ষা, রেলওয়ে নিরীক্ষা, ডাক, তার ও টেলিফোন নিরীক্ষা, প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা, বৈদেশিক মিশন নিরীক্ষা, কৃতি নিরীক্ষা (performance audit) এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনা একাডেমি ( Financial Management Academy)।
উপর্যুক্ত বিভাগগুলির প্রধানকে ডাইরেক্টর জেনারেল বলা হয়। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব কাজের কাঠামো রয়েছে।
বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী নিরীক্ষার জন্য বাণিজ্যিক নিরীক্ষা অধিদপ্তরটি স্থাপন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ব্যাংক ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাষ্ট্রীয়করণের জন্য বাণিজ্যিক নিরীক্ষা বিভাগের কাজের পরিধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। বর্তমানে এই অধিদপ্তর সকল স্বায়ত্তশাসিত ও আধাস্বায়ত্তশাসিত সরকারি প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৫০% সরকারি মালিকানা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষা করে। এই অধিদপ্তর যে সকল দায়িত্ব পালন করে থাকে তা হলো: সকল সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের প্রারম্ভিক ও চূড়ান্ত হিসাব নিরীক্ষা; স্বীকৃত হিসাববিজ্ঞান ও নিরীক্ষা শাস্ত্রের নীতি অনুযায়ী উক্ত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণীগুলি ঐ প্রতিষ্ঠানের শুদ্ধ ও সঠিক আর্থিক অবস্থা দেখাচ্ছে কি-না তা নির্ধারণ; বিধিবদ্ধ ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সংক্ষিপ্ত হিসাব সহকারে সাধারণ আর্থিক বিবরণী প্রস্ত্তত করা; উপর্যুক্ত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষণের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃকাজের মূল্যায়ন করা; এবং সরকারি মালিকানাধীন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ডের কার্যকারিতা, দক্ষতা ও মিতাচারিতা পরিমাপ করা।
স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষা অধিদপ্তর স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রায় ১,২০০টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত ইউনিট নিরীক্ষা করে থাকেন। এগুলো হলো: সকল সরকারি অফিসসমূহ (ডাক, তার ও টেলিফোন, সড়ক ও জলপথ, রেলওয়ে, জনস্বাস্থ্য, প্রকৌশল এবং প্রতিরক্ষা ব্যতীত) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও স্থানীয় সংস্থা (সিটি কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি, বিশ্ববিদ্যালয়, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা)।
বন্দর কর্তৃপক্ষের বেলায় ধারাবাহিক নিরীক্ষার প্রচলন রয়েছে। সরকারি অনুরোধে সিঅ্যান্ডএজি সরকারি খাতে নিরীক্ষা ফি প্রদানের বিপরীতে নিরিক্ষাধীন অফিসে নিয়মিত নিরীক্ষা দল পাঠিয়ে থাকেন। সাধারণত ধারাবাহিক নিরীক্ষার ক্ষেত্রে নিরীক্ষক (প্রধানত অডিট ও একাউন্টস অফিসার নামে) সংশ্লিষ্ট অফিসভবনেই অবস্থান করেন। নিয়মিত নিরীক্ষাদল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বেতন বিল ব্যতীত অন্যান্য বিলের পরিশোধপূর্ব নিরীক্ষা করে থাকে।
নিরীক্ষা অধিদপ্তরগুলির মধ্যে স্থানীয় ও রাজস্ব অধিদপ্তর দ্বিতীয় বৃহত্তম অফিস। এর কর্মচারী সংখ্যা ৬১৫ জন। এ অফিসের প্রধান একজন মহাপরিচালক। সরকারি রাজস্ব বিভাগে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ আয়কর ও আমদানি শুল্ক বিভাগ) স্থানীয় ও রাজস্ব নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো আর্থিক পদ্ধতির যথার্থতা বিচার, গৃহীত রীতি ও নীতি থেকে কোন বিচ্যুতি হয়ে থাকলে তা নির্ধারণ, সংশ্লিষ্ট অফিসের কার্যকারিতা, দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার ওপর নিরীক্ষা পরিচালনা, এবং সরকারি সম্পদের অপব্যবহার ও বিশৃঙ্খলাসহ অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার যথার্থতা পরীক্ষা।
পূর্ত অধিদপ্তর বর্তমানের পূর্ত অধিদপ্তরটি ১৯৬৪ সালের ১৮ মে পূর্ব পাকিস্তানে পূর্ত ও ওয়াপদার নিরীক্ষা ও হিসাব পরিচালক নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতার পর এটিকে ডিরেক্টর অব অডিট অ্যান্ড একাউন্টস, ওয়ার্কস অ্যান্ড ওয়াপদা পূর্ব পাকিস্তান নামে পুনঃনামকরণ করা হয়। ওয়াপদার হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষার দায়িত্ব এই পরিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত করা হয়। হিসাব সংক্রান্ত সরকারি বিভাগীয়করণ নীতি অনুসারে পূর্ত পরিদপ্তরের বর্তমান অফিস ১৯৮৫ সালে স্থাপিত হয়।
বর্তমানে, কর্ম-নিরীক্ষা মহাপরিচালককে নিম্নোক্ত অফিসসমূহের নিরীক্ষা কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে:
গণপূর্ত বিভাগ, রাস্তা ও জনপথ বিভাগ, পানি ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ঢাকা বিদ্যুৎ সরবরাহ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন বিভাগ, অন্যান্য শহর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, গ্রামীণ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ, সিএমএমইউ এবং গৃহনির্মাণ গবেষণা ল্যাবরেটরি।
পূর্তপরিদপ্তরের নিরীক্ষা কাজসমূহ এর সীমানায় সকল লেনদেনের সমাপ্তিতে নিরীক্ষা কাজ পরিচালনা, স্থানীয় অনুসন্ধান কাজ চালানো এবং অনুসন্ধান প্রতিবেদনের সমাপ্তি করা, মজুত এবং টিঅ্যান্ডপি প্রতিবেদনের নিরীক্ষা, মহা পরিচালক (পূর্ত অডিট)-এর অধীনের সমস্ত বিভাগীয় হিসাবরক্ষকদের এবং এমএসি-র প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, গণপূর্ত বিভাগের কাজ সম্পর্কিত জমি অধিগ্রহণ এবং সমন্বয় নিরীক্ষা, উন্নয়ন ঋণের ব্যয় নিরীক্ষা এবং গণপূর্ত জমার অধীনে অপরিশোধিত টাকার নিরীক্ষা ও অনুসন্ধান।
বৈদেশিক সাহায্যাধীন প্রকল্পের নিরীক্ষা অধিদপ্তর এই পরিদপ্তরের মহাপরিচালককে দাতা দেশ ও এজেন্সির সাহায্যে পরিচালিত প্রকল্পের নিরীক্ষা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এই নিরীক্ষা পরিদপ্তরের দায়িত্বগুলি হলো: দাতাদের অর্থ সাহায্যে পরিচালিত সকল প্রকল্পের নিরীক্ষা করা, হিসাবের বিশুদ্ধতা ও সম্পূর্ণতার নিশ্চয়তা দান, রীতি-নীতির যথার্থতা পরীক্ষা করা, বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা এবং সংসদে উপস্থাপনের জন্য এই প্রতিবেদন সিঅ্যান্ডএজি-র নিকট উপস্থাপন করা, দাতা ও সরকারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী দাতাদের অর্থসাহায্যে পরিচালিত প্রকল্পের হিসাব ও আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা করা, দাতাদের সাহায্যে পরিচালিত প্রকল্পের আর্থিক বিবরণী আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা মান অনুযায়ী তৈরি হয়েছে কি-না তা নিরীক্ষাকরণ। স্বীকৃত হিসাবনীতি অনুযায়ী ছাড়াও আইডিএ এবং এডিবি-র ক্ষেত্রে, খরচের প্রতিবেদনের ওপর স্বতন্ত্র মতামত প্রদান করতে হয়।
