জলপ্রপাত: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:WaterfallMadhabkunda.jpg|thumb|400px|right|জলপ্রপাত | [[Image:WaterfallMadhabkunda.jpg|thumb|400px|right|মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, সিলেট]] | ||
'''জলপ্রপাত''' (Waterfall) খাড়া বা লম্বভাবে নিপতিত জলরাশি। সহজে ক্ষয়শীল নরম শিলাতে অধিশায়িত কঠিন শিলার প্রায় আনুভূমিক স্তর নদীর প্রবাহকে যেখানে বাধাগ্রস্ত করেছে সে স্থানে জলপ্রপাত সংঘটিত হয়। আবার এ প্রবাহ যেখানে অধিত্যকার খাড়া মোড়, কোনো ঝুলন্ত উপত্যকার আকস্মিক প্রান্ত বা চ্যুতি রেখার খাড়া ঢাল বা কোনো উপকূলীয় খাড়া পাহাড়ের প্রান্তে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানেও জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ পর্বতমালার পশ্চিমে উঁচু শৃঙ্গ ও জলপ্রপাতসহ খাড়া ঢাল রয়েছে। দোলাজারী রেঞ্জের পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কটি উঁচু জলপ্রপাত রয়েছে। এর একটি ৬০ মিটার ও অন্যটি ৪০ মিটার উঁচু। চিম্বুক রেঞ্জের শুরু [[সাঙ্গু নদী|সাঙ্গু]] নদীর দক্ষিণে এবং মায়ানমারের ভেতরে তা ঢুকে গেছে। এর অন্যতম প্রধান শৃঙ্গ হচ্ছে লুলাইং (৭০২ মিটার)। লুলাইং শৃঙ্গের কাছে লুলাইং খালের একটি শাখায় একটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ১০৭ মিটার। আরও দক্ষিণে উপরামপারার কাছে আরেকটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ৪৫.৭৫ মিটার। | '''জলপ্রপাত''' (Waterfall) খাড়া বা লম্বভাবে নিপতিত জলরাশি। সহজে ক্ষয়শীল নরম শিলাতে অধিশায়িত কঠিন শিলার প্রায় আনুভূমিক স্তর নদীর প্রবাহকে যেখানে বাধাগ্রস্ত করেছে সে স্থানে জলপ্রপাত সংঘটিত হয়। আবার এ প্রবাহ যেখানে অধিত্যকার খাড়া মোড়, কোনো ঝুলন্ত উপত্যকার আকস্মিক প্রান্ত বা চ্যুতি রেখার খাড়া ঢাল বা কোনো উপকূলীয় খাড়া পাহাড়ের প্রান্তে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানেও জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ পর্বতমালার পশ্চিমে উঁচু শৃঙ্গ ও জলপ্রপাতসহ খাড়া ঢাল রয়েছে। দোলাজারী রেঞ্জের পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কটি উঁচু জলপ্রপাত রয়েছে। এর একটি ৬০ মিটার ও অন্যটি ৪০ মিটার উঁচু। চিম্বুক রেঞ্জের শুরু [[সাঙ্গু নদী|সাঙ্গু]] নদীর দক্ষিণে এবং মায়ানমারের ভেতরে তা ঢুকে গেছে। এর অন্যতম প্রধান শৃঙ্গ হচ্ছে লুলাইং (৭০২ মিটার)। লুলাইং শৃঙ্গের কাছে লুলাইং খালের একটি শাখায় একটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ১০৭ মিটার। আরও দক্ষিণে উপরামপারার কাছে আরেকটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ৪৫.৭৫ মিটার। | ||
[[Image:WaterfallShublong.jpg|thumb|400px|left|জলপ্রপাত | [[Image:WaterfallShublong.jpg|thumb|400px|left|শুভলং জলপ্রপাত, রাঙ্গামাটি]] | ||
দক্ষিণাঞ্চলীয় রেঞ্জেও বেশ কিছু জলপ্রপাত রয়েছে যেগুলি ২১ মিটার পর্যন্ত উঁচু। সীতাপাহাড়ে [[শিলছড়ি নদী|শিলছড়ি]] নদীর মুখ থেকে প্রায় ৩০৫ মিটার উজানে ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত একটি অনন্য ক্ষুদ্র জলপ্রপাত রয়েছে। উল্লম্ব জলপ্রপাতটি প্রায় ১৫.২৪ মিটার। এখানে নদীর ঢাল খাড়া হয়ে গেছে এবং ক্ষয়ের লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট, যা নদীটির তারুণ্যের ইঙ্গিতবাহী। শিলছড়ি নদী কর্ণফুলির একটি শাখা যা কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়কের উপর কাপ্তাই থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পর্বতমালায়ও কয়েকটি জলপ্রপাত আছে। এর মধ্যে উঁচু দুটির নাম সহস্রধারা। একটি লবণাক্ষছড়া অংশে এবং অন্যটি মাইক্রোওয়েভ স্টেশন রাস্তার ইকোপার্কে। এ জলপ্রপাত সমূহ বোকাবিল স্তরসমষ্টির বেলেপাথর ও কর্দমশিলা দ্বারা গঠিত। লবণাক্ষছড়া অংশের সহস্রধারার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। এটি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। সীতাকুন্ড পাহাড় শ্রেণীর মিরসরাই উপজেলা অংশে ও টেকনাফ-নীলা পাহাড় শ্রেণীর দক্ষিণ নীলা ভূগঠনে কয়েকটি অপূর্ব জলপ্রপাত রয়েছে। সিলেটের দক্ষিণবাগ রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে বড়লেখা উপজেলায় বিখ্যাত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। এখানে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এ জলপ্রপাত পাথারিয়া ভূগঠনে অবস্থিত এবং ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত। বাংলাদেশ সরকার মাধবকুন্ড ও সীতাকুন্ডের ইকোপার্কের সহস্রধারা জলপ্রপাতের কাছে পিকনিক স্পট, রেস্তোরাঁ ও পার্কিং সুবিধা গড়ে তুলেছে। সিলেটের মৌলভিবাজারের হারারগল ভূগঠন এলাকাতেও চিত্তাকর্ষক জলপ্রপাত রয়েছে। [সিফাতুল কাদের চৌধুরী] | দক্ষিণাঞ্চলীয় রেঞ্জেও বেশ কিছু জলপ্রপাত রয়েছে যেগুলি ২১ মিটার পর্যন্ত উঁচু। সীতাপাহাড়ে [[শিলছড়ি নদী|শিলছড়ি]] নদীর মুখ থেকে প্রায় ৩০৫ মিটার উজানে ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত একটি অনন্য ক্ষুদ্র জলপ্রপাত রয়েছে। উল্লম্ব জলপ্রপাতটি প্রায় ১৫.২৪ মিটার। এখানে নদীর ঢাল খাড়া হয়ে গেছে এবং ক্ষয়ের লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট, যা নদীটির তারুণ্যের ইঙ্গিতবাহী। শিলছড়ি নদী কর্ণফুলির একটি শাখা যা কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়কের উপর কাপ্তাই থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পর্বতমালায়ও কয়েকটি জলপ্রপাত আছে। এর মধ্যে উঁচু দুটির নাম সহস্রধারা। একটি লবণাক্ষছড়া অংশে এবং অন্যটি মাইক্রোওয়েভ স্টেশন রাস্তার ইকোপার্কে। এ জলপ্রপাত সমূহ বোকাবিল স্তরসমষ্টির বেলেপাথর ও কর্দমশিলা দ্বারা গঠিত। লবণাক্ষছড়া অংশের সহস্রধারার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। এটি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। সীতাকুন্ড পাহাড় শ্রেণীর মিরসরাই উপজেলা অংশে ও টেকনাফ-নীলা পাহাড় শ্রেণীর দক্ষিণ নীলা ভূগঠনে কয়েকটি অপূর্ব জলপ্রপাত রয়েছে। সিলেটের দক্ষিণবাগ রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে বড়লেখা উপজেলায় বিখ্যাত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। এখানে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এ জলপ্রপাত পাথারিয়া ভূগঠনে অবস্থিত এবং ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত। বাংলাদেশ সরকার মাধবকুন্ড ও সীতাকুন্ডের ইকোপার্কের সহস্রধারা জলপ্রপাতের কাছে পিকনিক স্পট, রেস্তোরাঁ ও পার্কিং সুবিধা গড়ে তুলেছে। সিলেটের মৌলভিবাজারের হারারগল ভূগঠন এলাকাতেও চিত্তাকর্ষক জলপ্রপাত রয়েছে। | ||
[সিফাতুল কাদের চৌধুরী] | |||
[[en:Waterfall]] | [[en:Waterfall]] |
১০:৩৬, ১৭ মে ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
জলপ্রপাত (Waterfall) খাড়া বা লম্বভাবে নিপতিত জলরাশি। সহজে ক্ষয়শীল নরম শিলাতে অধিশায়িত কঠিন শিলার প্রায় আনুভূমিক স্তর নদীর প্রবাহকে যেখানে বাধাগ্রস্ত করেছে সে স্থানে জলপ্রপাত সংঘটিত হয়। আবার এ প্রবাহ যেখানে অধিত্যকার খাড়া মোড়, কোনো ঝুলন্ত উপত্যকার আকস্মিক প্রান্ত বা চ্যুতি রেখার খাড়া ঢাল বা কোনো উপকূলীয় খাড়া পাহাড়ের প্রান্তে বাধাগ্রস্ত হয় সেখানেও জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের অধিকাংশ পর্বতমালার পশ্চিমে উঁচু শৃঙ্গ ও জলপ্রপাতসহ খাড়া ঢাল রয়েছে। দোলাজারী রেঞ্জের পূর্বাঞ্চলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কটি উঁচু জলপ্রপাত রয়েছে। এর একটি ৬০ মিটার ও অন্যটি ৪০ মিটার উঁচু। চিম্বুক রেঞ্জের শুরু সাঙ্গু নদীর দক্ষিণে এবং মায়ানমারের ভেতরে তা ঢুকে গেছে। এর অন্যতম প্রধান শৃঙ্গ হচ্ছে লুলাইং (৭০২ মিটার)। লুলাইং শৃঙ্গের কাছে লুলাইং খালের একটি শাখায় একটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ১০৭ মিটার। আরও দক্ষিণে উপরামপারার কাছে আরেকটি জলপ্রপাত আছে যার উচ্চতা ৪৫.৭৫ মিটার।
দক্ষিণাঞ্চলীয় রেঞ্জেও বেশ কিছু জলপ্রপাত রয়েছে যেগুলি ২১ মিটার পর্যন্ত উঁচু। সীতাপাহাড়ে শিলছড়ি নদীর মুখ থেকে প্রায় ৩০৫ মিটার উজানে ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত একটি অনন্য ক্ষুদ্র জলপ্রপাত রয়েছে। উল্লম্ব জলপ্রপাতটি প্রায় ১৫.২৪ মিটার। এখানে নদীর ঢাল খাড়া হয়ে গেছে এবং ক্ষয়ের লক্ষণগুলি সুস্পষ্ট, যা নদীটির তারুণ্যের ইঙ্গিতবাহী। শিলছড়ি নদী কর্ণফুলির একটি শাখা যা কাপ্তাই-চন্দ্রঘোনা সড়কের উপর কাপ্তাই থেকে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড পর্বতমালায়ও কয়েকটি জলপ্রপাত আছে। এর মধ্যে উঁচু দুটির নাম সহস্রধারা। একটি লবণাক্ষছড়া অংশে এবং অন্যটি মাইক্রোওয়েভ স্টেশন রাস্তার ইকোপার্কে। এ জলপ্রপাত সমূহ বোকাবিল স্তরসমষ্টির বেলেপাথর ও কর্দমশিলা দ্বারা গঠিত। লবণাক্ষছড়া অংশের সহস্রধারার উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। এটি হিন্দুদের একটি তীর্থস্থান। সীতাকুন্ড পাহাড় শ্রেণীর মিরসরাই উপজেলা অংশে ও টেকনাফ-নীলা পাহাড় শ্রেণীর দক্ষিণ নীলা ভূগঠনে কয়েকটি অপূর্ব জলপ্রপাত রয়েছে। সিলেটের দক্ষিণবাগ রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিমি দূরে বড়লেখা উপজেলায় বিখ্যাত মাধবকুন্ড জলপ্রপাত অবস্থিত। এখানে প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক ভিড় করে। ভূতাত্ত্বিকভাবে এ জলপ্রপাত পাথারিয়া ভূগঠনে অবস্থিত এবং ভূবন স্তরসমষ্টির শিলায় গঠিত। বাংলাদেশ সরকার মাধবকুন্ড ও সীতাকুন্ডের ইকোপার্কের সহস্রধারা জলপ্রপাতের কাছে পিকনিক স্পট, রেস্তোরাঁ ও পার্কিং সুবিধা গড়ে তুলেছে। সিলেটের মৌলভিবাজারের হারারগল ভূগঠন এলাকাতেও চিত্তাকর্ষক জলপ্রপাত রয়েছে।
[সিফাতুল কাদের চৌধুরী]