কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ''' উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন। হাওড়া ব্রিজ নামে বহুল পরিচিত। ১৮৭১ সালে বাংলা সরকারের আইন বিভাগ হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ করে (১৮৭১ সালের ৯ নং আইন)। এ আইনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকেকলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে হুগলি নদীর উপর আর্মেনিয়ান ঘাট বা তার আশেপাশে সরকারি অর্থায়নে একটি ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল ও গমনাগমনের জন্য পথ তৈরি ও সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট হারে টোল আদায় করার ক্ষমতাও তাঁকে প্রদান করা হয়।প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলের সাথে এই ব্রিজের পরিকল্পনা, নক্সা ও বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। কারিগরি কারণে ব্রিজের কিছু অংশ ইংল্যান্ডে তৈরি হয় এবং জাহাজে করে কলকাতা নিয়ে এসে তা প্রকল্প স্থানে জুড়ে দেওয়া হয়।
'''কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ'''   উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন। হাওড়া ব্রিজ নামে বহুল পরিচিত। ১৮৭১ সালে বাংলা সরকারের আইন বিভাগ হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ করে (১৮৭১ সালের ৯ নং আইন)। এ আইনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকেকলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে হুগলি নদীর উপর আর্মেনিয়ান ঘাট বা তার আশেপাশে সরকারি অর্থায়নে একটি ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল ও গমনাগমনের জন্য পথ তৈরি ও সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট হারে টোল আদায় করার ক্ষমতাও তাঁকে প্রদান করা হয়।প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলের সাথে এই ব্রিজের পরিকল্পনা, নক্সা ও বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। কারিগরি কারণে ব্রিজের কিছু অংশ ইংল্যান্ডে তৈরি হয় এবং জাহাজে করে কলকাতা নিয়ে এসে তা প্রকল্প স্থানে জুড়ে দেওয়া হয়।


[[Image:CalcuttaHowrahBridge.jpg|thumb|200px|right|কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ]]
[[Image:CalcuttaHowrahBridge.jpg|thumb|200px|right|কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ]]

০৫:৩১, ৫ আগস্ট ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ উনিশ শতকের সেতু প্রকৌশল ও প্রযুক্তির অন্যতম নিদর্শন। হাওড়া ব্রিজ নামে বহুল পরিচিত। ১৮৭১ সালে বাংলা সরকারের আইন বিভাগ হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ করে (১৮৭১ সালের ৯ নং আইন)। এ আইনে লেফটেন্যান্ট গভর্নরকেকলকাতা ও হাওড়ার মধ্যে হুগলি নদীর উপর আর্মেনিয়ান ঘাট বা তার আশেপাশে সরকারি অর্থায়নে একটি ব্রিজ নির্মাণের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে চলাচল ও গমনাগমনের জন্য পথ তৈরি ও সংরক্ষণ এবং নির্দিষ্ট হারে টোল আদায় করার ক্ষমতাও তাঁকে প্রদান করা হয়।প্রখ্যাত ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার ব্র্যাডফোর্ড লেসলের সাথে এই ব্রিজের পরিকল্পনা, নক্সা ও বাস্তবায়নের জন্য চুক্তি সম্পাদন করা হয়। কারিগরি কারণে ব্রিজের কিছু অংশ ইংল্যান্ডে তৈরি হয় এবং জাহাজে করে কলকাতা নিয়ে এসে তা প্রকল্প স্থানে জুড়ে দেওয়া হয়।