বেসামরিক নিরীক্ষা সরকারি হিসাবের বিভাগীয়করণের পর সিঅ্যান্ডএজি-র কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৫ সালে প্রশাসনিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর স্থাপন করা হয়। এই অধিদপ্তর নিম্নোক্ত হিসাব অফিসে নিরীক্ষা কাজ চালিয়ে থাকে: ক. হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের অফিস, খ. প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস, গ. বিভাগীয় হিসাব নিয়ন্ত্রকের অফিস, ঘ. জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস, এবং ঙ. উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার অফিস।
বেসামরিক নিরীক্ষা অধিদপ্তর সঠিকভাবে সরকারি খরচ ও প্রাপ্তির নিরীক্ষার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট। প্রতিরক্ষা, রেলওয়ে, সড়ক ও জনপথ, ডাক ও টেলিফোন এবং গণপূর্ত এই পরিদপ্তরের আওতার বাইরে। বেসামরিক নিরীক্ষা পরিদপ্তরের প্রধান দায়িত্বগুলি হলো: সরকারের বণ্টন ও আর্থিক হিসাবের নিরীক্ষা ও সত্যায়িতকরণ, বেতন ও পেনশন নির্ধারণ এবং সম্ভাব্য খরচ সম্পর্কিত সকল লেনদেনের নিরীক্ষা, সিঅ্যান্ডএজি-র নির্দেশ অনুযায়ী বিশেষ নিরীক্ষা করা, এবং নিরীক্ষা ফলাফলের ভিত্তিতে সিঅ্যান্ডএজি-র মাধ্যমে সংসদে রিপোর্ট দান।
বেসামরিক নিরীক্ষা পরিদপ্তরের মহাপরিচালক একজন পরিচালক, চারজন উপ-পরিচালক এবং কিছুসংখ্যক অফিসার ও কর্মচারীর সহায়তায় তাঁর দায়িত্ব সম্পাদন করে থাকেন।
রেলওয়ে নিরীক্ষা অধিদপ্তর রেলওয়ে নিরীক্ষা মহাপরিচালকের অফিস ১৯৫০ সালে চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ভবনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ অফিসের প্রধান ছিলেন একজন প্রধান নিরীক্ষক। এ অফিসের দায়িত্ব তিনভাগে বিভক্ত ছিল: ১. পূর্ববাংলা রেলওয়ে, ২. পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে ১৯৫০-১৯৬১ ও ৩. পাকিস্তান ইস্টার্ন রেলওয়ে ১৯৬১-১৯৭১। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ রেলওয়ের সমস্ত কাজের নিরীক্ষার দায়িত্ব এই পরিদপ্তরের ওপর ন্যস্ত করা হয়। ১৯৯৫ সালে এ অফিসের নাম পরিবর্তন করে রেলওয়ে নিরীক্ষার মহাপরিচালকের অফিস রাখা হয়। বর্তমানে রেলওয়ে নিরীক্ষা মহাপরিচালকের কার্যালয় ঢাকায় অবস্থিত। একজন পরিচালক, দুজন উপ-পরিচালক ও ১৪ জন নিরীক্ষা ও হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ মোট ২০৮ জন কর্মচারী এ পরিদপ্তরের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বিভাগীয় অফিসে কাজ করেন।
রেলওয়ে নিরীক্ষার মহাপরিচালক বাংলাদেশ রেলওয়ের সকল শাখার যেমন, প্রকৌশল বিভাগ, ট্রাফিক বিভাগ ও হিসাব বিভাগের নিরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত। এ নিরীক্ষার কাজে নিরীক্ষককে কতগুলি নিয়ম, যেমন রেলওয়ে নিরীক্ষা ম্যানুয়েল, রেলওয়ে হিসাব কোড, রেলওয়ে প্রকৌশল কোড, রেলওয়ে কারিগরি কোড, সরকারি আদেশ মেনে চলতে হয়। এখানকার নিরীক্ষা সাধারণত আইনি নিরীক্ষা। পারফরমেন্স অডিট এখনও প্রচলন হয় নি।
