পিঠা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
NasirkhanBot (আলোচনা | অবদান) অ (Added Ennglish article link) |
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
||
২ নং লাইন: | ২ নং লাইন: | ||
'''পিঠা''' একটি উপাদেয় খাবার। বাংলাদেশে নানা রকমের পিঠা তৈরি হয়। এগুলি নিত্য দিনের খাবার নয়, বর বা কনে বরণ অনুষ্ঠান, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের আগমন, পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং অতিথি আপ্যায়নে পিঠা পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় শিশুরা কিংবা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা পিঠা বানাবার আবদার করে, সেই আবদার রক্ষায় মা, দাদি/নানিরা পিঠা তৈরি করে থাকে। পিঠার আকার-আকৃতি বিচিত্র। কোনও কোনও পিঠা আছে যা তৈরির বিষয়টি রীতিমতো অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অনেক সময় গ্রামে প্রতিবেশীরা একসাথে মিলে পিঠা তৈরির আয়োজন করে। | '''পিঠা''' একটি উপাদেয় খাবার। বাংলাদেশে নানা রকমের পিঠা তৈরি হয়। এগুলি নিত্য দিনের খাবার নয়, বর বা কনে বরণ অনুষ্ঠান, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের আগমন, পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং অতিথি আপ্যায়নে পিঠা পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় শিশুরা কিংবা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা পিঠা বানাবার আবদার করে, সেই আবদার রক্ষায় মা, দাদি/নানিরা পিঠা তৈরি করে থাকে। পিঠার আকার-আকৃতি বিচিত্র। কোনও কোনও পিঠা আছে যা তৈরির বিষয়টি রীতিমতো অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অনেক সময় গ্রামে প্রতিবেশীরা একসাথে মিলে পিঠা তৈরির আয়োজন করে। | ||
[[Image:Pitha2.jpg|thumb|400px|right|পিঠা তৈরি]] | |||
বেশিরভাগ পিঠাই মিষ্টিজাতীয়, তবে ঝাল-টক পিঠাও কম নয়। সারাবছরই পিঠা তৈরি হয়, তবে কিছু কিছু পিঠা মৌসুমি। শীতকালের পিঠা সবচেয়ে সুস্বাদু। এ সময়ে খেজুরের রস, খেজুর ও আখের গুড় পাওয়া যায়, যা দিয়ে উপাদেয় পিঠা তৈরি হয়। আসলে পিঠার মৌসুম শুরু হয় হেমন্তে, যখন কৃষকরা ঘরে ধান তোলে। | বেশিরভাগ পিঠাই মিষ্টিজাতীয়, তবে ঝাল-টক পিঠাও কম নয়। সারাবছরই পিঠা তৈরি হয়, তবে কিছু কিছু পিঠা মৌসুমি। শীতকালের পিঠা সবচেয়ে সুস্বাদু। এ সময়ে খেজুরের রস, খেজুর ও আখের গুড় পাওয়া যায়, যা দিয়ে উপাদেয় পিঠা তৈরি হয়। আসলে পিঠার মৌসুম শুরু হয় হেমন্তে, যখন কৃষকরা ঘরে ধান তোলে। | ||
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কখনও কখনও পিঠা মেলার আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন মহিলা সমিতি ও সংস্থাও পিঠা মেলার আয়োজন করে। বিভিন্ন মিনা বাজারের বড় আকর্ষণ পিঠা। ঐসব অনু্ষ্ঠানে বিচিত্র পিঠা প্রদর্শিত হয়। বেশ কিছু পিঠা আছে যা দেশের সর্বত্রই তৈরি হয়। তবে প্রত্যেক এলাকায় আলাদা ধরনের পিঠা রয়েছে। আবার একই ধরনের পিঠা এলাকা ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এমন কিছু পিঠা আছে যা সারাদেশেই প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। এগুলি হচ্ছে চিতই, পাটিসাপটা, পাকান, ভাপা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, নকশি পিঠা, পাতা পিঠা, তেজপাতা পিঠা, ঝুরি পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা এবং বিবিয়ানা পিঠা। | বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কখনও কখনও পিঠা মেলার আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন মহিলা সমিতি ও সংস্থাও পিঠা মেলার আয়োজন করে। বিভিন্ন মিনা বাজারের বড় আকর্ষণ পিঠা। ঐসব অনু্ষ্ঠানে বিচিত্র পিঠা প্রদর্শিত হয়। বেশ কিছু পিঠা আছে যা দেশের সর্বত্রই তৈরি হয়। তবে প্রত্যেক এলাকায় আলাদা ধরনের পিঠা রয়েছে। আবার একই ধরনের পিঠা এলাকা ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এমন কিছু পিঠা আছে যা সারাদেশেই প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। এগুলি হচ্ছে চিতই, পাটিসাপটা, পাকান, ভাপা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, নকশি পিঠা, পাতা পিঠা, তেজপাতা পিঠা, ঝুরি পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা এবং বিবিয়ানা পিঠা। | ||
[[Image:Pitha1.jpg|thumb|400px|left|নানা রকমের পিঠা]] | |||
পিঠা তৈরির সাধারণ উপাদান হচ্ছে চালের গুঁড়া, ময়দা, গুড় বা চিনি, নারিকেল ও তেল। অনেক সময় কিছু কিছু পিঠাতে মাংস ও সবজি ব্যবহূত হয়, যেমন সবজি পুলি, সবজি ভাপা, ঝাল কিংবা মাংস পাটিসাপটা। কোন কোন সময় কাঁঠাল, তাল, নারিকেল, কলা ইত্যাদি ফল দিয়েও পিঠা বানানো হয়। ঐসব পিঠায় ব্যবহূত ফলের নামেই এ নামকরণ করা হয়। পাতায় মুড়িয়ে এক ধরনের বিশেষ পিঠা তৈরি হয়, যাকে পাতা পিঠা বলা হয়। কিছু কিছু পিঠার আকার অনুযায়ী নামকরণ করা হয়, যেমন বড় ধরনের পিঠাকে হাঁড়ি পিঠা এবং ছোট আকৃতির এক ধরনের পিঠাকে খেজুর পিঠা বলা হয়। | পিঠা তৈরির সাধারণ উপাদান হচ্ছে চালের গুঁড়া, ময়দা, গুড় বা চিনি, নারিকেল ও তেল। অনেক সময় কিছু কিছু পিঠাতে মাংস ও সবজি ব্যবহূত হয়, যেমন সবজি পুলি, সবজি ভাপা, ঝাল কিংবা মাংস পাটিসাপটা। কোন কোন সময় কাঁঠাল, তাল, নারিকেল, কলা ইত্যাদি ফল দিয়েও পিঠা বানানো হয়। ঐসব পিঠায় ব্যবহূত ফলের নামেই এ নামকরণ করা হয়। পাতায় মুড়িয়ে এক ধরনের বিশেষ পিঠা তৈরি হয়, যাকে পাতা পিঠা বলা হয়। কিছু কিছু পিঠার আকার অনুযায়ী নামকরণ করা হয়, যেমন বড় ধরনের পিঠাকে হাঁড়ি পিঠা এবং ছোট আকৃতির এক ধরনের পিঠাকে খেজুর পিঠা বলা হয়। | ||
১৮ নং লাইন: | ১৪ নং লাইন: | ||
পিঠা বাংলাদেশের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। বর্তমানে প্রধানত শহর এলাকায় কেক, পেস্ট্রি ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত অন্যান্য খাবার ঐতিহ্যবাহী ঘরে তৈরি পিঠার স্থান দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখনও পিঠার কদর আছে, এমনকি শহরেও তা সমাদৃত। বর্তমানে শহরের অভিজাত বিপণিতে পিঠা পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে ক্ষুদে দোকানিরা পিঠা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের বেশির ভাগ খরিদ্দারই গ্রাম থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ, এরাই শহরে গ্রামের পিঠার স্বাদ নিয়ে এসেছে। [আবু সাঈদ খান] | পিঠা বাংলাদেশের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। বর্তমানে প্রধানত শহর এলাকায় কেক, পেস্ট্রি ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত অন্যান্য খাবার ঐতিহ্যবাহী ঘরে তৈরি পিঠার স্থান দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখনও পিঠার কদর আছে, এমনকি শহরেও তা সমাদৃত। বর্তমানে শহরের অভিজাত বিপণিতে পিঠা পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে ক্ষুদে দোকানিরা পিঠা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের বেশির ভাগ খরিদ্দারই গ্রাম থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ, এরাই শহরে গ্রামের পিঠার স্বাদ নিয়ে এসেছে। [আবু সাঈদ খান] | ||
[[en:Pitha]] | [[en:Pitha]] |