কলকাতা-হাওড়া ব্রিজ

১৮৭৪ সালে সমাপ্ত এ ব্রিজটি তখন পর্যন্ত বাংলা ও ভারতে তৈরি সর্ববৃহৎ ভাসমান অবকাঠামো হিসেবে বিবেচিত হতো। নির্মাণের সময় ১৮৭৪ সালের ২০ মার্চের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ে ব্রিজের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়। ঈগেরিয়া নামের একটি স্টিমারের নোঙর ছিঁড়ে ব্রিজের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে এবং ব্রিজের তিনটি পন্টুন ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ডুবে যায়। এর ফলে ব্রিজ অবকাঠামোর ২০০ ফুট স্থান সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ পুনর্নির্মাণ করে ১৮৭৪ সালের ১৭ অক্টোবর ব্রিজটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। নক্সা, উপকরণ এবং বাস্তবায়নের অভিনবত্ব ও মৌলিকত্বের জন্য সে সময় ব্রিজটি বিশেষ মর্যাদা লাভ করে। ১,৫২৮ ফুট দীর্ঘ এবং ৬২ ফুট প্রশস্ত ব্রিজটির উভয় পার্শ্বে ৭ ফুট প্রশস্ত পায়ে চলার পথ ছিল। আর মাঝখানে ৪৮ ফুট প্রশস্ত পথ ছিল গাড়ি চলাচলের জন্য। ব্রিজটি তৈরি করতে ব্যয় হয়েছিল প্রায় ৬০ লক্ষ রুপি। বর্তমান হাওড়া ব্রিজের প্রায় ১০০ গজ ভাটিতে এই পল্টুন ব্রিজটি অবস্থিত। কলকাতা বন্দর কমিশনাররা ১৮৭৫ সালে ব্রিজের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৭৯ সালে আগস্ট মাসে ব্রিজটির মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুটি স্থাপন করে। মল্লিকঘাট পাম্পিং স্টেশন থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুৎ দিয়ে ব্রিজ আলোকিতকরণের কাজ সম্পন্ন হয়।

বিশ শতকের প্রথমদিকে ব্রিজ কমিশনারগণ তৎকালীন কলকাতা বন্দরের প্রধান প্রকৌশলী জন স্কটের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটি প্রথমেই একটি নতুন ব্রিজ তৈরির বিষয়ে মনোযোগ দেয়। ১৯২২ সালে বাংলা সরকার নতুন হাওড়া ব্রিজ কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯২৬ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজ আইন পাশ হয় এবং কলকাতা বন্দর কমিশনারদের নতুন হাওড়া ব্রিজ কমিশনার হিসেবে ব্রিজ তৈরির কাজ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। নতুন হাওড়া ব্রিজ কমিশনারগণ ক্লিভল্যান্ড ব্রিজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে নতুন ব্রিজ তৈরির কাজ দেয়। ১৯৩৬ সালে ব্রিজ তৈরির কাজ শুরু হয় এবং ১৯৪২ সালে তা শেষ হয়। ১৯৪৩ সালে নতুন হাওড়া ব্রিজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং পুরনো ভাসমান পন্টুন ব্রিজটি প্রয়োজন মতো ব্যবহারের নিমিত্ত সংরক্ষণ করা হয়। নতুন ব্রিজটি তৈরির জন্য ২৬,৫০০ টন স্টিল ব্যবহূত হয় এবং এটি তৈরি করতে আনুমানিক ২০ লক্ষ রুপি ব্যয় হয়।

নতুন হাওড়া ব্রিজ একটি ঝুলন্ত ও ভারসাম্যময় বহির্বাহু সেতু। ব্রিজটি ৭০৫ মিটার লম্বা এবং ৩০ মিটার চওড়া। ব্রিজটির উভয় পার্শ্বে ১৫ ফুট প্রশস্ত পায়ে চলার পথ আছে। যানবাহন চলাচলের পথটি ৭১ ফুট চওড়া।

নতুন হাওড়া ব্রিজটি নির্মাণ জগতের বিস্ময়রূপে চিহ্নিত। ১৯৬৫ সালের ১৪ জুন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামে হাওড়া ব্রিজের নতুন নামকরণ হয় রবীন্দ্র সেতু। প্রতিদিন এই ব্রিজের উপর দিয়ে প্রায় দেড় লক্ষ যানবাহন এবং সম্ভবত ২ লক্ষাধিক লোক চলাচল করে। হাওড়া ব্রিজ পৃথিবীর সেরা কর্মচঞ্চল অন্যতম।  [সিরাজুল ইসলাম]