শাঁখা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ২টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
২ নং লাইন: ২ নং লাইন:
'''শাঁখা'''  সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে তৈরি এবং হিন্দু ধর্মীয় বৈবাহিক রীতির একটি অলঙ্কার। হাতের বালার মতো এই অলঙ্কার বিবাহিত হিন্দু মহিলারা ব্যবহার করেন। বিবাহের মন্ত্র পড়ার সময় কনের পিতা কনের হাতে দুটি শাঁখা দিয়ে থাকেন, স্বামীও স্ত্রীর জন্য শাঁখা কিনে আনেন। হিন্দু রমণীরা তাঁদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা যত্ন সহকারে ব্যবহার করেন। কাটা বা ভাঙ্গা শাঁখা ব্যবহার করা অমঙ্গল ও শঙ্কাজনক মানসিকতার সৃষ্টি করে। এ শাঁখা স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতীক। সাধারণ শঙ্খে ডান থেকে বামে গোলাকার মোড় দেখা যায়। যখন কোন শঙ্খে বিপরীতমুখী মোড় দেখা যায়, সে শঙ্খকে অতি মূল্যবান বলে ধরা হয় ও সেটিকে বলা হয় ‘দক্ষিণবার্তা’ বা সৌভাগ্যবান শঙ্খ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ শঙ্খকে পবিত্র শঙ্খ বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা বিষ্ণু এ ধরনের শঙ্খ হাতে ধারণ করে থাকেন। ওলন্দাজ জাতির কাছেও শঙ্খ পবিত্র বলে চিহ্নিত। আকৃতি অনুযায়ী শঙ্খগুলিকে কয়েক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন: পদ্ম শঙ্খ (যা বিষ্ণু ধারণ করেন), বাদ্য শঙ্খ (যা মন্দিরে ফুঁ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়), জল শঙ্খ (পূজা-অর্চনায় ব্যবহূত হয়), গোমুখ শঙ্খ (ধর্মীয় কাজে ব্যবহার-অযোগ্য), সাধারণ শঙ্খ ইত্যাদি। ঢাকার শাঁখারি পট্টির শাঁখারিরা এই হস্তশিল্পে পারদর্শী। অতীতে অনেকে অলস মুহূর্তে বসে শাঁখার অলঙ্কার তৈরি করত। ঢাকার শাঁখারি বাজারে আজও অনেকে শাঁখা খোদাইকরণের পেশায় নিয়োজিত।
'''শাঁখা'''  সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে তৈরি এবং হিন্দু ধর্মীয় বৈবাহিক রীতির একটি অলঙ্কার। হাতের বালার মতো এই অলঙ্কার বিবাহিত হিন্দু মহিলারা ব্যবহার করেন। বিবাহের মন্ত্র পড়ার সময় কনের পিতা কনের হাতে দুটি শাঁখা দিয়ে থাকেন, স্বামীও স্ত্রীর জন্য শাঁখা কিনে আনেন। হিন্দু রমণীরা তাঁদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা যত্ন সহকারে ব্যবহার করেন। কাটা বা ভাঙ্গা শাঁখা ব্যবহার করা অমঙ্গল ও শঙ্কাজনক মানসিকতার সৃষ্টি করে। এ শাঁখা স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতীক। সাধারণ শঙ্খে ডান থেকে বামে গোলাকার মোড় দেখা যায়। যখন কোন শঙ্খে বিপরীতমুখী মোড় দেখা যায়, সে শঙ্খকে অতি মূল্যবান বলে ধরা হয় ও সেটিকে বলা হয় ‘দক্ষিণবার্তা’ বা সৌভাগ্যবান শঙ্খ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ শঙ্খকে পবিত্র শঙ্খ বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা বিষ্ণু এ ধরনের শঙ্খ হাতে ধারণ করে থাকেন। ওলন্দাজ জাতির কাছেও শঙ্খ পবিত্র বলে চিহ্নিত। আকৃতি অনুযায়ী শঙ্খগুলিকে কয়েক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন: পদ্ম শঙ্খ (যা বিষ্ণু ধারণ করেন), বাদ্য শঙ্খ (যা মন্দিরে ফুঁ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়), জল শঙ্খ (পূজা-অর্চনায় ব্যবহূত হয়), গোমুখ শঙ্খ (ধর্মীয় কাজে ব্যবহার-অযোগ্য), সাধারণ শঙ্খ ইত্যাদি। ঢাকার শাঁখারি পট্টির শাঁখারিরা এই হস্তশিল্পে পারদর্শী। অতীতে অনেকে অলস মুহূর্তে বসে শাঁখার অলঙ্কার তৈরি করত। ঢাকার শাঁখারি বাজারে আজও অনেকে শাঁখা খোদাইকরণের পেশায় নিয়োজিত।


