মৃত্তিকা গ্রথন: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

(Added Ennglish article link)
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
[[Category:বাংলাপিডিয়া]]
'''মৃত্তিকা গ্রথন''' (Soil Texture)  বালি, পলি ও এঁটেল কণার আপেক্ষিক অনুপাত। মৃত্তিকা কণাগুলোকে মিলিমিটারে প্রকাশিত ব্যাসের আলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেসব কণার ব্যাস ২ মিলিমিটারের চেয়ে বড় সেসব কণাকে মৃত্তিকার গ্রথন নির্ণয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অজৈব মৃত্তিকাতে কণার আকার সহজে পরিবর্তিত হয় না। এ কারণে বেলে মৃত্তিকা বেলেময় এবং এঁটেল মৃত্তিকা এঁটেল প্রকৃতিরই থেকে যায়। কোন মৃত্তিকাতে যেহেতু প্রতিটি কণা গ্রুপের অনুপাত (গ্রথন) সহজে পরিবর্তন করতে পারা যায় না, সেহেতু এটাকে মৃত্তিকায় মৌলিক ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্তিকায় গ্রথনিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও এদের ভৌত ধর্মাবলির নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মৃত্তিকায় গ্রথনিক শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। চারটি বড় গ্রুপের শ্রেণীনাম সাধারণত বেলে, পলি, এঁটেল ও দোঅাঁশ। বেলে মৃত্তিকাতে ৭০ শতাংশের অধিক বালিকণা; পলি মৃত্তিকাতে ৮০ শতাংশের অধিক পলিকণা; এঁটেল মৃত্তিকাতে ৪০ শতাংশেরও অধিক এঁটেলকণা; এবং দোঅাঁশ মৃত্তিকা হলো বালি, পলি ও এঁটেল কণার মধ্যম মিশ্রণ। দোঅাঁশ মৃত্তিকাকে অধিকাংশ কৃষি শস্য জন্মানোর জন্য অনুকূল গ্রথন সংবলিত মৃত্তিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের সাধারণ গ্রথনিক শ্রেণী ছাড়া প্রকৃতপক্ষে মৃত্তিকাকে প্রায়োগিক দিক থেকে বারোটি গ্রথনিক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ শ্রেণীগুলো হলো বেলে, দোঅাঁশ বেলে, বেলে দোঅাঁশ, দোঅাঁশ, পলি দোঅাঁশ, পলি, বেলে এঁটেল দোঅাঁশ, এঁটেল দোঅাঁশ, পলি এঁটেল দোঅাঁশ, বেলে এঁটেল, পলি এঁটেল ও এঁটেল। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের পার্থক্য ২০০ বছরের চেয়ে কম সময় আগের যমুনা প্লাবনভূমির অবক্ষেপে উৎপন্ন কোন কোন চুনহীন ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পাওয়া যায়। ২০০ বছরের অধিক কিন্তু সম্ভবত ১০০০-২০০০ বছরের অধিক নয় এমন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি ও পুরাতন মেঘনা মোহনাজ পললভূমিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী চুনহীন গাঢ় ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার এঁটেলের পরিমাণে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পার্থক্য সাধারণত দেখা যায় এবং অম্ল অববাহিকীয় কর্দম (Acid Basin Clay) মৃত্তিকার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠস্তর ও অন্তঃস্তরে এঁটেলের পরিমাণে পার্থক্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের এ পার্থক্য উপর থেকে নিচের দিকে এঁটেল কণার ক্ষালনের (leaching) কারণে হতে পারে। উঁচু পললভূমি উত্তোলিত অংশে সংঘটিত ক্ষালন পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেনি। হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমিতে বিদ্যমান তুলনামূলকভাবে পুরাতন মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথন একই রকমের। গঙ্গা নদী প্লাবনভূমির উপর সৃষ্ট চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি মৃত্তিকার অন্তঃমৃত্তিকার চেয়ে পৃষ্ঠমৃত্তিকাতে প্রকৃতপক্ষে অধিক এঁটেল থাকতে পারে।
