চৌধুরী, হবীবুল্লাহ বাহার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:ChowdhuryHabibullahBahar.jpg|thumb|right|হবীবুল্লাহ বাহার চৌধুরী]] | |||
'''চৌধুরী, হবীবুল্লাহ বাহার''' (১৯০৬-১৯৬৬) রাজনীতিক ও লেখক। ফেনী জেলার গুথুমা গ্রামে ১৯০৬ সালে তাঁর জন্ম। ১৯২২ সালে তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই.এস.সি পাস করেন। এ সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে হবীবুল্লাহ বাহার কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এ সময়ে তিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বি’ টিমে যোগ দেন এবং পরে তিনি এই টিমের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৩১ সালে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ‘এ’ টিমে উন্নীত হয়। ১৯৩২ সালে হবীবুল্লাহ বাহার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মাস্টার দা সূর্যসেনের বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁকে চাকরি দেয়া হয় নি। ১৯৩৩ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি বুলবুল নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। | '''চৌধুরী, হবীবুল্লাহ বাহার''' (১৯০৬-১৯৬৬) রাজনীতিক ও লেখক। ফেনী জেলার গুথুমা গ্রামে ১৯০৬ সালে তাঁর জন্ম। ১৯২২ সালে তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই.এস.সি পাস করেন। এ সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে হবীবুল্লাহ বাহার কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এ সময়ে তিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বি’ টিমে যোগ দেন এবং পরে তিনি এই টিমের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৩১ সালে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ‘এ’ টিমে উন্নীত হয়। ১৯৩২ সালে হবীবুল্লাহ বাহার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মাস্টার দা সূর্যসেনের বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁকে চাকরি দেয়া হয় নি। ১৯৩৩ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি বুলবুল নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন। | ||
হবীবুল্লাহ বাহার ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটির সহসভাপতি নিযুক্ত হন। এই কমিটি হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান রেঁনেসা সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ওই বছর বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন (১৯৪৫-৪৬)। ১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলার দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে এলে হবীবুল্লাহ বাহার তাঁর সফরসঙ্গী হন এবং এ সময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সিলেট রেফারেন্ডামে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের প্রথম মন্ত্রিসভায় হবীবুল্লাহ বাহার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন এবং সে সময় সাফল্যের সঙ্গে ‘মশক নিধন’ অভিযান পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেন। | হবীবুল্লাহ বাহার ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটির সহসভাপতি নিযুক্ত হন। এই কমিটি হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান রেঁনেসা সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ওই বছর বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন (১৯৪৫-৪৬)। ১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলার দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে এলে হবীবুল্লাহ বাহার তাঁর সফরসঙ্গী হন এবং এ সময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সিলেট রেফারেন্ডামে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের প্রথম মন্ত্রিসভায় হবীবুল্লাহ বাহার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন এবং সে সময় সাফল্যের সঙ্গে ‘মশক নিধন’ অভিযান পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেন। | ||
১৯৪৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হবীবুল্লাহ বাহার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। | ১৯৪৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হবীবুল্লাহ বাহার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি। |
১০:৫০, ২৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
চৌধুরী, হবীবুল্লাহ বাহার (১৯০৬-১৯৬৬) রাজনীতিক ও লেখক। ফেনী জেলার গুথুমা গ্রামে ১৯০৬ সালে তাঁর জন্ম। ১৯২২ সালে তিনি চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই.এস.সি পাস করেন। এ সময় তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে হবীবুল্লাহ বাহার কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন। এ সময়ে তিনি একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ‘বি’ টিমে যোগ দেন এবং পরে তিনি এই টিমের অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বে ১৯৩১ সালে কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব ‘এ’ টিমে উন্নীত হয়। ১৯৩২ সালে হবীবুল্লাহ বাহার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কিন্তু মাস্টার দা সূর্যসেনের বিপ্লবী আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তাঁকে চাকরি দেয়া হয় নি। ১৯৩৩ সালে তিনি সাংবাদিকতা পেশায় নিয়োজিত হন। এ সময় তিনি বুলবুল নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেন।
হবীবুল্লাহ বাহার ১৯৩৭ সালে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের নির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৩৯ সালে তিনি সিরাজউদ্দৌলা স্মৃতি কমিটির সহসভাপতি নিযুক্ত হন। এই কমিটি হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ১৯৪৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান রেঁনেসা সোসাইটি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৪ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ওই বছর বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করেন। পাকিস্তান আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন (১৯৪৫-৪৬)। ১৯৪৬ সালে তিনি ফেনীর পরশুরাম নির্বাচনী এলাকা থেকে বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৭ সালে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সময় মহাত্মা গান্ধী নোয়াখালী জেলার দাঙ্গা বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনে এলে হবীবুল্লাহ বাহার তাঁর সফরসঙ্গী হন এবং এ সময় তিনি মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে সিলেট রেফারেন্ডামে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের প্রথম মন্ত্রিসভায় হবীবুল্লাহ বাহার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন এবং সে সময় সাফল্যের সঙ্গে ‘মশক নিধন’ অভিযান পরিচালনা করে সুনাম অর্জন করেন।
১৯৪৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তান স্পোর্টস ফেডারেশন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে হবীবুল্লাহ বাহার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি।
১৯৫৩ সালে হবীবুল্লাহ বাহার হূদরোগে আক্রান্ত হলে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন এবং রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি সাহিত্যচর্চা ও সমাজকর্মে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থ পাকিস্তান, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, ওমর ফারুক, আমীর আলী। ১৯৬৬ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। [রফিকুল আকবর]