রহমান, বজলুর: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
[[Category:বাংলাপিডিয়া]] | [[Category:বাংলাপিডিয়া]] | ||
[[Image:RahmanBazlur.jpg|thumb|right|বজলুর রহমান]] | |||
'''রহমান, বজলুর''' (১৯৪১-২০০৮) সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, শিশুসংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার চরনিয়ামতপুর গ্রামে। শেরপুর জেলার গণবর্দী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৬), ময়মনসিংহ জেলার আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ (১৯৫৮), বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ (১৯৬১) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। | '''রহমান, বজলুর''' (১৯৪১-২০০৮) সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, শিশুসংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার চরনিয়ামতপুর গ্রামে। শেরপুর জেলার গণবর্দী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৬), ময়মনসিংহ জেলার আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ (১৯৫৮), বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ (১৯৬১) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। | ||
৫ নং লাইন: | ৬ নং লাইন: | ||
১৯৭১ সালে বজলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ‘বাংলাদেশ আফ্রো-এশিয়া গণসংহতি পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের (১৯৭৩-১৯৭৫) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এ পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব-এর সিনিয়র সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। বজলুর রহমান ‘বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্তএ সংগঠনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। | ১৯৭১ সালে বজলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ‘বাংলাদেশ আফ্রো-এশিয়া গণসংহতি পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের (১৯৭৩-১৯৭৫) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এ পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব-এর সিনিয়র সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। বজলুর রহমান ‘বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্তএ সংগঠনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। | ||
বজলুর রহমান সংবাদ-জগতের নানা সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা বাংলাদেশ শাখার সভাপতি (১৯৮৪), বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত (১৯৯৭) হন। ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেস কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। | বজলুর রহমান সংবাদ-জগতের নানা সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা বাংলাদেশ শাখার সভাপতি (১৯৮৪), বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত (১৯৯৭) হন। ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেস কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। | ||
বজলুর রহমান শিশু সংগঠন ‘খেলাঘর’-এর সভাপতি ছিলেন। এ সময় তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ‘খেলাঘর’ পাতার সম্পাদনা করেন, যাতে লক্ষ করা যায় তাঁর শিশুমনের প্রতি গভীর আগ্রহ। রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় এসে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন। তবে তিনি এসব লেখার গ্রন্থরূপ দিয়েছেন কমই। তাঁর প্রণীত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল: ১৯৭৪-১৯৮৭ (২০১০) একটি মূল্যবান গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ৩৯টি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে, যাতে আলোচিত হয়েছে সমকালীন অর্থনীতির নানা সমস্য। গ্রন্থটিতে যে-সমস্যাগুলি আলোচিত হয়েছে তারমধ্যে প্রধান বিষয় হচ্ছে দারিদ্র্য। তাঁর মতে বাংলাদেশের উন্নয়নে দারিদ্র্যই প্রধান বাধা। তাঁর মতে বিশ্বব্যাংকের করুণা-ঋণ এবং বিদেশের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নির্মূল করা সম্ভব নয়। কেননা তাঁর মতে ‘ভিক্ষার অন্নে পেটও ভরে না, মানও বাঁচে না।’ দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য: ‘অসম্মানজনক চিরস্থায়ী মিসকিনবৃত্তির বদলে মূলত নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে স্বনির্ভর ও সুষম উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বুনিয়াদ গড়ে’ তুলতে পারলে, তবেই দেশ দারিদ্র্য মুক্তির দিকে এগোতে পারে। তাঁর মৃত্যু ঢাকায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। | বজলুর রহমান শিশু সংগঠন ‘খেলাঘর’-এর সভাপতি ছিলেন। এ সময় তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ‘খেলাঘর’ পাতার সম্পাদনা করেন, যাতে লক্ষ করা যায় তাঁর শিশুমনের প্রতি গভীর আগ্রহ। রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় এসে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন। তবে তিনি এসব লেখার গ্রন্থরূপ দিয়েছেন কমই। তাঁর প্রণীত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল: ১৯৭৪-১৯৮৭ (২০১০) একটি মূল্যবান গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ৩৯টি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে, যাতে আলোচিত হয়েছে সমকালীন অর্থনীতির নানা সমস্য। গ্রন্থটিতে যে-সমস্যাগুলি আলোচিত হয়েছে তারমধ্যে প্রধান বিষয় হচ্ছে দারিদ্র্য। তাঁর মতে বাংলাদেশের উন্নয়নে দারিদ্র্যই প্রধান বাধা। তাঁর মতে বিশ্বব্যাংকের করুণা-ঋণ এবং বিদেশের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নির্মূল করা সম্ভব নয়। কেননা তাঁর মতে ‘ভিক্ষার অন্নে পেটও ভরে না, মানও বাঁচে না।’ দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য: ‘অসম্মানজনক চিরস্থায়ী মিসকিনবৃত্তির বদলে মূলত নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে স্বনির্ভর ও সুষম উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বুনিয়াদ গড়ে’ তুলতে পারলে, তবেই দেশ দারিদ্র্য মুক্তির দিকে এগোতে পারে। তাঁর মৃত্যু ঢাকায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। [মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম] | ||
[মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম] | |||
[[en:Rahman, Bazlur]] | [[en:Rahman, Bazlur]] |
০৮:৪৫, ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
রহমান, বজলুর (১৯৪১-২০০৮) সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, শিশুসংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা। জন্ম ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার চরনিয়ামতপুর গ্রামে। শেরপুর জেলার গণবর্দী স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৫৬), ময়মনসিংহ জেলার আনন্দমোহন কলেজ থেকে আইএ (১৯৫৮), বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে বিএ (১৯৬১) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৬১ বজলুর রহমান দৈনিক সংবাদ-এর সহকারী সম্পাদক পদে যোগ দেন। ষাটের দশকে তিনি কিছুকাল দৈনিক ইত্তেফাক-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বজলুর রহমান সংস্কৃতি ও রাজনীতি মনস্ক সাংবাদিক ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি কমিউনিস্ট পার্টি এবং ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন এবং স্বক্রিয় ভূমিকা রাখেন। এ সময় তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭১ সালে বজলুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং কমিউনিস্ট পার্টির বিশেষ মুখপত্র মুক্তিযুদ্ধ পত্রিকার সম্পাদনা করেন। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ‘বাংলাদেশ আফ্রো-এশিয়া গণসংহতি পরিষদ’-এর সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। অপরদিকে তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের (১৯৭৩-১৯৭৫) দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে ‘বঙ্গবন্ধু পরিষদ’ গঠিত হয়। তিনি ছিলেন এ পরিষদের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব-এর সিনিয়র সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৯৮০ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। বজলুর রহমান ‘বাংলাদেশ সোভিয়েত মৈত্রী সমিতি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্তএ সংগঠনের সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বজলুর রহমান সংবাদ-জগতের নানা সংগঠন ও সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংস্থা বাংলাদেশ শাখার সভাপতি (১৯৮৪), বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার পরিচালনা পরিষদ এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত (১৯৯৭) হন। ১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত তিনি প্রেস কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
বজলুর রহমান শিশু সংগঠন ‘খেলাঘর’-এর সভাপতি ছিলেন। এ সময় তিনি দৈনিক সংবাদ-এর ‘খেলাঘর’ পাতার সম্পাদনা করেন, যাতে লক্ষ করা যায় তাঁর শিশুমনের প্রতি গভীর আগ্রহ। রাজনীতি ও সাংবাদিকতায় এসে তিনি অর্থনীতি বিষয়ে বিস্তর লেখালেখি করেন। তবে তিনি এসব লেখার গ্রন্থরূপ দিয়েছেন কমই। তাঁর প্রণীত বাংলাদেশের অর্থনীতির হালচাল: ১৯৭৪-১৯৮৭ (২০১০) একটি মূল্যবান গ্রন্থ। এ গ্রন্থে ৩৯টি নিবন্ধ স্থান পেয়েছে, যাতে আলোচিত হয়েছে সমকালীন অর্থনীতির নানা সমস্য। গ্রন্থটিতে যে-সমস্যাগুলি আলোচিত হয়েছে তারমধ্যে প্রধান বিষয় হচ্ছে দারিদ্র্য। তাঁর মতে বাংলাদেশের উন্নয়নে দারিদ্র্যই প্রধান বাধা। তাঁর মতে বিশ্বব্যাংকের করুণা-ঋণ এবং বিদেশের সাহায্য নিয়ে বাংলাদেশের দারিদ্র্য নির্মূল করা সম্ভব নয়। কেননা তাঁর মতে ‘ভিক্ষার অন্নে পেটও ভরে না, মানও বাঁচে না।’ দারিদ্র্য থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য: ‘অসম্মানজনক চিরস্থায়ী মিসকিনবৃত্তির বদলে মূলত নিজস্ব সম্পদ ও সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতীয় অগ্রাধিকারকে সামনে রেখে স্বনির্ভর ও সুষম উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বুনিয়াদ গড়ে’ তুলতে পারলে, তবেই দেশ দারিদ্র্য মুক্তির দিকে এগোতে পারে। তাঁর মৃত্যু ঢাকায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৮। [মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম]