সিকান্দর শাহ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
(একই ব্যবহারকারী দ্বারা সম্পাদিত একটি মধ্যবর্তী সংশোধন দেখানো হচ্ছে না) | |||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
'''সিকান্দর শাহ '''( | '''সিকান্দর শাহ''' (১৩৫৮-১৩৯০) শামসুদ্দীন [[ইলিয়াস শাহ|ইলিয়াস শাহ]]-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বাংলার ইলিয়াসশাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান। তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি বাংলা শাসন করেন এবং একজন ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য শাসক হিসেবে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেন। | ||
সিংহাসনে আরোহণ করে সিকান্দর শাহ তাঁর কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করেন এবং দিল্লির সুলতানের সাথে তাঁর পিতার সুসম্পর্ক রক্ষার নীতি অক্ষুণ্ন রাখেন। তিনি সুলতানের জন্য উপঢৌকনস্বরূপ পাঁচটি হাতিসহ আমীন খান নামক একজন দূতকে দিল্লিতে প্রেরণ করেন। তথাপি তিনি [[ফিরুজশাহ তুগলক|ফিরুজশাহ তুগলক]]-এর শত্রুতা এড়াতে পারেন নি। পারস্যের অভিজাত ও [[সোনারগাঁও|সোনারগাঁও]]-এর সুলতান [[ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ|ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ]]-এর জামাতা জাফর খানের সোনারগাঁয়ের ওপর দাবির সমর্থনে তাঁকে সাহায্য করার অজুহাতে ফিরুজ শাহ বাংলায় অভিযান পরিচালনা করেন। দিল্লি সুলতানের আগমনে সিকান্দর যুদ্ধ পরিহার করে তাঁর বাহিনীসহ [[একডালা|একডালা]] দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দিল্লির বাহিনী দীর্ঘদিন দুর্গটি অবরোধ করে রাখে। বাংলার সেনাবাহিনী বর্ষাকালের আগমন পর্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে দুর্গ রক্ষা করে। অবশেষে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়, উভয় পক্ষে উপহার সামগ্রী বিনিময় হয় এবং ফিরুজ শাহ বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ত্যাগ করেন। | |||
তাঁর দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ শাসনামলে সিকান্দর শাহ সুরম্য ইমারত ও মসজিদ নির্মাণ করেন। তন্মধ্যে পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত [[আদিনা মসজিদ|আদিনা মসজিদ]] সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক। সারা বাংলায় এটি সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম ইমারত। তাঁর রাজত্বকালে নির্মিত অপরাপর ইমারতের মধ্যে ছিল আঁখী সিরাজউদ্দীনের সমাধিসৌধ ও মসজিদ, গৌড়ের দক্ষিণ প্রবেশপথের [[কোতোয়ালী দরওয়াজা|কোতোয়ালী দরওয়াজা]], গঙ্গারামপুরের (দিনাজপুরে) ভূগর্ভস্থ কামরা এবং মুল্লা সিমলার (হুগলির) একটি মসজিদ। | |||
সিকান্দর শাহ বিদ্বান ও জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য পছন্দ করতেন এবং আলিম ও সুফিদের সম্মান দিতেন। পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত পীর [[শেখ আলাউল হক (রঃ)|শেখ আলাউল হক (রঃ)]] তাঁর সমসাময়িক ছিলেন এবং তাঁর সাথে এ সাধকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি হিন্দুদের প্রতিও উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। | |||