'''মৃত্তিকা গ্রথন''' (Soil Texture)  বালি, পলি ও এঁটেল কণার আপেক্ষিক অনুপাত। মৃত্তিকা কণাগুলোকে মিলিমিটারে প্রকাশিত ব্যাসের আলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেসব কণার ব্যাস ২ মিলিমিটারের চেয়ে বড় সেসব কণাকে মৃত্তিকার গ্রথন নির্ণয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অজৈব মৃত্তিকাতে কণার আকার সহজে পরিবর্তিত হয় না। এ কারণে বেলে মৃত্তিকা বেলেময় এবং এঁটেল মৃত্তিকা এঁটেল প্রকৃতিরই থেকে যায়। কোন মৃত্তিকাতে যেহেতু প্রতিটি কণা গ্রুপের অনুপাত (গ্রথন) সহজে পরিবর্তন করতে পারা যায় না, সেহেতু এটাকে মৃত্তিকায় মৌলিক ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্তিকায় গ্রথনিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও এদের ভৌত ধর্মাবলির নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মৃত্তিকায় গ্রথনিক শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। চারটি বড় গ্রুপের শ্রেণীনাম সাধারণত বেলে, পলি, এঁটেল ও দোঅাঁশ। বেলে মৃত্তিকাতে ৭০ শতাংশের অধিক বালিকণা; পলি মৃত্তিকাতে ৮০ শতাংশের অধিক পলিকণা; এঁটেল মৃত্তিকাতে ৪০ শতাংশেরও অধিক এঁটেলকণা; এবং দোঅাঁশ মৃত্তিকা হলো বালি, পলি ও এঁটেল কণার মধ্যম মিশ্রণ। দোঅাঁশ মৃত্তিকাকে অধিকাংশ কৃষি শস্য জন্মানোর জন্য অনুকূল গ্রথন সংবলিত মৃত্তিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের সাধারণ গ্রথনিক শ্রেণী ছাড়া প্রকৃতপক্ষে মৃত্তিকাকে প্রায়োগিক দিক থেকে বারোটি গ্রথনিক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ শ্রেণীগুলো হলো বেলে, দোঅাঁশ বেলে, বেলে দোঅাঁশ, দোঅাঁশ, পলি দোঅাঁশ, পলি, বেলে এঁটেল দোঅাঁশ, এঁটেল দোঅাঁশ, পলি এঁটেল দোঅাঁশ, বেলে এঁটেল, পলি এঁটেল ও এঁটেল। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের পার্থক্য ২০০ বছরের চেয়ে কম সময় আগের যমুনা প্লাবনভূমির অবক্ষেপে উৎপন্ন কোন কোন চুনহীন ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পাওয়া যায়। ২০০ বছরের অধিক কিন্তু সম্ভবত ১০০০-২০০০ বছরের অধিক নয় এমন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি ও পুরাতন মেঘনা মোহনাজ পললভূমিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী চুনহীন গাঢ় ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার এঁটেলের পরিমাণে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পার্থক্য সাধারণত দেখা যায় এবং অম্ল অববাহিকীয় কর্দম (Acid Basin Clay) মৃত্তিকার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠস্তর ও অন্তঃস্তরে এঁটেলের পরিমাণে পার্থক্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের এ পার্থক্য উপর থেকে নিচের দিকে এঁটেল কণার ক্ষালনের (leaching) কারণে হতে পারে। উঁচু পললভূমি উত্তোলিত অংশে সংঘটিত ক্ষালন পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেনি। হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমিতে বিদ্যমান তুলনামূলকভাবে পুরাতন মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথন একই রকমের। গঙ্গা নদী প্লাবনভূমির উপর সৃষ্ট চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি মৃত্তিকার অন্তঃমৃত্তিকার চেয়ে পৃষ্ঠমৃত্তিকাতে প্রকৃতপক্ষে অধিক এঁটেল থাকতে পারে। [মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া]
 
[মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া]


[[en:Soil Texture]]
[[en:Soil Texture]]

০৫:০৩, ৫ মার্চ ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

মৃত্তিকা গ্রথন (Soil Texture)  বালি, পলি ও এঁটেল কণার আপেক্ষিক অনুপাত। মৃত্তিকা কণাগুলোকে মিলিমিটারে প্রকাশিত ব্যাসের আলোকে সংজ্ঞায়িত করা হয়। যেসব কণার ব্যাস ২ মিলিমিটারের চেয়ে বড় সেসব কণাকে মৃত্তিকার গ্রথন নির্ণয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। অজৈব মৃত্তিকাতে কণার আকার সহজে পরিবর্তিত হয় না। এ কারণে বেলে মৃত্তিকা বেলেময় এবং এঁটেল মৃত্তিকা এঁটেল প্রকৃতিরই থেকে যায়। কোন মৃত্তিকাতে যেহেতু প্রতিটি কণা গ্রুপের অনুপাত (গ্রথন) সহজে পরিবর্তন করতে পারা যায় না, সেহেতু এটাকে মৃত্তিকায় মৌলিক ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মৃত্তিকায় গ্রথনিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ধারণা প্রদান ও এদের ভৌত ধর্মাবলির নির্দেশনা দেওয়ার জন্য মৃত্তিকায় গ্রথনিক শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। চারটি বড় গ্রুপের শ্রেণীনাম সাধারণত বেলে, পলি, এঁটেল ও দোঅাঁশ। বেলে মৃত্তিকাতে ৭০ শতাংশের অধিক বালিকণা; পলি মৃত্তিকাতে ৮০ শতাংশের অধিক পলিকণা; এঁটেল মৃত্তিকাতে ৪০ শতাংশেরও অধিক এঁটেলকণা; এবং দোঅাঁশ মৃত্তিকা হলো বালি, পলি ও এঁটেল কণার মধ্যম মিশ্রণ। দোঅাঁশ মৃত্তিকাকে অধিকাংশ কৃষি শস্য জন্মানোর জন্য অনুকূল গ্রথন সংবলিত মৃত্তিকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ ধরনের সাধারণ গ্রথনিক শ্রেণী ছাড়া প্রকৃতপক্ষে মৃত্তিকাকে প্রায়োগিক দিক থেকে বারোটি গ্রথনিক শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে। এ শ্রেণীগুলো হলো বেলে, দোঅাঁশ বেলে, বেলে দোঅাঁশ, দোঅাঁশ, পলি দোঅাঁশ, পলি, বেলে এঁটেল দোঅাঁশ, এঁটেল দোঅাঁশ, পলি এঁটেল দোঅাঁশ, বেলে এঁটেল, পলি এঁটেল ও এঁটেল। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের পার্থক্য ২০০ বছরের চেয়ে কম সময় আগের যমুনা প্লাবনভূমির অবক্ষেপে উৎপন্ন কোন কোন চুনহীন ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পাওয়া যায়। ২০০ বছরের অধিক কিন্তু সম্ভবত ১০০০-২০০০ বছরের অধিক নয় এমন পুরাতন ব্রহ্মপুত্র পললভূমি ও পুরাতন মেঘনা মোহনাজ পললভূমিতে প্রাধান্য বিস্তারকারী চুনহীন গাঢ় ধূসর পললভূমি মৃত্তিকাতে পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার এঁটেলের পরিমাণে ৫ থেকে ১৫ শতাংশ পার্থক্য সাধারণত দেখা যায় এবং অম্ল অববাহিকীয় কর্দম (Acid Basin Clay) মৃত্তিকার ক্ষেত্রে পৃষ্ঠস্তর ও অন্তঃস্তরে এঁটেলের পরিমাণে পার্থক্য ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার মধ্যে গ্রথনের এ পার্থক্য উপর থেকে নিচের দিকে এঁটেল কণার ক্ষালনের (leaching) কারণে হতে পারে। উঁচু পললভূমি উত্তোলিত অংশে সংঘটিত ক্ষালন পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথনের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেনি। হিমালয় পর্বত পাদদেশীয় সমভূমিতে বিদ্যমান তুলনামূলকভাবে পুরাতন মৃত্তিকার পৃষ্ঠমৃত্তিকা ও অন্তঃমৃত্তিকার গ্রথন একই রকমের। গঙ্গা নদী প্লাবনভূমির উপর সৃষ্ট চুনযুক্ত বাদামি পললভূমি মৃত্তিকার অন্তঃমৃত্তিকার চেয়ে পৃষ্ঠমৃত্তিকাতে প্রকৃতপক্ষে অধিক এঁটেল থাকতে পারে। [মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁইয়া]