ডাক, টেলি ও টেলিফোন নিরীক্ষা অধিদপ্তর এ অফিস ব্রিটিশ সরকারের সময় ১৯৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং প্রধান পদের নাম দেওয়া হয় একাউন্ট্যান্ট জেনারেল, ডাক ও টেলিগ্রাফ। পরবর্তীকালে এই অফিস দুই ইউনিটে (ডিসি পিঅ্যান্ডটি এবং এজি সিভিল, কলকাতা) বিভক্ত করা হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এই অফিসকে সিপিঅ্যান্ডটি করাচি হিসেবে নামকরণ করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই অফিসকে পুর্নগঠিত করে এজিপিটিঅ্যান্ডটি নামকরণ করা হয়। ১৯৮৫ সালের সেপ্টেম্বরে এই অফিসকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা ডিপিটিঅ্যান্ডটি, সিএও (ডাক) এবং সিএও (টিঅ্যান্ডটি)। পিটিঅ্যান্ডটি-র পরিচালককে ডাক ও টেলিগ্রাফ মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মের নিরীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিএও (ডাক) এবং সিএও (টিঅ্যান্ডটি)-কে ডাক ও টিঅ্যান্ডটি-র হিসাব রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৯৫ সালে পিটিঅ্যান্ডটি-র পরিচালকের অফিসের নাম পরিবর্তন করে পিটিঅ্যান্ডটি-র মহাপরিচালকের অফিস করা হয়। এ পরিদপ্তরের অধীনে ডাক বিভাগের ৯৭টি ইউনিট এবং টিঅ্যান্ডটি বিভাগের ৯৪টি ইউনিটের নিরীক্ষা কাজ করা হয়। চারটি ডিভিশনে ডাক জীবন বীমা বিন্যস্ত। পিটিঅ্যান্ডটি পরিদপ্তরের মহাপরিচালক নিচের অফিসের নিরীক্ষা কাজ করে থাকেন: ডাক বিভাগ, টিঅ্যান্ডটি বোর্ড, টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টঙ্গী), ক্যাবল শিল্প সংস্থা (খুলনা), সিএও (ডাক) এবং সিএও (টিঅ্যান্ডটি)। মহাপরিচালক তার-এর নিরীক্ষা প্রতিবেদন মহামান্য রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে পাবলিক একাউন্টস কমিটির নিকট উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিরক্ষা নিরীক্ষা অধিদপ্তর এই পরিদপ্তরের মহাপরিচালক সামরিক বিভাগের সকল ইউনিটের সিজিডিএফ-এর আন্তঃসেবা সংগঠনের অফিস ও এর অধীনস্থ সকল অফিসের নিরীক্ষা কাজ করে থাকেন। প্রতিরক্ষা বিভাগের নিরীক্ষা পরিচালকের অফিস ব্রিটিশ শাসন আমলেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৭ সালের সিঅ্যান্ডএজি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আইন প্রচলনের পর নিরীক্ষা পরিচালকের অফিসকে মিলিটারি হিসাব বিভাগের সাথে একীভূত করা হয়। ১৯৭৪ সালে মিলিটারি হিসাবের বিভাগীয়করণের পর প্রতিরক্ষা বিভাগের জন্য একটি স্বাধীন নিরীক্ষা অধিদপ্তর পুনরায় স্থাপিত হয়। এ অধিদপ্তর সিঅ্যান্ডএজি-র অধীনে কাজ করে। এই পরিদপ্তরের কাজ হলো: সকল খরচ ও প্রাপ্তির পরীক্ষামূলক নিরীক্ষা, স্টোরের হিসার নিরিক্ষা, স্থানীয় নিরীক্ষা দলের মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সার্ভিস, প্রতিরক্ষা অর্থ বিভাগের ধারাবাহিক নিরীক্ষা এবং অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর প্রদানকৃত সকল মঞ্জুরিপত্র নিরীক্ষা।
মিশন নিরীক্ষা অধিদপ্তর এই পরিদপ্তরের মহাপরিচালক বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন, ট্রেড কমিশন, বিদেশস্থ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও বিমানের অফিসের নিরীক্ষা কাজ করে থাকে। ১৯৮৪ সালে ইউএন অডিটর বোর্ডে বাংলাদেশের সদস্যপদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মিশন ও ইউএন অডিট ডাইরেক্টরেটকে পুর্নগঠন করে মিশন সার্ভিস ডাইরেক্টরেট নামকরণ করা হয়। ১৯৭৮ সালে মিশন ইউএন অডিট ডাইরেক্টরেট সৃষ্টির পূর্বে বাংলাদেশ মিশন, ট্রেড