তালুকদার, কসিরউদ্দিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
অ (Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]") |
||
১১ নং লাইন: | ১১ নং লাইন: | ||
মে মাসের ২৯ তারিখে সকালবেলা আর্মির দু’জন সিপাহী তাঁর বাড়িতে আসে। তারা তাঁকে জানায় যে, কোনো তদন্তের ব্যাপারে তাঁকে থানায় যেতে হবে। তিনি সিপাহীদের সঙ্গে থানায় যান। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা গেছে যে, বগুড়া শহরের দক্ষিণে সামরিক ক্যান্টনমেন্টের নিকটে মাঝিরা বধ্যভূমিতে আরও এগারো জনের সঙ্গে তাঁকে হত্যা করা হয়। মাঝিরা বধ্যভূমি থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। | মে মাসের ২৯ তারিখে সকালবেলা আর্মির দু’জন সিপাহী তাঁর বাড়িতে আসে। তারা তাঁকে জানায় যে, কোনো তদন্তের ব্যাপারে তাঁকে থানায় যেতে হবে। তিনি সিপাহীদের সঙ্গে থানায় যান। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা গেছে যে, বগুড়া শহরের দক্ষিণে সামরিক ক্যান্টনমেন্টের নিকটে মাঝিরা বধ্যভূমিতে আরও এগারো জনের সঙ্গে তাঁকে হত্যা করা হয়। মাঝিরা বধ্যভূমি থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। | ||
বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কসিরউদ্দিন তালুকদারের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [ | বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কসিরউদ্দিন তালুকদারের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | ||
[[en:Talukder, Kosiruddin]] | [[en:Talukder, Kosiruddin]] |
১৬:২৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
তালুকদার, কসিরউদ্দিন (১৮৯৯-১৯৭১) চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। কসিরউদ্দিন তালুকদার ১৮৯৯ সালের ১৭ জুলাই বগুড়া জেলার দুপচাঁপিয়া থানার মহিষমুন্ডা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা নকিবউল্লাহ তালুকদার ছিলেন একজন জমিদার। তাঁর মাতা ফিরমন নেছা। কসিরউদ্দিন তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন সোনামুখী হাইস্কুলে। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা এবং কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯২৯ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
কসিরউদ্দিন তালুকদার ১৯৩০ সালে বগুড়া শহরে চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। তিনি বগুড়ার থানা রোডে ‘দি ইউনাইটেড মেডিক্যাল স্টোর’ নামে একটি ফার্মেসি প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফার্মেসি সংলগ্ন চেম্বারেই তিনি রুগীর চিকিৎসা করতেন। নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক ও জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব কসিরউদ্দিন তালুকদার অচিরেই এলাকার সর্বাধিক সফল চিকিৎসক হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। দরিদ্রদের বিনা পারিশ্রমিকে চিকিৎসা সেবাদান এবং বিনামূল্যে ঔষধ বিতরণের ফলে তিনি ‘হামার গরীবের ডাক্তার’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। কসিরউদ্দিন তালুকদার ছিলেন নীতিনিষ্ঠ, স্পষ্টবাদী এবং অন্যায়ের সঙ্গে আপসহীন। একজন সৌখিন গায়ক, আবৃত্তিকার ও ন্যাটাভিনেতা কসিরউদ্দিন বহুবিধ সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বগুড়া শহরে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের তিনি ছিলেন এক উদার পৃষ্ঠপোষক।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসে বগুড়ায় অসহযোগ আন্দোলন সংগঠনে কসিরউদ্দিন তালুকদারের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তিনি বগুড়ায় চিকিৎসকদের সংগঠিত করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এক বিশাল মিছিল সারা শহর প্রদক্ষিণ করে। মিছিল শেষে শহরের সাত মাথায় এক বিশাল জনসভায় তিনি সভাপতিত্ব করেন। সভায় বক্তৃতাকালে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নিতে জনগণের প্রতি আহবান জানান। ২৫ মার্চ রাতে নিরীহ জনগণের ওপর পাক বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ প্রতিহত করতে গিয়ে যারা আহত হন তাদের চিকিৎসা এবং যুদ্ধ শুরু হলে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় তিনি আত্মনিয়োগ করেন। কসিরউদ্দিন তালুকদার তাঁর পরিবার পরিজন নিয়ে ৬ এপ্রিল গোপনে বগুড়া শহর ছেড়ে তাঁর গ্রামের বাড়ি মহিষমুন্ডা চলে যান।
২২ এপ্রিল থেকে বগুড়া শহরে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচার ও নৃশংসতা বেড়ে যায়। পাকবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার দালালরা বাদুরতলায় কসিরউদ্দিন তালুকদারের বাড়ি ‘হোয়াইট হাউজ’ এবং থানা রোডে তাঁর ডিসপেন্সারিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, আসবাবপত্র তছনছ করে এবং মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রি লুট করে নিয়ে যায়। মে মাসের ৩ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে কসিরউদ্দিন তালুকদার বগুড়া শহরের নিকটবর্তী ঘোড়াগরি গ্রামে আত্মগোপন করে থাকেন এবং সেখানে তিনি শহর থেকে নিয়ে আসা আহত লোকদের চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন। মে মাসের ২১ তারিখে তিনি তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে শহরের বাড়িতে ফেরেন।
মে মাসের ২৯ তারিখে সকালবেলা আর্মির দু’জন সিপাহী তাঁর বাড়িতে আসে। তারা তাঁকে জানায় যে, কোনো তদন্তের ব্যাপারে তাঁকে থানায় যেতে হবে। তিনি সিপাহীদের সঙ্গে থানায় যান। এরপর তাঁর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। পরে জানা গেছে যে, বগুড়া শহরের দক্ষিণে সামরিক ক্যান্টনমেন্টের নিকটে মাঝিরা বধ্যভূমিতে আরও এগারো জনের সঙ্গে তাঁকে হত্যা করা হয়। মাঝিরা বধ্যভূমি থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে কসিরউদ্দিন তালুকদারের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]