০৬:৩২, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ
পিঠা একটি উপাদেয় খাবার। বাংলাদেশে নানা রকমের পিঠা তৈরি হয়। এগুলি নিত্য দিনের খাবার নয়, বর বা কনে বরণ অনুষ্ঠান, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের আগমন, পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং অতিথি আপ্যায়নে পিঠা পরিবেশন করা হয়। অনেক সময় শিশুরা কিংবা পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা পিঠা বানাবার আবদার করে, সেই আবদার রক্ষায় মা, দাদি/নানিরা পিঠা তৈরি করে থাকে। পিঠার আকার-আকৃতি বিচিত্র। কোনও কোনও পিঠা আছে যা তৈরির বিষয়টি রীতিমতো অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। অনেক সময় গ্রামে প্রতিবেশীরা একসাথে মিলে পিঠা তৈরির আয়োজন করে।
বেশিরভাগ পিঠাই মিষ্টিজাতীয়, তবে ঝাল-টক পিঠাও কম নয়। সারাবছরই পিঠা তৈরি হয়, তবে কিছু কিছু পিঠা মৌসুমি। শীতকালের পিঠা সবচেয়ে সুস্বাদু। এ সময়ে খেজুরের রস, খেজুর ও আখের গুড় পাওয়া যায়, যা দিয়ে উপাদেয় পিঠা তৈরি হয়। আসলে পিঠার মৌসুম শুরু হয় হেমন্তে, যখন কৃষকরা ঘরে ধান তোলে।
বাংলাদেশ শিশু একাডেমী কখনও কখনও পিঠা মেলার আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন মহিলা সমিতি ও সংস্থাও পিঠা মেলার আয়োজন করে। বিভিন্ন মিনা বাজারের বড় আকর্ষণ পিঠা। ঐসব অনু্ষ্ঠানে বিচিত্র পিঠা প্রদর্শিত হয়। বেশ কিছু পিঠা আছে যা দেশের সর্বত্রই তৈরি হয়। তবে প্রত্যেক এলাকায় আলাদা ধরনের পিঠা রয়েছে। আবার একই ধরনের পিঠা এলাকা ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এমন কিছু পিঠা আছে যা সারাদেশেই প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। এগুলি হচ্ছে চিতই, পাটিসাপটা, পাকান, ভাপা, আন্দশা, কুলশি, কাটা পিঠা, ছিট পিঠা, গোকুল পিঠা, চুটকি পিঠা, মুঠি পিঠা, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, চাপড়ি পিঠা, নকশি পিঠা, পাতা পিঠা, তেজপাতা পিঠা, ঝুরি পিঠা, ফুলঝুরি পিঠা এবং বিবিয়ানা পিঠা।
পিঠা তৈরির সাধারণ উপাদান হচ্ছে চালের গুঁড়া, ময়দা, গুড় বা চিনি, নারিকেল ও তেল। অনেক সময় কিছু কিছু পিঠাতে মাংস ও সবজি ব্যবহূত হয়, যেমন সবজি পুলি, সবজি ভাপা, ঝাল কিংবা মাংস পাটিসাপটা। কোন কোন সময় কাঁঠাল, তাল, নারিকেল, কলা ইত্যাদি ফল দিয়েও পিঠা বানানো হয়। ঐসব পিঠায় ব্যবহূত ফলের নামেই এ নামকরণ করা হয়। পাতায় মুড়িয়ে এক ধরনের বিশেষ পিঠা তৈরি হয়, যাকে পাতা পিঠা বলা হয়। কিছু কিছু পিঠার আকার অনুযায়ী নামকরণ করা হয়, যেমন বড় ধরনের পিঠাকে হাঁড়ি পিঠা এবং ছোট আকৃতির এক ধরনের পিঠাকে খেজুর পিঠা বলা হয়।
বরকে বরণ করা উপলক্ষে কারুকার্যখচিত, বর্ণাঢ্য ও আকর্ষণীয় নানা রকমের পিঠা তৈরি হয়। এ ধরনের পিঠার নাম বিবিয়ানা অর্থাৎ বিবি বা কনের পারদর্শিতা। এ ধরনের পিঠাকে জামাই ভুলানো পিঠাও বলা হয়।
পিঠা বাংলাদেশের জীবন ও সংস্কৃতির সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। বর্তমানে প্রধানত শহর এলাকায় কেক, পেস্ট্রি ও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্ত্ততকৃত অন্যান্য খাবার ঐতিহ্যবাহী ঘরে তৈরি পিঠার স্থান দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখনও পিঠার কদর আছে, এমনকি শহরেও তা সমাদৃত। বর্তমানে শহরের অভিজাত বিপণিতে পিঠা পাওয়া যায়। রাস্তার ধারে ক্ষুদে দোকানিরা পিঠা বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে। এদের বেশির ভাগ খরিদ্দারই গ্রাম থেকে আসা ছিন্নমূল মানুষ, এরাই শহরে গ্রামের পিঠার স্বাদ নিয়ে এসেছে। [আবু সাঈদ খান]