অফিস এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষা সিঅ্যান্ডএজি অফিস কর্তৃক সম্পন্ন করা হতো। মিশন নিরীক্ষা পরিদপ্তরের দায়িত্বগুলি হলো: নিরীক্ষা কার্যসূচির বাজেট তৈরি; নিরীক্ষা পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরীক্ষাদল গঠন; নিরীক্ষা দলের সদস্যদের যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান; বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সিএও-এর হিসাব নিরীক্ষা; বিভিন্ন বিভাগের নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির তদারক; বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি; সংসদের পাবলিক একাউন্টস কমিটিতে নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন।
কৃতি (পারফরমেন্স) নিরীক্ষা অধিদপ্তর অক্টোবর ২০০৫ সালে কৃতি নিরীক্ষা অধিদপ্তরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কৃতি নিরীক্ষাধীন অডিট হলো নিরীক্ষাধীন প্রতিষ্ঠানের সম্পদ ব্যবহারে মিতব্যয়ীতা, দক্ষতা ও কার্যকর ব্যবস্থা সম্পর্কে নিরপেক্ষা মূল্যায়ন। অধিকতর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিধিগত নিরীক্ষা ও অর্থসংশ্লিষ্ট নিরীক্ষার পাশাপাশি কৃতি নিরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কৃতি নিরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এই অধিদপ্তর যে দায়িত্ব পালন করে তা হচ্ছে- অন্যান্য নিরীক্ষা অধিদপ্তরের কৃতি নিরীক্ষা তদারক; কৃতি নিরীক্ষা সম্পাদন; নিরীক্ষা পদ্ধতির মানোন্নয়ের লক্ষ্যে গবেষণা উইং হিসেবে কার্যসম্পাদন; প্রশিক্ষন মডিউলের মানোন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ প্রদান এবং গুণগত মানসম্পন্ন চেকলিস্ট প্রণয়ন।
অর্থব্যবস্থাপনা একাডেমি (Financial Management Academy) নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের অফিসার ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য অর্থব্যবস্থাপনা একাডেমির মহাপরিচালকের দপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬২ সালে কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য নিরীক্ষা ও হিসাব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। স্বাধীনতার পর এই কেন্দ্রের মানোন্নয়ন করে এটিকে একজন মহাপরিচালকের অধীনে নিরীক্ষা এবং হিসাব প্রশিক্ষণ একাডেমি পুনঃনামকরণ করা হয়। ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই একাডেমির নাম পরিবর্তন করে অর্থব্যবস্থাপনা একাডেমি করা হয়। নিরীক্ষা ও হিসাব কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান এর প্রধান দায়িত্ব হলেও এই একাডেমি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আর্থিক প্রশিক্ষণের মূল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।
নিরীক্ষার প্রকার, পদ্ধতি ও কার্যপ্রণালী নিরীক্ষাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: যেমন, বিধিগত (রেগুলারিটি) অডিট, আর্থিক বিবরণী (ফাইনান্সিয়াল স্টেটমেন্ট) অডিট এবং কৃতি (পারফরমেন্স) অডিট। নিয়ম মাফিক নিরীক্ষা খুবই প্রথাগত। এর আওতায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক রীতিনীতি, আইন ও কার্যপ্রণালী মেনে চলেছে কিনা দেখার জন্য নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্তি ও ব্যয়, আর্থিক ব্যবস্থা ও লেনদেনের