কোলব্রুক, হেনরি টমাস: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''কোলব্রুক, হেনরি টমাস''' (১৭৬৫-১৮৩৬)  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সিভিলিয়ান। কালক্রমে তিনি প্রাচ্যবিদ হিসেবে প্রাচ্যবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাকর্মে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র চেয়ারম্যান স্যার জর্জ কোলব্রুকের পুত্র। প্রাচ্যবিদ্যার জ্ঞান আহরণে হেনরি টমাস ছিলেন যথার্থই স্যার উইলিয়ম জোনসের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরসূরি। উইলিয়ম [[জোনস, স্যার উইলিয়ম|জোনস]] এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন (১৭৮৪), আর টমাস কোলব্রুক প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে এটিকে প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার এক মহতী কেন্দ্রে পরিণত করেন। [[বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি|এশিয়াটিক সোসাইটি]]র সভাপতি (১৮০৭) কোলব্রুক এক খন্ড জমি সংগ্রহ করে সেখানে সোসাইটির স্থায়ী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং সরকারের নিকট থেকে আবর্তক অনুদান লাভে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম এশিয়াটিক সোসাইটির জন্য বই, পান্ডুলিপি, [[মুদ্রা|মুদ্রা]] ও [[শিলালিপি|শিলালিপি]] সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কোম্পানির সিভিল সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহণের পর (১৮১৫) কোলব্রুক লন্ডনে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। ফলে ১৮২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি তার পরিচালক নিযুক্ত হন।
'''কোলব্রুক, হেনরি টমাস''' (১৭৬৫-১৮৩৬)  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সিভিলিয়ান। কালক্রমে তিনি প্রাচ্যবিদ হিসেবে প্রাচ্যবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাকর্মে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন [[ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি|ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি]]র চেয়ারম্যান স্যার জর্জ কোলব্রুকের পুত্র। প্রাচ্যবিদ্যার জ্ঞান আহরণে হেনরি টমাস ছিলেন যথার্থই স্যার উইলিয়ম জোনসের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরসূরি। [[জোনস, স্যার উইলিয়ম|উইলিয়ম জোনস]] এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন (১৭৮৪), আর টমাস কোলব্রুক প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে এটিকে প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার এক মহতী কেন্দ্রে পরিণত করেন। [[বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি|এশিয়াটিক সোসাইটি]]র সভাপতি (১৮০৭) কোলব্রুক এক খন্ড জমি সংগ্রহ করে সেখানে সোসাইটির স্থায়ী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং সরকারের নিকট থেকে আবর্তক অনুদান লাভে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম এশিয়াটিক সোসাইটির জন্য বই, পান্ডুলিপি, [[মুদ্রা|মুদ্রা]] ও [[শিলালিপি|শিলালিপি]] সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কোম্পানির সিভিল সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহণের পর (১৮১৫) কোলব্রুক লন্ডনে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। ফলে ১৮২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি তার পরিচালক নিযুক্ত হন।


ত্রিহুতে সহকারী রেভিনিউ কালেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকাকালে কোলব্রুক সংস্কৃত ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী হন। চার্লস উইলকিন্স তাকে সংস্কৃত অধ্যয়নে অনুপ্রাণিত করেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ১৮০১ সালের পূর্ব পর্যন্ত কোলব্রুক সংস্কৃত শিক্ষার চেয়ে অর্থনৈতিক তথ্যানুসন্ধানের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। কর্মসূত্রে বাংলার বিভিন্ন জেলায় অবস্থানকালে হেনরি যে সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তা তিনি তার বিখ্যাত Remarks on the Husbandry and Internal Commerce of Bengal (১৭৯১) শীর্ষক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তবে অচিরেই তিনি সংস্কৃত শিক্ষায় ঐকান্তিকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। মূল সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে রচিত উইলিয়ম জোনসের Digest of Hindu Laws গ্রন্থটির সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষায় তার পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে তিনি ‘এশিয়াটিক রিসার্চেজ’ জার্নালে হিন্দুধর্ম, জাতিভেদ প্রথা, নৃগোষ্ঠীতত্ত্ব, আইন ও লোকাচার বিষয়ক বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৮০১ সালে তিনি সদর দীউয়ানি আদালতের বিচারক এবং ১৮০৪ সালে প্রধান বিচারক নিযুক্ত হন। ১৮০৭ থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত তিনি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৮১৫ সালে অবসর গ্রহণ করে  [[কলকাতা|কলকাতা]] ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত হেনরি টমাস
ত্রিহুতে সহকারী রেভিনিউ কালেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকাকালে কোলব্রুক সংস্কৃত ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী হন। চার্লস উইলকিন্স তাকে সংস্কৃত অধ্যয়নে অনুপ্রাণিত করেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ১৮০১ সালের পূর্ব পর্যন্ত কোলব্রুক সংস্কৃত শিক্ষার চেয়ে অর্থনৈতিক তথ্যানুসন্ধানের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। কর্মসূত্রে বাংলার বিভিন্ন জেলায় অবস্থানকালে হেনরি যে সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তা তিনি তার বিখ্যাত Remarks on the Husbandry and Internal Commerce of Bengal (১৭৯১) শীর্ষক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তবে অচিরেই তিনি সংস্কৃত শিক্ষায় ঐকান্তিকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। মূল সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে রচিত উইলিয়ম জোনসের Digest of Hindu Laws গ্রন্থটির সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষায় তার পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে তিনি ‘এশিয়াটিক রিসার্চেজ’ জার্নালে হিন্দুধর্ম, জাতিভেদ প্রথা, নৃগোষ্ঠীতত্ত্ব, আইন ও লোকাচার বিষয়ক বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৮০১ সালে তিনি সদর দীউয়ানি আদালতের বিচারক এবং ১৮০৪ সালে প্রধান বিচারক নিযুক্ত হন। ১৮০৭ থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত তিনি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৮১৫ সালে অবসর গ্রহণ করে  [[কলকাতা|কলকাতা]] ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত হেনরি টমাস

