আহমদ, শামসুদ্দিন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
অ (Text replacement - "\[মুয়ায্যম হুসায়ন খান\]" to "[মুয়ায্যম হুসায়ন খান]") |
||
১৩ নং লাইন: | ১৩ নং লাইন: | ||
নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক সমাজসচেতন ব্যক্তিত্ব এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত। ছাত্র জীবনে একজন স্কাউট লীডার হিসেবে শামসুদ্দিন আহমদের মধ্যে গড়ে উঠে বিপন্ন মানুষের সেবার ঐকান্তিক আগ্রহ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৬ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং এদের সহায়তায় কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় দাঙ্গা কবলিত লোকদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসায় অসামান্য অবদান রাখেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্ট সার্জন থাকাকালে (১৯৫৪-১৯৫৫) তিনি পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর এবং কয়েকটি ত্রাণ স্কোয়াড গঠন করে বন্যাপীড়িত লোকদের সাহায্যের জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করেন। ১৯৫৮ সালে সারাদেশে মহামারী আকারে গুটি বসন্ত দেখা দিলে তাঁরই উদ্যোগে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল ছাত্রদের সমন্বয়ে কয়েকটি দল গঠন করা হয় এবং মহামারীর বিস্তাররোধে এসব দল সারাদেশে কর্মসূচি পরিচালনা করে। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুরাগী। তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠে। তিনি ছিলেন আসাম মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সভাপতি (১৯৪১-১৯৪৩)। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জালালাবাদ অন্ধ-কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, সিলেট আম্বরখানা গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, টিবি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, সিলেটের কয়েকটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং রাইফেল ক্লাবের সদস্য। | নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক সমাজসচেতন ব্যক্তিত্ব এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত। ছাত্র জীবনে একজন স্কাউট লীডার হিসেবে শামসুদ্দিন আহমদের মধ্যে গড়ে উঠে বিপন্ন মানুষের সেবার ঐকান্তিক আগ্রহ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৬ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং এদের সহায়তায় কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় দাঙ্গা কবলিত লোকদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসায় অসামান্য অবদান রাখেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্ট সার্জন থাকাকালে (১৯৫৪-১৯৫৫) তিনি পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর এবং কয়েকটি ত্রাণ স্কোয়াড গঠন করে বন্যাপীড়িত লোকদের সাহায্যের জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করেন। ১৯৫৮ সালে সারাদেশে মহামারী আকারে গুটি বসন্ত দেখা দিলে তাঁরই উদ্যোগে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল ছাত্রদের সমন্বয়ে কয়েকটি দল গঠন করা হয় এবং মহামারীর বিস্তাররোধে এসব দল সারাদেশে কর্মসূচি পরিচালনা করে। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুরাগী। তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠে। তিনি ছিলেন আসাম মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সভাপতি (১৯৪১-১৯৪৩)। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জালালাবাদ অন্ধ-কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, সিলেট আম্বরখানা গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, টিবি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, সিলেটের কয়েকটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং রাইফেল ক্লাবের সদস্য। | ||
শামসুদ্দিন আহমদের নামে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ হয় ডাঃ শামসুদ্দিন হল। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শামসুদ্দিন আহমদের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [ | শামসুদ্দিন আহমদের নামে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ হয় ডাঃ শামসুদ্দিন হল। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শামসুদ্দিন আহমদের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান] | ||
[[en:Ahmed, Shamsuddin3]] | [[en:Ahmed, Shamsuddin3]] |
১৬:০৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
আহমদ, শামসুদ্দিন (১৯২০-১৯৭১) চিকিৎসক, শহীদ বুদ্ধিজীবী। সিলেটের আম্বরখানায় ১৯২০ সালের ১ আগস্ট তাঁর জন্ম। পিতা ইমানউদ্দিন আহমদ ছিলেন রেলওয়ে বিভাগের একজন কর্মকর্তা এবং মাতা রাশেদা বেগম। শামসুদ্দিন আহমদ ১৯৩৯ সালে সিলেট সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা, ১৯৪১ সালে সিলেট এমসি কলেজ থেকে আইএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৪৬ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি লন্ডনের রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ান্স অ্যান্ড সার্জন্স থেকে ১৯৬২ সালে এফআরসিএস ডিগ্রি লাভ করেন।
শামসুদ্দিন আহমদ ১৯৪৭ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে হাউজ সার্জন হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর তিনি কুমিল্লা হাসপাতালের প্রধান (১৯৪৮), নারায়ণনগর স্কুল হাসপাতালের প্রধান (১৯৫২), ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষক (১৯৫৩), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের রেসিডেন্ট সার্জন (১৯৫৪-১৯৫৫) এবং চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের শল্য বিভাগের শিক্ষক (১৯৫৫-১৯৫৭) পদে কর্মরত ছিলেন। এফআরসিএস ডিগ্রি লাভের পর তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের শল্য বিভাগে সহকারি অধ্যাপক পদে যোগ দেন (১৯৬২-৬৪)। তিনি সিলেটে সিভিল সার্জন পদে (১৯৬৪-১৯৬৭), রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের শল্য বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক (১৯৬৭-১৯৬৯) এবং সিলেট মেডিক্যাল কলেজে শল্য বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান (১৯৬৯-১৯৭১) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পরপরই শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে আসা আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যাপক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করেন। তিনি হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক খোলেন এবং আহত রুগীদের চিকিৎসার জন্য একটি ইমার্জেন্সি স্কোয়াড গঠন করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সক্রিয় সহায়তা দান করেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করছেন এমন তরুণ চিকিৎসকদের ওষুধপত্রের যোগান দেন। ১৯৭১ সালের ৮ এপ্রিল তামাবিল সীমান্ত পথে একটি ইতালীয় পর্যবেক্ষক দল সিলেটে পৌঁছে। ডাঃ শামসুদ্দিন এই দলটিকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত রুগীদের ঘুরে দেখান এবং বোঝান যে, কিভাবে পাকবাহিনী নিরীহ জনগণের উপর নগ্ন হামলা চালাচ্ছে। ইতালীয় টিমের সদস্যরা পাকবাহিনীর বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করে নিয়ে যান এবং গণ-মাধ্যমে ব্যাপকভাবে তা প্রচারিত হয়।
সিলেট শহরে পাকবাহিনীর অত্যাচার ও গণহত্যা ব্যাপকতর হয়ে উঠলে মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র শিক্ষক ও চিকিৎসকরা শহর ছেড়ে শহরতলি এলাকায় আশ্রয় নেন। শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের মহিলা নার্সদের তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ডিউটি থেকে অবমুক্ত করে দেন। তিনি তাঁর সহকর্মী ডাঃ শ্যামল কান্তি লালা, নার্স মাহমুদুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী এবং জনকয়েক চিকিৎসা সহকারিকে নিয়ে হাসপাতালে রুগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত থাকেন। ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল সিলেট মেডিক্যাল কলেজের সন্নিকটে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে এক সংঘর্ষ হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিকটবর্তী পাহাড়ের উপরে অবস্থিত সিভিল সার্জনের বাংলো থেকে আক্রমণ পরিচালনা করে। গুলির আঘাতে পাকসেনাদের গাড়ি বহরের প্রথম জিপটি উল্টে যায় এবং এতে তিনজন পাকসেনা নিহত হয়। সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনারা হাসপাতাল এলাকা ঘিরে ফেলে। তারা হাসপাতাল ও এর সন্নিহিত এলাকা খালি করে দেয়ার নির্দেশ দেয়। হাসপাতাল ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়া গেরিলা যোদ্ধারা তখন বিচ্ছিন্নভাবে সরে পড়ে।
মেজর রিয়াজের নেতৃত্বে একদল পাকসেনা হাসপাতালে প্রবেশ করে। ভেতরে কোনো মুক্তিযোদ্ধা না পেয়ে তারা ডাঃ শামসুদ্দিন আহমদ, ডাঃ শ্যামল কান্তি লালা, নার্স মাহমুদুর রহমান, পিয়ন মোঃ মুহিবুর রহমান ও মোখলেছুর রহমান, অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার কোরবান আলী সহ নয়জনকে হাসপাতাল থেকে বাইরে এনে চত্বরে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করায়। প্রথমে ডাঃ শামসুদ্দিনের বাম উরুতে গুলি করা হয়। দ্বিতীয় গুলিটি তাঁর পেটের বা পাশে বিদ্ধ হয় এবং তৃতীয় গুলিটি তাঁর বক্ষ ভেদ করে বেরিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এরপর লাইনে দাঁড় করানো সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ডাঃ শামসুদ্দিন ও তাঁর শহীদ সহকর্মীদের হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সমহিত করা হয়।
নিবেদিত প্রাণ চিকিৎসক শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক সমাজসচেতন ব্যক্তিত্ব এবং মানবতার সেবায় নিবেদিত। ছাত্র জীবনে একজন স্কাউট লীডার হিসেবে শামসুদ্দিন আহমদের মধ্যে গড়ে উঠে বিপন্ন মানুষের সেবার ঐকান্তিক আগ্রহ। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৬ সালে একটি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করেন এবং এদের সহায়তায় কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় দাঙ্গা কবলিত লোকদের উদ্ধার ও আহতদের চিকিৎসায় অসামান্য অবদান রাখেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে রেসিডেন্ট সার্জন থাকাকালে (১৯৫৪-১৯৫৫) তিনি পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর এবং কয়েকটি ত্রাণ স্কোয়াড গঠন করে বন্যাপীড়িত লোকদের সাহায্যের জন্য দেশের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করেন। ১৯৫৮ সালে সারাদেশে মহামারী আকারে গুটি বসন্ত দেখা দিলে তাঁরই উদ্যোগে চিকিৎসক ও মেডিক্যাল ছাত্রদের সমন্বয়ে কয়েকটি দল গঠন করা হয় এবং মহামারীর বিস্তাররোধে এসব দল সারাদেশে কর্মসূচি পরিচালনা করে। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন এক জনহিতৈষী ব্যক্তিত্ব, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অনুরাগী। তাঁর উদ্যোগে ও প্রচেষ্টায় কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গড়ে উঠে। তিনি ছিলেন আসাম মুসলিম স্টুডেন্ট ফেডারেশনের সভাপতি (১৯৪১-১৯৪৩)। শামসুদ্দিন আহমদ ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি, পাকিস্তান অ্যাম্বুলেন্স কোর-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জালালাবাদ অন্ধ-কল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা, সিলেট আম্বরখানা গার্লস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা, টিবি হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, সিলেটের কয়েকটি মসজিদের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং রাইফেল ক্লাবের সদস্য।
শামসুদ্দিন আহমদের নামে সিলেট মেডিক্যাল কলেজের নামকরণ হয় ডাঃ শামসুদ্দিন হল। বাংলাদেশ সরকারের ডাকবিভাগ জাতির জন্য তাঁর আত্মদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শামসুদ্দিন আহমদের নামে স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করে। [মুয়ায্যম হুসায়ন খান]