তাঁর রাজত্বকালের শেষের বছরগুলিতে তাঁর পুত্র গিয়াসউদ্দীনের অবাধ্যতা বা বিদ্রোহের কারণে শান্তি বিঘ্নিত হয়। পাণ্ডুয়ার নিকটবর্তী গোয়ালপাড়ায় পুত্র গিয়াসউদ্দীনের সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তিনি নিহত হন। স্থানীয় জনশ্রুতি এ যে, তিনি আদিনা মসজিদের পশ্চিম দেওয়াল সংলগ্ন কক্ষে সমাহিত আছেন। [আবু তাহের] | |||
[[en:Sikandar Shah]] | [[en:Sikandar Shah]] |
০৬:০৬, ২২ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
সিকান্দর শাহ (১৩৫৮-১৩৯০) শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও বাংলার ইলিয়াসশাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান। তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি বাংলা শাসন করেন এবং একজন ন্যায়পরায়ণ ও যোগ্য শাসক হিসেবে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেন।
সিংহাসনে আরোহণ করে সিকান্দর শাহ তাঁর কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করেন এবং দিল্লির সুলতানের সাথে তাঁর পিতার সুসম্পর্ক রক্ষার নীতি অক্ষুণ্ন রাখেন। তিনি সুলতানের জন্য উপঢৌকনস্বরূপ পাঁচটি হাতিসহ আমীন খান নামক একজন দূতকে দিল্লিতে প্রেরণ করেন। তথাপি তিনি ফিরুজশাহ তুগলক-এর শত্রুতা এড়াতে পারেন নি। পারস্যের অভিজাত ও সোনারগাঁও-এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ-এর জামাতা জাফর খানের সোনারগাঁয়ের ওপর দাবির সমর্থনে তাঁকে সাহায্য করার অজুহাতে ফিরুজ শাহ বাংলায় অভিযান পরিচালনা করেন। দিল্লি সুলতানের আগমনে সিকান্দর যুদ্ধ পরিহার করে তাঁর বাহিনীসহ একডালা দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। দিল্লির বাহিনী দীর্ঘদিন দুর্গটি অবরোধ করে রাখে। বাংলার সেনাবাহিনী বর্ষাকালের আগমন পর্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে দুর্গ রক্ষা করে। অবশেষে একটি শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়, উভয় পক্ষে উপহার সামগ্রী বিনিময় হয় এবং ফিরুজ শাহ বাংলার স্বাধীনতা স্বীকার করে ১৩৫৯ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ত্যাগ করেন।
তাঁর দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ শাসনামলে সিকান্দর শাহ সুরম্য ইমারত ও মসজিদ নির্মাণ করেন। তন্মধ্যে পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত আদিনা মসজিদ সর্বাধিক চিত্তাকর্ষক। সারা বাংলায় এটি সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুসলিম ইমারত। তাঁর রাজত্বকালে নির্মিত অপরাপর ইমারতের মধ্যে ছিল আঁখী সিরাজউদ্দীনের সমাধিসৌধ ও মসজিদ, গৌড়ের দক্ষিণ প্রবেশপথের কোতোয়ালী দরওয়াজা, গঙ্গারামপুরের (দিনাজপুরে) ভূগর্ভস্থ কামরা এবং মুল্লা সিমলার (হুগলির) একটি মসজিদ।
সিকান্দর শাহ বিদ্বান ও জ্ঞানী-গুণীদের সাহচর্য পছন্দ করতেন এবং আলিম ও সুফিদের সম্মান দিতেন। পাণ্ডুয়ার বিখ্যাত পীর শেখ আলাউল হক (রঃ) তাঁর সমসাময়িক ছিলেন এবং তাঁর সাথে এ সাধকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তিনি হিন্দুদের প্রতিও উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন।
তাঁর রাজত্বকালের শেষের বছরগুলিতে তাঁর পুত্র গিয়াসউদ্দীনের অবাধ্যতা বা বিদ্রোহের কারণে শান্তি বিঘ্নিত হয়। পাণ্ডুয়ার নিকটবর্তী গোয়ালপাড়ায় পুত্র গিয়াসউদ্দীনের সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে তিনি নিহত হন। স্থানীয় জনশ্রুতি এ যে, তিনি আদিনা মসজিদের পশ্চিম দেওয়াল সংলগ্ন কক্ষে সমাহিত আছেন। [আবু তাহের]