হলুদ বিহার: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''হলুদ বিহার''' একটি প্রত্নস্থল। [[পাহাড়পুর|পাহাড়পুর]] বৌদ্ধমঠ হতে পনেরো কিলোমিটার দক্ষিণে, [[মহাস্থান|মহাস্থান]] হতে পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলা শহর হতে আঠারো কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছি উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে তুলসীগঙ্গা এবং যমুনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত হলুদবিহার গ্রামে অনেকগুলি বিক্ষিপ্ত প্রাচীন ঢিবি আছে। এ নিদর্শনগুলি এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যমান। কিন্তু এগুলির মধ্যে উলেখযোগ্যভাবে অনধিকার প্রবেশ ঘটেছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা বেশ কিছু নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিত সম্পূর্ণ গ্রামটিতে প্রচুর পুরানো ইট, ভাঙ্গা মৃণ্ময় পাত্রাদির টুকরা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ অগোছালোভাবে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। এ পুরানো ঢিবিগুলি এবং গ্রামের নাম থেকে ধারণা করা যায় যে, এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ বসতির নিদর্শন রয়েছে। | '''হলুদ বিহার''' একটি প্রত্নস্থল। [[পাহাড়পুর|পাহাড়পুর]] বৌদ্ধমঠ হতে পনেরো কিলোমিটার দক্ষিণে, [[মহাস্থান|মহাস্থান]] হতে পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলা শহর হতে আঠারো কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছি উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে তুলসীগঙ্গা এবং যমুনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত হলুদবিহার গ্রামে অনেকগুলি বিক্ষিপ্ত প্রাচীন ঢিবি আছে। এ নিদর্শনগুলি এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যমান। কিন্তু এগুলির মধ্যে উলেখযোগ্যভাবে অনধিকার প্রবেশ ঘটেছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা বেশ কিছু নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিত সম্পূর্ণ গ্রামটিতে প্রচুর পুরানো ইট, ভাঙ্গা মৃণ্ময় পাত্রাদির টুকরা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ অগোছালোভাবে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। এ পুরানো ঢিবিগুলি এবং গ্রামের নাম থেকে ধারণা করা যায় যে, এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ বসতির নিদর্শন রয়েছে। | ||
[[Image:HaludVihara.jpg|thumb|400px|হলুদবিহার, নওগাঁ]] | |||
পাথর এবং ধাতুনির্মিত মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট, প্রভৃতি বিবিধ প্রাচীন নিদর্শনাদি সম্পর্কে অতীতে এ স্থান হতে জানা গেছে। এলাকার সর্বত্রই প্রাচীন দালান কোঠার নিদর্শন বিদ্যমান, বিশেষ করে গ্রামীণ হাটের চারদিকে কেন্দ্রীভূত স্থানে। গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে আছে এক বিশাল সমতলভূমি। গ্রামটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সংলগ্ন ভূমি হতে ৭.৫ মিটার উঁচু ও প্রায় ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি বিরাট ঢিবি, যা হাট বা বাজার হতে পশ্চিমে অবস্থিত। একটি স্থানীয় পরিবার দ্বারা নিদর্শনটির ভীষণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নিজেদের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় সাত মিটার পুরু শক্ত ইটের দেয়াল ঘেরা বসতির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে প্রকৃতপক্ষে ঢিবিটির এক চতুর্থাংশ ধ্বংস করে ফেলেছে। | পাথর এবং ধাতুনির্মিত মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট, প্রভৃতি বিবিধ প্রাচীন নিদর্শনাদি সম্পর্কে অতীতে এ স্থান হতে জানা গেছে। এলাকার সর্বত্রই প্রাচীন দালান কোঠার নিদর্শন বিদ্যমান, বিশেষ করে গ্রামীণ হাটের চারদিকে কেন্দ্রীভূত স্থানে। গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে আছে এক বিশাল সমতলভূমি। গ্রামটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সংলগ্ন ভূমি হতে ৭.