বগুড়া জেলা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(হালনাগাদ)
 
(একজন ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত ৪টি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না)
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''বগুড়া জেলা''' ([[রাজশাহী বিভাগ|রাজশাহী বিভাগ]])  আয়তন: ২৮৯৫.০১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৫°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৮´ থেকে ৮৯°৪৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলা, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পূর্বে যমুনা নদী ও জামালপুর জেলা, পশ্চিমে নওগাঁ ও নাটোর জেলা।
'''বগুড়া জেলা''' ([[রাজশাহী বিভাগ|রাজশাহী বিভাগ]])  আয়তন: ২৮৯৮.৬৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৫°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৮´ থেকে ৮৯°৪৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলা, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পূর্বে যমুনা নদী ও জামালপুর জেলা, পশ্চিমে নওগাঁ ও নাটোর জেলা।


''জনসংখ্যা'' ৩০১৩০৫৬; পুরুষ ১৫৪৭৩৪১, মহিলা ১৪৬৫৭১৫। মুসলিম ২৮১৯৪৩২, হিন্দু ১৯১৫২৮, বৌদ্ধ ৬৬৬, খ্রিস্টান ২৯৭ এবং অন্যান্য ১১৩৩।
''জনসংখ্যা'' ৩৪০০৮৭৪ ; পুরুষ ১৭০৮৮০৬, মহিলা ১৬৯২০৬৮। মুসলিম ৩১৯২৭২৮, হিন্দু ২০৫৩৩৩, বৌদ্ধ ১১৫, খ্রিস্টান ৮৬৩ এবং অন্যান্য ১৮৩৫।


