সুনামগঞ্জ জেলা

সুনামগঞ্জ জেলা (সিলেট বিভাগ)  আয়তন: ৩৫২৬.১২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৪´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৫৬´ থেকে ৯১°৪৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সিলেট জেলা, পশ্চিমে নেত্রকোনা জেলা।

জনসংখ্যা ২৩৭৫২২৩; পুরুষ ১১৮৯৪৮৭, মহিলা ১১৮৫৭৩৬। মুসলিম ২০৭৫৮৬৩, হিন্দু ২৯৬৩৮০, বৌদ্ধ ৭১, খ্রিস্টান ১৮৩৭ এবং অন্যান্য ১০৭২। এ জেলায় মনিপুরী, খাসিয়া, হাজং, গারো প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সুরমা, কুশিয়ারা, ধামালিয়া, যাদুকাটা, বাগড়া, ডাহুকা, সোমেশ্বরী, বাউলী।

প্রশাসন ১৯৮৪ সালে সুনামগঞ্জ মহকুমা জেলায় রূপান্তর করা হয়। পৌরসভা গঠিত হয় ১৯৬০ সালে। জেলার এগারটি উপজেলার মধ্যে ধর্মপাশা উপজেলা সর্ববৃহৎ (৪৯৬.০৩ বর্গ কিমি) এবং সবচেয়ে ছোট উপজেলা বিশ্বম্ভরপুর (১৯৪.২৫ বর্গ কিমি)।

জেলা
আয়তন (বর্গ কিমি) উপজেলা পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম
৩৫২৬.১২ ১১ ৮৩ ১৫০২ ২৭৩৮ ২৫২১৭২ ২১২৩০৫১ ৬৭৪ ৩৫.০
জেলার অন্যান্য তথ্য
উপজেলা নাম আয়তন(বর্গ কিমি) পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
ছাতক ৪৪০.৪৮ ১৩ ২৯৬ ৫৩৯ ৩৯৭৬৪২ ৯০৩ ৩৮.৬
জগন্নাথপুর ৩৬৮.১১ ২৩৪ ৩১০ ২৫৯৪৯০ ৭০৫ ৩৯.৯
জামালগঞ্জ ৩০৯.৩৮ - ১০২ ১৯২ ১৬৭২৬০ ৫৪১ ৩২.৫
তাহিরপুর ৩১৫.৩৩ - ১২৮ ২৪৩ ২১৫২০০ ৬৮২ ৩০.৪
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ৩০৩.১৭ - ১০৭ ১৭১ ১৮৩৮৮১ ৬০৭ ৩২.৩
দিরাই ৪২০.৯৩ ১৩৭ ২৩২ ২৪৩৬৯০ ৫৭৯ ৩৭.১
দোয়ারাবাজার ২৬৩.৩৫ - ১৬৮ ৩০৮ ২২৮৪৬০ ৮৬৮ ৩০.৪
ধর্মপাশা ৩১০ - ৮৪ ১৭৫ ১৩০৪৫৭ ৪২১ ২৮.৫
বিশ্বম্ভরপুর ২৪৮.৬৩ - ৬১ ১৮৪ ১৫৬৩৮১ ৬২৯ ৩৪.৬
সাল্লা ২৫৬.০৩ - ৬৫ ১১৬ ১১৩৭৪৩ ৪৪৪ ৩৪.৩
সুনামগঞ্জ সদর ২৯০.৭১ ১২০ ২৬৮ ২৭৯০১৯ ৯৬০ ৩৮.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল ছাতক উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ এবং ১১ জন আহত হন। ২৯ জুলাই জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ১২ আগস্ট তেলিয়া গ্রামে পাকসেনারা ৮ জন সাধারণ লোককে হত্যা করে। ২৫ আগস্ট দিরাই উপজেলায় পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ২ জন আহত হন। ৩১ আগস্ট জগন্নাথপুর উপজেলায় শান্তি সভার নামে রাজাকাররা শ্রীরামপুর হাইস্কুলে স্থানীয় শিক্ষক, কর্মচারি, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ও সাধারণ লোকজনের একটি সমাবেশের আয়োজন করে। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকসেনারা উক্ত সভার ১২৬ জন লোককে হত্যা করে এবং গ্রামটি জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া ৮ সেপ্টেম্বর পাকসেনারা এ উপজেলার রাণীগঞ্জ বাজারে ৩০ জন লোককে হত্যা করে এবং ১৫০ টি দোকান জ্বালিয়ে দেয়। সুনামগঞ্জ সার্কিট হাউজ ও আহসানমারা ফেরী ঘাট এলাকায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ চলাকালে পাকবাহিনীর আক্রমণে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। মঙ্গলকাটার কৃষ্ণনগরে ৪৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ডলুরায় তাদের সমাহিত করা হয়। ৭ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা শত্রুমুক্ত হয়। সুনামগঞ্জ জেলার ৩টি স্থানে (জগন্নাথপুরের শ্রীরামসি, রাণীগঞ্জ) বধ্যভূমি এবং ৪টি স্থানে গণকবর রয়েছে; ১৯৮০ সালে শ্রীরামসিতে এবং ১৯৮৯ সালে রাণীগঞ্জে স্মৃতিফলক নির্মিত হয়েছে এবং ছাতকের শিখা সতের ও স্মৃতিসৌধসহ জেলায় মোট ৫টি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৫.০%; পুরুষ ৩৬.৯%, মহিলা ৩৩.১%। পি টি আই ১, কলেজ ৩০, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৬৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৫০, কারিগরি স্কুল ৫, কিন্ডার গার্টেন ২০, কমিউনিটি বিদ্যালয় ৭২, মাদ্রাসা ১৬৫। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৪৪), সুনামগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৮৪), জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয় (১৯৯২), সাল্লা মহাবিদ্যালয় (১৯৮৬), জামালগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৮৫), বড়খাল বহুমূখী স্কুল ও কলেজ (১৯৭০), বাদশাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজ (১৯৯৪), মধ্যনগর বিপি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৫২), দিরাই ডিগ্রী মহাবিদ্যালয় (১৯৭৯), ছাতক ডিগ্রী কলেজ (১৯৭২), ছাতক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (১৯৮১), দিগেন্দ্রবর্মন কলেজ (১৯৯২), জগন্নাথপুর মহাবিদ্যালয়, সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৭), জয়কলস উজানীগাঁও রশিদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), তাহিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫০), সরকারি সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪০), জামালগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৮), জগন্নাথপুর স্বরূপচন্দ্র সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), পাইলগাঁও বি এন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), দিরাই উচ্চ বালক বিদ্যালয় (১৯১৫), রাজানগর কৃষ্ণচন্দ্র পাবলিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৩), চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), সাতগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৩), আশারকান্দি জাকির মোহাম্মদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮৭), সৈয়দপুর সৈয়দিয়া শামছিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯০৩), বাহারা প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৩১), আনন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৫), দিরাই আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮০৫), শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), বিশ্বম্ভরপুর আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯২৮)।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬৬.৯৯%, অকৃষি শ্রমিক ৬.৫২%, শিল্প ০.৪৫%, ব্যবসা ৯.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ০.৯৬%, নির্মাণ ০.৬৪%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৪%, চাকরি ৩.৮১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.২০% এবং অন্যান্য ৮.৯৭%।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: হাওর বার্তা, দেশপ্রান্ত; সাপ্তাহিক: স্বজন (১৯৯১), সুনামকণ্ঠ (২০০০), সুরমা এক্সপ্রেস (২০০৬), সুনামগঞ্জ রিপোর্ট (২০০৫), সুনাম (১৯৮৪), দিন যায় (১৯৯২), সুনামগঞ্জের কাগজ (১৯৯১), সুনামগঞ্জের জনপথ (২০০৬), সুনামগঞ্জ সংবাদ (১৯৯১), সুনামগঞ্জ বার্তা (১৯৮৫), অনল (১৯৯১), গ্রাম বাংলার কথা (২০০৭); পাক্ষিক: সুরমা (২০০১), দারাইন (২০০০), ভাটি কথা (২০০১), বিজয় (২০০২), গাং (২০০৩), নক্ষত্র (২০০৪), কালনী (২০০১), হাওড়ের ঢেউ, সুচয়ন, প্রত্যায়ন, মঙ্গলা (১৯০৬), কালের  করতল (১৯৭৭), জামালগঞ্জ সমাচার (১৯৮৫), ভালবাসি স্বদেশ (১৯৮৭), নবজাতক (১৯৮৭), প্রভাত (১৯৯০), অপরাজিত তারুণ্য (১৯৯১), উত্তর প্রজন্ম (১৯৯২), দিশারী (১৯৯৩), প্রতিধী (১৯৯৩), উম্মোচন (১৯৯৪), সাহসে জেগে উঠো (১৯৯৭), স্মৃতির অলিন্দে (১৯৯৮), পূর্বাশা (১৯৯৮), রক্তঝরা ফাগুনে (১৯৯৮), প্রেরণা (১৯৯৯), অভিপ্রায় (২০০১), নিবেদন (২০০৬); মাসিক: জগন্নাথপুর টাইমস (বর্তমান), ঝংকার (১৯২৯), প্রদীপ (১৯২৯); ত্রৈমাসিক: স্ফুলিঙ্গ; সাময়িকী: দিশারী (১৯৯৩), ক্ষুদ্রপট রুদ্রপ্রাণ (১৯৯৮), স্মৃতির অলিন্দে (১৯৯৮), অরুণোদয় (১৯৯৮, ২০০০)।

লোকসংস্কৃতি হালযাত্রা, গোরমার নাচ, ধামাইল ও সূর্যব্রত গান, বীজবাস-ব্রত, বনলক্ষ্মীব্রত, ক্ষীরবাসব্রত, ফিরাল প্রভৃতি লোকজ আচার-অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। [আশফাক হোসেন]

আরও দেখুন সংশ্লিষ্ট উপজেলা।

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; সুনামগঞ্জ জেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭; সুনামগঞ্জ জেলার উপজেলাসমূহের  সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।