[[Image:Shankha1.jpg|right|thumbnail|400px|শাঁখা]]
সাধারণ শঙ্খ ও গোমুখ শঙ্খ বিশেষ ধরনের করাত দিয়ে গোলাকার করে কেটে বিভিন্ন আকারের বলয় তৈরি করা হয়। সাদামাটা তিনটি কাষ্ঠখন্ড একসাথে বেঁধে ইজেলের মতো একটি বস্তুর উপরে শাঁখা বলয়টি রেখে শিল্পী মাটিতে বসে বিশেষ ‘রেত’ ও ‘দা’ দিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে কাজ করেন। বিশেষ ধরনের শিল-এ ঘষে এসব বলয় মসৃণ করা হয় ও বিভিন্ন নকশা অাঁকা হয়। এসব নকশা বহুকাল ধরে একই গোত্রের চিন্তার ফসল। প্রায় ২৫ রকমের কাটা নকশায় শাঁখা বলয় সজ্জিত হয়। এসব নকশার মধ্যে আছে মাছ, পাখি, লতা, পদ্মকলি, শাপলার পাপড়ি, জংলি ফুলের কলি, ধানের ছড়া বা শিষ, শিউলির আদল ইত্যাদি। প্রতিটি শাঁখার জোড়া অংশ নিখুঁতভাবে লাগানো হয় ও নকশা দ্বারা সজ্জিত হতে হয়। ফলে জোড়া লাগানো অংশ চোখে পড়ে না।  
সাধারণ শঙ্খ ও গোমুখ শঙ্খ বিশেষ ধরনের করাত দিয়ে গোলাকার করে কেটে বিভিন্ন আকারের বলয় তৈরি করা হয়। সাদামাটা তিনটি কাষ্ঠখন্ড একসাথে বেঁধে ইজেলের মতো একটি বস্তুর উপরে শাঁখা বলয়টি রেখে শিল্পী মাটিতে বসে বিশেষ ‘রেত’ ও ‘দা’ দিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে কাজ করেন। বিশেষ ধরনের শিল-এ ঘষে এসব বলয় মসৃণ করা হয় ও বিভিন্ন নকশা অাঁকা হয়। এসব নকশা বহুকাল ধরে একই গোত্রের চিন্তার ফসল। প্রায় ২৫ রকমের কাটা নকশায় শাঁখা বলয় সজ্জিত হয়। এসব নকশার মধ্যে আছে মাছ, পাখি, লতা, পদ্মকলি, শাপলার পাপড়ি, জংলি ফুলের কলি, ধানের ছড়া বা শিষ, শিউলির আদল ইত্যাদি। প্রতিটি শাঁখার জোড়া অংশ নিখুঁতভাবে লাগানো হয় ও নকশা দ্বারা সজ্জিত হতে হয়। ফলে জোড়া লাগানো অংশ চোখে পড়ে না।  
[[Image:Shankha.jpg|thumb|right|শাঁখা]]