০৮:৩০, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

কোলব্রুক, হেনরি টমাস (১৭৬৫-১৮৩৬)  ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন সিভিলিয়ান। কালক্রমে তিনি প্রাচ্যবিদ হিসেবে প্রাচ্যবিদ্যা বিষয়ক গবেষণাকর্মে সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির চেয়ারম্যান স্যার জর্জ কোলব্রুকের পুত্র। প্রাচ্যবিদ্যার জ্ঞান আহরণে হেনরি টমাস ছিলেন যথার্থই স্যার উইলিয়ম জোনসের বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরসূরি। উইলিয়ম জোনস এশিয়াটিক সোসাইটি অব বেঙ্গল প্রতিষ্ঠা করেন (১৭৮৪), আর টমাস কোলব্রুক প্রতিষ্ঠানটির পূর্ণাঙ্গ রূপ দিয়ে এটিকে প্রাচ্যবিদ্যা চর্চার এক মহতী কেন্দ্রে পরিণত করেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি (১৮০৭) কোলব্রুক এক খন্ড জমি সংগ্রহ করে সেখানে সোসাইটির স্থায়ী দপ্তর প্রতিষ্ঠা করেন এবং সরকারের নিকট থেকে আবর্তক অনুদান লাভে সক্ষম হন। তিনিই প্রথম এশিয়াটিক সোসাইটির জন্য বই, পান্ডুলিপি, মুদ্রাশিলালিপি সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কোম্পানির সিভিল সার্ভিস থেকে অবসর গ্রহণের পর (১৮১৫) কোলব্রুক লন্ডনে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। ফলে ১৮২৩ সালে রয়্যাল এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি তার পরিচালক নিযুক্ত হন।

ত্রিহুতে সহকারী রেভিনিউ কালেক্টর হিসেবে কর্মরত থাকাকালে কোলব্রুক সংস্কৃত ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী হন। চার্লস উইলকিন্স তাকে সংস্কৃত অধ্যয়নে অনুপ্রাণিত করেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু ১৮০১ সালের পূর্ব পর্যন্ত কোলব্রুক সংস্কৃত শিক্ষার চেয়ে অর্থনৈতিক তথ্যানুসন্ধানের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়েন। কর্মসূত্রে বাংলার বিভিন্ন জেলায় অবস্থানকালে হেনরি যে সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন তা তিনি তার বিখ্যাত Remarks on the Husbandry and Internal Commerce of Bengal (১৭৯১) শীর্ষক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। তবে অচিরেই তিনি সংস্কৃত শিক্ষায় ঐকান্তিকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। মূল সংস্কৃত গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে রচিত উইলিয়ম জোনসের Digest of Hindu Laws গ্রন্থটির সংশোধন ও পরিমার্জনের মাধ্যমে সংস্কৃত ভাষায় তার পান্ডিত্যের পরিচয় পাওয়া যায়। মাঝেমধ্যে তিনি ‘এশিয়াটিক রিসার্চেজ’ জার্নালে হিন্দুধর্ম, জাতিভেদ প্রথা, নৃগোষ্ঠীতত্ত্ব, আইন ও লোকাচার বিষয়ক বহু নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ১৮০১ সালে তিনি সদর দীউয়ানি আদালতের বিচারক এবং ১৮০৪ সালে প্রধান বিচারক নিযুক্ত হন। ১৮০৭ থেকে ১৮১২ সাল পর্যন্ত তিনি গভর্নর জেনারেলের কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ১৮১৫ সালে অবসর গ্রহণ করে  কলকাতা ত্যাগের পূর্ব পর্যন্ত হেনরি টমাস

ফোর্ট উইলিয়ম কলেজ এর হিন্দু আইন ও সংস্কৃত বিভাগের অবৈতনিক অধ্যাপক ছিলেন।কোলব্রুক বেদ, সংস্কৃত ব্যাকরণ, ভারতীয় ব্যবহারশাস্ত্র, ভারতীয় বীজগণিত ও গণিত এবং ভারতীয় জ্যোতির্বিদ্যা ও ভূগোল বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। প্রাচীন ভারতীয় ভূগোল-পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি হিমালয় পর্বতের উচচতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন এবং নিশ্চিত হন যে, এটিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত। তার এ ধারণা পরবর্তী সময়ে সত্য বলে প্রমাণিত হয়। তার Algebra of the Hindus (১৮১৭) গ্রন্থে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ভারতে যখন বিজ্ঞানের বিকাশ ঘটে তখনও ইংল্যান্ড প্রস্তর যুগেই ছিল। কোলব্রুক ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের জন্য ‘অমরকোষ’ শীর্ষক সংস্কৃত অভিধান রচনাও সম্পাদনা করেন (১৮০৮)। তিনি জীমুতবাহন কর্তৃক রচিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন বিষয়ক দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দায়ভাগ’ ও ‘মিতাক্ষর’ অনুবাদ করে ১৮১০ সালে প্রকাশিত তার Hindu Law of Inheritance গ্রন্থে সন্নিবেশিত করেন। প্রাচ্যবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে বিরাট অবদানের জন্য সব ক‘টি রয়্যাল সোসাইটি জীবদ্দশায়ই তাঁর ভূয়শী প্রশংসা করে এবং মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির প্রতি উচ্ছ্বসিত ভাষায় শ্রদ্ধা নিবেদন করে।  [সিরাজুল ইসলাম]