৫ মিটার উঁচু ও প্রায় ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি বিরাট ঢিবি, যা হাট বা বাজার হতে পশ্চিমে অবস্থিত। একটি স্থানীয় পরিবার দ্বারা নিদর্শনটির ভীষণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নিজেদের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় সাত মিটার পুরু শক্ত ইটের দেয়াল ঘেরা বসতির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে প্রকৃতপক্ষে ঢিবিটির এক চতুর্থাংশ ধ্বংস করে ফেলেছে। | ||
বাজারস্থান হতে সামান্য দূরে উত্তরদিকে রয়েছে অন্যান্য নিদর্শনসমূহ। স্থানীয় একজন কৃষক তার বাড়ির সামনের দিক খননকালে আরেকটি শক্ত ধরনের মধ্যম আকারের ক্রুশাকার বৌদ্ধমন্দির বের করেন। তার সীমানা প্রাচীরে এর পুরানো ইটগুলি ব্যবহার করার জন্য তিনি এটি রীতিসম্মতভাবে খনন করেছিলেন। সুন্দরভাবে জ্যামিতিক ও পুষ্পাকার নকশা খোদিত পাহাড়পুররীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ও পাথরের ফলকও তিনি উদ্ধার করেছিলেন। এগুলি তিনি কেবল তার বাড়ির সম্মুখের দেওয়াল অলঙ্করণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দোকান, স্কুল, ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস, একটি আধুনিক মসজিদ ও কৃষি অফিস দ্বারা ঢিবিটি অধিকৃত। | বাজারস্থান হতে সামান্য দূরে উত্তরদিকে রয়েছে অন্যান্য নিদর্শনসমূহ। স্থানীয় একজন কৃষক তার বাড়ির সামনের দিক খননকালে আরেকটি শক্ত ধরনের মধ্যম আকারের ক্রুশাকার বৌদ্ধমন্দির বের করেন। তার সীমানা প্রাচীরে এর পুরানো ইটগুলি ব্যবহার করার জন্য তিনি এটি রীতিসম্মতভাবে খনন করেছিলেন। সুন্দরভাবে জ্যামিতিক ও পুষ্পাকার নকশা খোদিত পাহাড়পুররীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ও পাথরের ফলকও তিনি উদ্ধার করেছিলেন। এগুলি তিনি কেবল তার বাড়ির সম্মুখের দেওয়াল অলঙ্করণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দোকান, স্কুল, ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস, একটি আধুনিক মসজিদ ও কৃষি অফিস দ্বারা ঢিবিটি অধিকৃত। | ||
১৬ নং লাইন: | ১৫ নং লাইন: | ||
এ পর্যন্ত হলুদবিহারে সীমিত আকারে যে খননকার্য করা হয়েছে তা অভ্রান্তভাবে প্রাথমিক মধ্যযুগের বেশ সমৃদ্ধিশালী বৌদ্ধ বসতির অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের পাহাড়পুর এবং সীতাকোটের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক। এ প্রাচীন স্থানটির শনাক্তীকরণ এখনও নিশ্চিত করা হয় নি, তবে প্রাথমিক তথ্যাদি আরও অব্যাহত কাজের জন্য নিশ্চিতভাবে উৎসাহব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ] | এ পর্যন্ত হলুদবিহারে সীমিত আকারে যে খননকার্য করা হয়েছে তা অভ্রান্তভাবে প্রাথমিক মধ্যযুগের বেশ সমৃদ্ধিশালী বৌদ্ধ বসতির অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের পাহাড়পুর এবং সীতাকোটের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক। এ প্রাচীন স্থানটির শনাক্তীকরণ এখনও নিশ্চিত করা হয় নি, তবে প্রাথমিক তথ্যাদি আরও অব্যাহত কাজের জন্য নিশ্চিতভাবে উৎসাহব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ] | ||
'''গ্রন্থপঞ্জি''' Harunur Rashid, Bangladesh Archaeology, Dhaka , 1979; মোঃ এ.কে.এম জাকারিয়া, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, ঢাকা, ১৯৮১। | |||
[[en:Halud Vihara]] | [[en:Halud Vihara]] |
০৫:০৫, ২৯ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
হলুদ বিহার একটি প্রত্নস্থল। পাহাড়পুর বৌদ্ধমঠ হতে পনেরো কিলোমিটার দক্ষিণে, মহাস্থান হতে পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে এবং নওগাঁ জেলা শহর হতে আঠারো কিলোমিটার উত্তরে বদলগাছি উপজেলার বিলাসবাড়ি ইউনিয়নে তুলসীগঙ্গা এবং যমুনা নদীর মাঝখানে অবস্থিত হলুদবিহার গ্রামে অনেকগুলি বিক্ষিপ্ত প্রাচীন ঢিবি আছে। এ নিদর্শনগুলি এক বিশাল এলাকা জুড়ে বিদ্যমান। কিন্তু এগুলির মধ্যে উলেখযোগ্যভাবে অনধিকার প্রবেশ ঘটেছে এবং স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা বেশ কিছু নিদর্শন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে দ্বীপগঞ্জ নামে পরিচিত সম্পূর্ণ গ্রামটিতে প্রচুর পুরানো ইট, ভাঙ্গা মৃণ্ময় পাত্রাদির টুকরা ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ অগোছালোভাবে ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। এ পুরানো ঢিবিগুলি এবং গ্রামের নাম থেকে ধারণা করা যায় যে, এখানে প্রাচীন বৌদ্ধ বসতির নিদর্শন রয়েছে।
পাথর এবং ধাতুনির্মিত মূর্তি, পোড়ামাটির ফলক, অলংকৃত ইট, প্রভৃতি বিবিধ প্রাচীন নিদর্শনাদি সম্পর্কে অতীতে এ স্থান হতে জানা গেছে। এলাকার সর্বত্রই প্রাচীন দালান কোঠার নিদর্শন বিদ্যমান, বিশেষ করে গ্রামীণ হাটের চারদিকে কেন্দ্রীভূত স্থানে। গ্রামের মধ্যবর্তী স্থান জুড়ে আছে এক বিশাল সমতলভূমি। গ্রামটির একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সংলগ্ন ভূমি হতে ৭.৫ মিটার উঁচু ও প্রায় ৩০ মিটার দীর্ঘ একটি বিরাট ঢিবি, যা হাট বা বাজার হতে পশ্চিমে অবস্থিত। একটি স্থানীয় পরিবার দ্বারা নিদর্শনটির ভীষণ ক্ষতি সাধিত হয়েছে। এর দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে নিজেদের বাড়ি নির্মাণ করতে গিয়ে প্রায় সাত মিটার পুরু শক্ত ইটের দেয়াল ঘেরা বসতির ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলে প্রকৃতপক্ষে ঢিবিটির এক চতুর্থাংশ ধ্বংস করে ফেলেছে।
বাজারস্থান হতে সামান্য দূরে উত্তরদিকে রয়েছে অন্যান্য নিদর্শনসমূহ। স্থানীয় একজন কৃষক তার বাড়ির সামনের দিক খননকালে আরেকটি শক্ত ধরনের মধ্যম আকারের ক্রুশাকার বৌদ্ধমন্দির বের করেন। তার সীমানা প্রাচীরে এর পুরানো ইটগুলি ব্যবহার করার জন্য তিনি এটি রীতিসম্মতভাবে খনন করেছিলেন। সুন্দরভাবে জ্যামিতিক ও পুষ্পাকার নকশা খোদিত পাহাড়পুররীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ও পাথরের ফলকও তিনি উদ্ধার করেছিলেন। এগুলি তিনি কেবল তার বাড়ির সম্মুখের দেওয়াল অলঙ্করণের জন্য ব্যবহার করেছিলেন। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের দোকান, স্কুল, ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিস, একটি আধুনিক মসজিদ ও কৃষি অফিস দ্বারা ঢিবিটি অধিকৃত।
ভারতের প্রত্নতত্ত্ব জরিপ বিভাগের জি.সি দত্ত ১৯৩০-৩১ সালে স্থানটি পরিদর্শনকালে লক্ষ করেন যে, এটি পূর্ব-পশ্চিমে ৬৪.৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৪০.৫ মিটার এবং সংলগ্ন ভূমি হতে এর উচ্চতা প্রায় ১০.৫ মিটার। ইট খুলে নেয়ার ফলে আংশিকভাবে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে প্রাচীন নির্মাণাদি এবং অাঁধা ফোটা পদ্মের উপর মহারাজলীলাভঙ্গিতে বসা চারবাহু বিশিষ্ট একটি ক্ষুদ্র (১ মিটার উঁচু) ব্রোঞ্জ নির্মিত গণেশ মূর্তি উন্মোচিত হয়। জি.সি দত্ত এটিকে আট-নয় শতকের বলে শনাক্ত করেন। ১৯৬৩ সালে কাজী মেছের এ অঞ্চল পরিদর্শন করে পাথরের একটি ভগ্ন বৌদ্ধমূর্তি ও পাহাড়পুররীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ফলক উদ্ধার করেন। বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের হারুনুর রশীদ ১৯৭৪ সালে এ এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং দেখতে পান যে, সমগ্র এলাকা, বিশেষকরে হলুদ বিহার গ্রামের দক্ষিণপূর্ব দিকে এক বিশাল পুরানো দিঘির চারপাশে অসংখ্য নিচু টিবি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ ঢিবিগুলির অধিকাংশকেই সমান করা হয়েছে এবং চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। পুরানো ইট এবং পোড়ামাটির ফলকের ভগ্নাংশ সমগ্র এলাকায় বিক্ষিপ্ত অবস্থায় রয়েছে। বিশাল দালানের ভিত্তির নিদর্শন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট উদ্ধারকৃত প্রাচীন নিদর্শনাদি হলুদ বিহার গ্রামের মাটির নিচে একটি সমৃদ্ধশালী বৌদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্বের পক্ষে যথার্থ সাক্ষ্য প্রদান করে। হারুনুর রশীদ নিকটবর্তী একটি বাড়িতে পাহাড়পুর রীতির কয়েকটি পোড়ামাটির ফলক ও পাথরের ভাস্কর্য দেখতে পান।
স্থানটি ১৯৭৬ সালে সংরক্ষিত করা হয় এবং বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ প্রথমে ১৯৮৪ সালে এবং পরে ১৯৯৩ সালে এটি খনন করে। খনন কার্যের ফলে একটি মন্দির কমপ্লেক্স আবিষ্কৃত হয়। কমপ্লেক্সটি প্রতি পার্শ্বে ৫.৮০ মিটারের একটি নিরেট বর্গাকৃতির ভিত্তি (সম্ভবত এটি একটি স্তূপের ভিত্তি ছিল), দুটি অসমান আয়তকার কক্ষ, একটি সিঁড়ি ও কমপ্লেক্সের বেষ্টনী দেওয়ালের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ছিল। ৫.৫৫ মিটার × ৩.২০ মিটার এবং ২.৬ মিটার × ১.৬ মিটার আয়তনের কক্ষ দুটির মধ্যে ক্ষুদ্রাকার কক্ষটি ছিল খননকারীদের মতে মন্দির, যেখানে নিরেট ভিত্তির দিকে মুখ করা একটি বড় পাথরের মূর্তি স্থাপিত ছিল। অন্যদিকে বৃহত্তর কক্ষটি একটি মন্ডপ হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। এ ভবনের চারপাশে ১.১ মিটার প্রশস্ত হাঁটাচলার একটি পথ ছিল। মন্দির কমপ্লেক্সের উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি অভিক্ষেপের ধ্বংসাবশেষ অংশত উদ্ঘাটিত হয়েছে। অভিক্ষেপের দিকে একটি ইট বাঁধানো পথ দক্ষিণ দিক থেকে প্রবিষ্ট ছিল।
কয়েকটি স্থানে সর্বোচ্চ ৬.১৫ মিটার গভীরতায় খনন কার্য আট স্তরে সম্পন্ন হয়েছে। এ সকল স্থান হতে বেশ কিছু কৌতূহলোদ্দীপক প্রাচীন নিদর্শনাদি ও সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে আরও পাওয়া গেছে মাটির পাত্র ও তাওয়া। এগুলির মধ্যে রয়েছে খোদাইকৃত পোড়ামাটির সিল, অলংকৃত ইট, মানুষের মূর্তি সম্বলিত বেশ কিছু ভাঙ্গাচোরা পোড়ামাটির ফলক। পাথরের সামগ্রীসমূহের মধ্যে একটি মূর্তির স্তম্ভমূল, অলংকারের ঢালাই ছাঁচ এবং চূর্ণনযন্ত্র উল্লেখযোগ্য।
এ পর্যন্ত হলুদবিহারে সীমিত আকারে যে খননকার্য করা হয়েছে তা অভ্রান্তভাবে প্রাথমিক মধ্যযুগের বেশ সমৃদ্ধিশালী বৌদ্ধ বসতির অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি বরেন্দ্র অঞ্চলের পাহাড়পুর এবং সীতাকোটের ধ্বংসাবশেষের সমসাময়িক। এ প্রাচীন স্থানটির শনাক্তীকরণ এখনও নিশ্চিত করা হয় নি, তবে প্রাথমিক তথ্যাদি আরও অব্যাহত কাজের জন্য নিশ্চিতভাবে উৎসাহব্যঞ্জক সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। [নাজিমউদ্দীন আহমেদ]
গ্রন্থপঞ্জি Harunur Rashid, Bangladesh Archaeology, Dhaka , 1979; মোঃ এ.কে.এম জাকারিয়া, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, ঢাকা, ১৯৮১।