পরীক্ষা করা হয়। আর্থিক বিবরণীর নিরীক্ষা হলো আর্থিক বিবরণীগুলি নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের গঠিত আর্থিক অবস্থা প্রদর্শন করছে কি-না সে সম্পর্কে মতামত দেওয়ার জন্য আর্থিক বিবরণীর পরীক্ষা করা। এই নিরীক্ষা সরকারি এবং সরকারি মালিকানার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বণ্টন ও আর্থিক হিসাবের নিরীক্ষাকেও অন্তর্ভুক্ত করে। কৃতি নিরীক্ষার উদ্দেশ্য হলো সম্পদ ব্যবহারে কার্যকর, দক্ষতা ও মিতব্যয় স্তর অর্জন করা হয়েছে কি-না তা দেখা। এ লক্ষ্যে কৃতি নিরীক্ষককে সংগঠনের কার্য পরিকল্পনা, কার্যকারিতা, ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ও কার্যপ্রণালী পরীক্ষা করতে হয়। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে কৃতি নিরীক্ষা শুরু হয়েছে।
বিভিন্ন পরিদপ্তরে গৃহীত নিরীক্ষা পদ্ধতি প্রায় একই রকম। যদিও নিরীক্ষিত সংগঠনের বিভিন্নতার জন্য নিরীক্ষা পদ্ধতিতে কিছুটা বিভিন্নতা দেখা দিতে পারে। প্রত্যেকটি নিরীক্ষা অধিদপ্তর আর্থিক বৎসরের শুরুতে বর্ষভিত্তিতে নিরীক্ষা পরিকল্পনা তৈরি করে। এ কাজে নিরিক্ষাধীন অফিসের বাজেট এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যয়ের বিষয় বিবেচনা করা হয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে প্রতিবৎসর, কোন কোন ক্ষেত্রে দুই বৎসর অন্তর এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তিন বৎসর পরপর নিরীক্ষা করা হয়। মহাপরিচালক নিরীক্ষা পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকেন এবং তাঁকে একাজে উপ-পরিচালকগণ সাহায্য করেন। প্রত্যেকটি নিরীক্ষা দলে ঝুঁকি ও কাজের পরিমাণের ভিত্তিতে দুই/তিনজন সদস্য থাকেন। মহাপরিচালক নিরীক্ষা লেনদেনের পরিমাণ সম্পর্কে নিরীক্ষাদলকে নির্দেশ দিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে বিবেচ্য বিষয়গুলি হলো নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের পরিমাণ, ভাউচার সংখ্যা এবং খরচের প্রকৃতি। নিরীক্ষা কাজ শুরু করার পূর্বে নিরীক্ষা দলকে সংগঠনের প্রকৃতি, কার্যক্রম, উদ্দেশ্য, বার্ষিক বিবরণ এবং পূর্বের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের সাথে সুপরিচিত হতে হয়।
নিরীক্ষা দল নিরীক্ষিত সংগঠনকে নিরীক্ষা কাজ শুরু করার বেশ পূর্বেই নিরীক্ষা শুরু করার দিন এবং যে যে রেকর্ড নিরীক্ষা করা হবে তা জানিয়ে নোটিশ দিতে হয়। কোন অফিসের নিরীক্ষা কাজে অনুসৃত কার্যপ্রণালীতে অন্তর্ভুক্ত কাজগুলি হলো: প্রতিষ্ঠানের প্রধানের সাথে প্রাথমিক আলোচনা, নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য ও রেকর্ড সংগ্রহ, রেকর্ড পরীক্ষা, ঘটনা পরীক্ষা, তার বক্তব্যের পক্ষে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য সংগ্রহ, প্রাসঙ্গিক লোকজনের সাথে আলোচনা, উপসংহারে পৌঁছানো এবং বিবরণ তৈরি। নিরীক্ষাদল সাধারণত নিরীক্ষা কোড, ম্যানুয়েল এবং সরকারি নিরীক্ষানীতি মেনে চলে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিরীক্ষাদল নিরীক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশও অনুসরণ করে। নিরীক্ষা চলাকালে নিরীক্ষক কর্তৃক উত্থাপিত সকল প্রশ্নের জবাব নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানকে দিতে হয়। যে সকল প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় না তা ‘নিরীক্ষা অনুসন্ধান বিবরণীতে’ অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। প্রত্যেকটি নিরীক্ষা শেষে নিরীক্ষিত সংগঠনের প্রধানের সাথে নিরীক্ষাদল নিরীক্ষা প্রতিবেদন সম্পর্কে আলোচনা করে তার মতামত গ্রহণ করে। তারপর ‘নিরীক্ষা অনুসন্ধান বিবরণ’ তাকে দেওয়া হয়। অতঃপর খসড়া কাগজপত্র ও পর্যবেক্ষণ সংক্ষিপ্তসার সহকারে নিরীক্ষা অনুসন্ধান বিবরণী নিরীক্ষা উপ-পরিচালকের নিকট পুনঃপরীক্ষার জন্য জমা দেওয়া হয়। পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন, নিরীক্ষাকালে তার মন্তব্য চূড়ান্ত পরীক্ষা এবং অনুমোদনের জন্য মহাপরিচালকের নিকট জমা দেওয়া হয়।
গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম সম্বলিত অনুচ্ছেদগুলি প্রয়োজনীয় পরীক্ষার পর ‘অ্যাডভান্স প্যারা’ হিসেবে সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপকের নিকট প্রেরণ করা হয়। নিরীক্ষিত প্রতিষ্ঠানকে জবাব দেওয়ার জন্য চার সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়। জবাব পাওয়া না গেলে বা জবাব অসম্পূর্ণ হলে আরও দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুটি স্মারক দেওয়া হয়। চার সপ্তাহের সময় দিয়ে উক্ত অনুচ্ছেদ-সম্বলিত একটি ডিও লেটার অথবা ব্যবস্থাপনা-পত্র মূখ্য হিসাব কর্মকর্তা (প্রিন্সিপাল একাউন্টিং অফিসার)-কে দেওয়া হয়। যদি কোন জবাব পাওয়া না যায় অথবা জবাব সন্তোষজনক না হয় তাহলে নববই দিনের মধ্যে রিপোর্ট সম্পূর্ণ করে অনুমোদন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্তির জন্য সিঅ্যান্ডএজি-এর নিকট প্রেরণ করা হয়।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের অনুরোধে বিশেষ নিরীক্ষার ক্ষেত্রে সিঅ্যান্ডএজি-কে মাঠ নিরীক্ষকের নিকট থেকে নিরীক্ষা অনুসন্ধান রিপোর্ট পাবার পর ৬০ দিনের মধ্যে নিরীক্ষা রিপোর্ট চূড়ান্ত করতে হয়। নিরীক্ষা আপত্তিসমূহ নিরীক্ষিত পক্ষের সাথে আলোচনা, কোন কোন সময় দুই পক্ষ বা তিন পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা হয়। সময় নির্দিষ্ট থাকা সত্ত্বেও বাস্তবে খুব নগণ্যসংখ্যক প্রতিষ্ঠানই এ সময়সীমা পালন করে। নিরীক্ষা বিভাগ এবং নিরীক্ষিত সংগঠনের মধ্যে চিঠিপত্র আদান-প্রদানের জন্য অনেক সময় অতিবাহিত হয়। স্বল্প অর্থ জড়িত রয়েছে এমন মামুলি আকারের নিরীক্ষা আপত্তিসমূহ অথবা নিয়মানুগের প্রয়োগ রয়েছে এমন বিষয়গুলো সাধারণ অনুচ্ছেদ হিসেবে বিবেচিত। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত বিষয় নিষ্পত্তি করা হয়।
সিঅ্যান্ডএজি-র অনুমোদনের পর গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক অনিয়মসমূহ নিরীক্ষা মন্তব্য সহকারে বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন সিঅ্যান্ডএজি কর্তৃক গণপ্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতির নিকট সংসদে প্রেরণের জন্য উপস্থাপন করা হয়। সংসদে উপস্থাপিত প্রতিবেদন পাবলিক একাউন্টস (পিএসি) কমিটি কর্তৃক আলোচিত হয়। সংসদের একটি স্থায়ী কমিটি যা পাবলিক আন্ডারটেকিং কমিটি (পিইউসি) নামে পরিচিত সে কমিটি ‘সংসদ কার্যপ্রণালী বিধি’র বিধি ২৩৮ মোতাবেক সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা ও কার্যকরিতা সংশ্লিষ্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন পরীক্ষা করে দেখেন। [এম শামসুল আলম খান]