সোহ্রাওয়ার্দী, শাহেদ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
অ (Nasirkhan ব্যবহারকারী সোহ্রাওয়ার্দী, শাহেদ পাতাটিকে সোহ্রাওয়ার্দী, শাহেদ শিরোনামে স্থানান্ত...) |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
''' | '''সোহ্রাওয়ার্দী, শাহেদ '''(১৮৯০-১৯৬৫) শিক্ষাবিদ, লেখক, শিল্পসমালোচক ও কূটনীতিক। ১৮৯০ সালের ২৪ অক্টোবর কলকাতার বিখ্যাত সোহ্রাওয়ার্দী পরিবারে তাঁর জন্ম। আদি নিবাস মেদিনীপুর হলেও কলকাতার পার্ক সার্কাসে তাঁদের পরিবারের বসবাস বহু দিনের। তাঁর পিতা স্যার জাহিদ সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এবং কনিষ্ঠভ্রাতা প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ [[সোহ্রাওয়ার্দী, হোসেন শহীদ|হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী]]। | ||
শাহেদ | শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী''' '''১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় বি এ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদেশে পড়াশোনা এবং সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের জন্য খ্যাতি লাভের পাশাপাশি তিনি বিশ্বশিল্পের প্রাচীন ও আধুনিক ধারার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করেন। আন্তর্জাতিক শিল্পবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে, যখন ১৯২৬-২৯ সময়কালে তিনি মস্কো আর্ট থিয়েটারে প্রযোজক কমিটির সদস্য এবং পরে প্যারিসস্থ লিগ অব নেশনস-এর চারুকলা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া প্রাগ থেকে প্রকাশিত বাইজানটাইন শিল্পবিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইসলামি শিল্পকলা সম্পর্কে পরিচিতিমূলক পুস্তক রচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে বিশ্বভারতীতে এসে তিনি নিজাম প্রফেসর হিসেবে ইরানী শিল্পকলা সম্পর্কে গবেষণা করেন। | ||
শাহেদ | শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন ১৯৩২-৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাগেশ্বরী তুলনামূলক শিল্পকলার অধ্যাপকরূপে। তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতাসমূহের একটি সংকলন উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে Prefaces নামে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য রচনা হলো: The Art of Jamini Ray, Musalman Culture, A Handbook of Musalman Art, Musalman Art in Spain ইত্যাদি। The Art of Jamini Ray মৌলিক ও প্রসাদগুণসম্পন্ন শিল্পসমালোচনা। রন্ধন শিল্পের ওপরও তাঁর একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়। | ||
১৯৪৩-৪৬ সালে শাহেদ | ১৯৪৩-৪৬ সালে শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালের শেষ দিকে তিনি করাচি যান এবং ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ সালে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইসলামি শিল্পের অতিথি অধ্যাপকরূপে কর্মরত ছিলেন। সেসময় প্যারিসে ইউনেস্কোর নতুন ভবন নির্মিত হলে তা উপযুক্ত শিল্পসামগ্রী দিয়ে সাজানোর জন্য আন্তর্জাতিক শিল্পবিশেষজ্ঞদের যে নির্বাচক কমিটি গঠিত হয়, তিনি তারও সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি কয়েক বছর স্পেন, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও ভ্যাটিক্যানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি জওহরলাল নেহেরু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের অনেক ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল। | ||
শাহেদ | শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী শুরু থেকে পাকিস্তান পিইএন (আন্তর্জাতিক লেখক সংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান)-এর সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঢাকা থেকে ১৯৬২ সালে তাঁর একটি কাব্যসংকলন Essays in Verse প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে রয়েছে তাঁর অক্সফোর্ডে এবং অন্যত্র ইংরেজি ও মার্কিন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাবলি। ইউরোপের বিভিন্ন কাব্যান্দোলনের ছাপ তাঁর কবিতায় দৃশ্যমান। গ্রন্থটি তিনভাগে বিভক্ত: New Poems, Early Poems, An Oldman’s Songs; এসব কবিতায় তাঁর মার্জিত ও সুকোমল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৬৫ সালের ৩ মার্চ করাচিতে তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ আলী আহসান] | ||