ধনী পরিবারের মনোরঞ্জনের জন্য যেসব শাঁখায় নকশা তোলা হয়, সেগুলি বেশি মূল্যে বিক্রয় করা হয়। এগুলিতে মাছ, মকর, প্রজাপতি, কলসি, কলকে, পদ্মকলি, শাপলাকলি, ধানছড়া, গাঁদাফুল, গোলাপ ফুল, আঙুর পাতা, হীরামন, বাঁশরেখা ইত্যাদি অঙ্কিত হয়। নকশা অনুযায়ী এগুলি বাঁশরেখী, কারনিশদার, খায়েশা, বাচাদার, ফুলতরঙ্গ, ডায়মন্ড কাটিং, মকরচেহারা, রঙ্গিলা, রামলক্ষ্মণ, ধানছড়ি, পদ্মকলি শাঁখা নামে পরিচিত। সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য স্বল্প দামের শাঁখাগুলিতে জলজ ফুলের নকশা অঙ্কিত থাকে। শাঁখার মধ্যে সোনার তারের ব্যবহারও হয়। এতে ধর্মীয় আবেদন মিশ্রিত আছে বলেই এ শিল্প আজও বেঁচে আছে। শাঁখা শিল্পে আজকাল বিদ্যুৎচালিত এক ধরনের গোলাকার করাতও ব্যবহূত হচ্ছে।  [হাবিবা খাতুন]
ধনী পরিবারের মনোরঞ্জনের জন্য যেসব শাঁখায় নকশা তোলা হয়, সেগুলি বেশি মূল্যে বিক্রয় করা হয়। এগুলিতে মাছ, মকর, প্রজাপতি, কলসি, কলকে, পদ্মকলি, শাপলাকলি, ধানছড়া, গাঁদাফুল, গোলাপ ফুল, আঙুর পাতা, হীরামন, বাঁশরেখা ইত্যাদি অঙ্কিত হয়। নকশা অনুযায়ী এগুলি বাঁশরেখী, কারনিশদার, খায়েশা, বাচাদার, ফুলতরঙ্গ, ডায়মন্ড কাটিং, মকরচেহারা, রঙ্গিলা, রামলক্ষ্মণ, ধানছড়ি, পদ্মকলি শাঁখা নামে পরিচিত। সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য স্বল্প দামের শাঁখাগুলিতে জলজ ফুলের নকশা অঙ্কিত থাকে। শাঁখার মধ্যে সোনার তারের ব্যবহারও হয়। এতে ধর্মীয় আবেদন মিশ্রিত আছে বলেই এ শিল্প আজও বেঁচে আছে। শাঁখা শিল্পে আজকাল বিদ্যুৎচালিত এক ধরনের গোলাকার করাতও ব্যবহূত হচ্ছে।  [হাবিবা খাতুন]


''আরও দেখুন'' শঙ্খশিল্প।
''আরও দেখুন'' [[শঙ্খশিল্প|শঙ্খশিল্প]]।


[[en:Shankha]]
[[en:Shankha]]

০৯:০৬, ১২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

শাঁখা  সামুদ্রিক শঙ্খ থেকে তৈরি এবং হিন্দু ধর্মীয় বৈবাহিক রীতির একটি অলঙ্কার। হাতের বালার মতো এই অলঙ্কার বিবাহিত হিন্দু মহিলারা ব্যবহার করেন। বিবাহের মন্ত্র পড়ার সময় কনের পিতা কনের হাতে দুটি শাঁখা দিয়ে থাকেন, স্বামীও স্ত্রীর জন্য শাঁখা কিনে আনেন। হিন্দু রমণীরা তাঁদের স্বামীর মঙ্গলকামনায় শাঁখা যত্ন সহকারে ব্যবহার করেন। কাটা বা ভাঙ্গা শাঁখা ব্যবহার করা অমঙ্গল ও শঙ্কাজনক মানসিকতার সৃষ্টি করে। এ শাঁখা স্বামীর প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসার প্রতীক। সাধারণ শঙ্খে ডান থেকে বামে গোলাকার মোড় দেখা যায়। যখন কোন শঙ্খে বিপরীতমুখী মোড় দেখা যায়, সে শঙ্খকে অতি মূল্যবান বলে ধরা হয় ও সেটিকে বলা হয় ‘দক্ষিণবার্তা’ বা সৌভাগ্যবান শঙ্খ। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এ শঙ্খকে পবিত্র শঙ্খ বলা হয়। প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী দেবতা বিষ্ণু এ ধরনের শঙ্খ হাতে ধারণ করে থাকেন। ওলন্দাজ জাতির কাছেও শঙ্খ পবিত্র বলে চিহ্নিত। আকৃতি অনুযায়ী শঙ্খগুলিকে কয়েক নামে অভিহিত করা হয়, যেমন: পদ্ম শঙ্খ (যা বিষ্ণু ধারণ করেন), বাদ্য শঙ্খ (যা মন্দিরে ফুঁ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়), জল শঙ্খ (পূজা-অর্চনায় ব্যবহূত হয়), গোমুখ শঙ্খ (ধর্মীয় কাজে ব্যবহার-অযোগ্য), সাধারণ শঙ্খ ইত্যাদি। ঢাকার শাঁখারি পট্টির শাঁখারিরা এই হস্তশিল্পে পারদর্শী। অতীতে অনেকে অলস মুহূর্তে বসে শাঁখার অলঙ্কার তৈরি করত। ঢাকার শাঁখারি বাজারে আজও অনেকে শাঁখা খোদাইকরণের পেশায় নিয়োজিত।

শাঁখা

সাধারণ শঙ্খ ও গোমুখ শঙ্খ বিশেষ ধরনের করাত দিয়ে গোলাকার করে কেটে বিভিন্ন আকারের বলয় তৈরি করা হয়। সাদামাটা তিনটি কাষ্ঠখন্ড একসাথে বেঁধে ইজেলের মতো একটি বস্তুর উপরে শাঁখা বলয়টি রেখে শিল্পী মাটিতে বসে বিশেষ ‘রেত’ ও ‘দা’ দিয়ে গভীর মনোযোগ সহকারে কাজ করেন। বিশেষ ধরনের শিল-এ ঘষে এসব বলয় মসৃণ করা হয় ও বিভিন্ন নকশা অাঁকা হয়। এসব নকশা বহুকাল ধরে একই গোত্রের চিন্তার ফসল। প্রায় ২৫ রকমের কাটা নকশায় শাঁখা বলয় সজ্জিত হয়। এসব নকশার মধ্যে আছে মাছ, পাখি, লতা, পদ্মকলি, শাপলার পাপড়ি, জংলি ফুলের কলি, ধানের ছড়া বা শিষ, শিউলির আদল ইত্যাদি। প্রতিটি শাঁখার জোড়া অংশ নিখুঁতভাবে লাগানো হয় ও নকশা দ্বারা সজ্জিত হতে হয়। ফলে জোড়া লাগানো অংশ চোখে পড়ে না।

ধনী পরিবারের মনোরঞ্জনের জন্য যেসব শাঁখায় নকশা তোলা হয়, সেগুলি বেশি মূল্যে বিক্রয় করা হয়। এগুলিতে মাছ, মকর, প্রজাপতি, কলসি, কলকে, পদ্মকলি, শাপলাকলি, ধানছড়া, গাঁদাফুল, গোলাপ ফুল, আঙুর পাতা, হীরামন, বাঁশরেখা ইত্যাদি অঙ্কিত হয়। নকশা অনুযায়ী এগুলি বাঁশরেখী, কারনিশদার, খায়েশা, বাচাদার, ফুলতরঙ্গ, ডায়মন্ড কাটিং, মকরচেহারা, রঙ্গিলা, রামলক্ষ্মণ, ধানছড়ি, পদ্মকলি শাঁখা নামে পরিচিত। সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য স্বল্প দামের শাঁখাগুলিতে জলজ ফুলের নকশা অঙ্কিত থাকে। শাঁখার মধ্যে সোনার তারের ব্যবহারও হয়। এতে ধর্মীয় আবেদন মিশ্রিত আছে বলেই এ শিল্প আজও বেঁচে আছে। শাঁখা শিল্পে আজকাল বিদ্যুৎচালিত এক ধরনের গোলাকার করাতও ব্যবহূত হচ্ছে।  [হাবিবা খাতুন]

আরও দেখুন শঙ্খশিল্প