''জলাশয়'' প্রধান নদী: করতোয়া, যমুনা, নাগর, বাঙ্গালী।
''জলাশয়'' প্রধান নদী: করতোয়া, যমুনা, নাগর, বাঙ্গালী।
১৬ নং লাইন: ১৬ নং লাইন:
| শহর  || গ্রাম  
| শহর  || গ্রাম  
|-  
|-  
| ২৮৯৮.২৫ || ১২ || ৫  || ১০৮ || ১৭৮২  || ২৬৯৫ || ৩৮৯০৬৯  || ২৬২৩৯৮৭ || ১০৪০ || ৪১.
| ২৮৯৮.৬৮ || ১২ || ১১ || ১০৮ || ১৬৭২ || ২৬১৮ || ৬৭০৩৮৮ || ২৭৩০৪৮৬ || ১১৭৩ || ৪৯.
|}
|}
{| class="table table-bordered table-hover"
{| class="table table-bordered table-hover"
২২ নং লাইন: ২২ নং লাইন:
| colspan= "10" | জেলা অন্যান্য তথ্য
| colspan= "10" | জেলা অন্যান্য তথ্য
|-
|-
| rowspan= "2" | আয়তন (বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | উপজেলা  || rowspan= "2" | পৌরসভা  || rowspan= "2" | ইউনিয়ন  || rowspan= "2" | মৌজা  || rowspan= "2" | গ্রাম  || colspan= "2" | জনসংখ্যা || rowspan= "2" | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || rowspan= "2" | শিক্ষার হার (%)
| উপজেলার নাম || আয়তন (বর্গ কিমি)  || পৌরসভা  || ইউনিয়ন  || মৌজা  || গ্রাম  || জনসংখ্যা || ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)  || শিক্ষার হার (%)
|-
| শহর  || গ্রাম
|-  
|-  
|  
| [[আদমদীঘি উপজেলা|আদমদীঘি]]  || ১৬৮.৮৩  || ১ || ৬ || ১০২ || ১৭৯ || ১৯৫১৮৬  || ১১৫৬ || ৫৪.৬
|-  
|-  
| [[আদমদীঘি উপজেলা|আদমদীঘি]] || ১৬৮.৮৪ || ১ || ৬  || ১১২  || ১৭৮ || ১৮৭০১২ || ১১০৮  || ৫০.
| [[কাহালু উপজেলা|কাহালু]] || ২৪০.৪২ || ১ || || ১৬২ || ২৬৪ || ২২২৩৭৬ || ৯২৫ || ৫২.
|-  
|-  
| [[কাহালু উপজেলা|কাহালু]] || ২৩৮.৭৯ || || ৯  || ১৬৭  || ২৭০ || ১৯৫৫৬৫ || ৮১৯  || ৪৭.
| [[গাবতলী উপজেলা|গাবতলী]] || ২৩৯.৬১ || || ১১ || ১০৪ || ২১১ || ৩১৯৫৮৮ || ১৩৪৬ || ৪৬.
|-  
|-  
| [[গাবতলী উপজেলা|গাবতলী]]  || ২৩৯.৬০ || || ১১  || ১০৬ || ২১৪  || ২৯০১৯০ || ১২১১  || ৩৯.৭
| [[দুপচাঁচিয়া উপজেলা|দুপচাঁচিয়া]]  || ১৬২.৪৪ || || || ১০৯ || ২১২ || ১৭৬৬৭৮ || ১০৮৮ || ৫১.৭
|-  
|-  
| [[দুপচাঁচিয়া উপজেলা|দুপচাঁচিয়া]]  || ১৬২.৪৫ || ১ || ৬  || ১১৫  || ২১২  || ১৬০৮৯৪ || ৯৯০  || ৪৫.
| [[ধুনট উপজেলা|ধুনট]]  || ২৪৭.৭৩ || ১ || ১০ || ৯০ || ২০৭ || ২৯২৪০৪ || ১১৮০ || ৩৫.
|-  
|-  
| [[ধুনট উপজেলা|ধুনট]]  || ২৪৭.৭৩ || || ১০  || ৯১  || ২১০ || ২৭০৮১০ || ১০৯৩  || ৩১.
| [[নন্দীগ্রাম উপজেলা|নন্দীগ্রাম]]  || ২৬৫.২২ || || || ২২১ || ২২৮ || ১৮০৮০২ || ৬৮২ || ৪৭.
|-  
|-  
| [[নন্দীগ্রাম উপজেলা|নন্দীগ্রাম]]  || ২৬৫.৪৭ || || ৫  || ২৩৫  || ২৪৫  || ১৬৮১৫৫ || ৬৩৩  || ৪২.
| [[বগুড়া সদর উপজেলা|বগুড়া সদর]]  || ১৭৬.৫৮ || || ১১ || ১৩৯ || ২০৮ || ৫৫৫০১৪ || ৩১৪৩ || ৬৫.
|-  
|-  
| [[বগুড়া সদর উপজেলা|বগুড়া সদর]]  || ১৯৭.৭৫ || ১  || ১১  || ১৩৯  || ২০৮  || ৬৯৪০৭৭ || ২৫৩৬  || ৫৫.
| [[শাজাহানপুর উপজেলা|শাজাহানপুর]]  || ২২১.৬৯ || - || ১০ || ১২০ || ১৬৬ || ২৮৯৮০৪ || ১৩০৭ || ৫৭.
|-  
|-  
| [[শাজাহানপুর উপজেলা|শাজাহানপুর]]  || ২১৫.৬৪ || || ১০  || ১৩১  || ১৩১ || ২৩৪৩৬৫ || ১০৮৭  || ৪৮.৫৯
| [[শিবগঞ্জ উপজেলা (বগুড়া)|শিবগঞ্জ]]  || ৩১৪.৯২ || || ১২ || ২৩৭ || ৪০৯ || ৩৭৮৭০০ || ১২০৩ || ৪৪.
|-  
|-  
| [[শিবগঞ্জ উপজেলা (বগুড়া)|শিবগঞ্জ]]  || ৩১৫.৯২ || || ১২  || ২৪৫  || ৪২৯ || ৩৫২৪১৫ || ১১১৮  || ৩৬.০
| [[শেরপুর উপজেলা (বগুড়া)|শেরপুর]]  || ২৯৫.৯৩ || || ১০ || ২২৩ || ৩২২ || ৩৩২৮২৫ || ১১২৫ || ৪৩.০
|-  
|-  
| [[শেরপুর উপজেলা (বগুড়া)|শেরপুর]]  || ২৯৬.২৭ || ১ || ৯  || ২২৪  || ৩১৯ || ২৮৬৩০৮ || ৯৬৬  || ৩৬.
| [[সারিয়াকান্দি উপজেলা|সারিয়াকান্দি]]  || ৪০৮.৫০ || ১ || ১২ || ১১৭ || ১৭৩ || ২৭০৭১৯ || ৬৬৩ || ৩৬.
|-  
|-  
| [[সারিয়াকান্দি উপজেলা|সারিয়াকান্দি]]  || ৪০৮.৪৫  || ১  || ১২  || ১২০  || ১৪৬  || ২৪০০৮৩  || ৫৮৮  || ৩২.৩
| [[সোনাতলা উপজেলা|সোনাতলা]]  || ১৫৬.৭৫ || || ৭ || ৯৪ || ১২৫ || ১৮৬৭৭৮ || ১১৯১ || ৪৩.
|-
| [[সোনাতলা উপজেলা|সোনাতলা]]  || ১৫৬.৭৩ || || ৭ || ১০৩  || ১৩১ || ১৬৭৫৪৭ || ১০৬৯  || ৩৭.
|}
|}
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
''সূত্র'' আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।


[[Image:BograDistrict.jpg|thumb|400px|right]]
[[Image:BograDistrict.jpg|thumb|400px|right]]
''মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি''  ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বগুড়া সদরে ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রজনতা অভিযান চালিয়ে ২৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ৩ টি গাড়ি ধ্বংস করে। ৪ এপ্রিল পাকবাহিনী শিবগঞ্জের ময়দানহাট্টার বামাচরণ মজুমদার পরিবারের ১৬ জনকে হত্যা করে। ১১ এপ্রিল তারা মন্মথ চন্দ্র কুন্ডু ও তার পরিবারের ৮ জনকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বগুড়া সদরের জলেশ্বরীতলাস্থ ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান’-এ হামলা করে প্রায় চার কোটি টাকা লুট করে উক্ত টাকা যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য তৎকালীন মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের হাতে অর্পণ করেন। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ধুনট থানা আক্রমণ করলে ১ জন নিহত হয়। ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্যাঙ্কবহর নিয়ে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে জঙ্গি বিমান থেকে শহরে বোমা নিক্ষেপ করলে ৩ জন বাঙালি মারা যায়। এসময় সদরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত প্রতিরোধ লড়াই ও চোরাগুপ্তা হামলায় ২০ জন পাকসেনা এবং ১৫০ জন বাঙালি নিহত হয়। ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার বাঘড়া কলোনী গ্রামের ৩২ জন লোককে ধরে এনে তাদের মধ্যে ২৫ জনকে ইটখোলার বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘোগাব্রিজের নিকট ৩০০ জন ও ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী বন্দরে ৩৩ জন লোককে হত্যা করে এবং বন্দরের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। একইদিন দড়িমুকন্দ গ্রামে তাদের অত্যাচারে ২৬ জন গ্রামবাসি নিহত হয়। ২৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর ধুনট থানা আক্রমণে ৫ জন সিপাহী মারা যায়। ২৮ এপ্রিল নন্দীগ্রাম উপজেলার বামন গ্রামে পাকবাহিনীর আরো একটি গণহত্যায় ১৫৭ জন লোক মারা যায় এবং তারা সোনাতলা রেলস্টেশন বাজারে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামের শতাধিক লোককে এবং ৪ মে ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের ৩ জনকে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট সারিয়াকান্দির রামচন্দ্রপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর খন্ড লড়াইয়ে সারিয়াকান্দি থানার ১ জন দারোগাসহ ৫ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী সোনাতলা বন্দরের নিকটস্থ বাজারে ৩ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা সারিয়াকান্দি রাস্তার একটি ব্রিজ ধ্বংস করে। ব্রিজের দূরবর্তী স্থানে পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে ১ জন অফিসারসহ ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি আসার পথে ফুলবাড়ীঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন পাকপুলিশকে হত্যা করে। ৭ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী ধুনট উপজেলার ১৭ জন লোককে হত্যা করে থানার পাশে গণকবরে পুঁতে রাখে। ১৯ সেপ্টেম্বর সারিয়াকান্দির তাজুরপাড়া গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। ২০ অক্টোবর তারা নারচী ও গণকপাড়া গ্রামের কয়েকজন লোককে হত্যা করে। ১১ নভেম্বর পাকবাহিনী শাজাহানপুর উপজেলার বিবিরপুকুরে ১৪ জন লোককে হত্যা করে গণকবর দেয়। ২৮ নভেম্বর সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সারিয়াকান্দি থানা আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকারসহ ১৮ জন নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ধুনট উপজেলায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ৩ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার মারা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর সরলপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
''মুক্তিযুদ্ধ''  ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বগুড়া সদরে ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রজনতা অভিযান চালিয়ে ২৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ৩টি গাড়ি ধ্বংস করে। ৪ এপ্রিল পাকবাহিনী শিবগঞ্জের ময়দানহাট্টার বামাচরণ মজুমদার পরিবারের ১৬ জনকে হত্যা করে। ১১ এপ্রিল তারা মন্মথ চন্দ্র কুণ্ডু ও তার পরিবারের ৮ জনকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বগুড়া সদরের জলেশ্বরীতলাস্থ ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান’-এ হামলা করে প্রায় চার কোটি টাকা লুট করে উক্ত টাকা যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য তৎকালীন মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের হাতে অর্পণ করেন। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ধুনট থানা আক্রমণ করলে ১ জন নিহত হয়। ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্যাঙ্কবহর নিয়ে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে জঙ্গি বিমান থেকে শহরে বোমা নিক্ষেপ করলে ৩ জন বাঙালি মারা যায়। এসময় সদরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত প্রতিরোধ লড়াই ও চোরাগুপ্তা হামলায় ২০ জন পাকসেনা এবং ১৫০ জন বাঙালি নিহত হয়। ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার বাঘড়া কলোনী গ্রামের ৩২ জন লোককে ধরে এনে তাদের মধ্যে ২৫ জনকে ইটখোলার বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘোগাব্রিজের নিকট ৩০০ জন ও ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী বন্দরে ৩৩ জন লোককে হত্যা করে এবং বন্দরের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। একইদিন দড়িমুকন্দ গ্রামে তাদের অত্যাচারে ২৬ জন গ্রামবাসী নিহত হয়। ২৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর ধুনট থানা আক্রমণে ৫ জন সিপাহী মারা যায়। ২৮ এপ্রিল নন্দীগ্রাম উপজেলার বামন গ্রামে পাকবাহিনীর আরো একটি গণহত্যায় ১৫৭ জন লোক মারা যায় এবং তারা সোনাতলা রেলস্টেশন বাজারে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামের শতাধিক লোককে এবং ৪ মে ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের ৩ জনকে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট সারিয়াকান্দির রামচন্দ্রপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর খণ্ড লড়াইয়ে সারিয়াকান্দি থানার ১ জন দারোগাসহ ৫ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী সোনাতলা বন্দরের নিকটস্থ বাজারে ৩ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা সারিয়াকান্দি রাস্তার একটি ব্রিজ ধ্বংস করে। ব্রিজের দূরবর্তী স্থানে পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে ১ জন অফিসারসহ ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি আসার পথে ফুলবাড়ীঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন পাকপুলিশকে হত্যা করে। ৭ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী ধুনট উপজেলার ১৭ জন লোককে হত্যা করে থানার পাশে গণকবরে পুঁতে রাখে। ১৯ সেপ্টেম্বর সারিয়াকান্দির তাজুরপাড়া গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। ২০ অক্টোবর তারা নারচী ও গণকপাড়া গ্রামের কয়েকজন লোককে হত্যা করে। ১১ নভেম্বর পাকবাহিনী শাজাহানপুর উপজেলার বিবিরপুকুরে ১৪ জন লোককে হত্যা করে গণকবর দেয়। ২৮ নভেম্বর সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সারিয়াকান্দি থানা আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকারসহ ১৮ জন নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ধুনট উপজেলায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ৩ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার মারা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর সরলপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জেলার ৫টি স্থানে (তালোড়া দুপচাঁচিয়া সড়কের পাশে পদ্মপুকুর, শাজাহানপুরের বিবির পুকুর, নন্দীগ্রামের বামন গ্রাম, সোনাতলার হারিয়াকান্দি ধুনট থানার পাশে) গণকবর এবং শেরপুরের বাঘড়া কলোনী গ্রামে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে; কাহালু উচ্চ বিদ্যালয়, আদমদীঘির শ্মশানঘাট এবং ধুনটে ৩টি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
 
''মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন'' গণকবর ৫ (তালোড়া দুপচাঁচিয়া সড়কের পাশে পদ্মপুকুর নামক স্থান, শাজাহানপুরের বিবির পুকুর, নন্দীগ্রামের বামন গ্রাম, সোনাতলার হারিয়াকান্দি, ধুনট থানার পাশে); বধ্যভূমি ১ (শেরপুরের বাঘড়া কলোনী গ্রাম); স্মৃতিস্তম্ভ ৩ (কাহালু উচ্চ বিদ্যালয় স্মৃতিসৌধ, আদমদীঘির শ্মশানঘাট স্মৃতিস্তম্ভ, ধুনট শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ)।


''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪২.%; পুরুষ ৪৮%, মহিলা ৩৭.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (১৯৯২), সরকারি আজিজুল হক কলেজ (১৯৩৯), বগুড়া জেলা স্কুল (১৮৫৩), বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), কাহালু উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), সোনাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আদমদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গোসাইবাড়ী এএ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), শিবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪), নওখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০১), দেবডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), ছাগলধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), সারিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), হাটফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), সোন্দাবাড়ি দারুল হাদীস রহমানীয়া মাদ্রাসা (১৭০০), সরকারি মোস্তাফাবীয়া আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২৫)।
''শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান'' গড় হার ৪৯.%; পুরুষ ৫২.৯%, মহিলা ৪৫.%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (১৯৯২), সরকারি আজিজুল হক কলেজ (১৯৩৯), বগুড়া জেলা স্কুল (১৮৫৩), বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), কাহালু উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), সোনাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আদমদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গোসাইবাড়ী এএ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), শিবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪), নওখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০১), দেবডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), ছাগলধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), সারিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), হাটফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), সোন্দাবাড়ি দারুল হাদীস রহমানীয়া মাদ্রাসা (১৭০০), সরকারি মোস্তাফাবীয়া আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২৫)।


''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৫৭.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৯%, শিল্প ১.৭২%, ব্যবসা ১৩.৬৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬২%, চাকরি ৭.৬৬%, নির্মাণ ৪.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৩% এবং অন্যান্য ৭.২৭%।
''জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস'' কৃষি ৫৭.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৯%, শিল্প ১.৭২%, ব্যবসা ১৩.৬৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬২%, চাকরি ৭.৬৬%, নির্মাণ ৪.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৩% এবং অন্যান্য ৭.২৭%।
৭১ নং লাইন: ৬৫ নং লাইন:
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।
''আরও দেখুন'' সংশ্লিষ্ট উপজেলা।


'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বগুড়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; বগুড়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।
'''তথ্যসূত্র'''  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বগুড়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; বগুড়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।


[[en:Bogra District]]
[[en:Bogra District]]

১৫:৩২, ২৮ মে ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

বগুড়া জেলা (রাজশাহী বিভাগ)  আয়তন: ২৮৯৮.৬৮ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩২´ থেকে ২৫°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৫৮´ থেকে ৮৯°৪৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা জেলা, দক্ষিণে নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পূর্বে যমুনা নদী ও জামালপুর জেলা, পশ্চিমে নওগাঁ ও নাটোর জেলা।

জনসংখ্যা ৩৪০০৮৭৪ ; পুরুষ ১৭০৮৮০৬, মহিলা ১৬৯২০৬৮। মুসলিম ৩১৯২৭২৮, হিন্দু ২০৫৩৩৩, বৌদ্ধ ১১৫, খ্রিস্টান ৮৬৩ এবং অন্যান্য ১৮৩৫।

জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, যমুনা, নাগর, বাঙ্গালী।

প্রশাসন জেলা-শহর প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৫০ সালে। বগুড়া পৌরসভা গঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। রাজশাহী জেলার ৪টি থানা (আদমদীঘি, বগুড়া, শেরপুর ও নওখিল), দিনাজপুরের ৩টি থানা (লালবাজার, বদলগাছী ও ক্ষেতলাল) এবং রংপুরের ২টি থানাসহ (গোবিন্দগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ) মোট নয়টি থানা নিয়ে ১৮২১ সালে বগুড়া জেলা গঠিত হয়। পরবর্তীতে জেলার প্রাথমিক কাঠামো থেকে ৯টি থানা বাদ দিয়ে নুতন সাতটি থানা সংযোজন করে বৃহত্তর বগুড়া জেলা গঠন করা হয়। বগুড়া জেলাকে ১৯৮৩ সালে বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলায় ভাগ করা হয়।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
২৮৯৮.৬৮ ১২ ১১ ১০৮ ১৬৭২ ২৬১৮ ৬৭০৩৮৮ ২৭৩০৪৮৬ ১১৭৩ ৪৯.৪
জেলা অন্যান্য তথ্য
উপজেলার নাম আয়তন (বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
আদমদীঘি ১৬৮.৮৩ ১০২ ১৭৯ ১৯৫১৮৬ ১১৫৬ ৫৪.৬
কাহালু ২৪০.৪২ ১৬২ ২৬৪ ২২২৩৭৬ ৯২৫ ৫২.১
গাবতলী ২৩৯.৬১ ১১ ১০৪ ২১১ ৩১৯৫৮৮ ১৩৪৬ ৪৬.৬
দুপচাঁচিয়া ১৬২.৪৪ ১০৯ ২১২ ১৭৬৬৭৮ ১০৮৮ ৫১.৭
ধুনট ২৪৭.৭৩ ১০ ৯০ ২০৭ ২৯২৪০৪ ১১৮০ ৩৫.৬
নন্দীগ্রাম ২৬৫.২২ ২২১ ২২৮ ১৮০৮০২ ৬৮২ ৪৭.৫
বগুড়া সদর ১৭৬.৫৮ ১১ ১৩৯ ২০৮ ৫৫৫০১৪ ৩১৪৩ ৬৫.৭
শাজাহানপুর ২২১.৬৯ - ১০ ১২০ ১৬৬ ২৮৯৮০৪ ১৩০৭ ৫৭.৭
শিবগঞ্জ ৩১৪.৯২ ১২ ২৩৭ ৪০৯ ৩৭৮৭০০ ১২০৩ ৪৪.১
শেরপুর ২৯৫.৯৩ ১০ ২২৩ ৩২২ ৩৩২৮২৫ ১১২৫ ৪৩.০
সারিয়াকান্দি ৪০৮.৫০ ১২ ১১৭ ১৭৩ ২৭০৭১৯ ৬৬৩ ৩৬.৯
সোনাতলা ১৫৬.৭৫ ৯৪ ১২৫ ১৮৬৭৭৮ ১১৯১ ৪৩.২

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ বগুড়া সদরে ক্যাপ্টেন গিয়াসের নেতৃত্বে ছাত্রজনতা অভিযান চালিয়ে ২৩ জন পাকসেনাকে হত্যা করে ও ৩টি গাড়ি ধ্বংস করে। ৪ এপ্রিল পাকবাহিনী শিবগঞ্জের ময়দানহাট্টার বামাচরণ মজুমদার পরিবারের ১৬ জনকে হত্যা করে। ১১ এপ্রিল তারা মন্মথ চন্দ্র কুণ্ডু ও তার পরিবারের ৮ জনকে হত্যা করে। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বগুড়া সদরের জলেশ্বরীতলাস্থ ‘স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান’-এ হামলা করে প্রায় চার কোটি টাকা লুট করে উক্ত টাকা যুদ্ধের ব্যয় নির্বাহের জন্য তৎকালীন মুজিবনগর অস্থায়ী সরকারের হাতে অর্পণ করেন। ১৯ এপ্রিল পাকবাহিনী ধুনট থানা আক্রমণ করলে ১ জন নিহত হয়। ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী ট্যাঙ্কবহর নিয়ে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে জঙ্গি বিমান থেকে শহরে বোমা নিক্ষেপ করলে ৩ জন বাঙালি মারা যায়। এসময় সদরের বিভিন্ন জায়গায় সংঘটিত প্রতিরোধ লড়াই ও চোরাগুপ্তা হামলায় ২০ জন পাকসেনা এবং ১৫০ জন বাঙালি নিহত হয়। ২৫ এপ্রিল পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার বাঘড়া কলোনী গ্রামের ৩২ জন লোককে ধরে এনে তাদের মধ্যে ২৫ জনকে ইটখোলার বধ্যভূমিতে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী ঘোগাব্রিজের নিকট ৩০০ জন ও ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী বন্দরে ৩৩ জন লোককে হত্যা করে এবং বন্দরের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি করে। একইদিন দড়িমুকন্দ গ্রামে তাদের অত্যাচারে ২৬ জন গ্রামবাসী নিহত হয়। ২৭ এপ্রিল পাকবাহিনীর ধুনট থানা আক্রমণে ৫ জন সিপাহী মারা যায়। ২৮ এপ্রিল নন্দীগ্রাম উপজেলার বামন গ্রামে পাকবাহিনীর আরো একটি গণহত্যায় ১৫৭ জন লোক মারা যায় এবং তারা সোনাতলা রেলস্টেশন বাজারে ৩ জনকে গুলি করে হত্যা করে। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকবাহিনী শেরপুর উপজেলার কল্যাণী গ্রামের শতাধিক লোককে এবং ৪ মে ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের ৩ জনকে হত্যা করে। ১৬ আগস্ট সারিয়াকান্দির রামচন্দ্রপুর গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর খণ্ড লড়াইয়ে সারিয়াকান্দি থানার ১ জন দারোগাসহ ৫ জন পাকসেনা ও কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। ৬ মে পাকবাহিনী সোনাতলা বন্দরের নিকটস্থ বাজারে ৩ জন লোককে গুলি করে হত্যা করে। আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা সারিয়াকান্দি রাস্তার একটি ব্রিজ ধ্বংস করে। ব্রিজের দূরবর্তী স্থানে পুঁতে রাখা মাইন বিষ্ফোরণে ১ জন অফিসারসহ ৬ জন পাকসেনা নিহত হয়। ৪ সেপ্টেম্বর বগুড়া থেকে সারিয়াকান্দি আসার পথে ফুলবাড়ীঘাটে মুক্তিযোদ্ধারা ৬ জন পাকপুলিশকে হত্যা করে। ৭ সেপ্টেম্বর পাকবাহিনী ধুনট উপজেলার ১৭ জন লোককে হত্যা করে থানার পাশে গণকবরে পুঁতে রাখে। ১৯ সেপ্টেম্বর সারিয়াকান্দির তাজুরপাড়া গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে বেশসংখ্যক পাকসেনা নিহত হয়। ২০ অক্টোবর তারা নারচী ও গণকপাড়া গ্রামের কয়েকজন লোককে হত্যা করে। ১১ নভেম্বর পাকবাহিনী শাজাহানপুর উপজেলার বিবিরপুকুরে ১৪ জন লোককে হত্যা করে গণকবর দেয়। ২৮ নভেম্বর সারিয়াকান্দি উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ২৯ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সারিয়াকান্দি থানা আক্রমণে পাকসেনা ও রাজাকারসহ ১৮ জন নিহত হয় এবং ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৬ ডিসেম্বর ধুনট উপজেলায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ৩ জন পাকসেনা ও ২ জন রাজাকার মারা যায়। শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর সরলপুর গ্রামে পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। জেলার ৫টি স্থানে (তালোড়া দুপচাঁচিয়া সড়কের পাশে পদ্মপুকুর, শাজাহানপুরের বিবির পুকুর, নন্দীগ্রামের বামন গ্রাম, সোনাতলার হারিয়াকান্দি ও ধুনট থানার পাশে) গণকবর এবং শেরপুরের বাঘড়া কলোনী গ্রামে ১টি বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে; কাহালু উচ্চ বিদ্যালয়, আদমদীঘির শ্মশানঘাট এবং ধুনটে ৩টি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৯.৪%; পুরুষ ৫২.৯%, মহিলা ৪৫.৯%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (১৯৯২), সরকারি আজিজুল হক কলেজ (১৯৩৯), বগুড়া জেলা স্কুল (১৮৫৩), বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), কাহালু উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৭৩), সোনাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), আদমদীঘি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), গোসাইবাড়ী এএ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), তালোড়া আলতাফ আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), শিবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৩১), দুপচাঁচিয়া পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৪), নওখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০১), দেবডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), ছাগলধরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৪), সারিয়াকান্দি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), হাটফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), কাজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), সোন্দাবাড়ি দারুল হাদীস রহমানীয়া মাদ্রাসা (১৭০০), সরকারি মোস্তাফাবীয়া আলীয়া মাদ্রাসা (১৯২৫)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৭.৩২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৩৯%, শিল্প ১.৭২%, ব্যবসা ১৩.৬৩%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৬২%, চাকরি ৭.৬৬%, নির্মাণ ৪.৫৯%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৩% এবং অন্যান্য ৭.২৭%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: বাংলাদেশ, করতোয়া, সাতমাথা, দূর্জয় বাংলা, আজ ও আগামীকাল, চাঁদনীবাজার, উত্তরকোণ, বগুড়া, উত্তরাঞ্চল, মুক্তবার্তা, উত্তরবার্তা; সাপ্তাহিক: আজকের শেরপুর, পঞ্চনদীর তীরে, নতুন, দূর্জয়, সাহিত্য, তারুণ্য; অবলুপ্ত: সোনাতলা বার্তা; অনিয়মিত সাময়িকী: বৃত্ত।

লোকসংস্কৃতি জারিগান, মারফতি, ভাটিয়ালি, কবি গান, কীর্তন, যাত্রাপালা, মেয়েলি গীত, প্রবাদ, প্রবচন, ধাঁধাঁ উল্লেখযোগ্য।

দর্শনীয় স্থান খেরুয়া মসজিদ (শেরপুর), মহাস্থানগড়ের ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ, বড় মসজিদ, শাহ সুলতান বলখীর মাযার, পাঁচপীর মাযার, গোকুল মেধ, পরশুরামের প্রাসাদ, বসু বিহার, পল্লী-উন্নয়ন একাডেমী, সাউদিয়া পার্কসিটি, ভিমের জাঙ্গাল, নবাব বাড়ি প্যালেস মিউজিয়াম, কারুপল্লী, ওয়ান্ডারল্যান্ড শিশুপার্ক, শাহনেওয়াজ শিশুবাগান, উডবার্ন পার্ক, দৃষ্টিনন্দন পার্ক, বিজয়াঙ্গন (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক যাদুঘর)। [মো. নজমুল হক]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১; বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বগুড়া জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; বগুড়া জেলার উপজেলাসমূহের সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।