দরগাহবাড়ি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
(Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]")
 
১০ নং লাইন: ১০ নং লাইন:
''অপরাপর স্থাপনা''  সমাধি অঙ্গনের উত্তরদিকে [[ফতেহ শাহ মসজিদ|ফতেহ শাহ মসজিদ]] (১৪৮৪) অবস্থিত। এর কিছুটা উত্তর পশ্চিমে রয়েছে পীর  সাহেবদের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে এখনও দুটি ভগ্নপ্রায় ইমারতের অবস্থান লক্ষণীয়। এর একটি ছিল দোতলা ইমারত এবং এতে ছিল ভূগর্ভস্থ চিলাকোঠা। চিলাকোঠাটি ছিল তিন কামরা বিশিষ্ট আয়তাকার এক তলা ইমারত। অপর ইমারতটিতে রয়েছে একটি বিশাল হলঘর এবং এর দেয়াল প্লাস্টারে তৈরি জালি আকৃতির নকশা শোভিত। এই ইমারতটি মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহূত হতো। এসব ইমারতের পশ্চিমদিকে ভূমি সমতল নির্মাণকার্যের অবশেষ পরিদৃষ্ট হয়। এ প্রাঙ্গণে এককালের লঙ্গরখানা হিসেবে চিহ্নিত তাহ্য়িল বা তাহাখানার (কোষাগার) কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। বর্তমানে মসজিদের উত্তরদিকে কতিপয় আধুনিক ইমারত গড়ে উঠেছে।  
''অপরাপর স্থাপনা''  সমাধি অঙ্গনের উত্তরদিকে [[ফতেহ শাহ মসজিদ|ফতেহ শাহ মসজিদ]] (১৪৮৪) অবস্থিত। এর কিছুটা উত্তর পশ্চিমে রয়েছে পীর  সাহেবদের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে এখনও দুটি ভগ্নপ্রায় ইমারতের অবস্থান লক্ষণীয়। এর একটি ছিল দোতলা ইমারত এবং এতে ছিল ভূগর্ভস্থ চিলাকোঠা। চিলাকোঠাটি ছিল তিন কামরা বিশিষ্ট আয়তাকার এক তলা ইমারত। অপর ইমারতটিতে রয়েছে একটি বিশাল হলঘর এবং এর দেয়াল প্লাস্টারে তৈরি জালি আকৃতির নকশা শোভিত। এই ইমারতটি মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহূত হতো। এসব ইমারতের পশ্চিমদিকে ভূমি সমতল নির্মাণকার্যের অবশেষ পরিদৃষ্ট হয়। এ প্রাঙ্গণে এককালের লঙ্গরখানা হিসেবে চিহ্নিত তাহ্য়িল বা তাহাখানার (কোষাগার) কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। বর্তমানে মসজিদের উত্তরদিকে কতিপয় আধুনিক ইমারত গড়ে উঠেছে।  


বর্তমান দরগাহবাড়ি একসময় ছিল  সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ, সাইয়্যিদ আরিফ বিল্লাহ এবং সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফের ন্যায় মশহুর সুফিসাধকদের [[খানকাহ|খানকাহ]]। সম্ভবত এখানেই অবস্থিত ছিল তেরো শতকের শেষ পাদে গড়ে উঠা ইসলামী জ্ঞানচর্চার বিখ্যাত পাদপীঠ মওলানা [[শরফুদ্দীন আবু তওয়ামা|শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা]] কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত খানকা ও মাদ্রাসা। সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের বংশধররা বর্তমানে দরগাহবাড়ির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছেন।  [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]
বর্তমান দরগাহবাড়ি একসময় ছিল  সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ, সাইয়্যিদ আরিফ বিল্লাহ এবং সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফের ন্যায় মশহুর সুফিসাধকদের [[খানকাহ|খানকাহ]]। সম্ভবত এখানেই অবস্থিত ছিল তেরো শতকের শেষ পাদে গড়ে উঠা ইসলামী জ্ঞানচর্চার বিখ্যাত পাদপীঠ মওলানা [[শরফুদ্দীন আবু তওয়ামা|শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা]] কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত খানকা ও মাদ্রাসা। সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের বংশধররা বর্তমানে দরগাহবাড়ির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছেন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]


[[en:Dargabari]]
[[en:Dargabari]]

১৬:২৯, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

দরগাহবাড়ি  সোনারগাঁয়ের সাদিপুর গ্রামে (নগর সাদিপুর) দমদমার পূর্বদিকে এবং মোগড়াপাড়া বাজার সন্নিহিত উত্তরপাশে অবস্থিত ধর্মীয় ইমারত সম্বলিত একটি কমপ্লেক্স। বিস্তীর্ণ পরিসরের এ কমপ্লেক্সে রয়েছে একটি উন্মুক্ত চত্বর,খানকাহ ভবন, সমাধিসৌধ, মধ্যযুগের একটি মসজিদ, নহবতখানা, দেয়াল বেষ্টিত গোরস্তান, পুরানো ইমারতের ধ্বংসাবশেষ এবং পূর্বপ্রান্তে একটি বৃহৎ পুকুর।