[[en:Suhrawardy, Shahid]] | [[en:Suhrawardy, Shahid]] | ||
[[en:Suhrawardy, Shahid]] | [[en:Suhrawardy, Shahid]] |
১৬:৩১, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সোহ্রাওয়ার্দী, শাহেদ (১৮৯০-১৯৬৫) শিক্ষাবিদ, লেখক, শিল্পসমালোচক ও কূটনীতিক। ১৮৯০ সালের ২৪ অক্টোবর কলকাতার বিখ্যাত সোহ্রাওয়ার্দী পরিবারে তাঁর জন্ম। আদি নিবাস মেদিনীপুর হলেও কলকাতার পার্ক সার্কাসে তাঁদের পরিবারের বসবাস বহু দিনের। তাঁর পিতা স্যার জাহিদ সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের একজন বিচারপতি এবং কনিষ্ঠভ্রাতা প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী।
শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী ১৯১০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে বিএ (অনার্স) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুনরায় বি এ (অনার্স) ডিগ্রি অর্জন করেন। বিদেশে পড়াশোনা এবং সৃজনশীল সাহিত্যকর্মের জন্য খ্যাতি লাভের পাশাপাশি তিনি বিশ্বশিল্পের প্রাচীন ও আধুনিক ধারার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও জ্ঞান লাভ করেন। আন্তর্জাতিক শিল্পবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে, যখন ১৯২৬-২৯ সময়কালে তিনি মস্কো আর্ট থিয়েটারে প্রযোজক কমিটির সদস্য এবং পরে প্যারিসস্থ লিগ অব নেশনস-এর চারুকলা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন। তাছাড়া প্রাগ থেকে প্রকাশিত বাইজানটাইন শিল্পবিষয়ক একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা সম্পাদনার সঙ্গেও তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। দেশে ফিরে তিনি হায়দ্রাবাদের ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা ইসলামি শিল্পকলা সম্পর্কে পরিচিতিমূলক পুস্তক রচনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। পরে রবীন্দ্রনাথের আমন্ত্রণে বিশ্বভারতীতে এসে তিনি নিজাম প্রফেসর হিসেবে ইরানী শিল্পকলা সম্পর্কে গবেষণা করেন।
শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন ১৯৩২-৪৩ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাগেশ্বরী তুলনামূলক শিল্পকলার অধ্যাপকরূপে। তাঁর বিখ্যাত বক্তৃতাসমূহের একটি সংকলন উক্ত প্রতিষ্ঠান থেকে Prefaces নামে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যান্য রচনা হলো: The Art of Jamini Ray, Musalman Culture, A Handbook of Musalman Art, Musalman Art in Spain ইত্যাদি। The Art of Jamini Ray মৌলিক ও প্রসাদগুণসম্পন্ন শিল্পসমালোচনা। রন্ধন শিল্পের ওপরও তাঁর একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়।
১৯৪৩-৪৬ সালে শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালের শেষ দিকে তিনি করাচি যান এবং ১৯৫২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য ছিলেন। ১৯৫৩ সালে নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইসলামি শিল্পের অতিথি অধ্যাপকরূপে কর্মরত ছিলেন। সেসময় প্যারিসে ইউনেস্কোর নতুন ভবন নির্মিত হলে তা উপযুক্ত শিল্পসামগ্রী দিয়ে সাজানোর জন্য আন্তর্জাতিক শিল্পবিশেষজ্ঞদের যে নির্বাচক কমিটি গঠিত হয়, তিনি তারও সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সাল থেকে তিনি কয়েক বছর স্পেন, মরক্কো, তিউনিশিয়া ও ভ্যাটিক্যানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। তিনি জওহরলাল নেহেরু ও সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের অনেক ভাষায় তাঁর দক্ষতা ছিল।
শাহেদ সোহ্রাওয়ার্দী শুরু থেকে পাকিস্তান পিইএন (আন্তর্জাতিক লেখক সংঘের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান)-এর সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ঢাকা থেকে ১৯৬২ সালে তাঁর একটি কাব্যসংকলন Essays in Verse প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থে রয়েছে তাঁর অক্সফোর্ডে এবং অন্যত্র ইংরেজি ও মার্কিন সাহিত্য পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতাবলি। ইউরোপের বিভিন্ন কাব্যান্দোলনের ছাপ তাঁর কবিতায় দৃশ্যমান। গ্রন্থটি তিনভাগে বিভক্ত: New Poems, Early Poems, An Oldman’s Songs; এসব কবিতায় তাঁর মার্জিত ও সুকোমল মনের পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯৬৫ সালের ৩ মার্চ করাচিতে তাঁর মৃত্যু হয়। [সৈয়দ আলী আহসান]