নহবতখানা  দরগাহবাড়ি কমপ্লেক্সের প্রবেশপথেই রয়েছে নহবতখানা (বাদ্যঘর) নামে পরিচিত একটি ভগ্নপ্রায় ইমারত। এটি মুসলিম শাসকদের আমলে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়। একসময় সকাল বিকাল এখানে বাদ্য বাজিয়ে বহিরাগত সফরকারী এবং ভ্রাম্যমান ফকির-দরবেশদের জানান দেওয়া হতো যে, সন্নিকটেই একটি আশ্রয়স্থল বা মুসাফিরখানা আছে। চৌচালা ছাদবিশিষ্ট আয়তাকার এই ইমারতটি অভ্যন্তরভাগে দৈর্ঘ্যে ৪.৬ মিটার এবং প্রস্থে ২.২৫ মিটার। আপাত দৃষ্টিতে এটিকে একটি দোতলা ইমারত বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে এর নিচতলায় একটি প্রবেশপথ এবং উপরের তলায় রয়েছে নহবতখানা। ইমারতটির গঠন কাঠামো থেকে কোনো কোনো স্থাপত্য বিশেষজ্ঞ অনুমান করেন যে, নহবতখানাটি মূলত ছিল একটি প্রাসাদ-তোরণের অংশ এবং এই দ্বিতল তোরণের উপরের কক্ষেই ছিল নহবতখানা।

সমাধিসৌধ নহবতখানার উত্তরদিকে অবস্থিত আধুনিক ইমারতটি বর্তমানে দরগাহবাড়ির খানকাহ ভবন। খানকাহ ভবন সন্নিহিত উত্তরপাশে কবরগাহে রয়েছে তিনটি সমাধিসৌধ। পশ্চিমদিকের কুড়েঘর আকৃতির চৌচালা ছাদ এবং গম্বুজ বিশিষ্ট চতুর্ভুজাকৃতির সৌধে সমাহিত আছেন সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ। মধ্যবর্তী সৌধে সমাহিত আছেন সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের পুত্র সাইয়্যিদ আরিফ বিল্লাহ (ওরফে শেখ মাহমুদ), এবং এর পূর্বদিকের সৌধটিতে রয়েছে সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফ ও তাঁর স্ত্রীর কবর। মধ্যবর্তী ও পূর্বদিকের দুটি সমাধিসৌধ গম্বুজ বিশিষ্ট, পরস্পর যুক্ত জোড়-ইমারত। দুটি সৌধের গম্বুজ শীর্ষে রয়েছে প্রলম্বিত চূড়া। কথিত আছে, এই চূড়া দুটি নির্মাণকালে সোনার পাতে মোড়ানো ছিল অথবা আস্ত সোনার তৈরি ছিল। পলেস্তারা দেয়াল বিশিষ্ট আয়তাকার দুটি সৌধের কুটির আকৃতির চৌচালা ছাদ পরস্পর যুক্ত। কবরগাহের খোলা চত্বরে বেশ ক’টি বাঁধানো কবর রয়েছে। এদের বেশিরভাগই সাইয়্যিদ দানিশমন্দের পরিবারের লোকজনের সমাধি।

কবরস্থান  খানকাহ প্রাঙ্গণের উত্তরপূর্ব কোণে রয়েছে একটি দেয়ালঘেরা কবরস্থান। এখানে উত্তরপাশে রয়েছে উঁচু করে বাঁধানো ভিতে সারিবদ্ধ পাঁচটি কবর। পূর্বদিক থেকে দ্বিতীয় এবং শীর্ষভাগ লাল রঙে রঞ্জিত কবরটি মওলানা শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার বলে চিহ্নিত। অপর চারটি কবরে সুলতান ও শাসনকর্তারা সমাহিত আছেন বলে জনশ্রুতি আছে। কবরস্থানের দক্ষিণ অংশে ধ্বংসপ্রায় বাঁধানো ভিতে রয়েছে পাশাপাশি দুটি কবর। এগুলো সম্ভবত মওলানা শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামার সঙ্গী সুফি-দরবেশদের সমাধি।

অপরাপর স্থাপনা সমাধি অঙ্গনের উত্তরদিকে ফতেহ শাহ মসজিদ (১৪৮৪) অবস্থিত। এর কিছুটা উত্তর পশ্চিমে রয়েছে পীর  সাহেবদের আবাসস্থলের ধ্বংসাবশেষ। সেখানে এখনও দুটি ভগ্নপ্রায় ইমারতের অবস্থান লক্ষণীয়। এর একটি ছিল দোতলা ইমারত এবং এতে ছিল ভূগর্ভস্থ চিলাকোঠা। চিলাকোঠাটি ছিল তিন কামরা বিশিষ্ট আয়তাকার এক তলা ইমারত। অপর ইমারতটিতে রয়েছে একটি বিশাল হলঘর এবং এর দেয়াল প্লাস্টারে তৈরি জালি আকৃতির নকশা শোভিত। এই ইমারতটি মাদ্রাসা হিসেবে ব্যবহূত হতো। এসব ইমারতের পশ্চিমদিকে ভূমি সমতল নির্মাণকার্যের অবশেষ পরিদৃষ্ট হয়। এ প্রাঙ্গণে এককালের লঙ্গরখানা হিসেবে চিহ্নিত তাহ্য়িল বা তাহাখানার (কোষাগার) কোনো অস্তিত্ব এখন আর নেই। বর্তমানে মসজিদের উত্তরদিকে কতিপয় আধুনিক ইমারত গড়ে উঠেছে।

বর্তমান দরগাহবাড়ি একসময় ছিল  সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দ, সাইয়্যিদ আরিফ বিল্লাহ এবং সাইয়্যিদ মুহম্মদ ইউসুফের ন্যায় মশহুর সুফিসাধকদের খানকাহ। সম্ভবত এখানেই অবস্থিত ছিল তেরো শতকের শেষ পাদে গড়ে উঠা ইসলামী জ্ঞানচর্চার বিখ্যাত পাদপীঠ মওলানা শরফুদ্দিন আবু তাওয়ামা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত খানকা ও মাদ্রাসা। সাইয়্যিদ ইবরাহিম দানিশমন্দের বংশধররা বর্তমানে দরগাহবাড়ির তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত রয়েছেন।  [মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান]