ফরিদপুর সদর উপজেলা

ফরিদপুর সদর উপজেলা (ফরিদপুর জেলা)  আয়তন: ৪১২.৮৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°২৯´ থেকে ২৩°৩৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৪৩´ থেকে ৮৯°৫৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোয়ালন্দ ও হরিরামপুর উপজেলা, দক্ষিণে নগরকান্দা উপজেলা, পূর্বে চরভদ্রাসন ও হরিরামপুর উপজেলা, পশ্চিমে বোয়ালমারী, মধুখালী ও রাজবাড়ী সদর উপজেলা। উপজেলা শহর কুমার নদীর তীরে অবস্থিত।

জনসংখ্যা ৪৬৯৪১০; পুরুষ ২৩৫৭৬২, মহিলা ২৩৩৬৪৮। মুসলিম ৪২০১০৩, হিন্দু ৪৮২৬০, বৌদ্ধ ২০, খ্রিস্টান ৮৪৩ এবং অন্যান্য ১৮৪।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা, কুমার, পুরাতন কুমার, ভুবনেশ্বর; চাপা বিল, হারি বিল, ঢোল সমুদ্র, বিলমামুনপুরের কোল, শকুনের বিল এবং টেপা খোলার হ্রদ (কৃত্রিম) উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ফরিদপুর সদর থানা গঠিত হয় ১৮৯৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১১ ১৫৭ ৩৪২ ১২২৪২৫ ৩৪৬৯৮৫ ১১৩৭ ৭৩.৩ (২০০১) ৪৮.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
২২.৬৫ (২০০১) ৪১ ১২১৬৩২ ৪৪১৩ (২০০১) ৭৭.৩
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
০.৮০ (২০০১) ৭৯৩ ১৪২৪ (২০০১) ৪৮.৯
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
অম্বিকাপুর ১৫ ৪১৪০ ১৩৮৮২ ১৩৫৯৫ ৫৪.০
আলীয়াবাদ ১৩ ৬৬৩২ ১৭১৩৪ ১৬৮১০ ৫১.৫
ঈশান গোপালপুর ৪৭ ৮৭৭৫ ১৪১৫২ ১৪৭০৯ ৪৯.৩
উত্তর চ্যানেল ৮৭ ১৩২৫৪ ১০৫৪২ ১০৫৪৪ ২৭.০
কানাইপুর ৬৩ ৯৩৩৭ ২৪৩১০ ২৪২৪৯ ৪৯.৮
কৃষ্ণনগর ৭১ ১০৮৩৬ ১৮৭৪৫ ১৮৯২২ ৪৯.৫
কৈজুরি ৫৫ ১০৩০৫ ২০৯৮৫ ২১১৬৮ ৪৮.৮
র্গেদা ৩৯ ৫৭৩৯ ১৪৩৬৪ ১৪৮৭৮ ৪৯.৭
চর মাধবদিয়া ২৩ ৬০২৪ ১৪৩৬১ ১৪১১৫ ৪৪.৫
ডিক্রিচর ৩১ ৫৬৯৫ ১০৭৪১ ১০৪৫৪ ৪৫.৪
মাঝচর ৭৯ ১০৮৭৩ ১৪৪০২ ১৪৭১৬ ৪৯.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ গের্দা মসজিদ (১০১৩ হিজরি), শেখ ফরিদের দরগাহ, চকবাজারের শিবমন্দির, রথখোলা চৌধুরীবাড়ি, জগদ্বন্ধুর আশ্রম (শ্রী অঙ্গন), বিসমিল্লাহ শাহ্র মাযার, কোর্ট মসজিদ, ফরিদপুর খ্রিস্টান মিশন, গৌর গোপাল আঙিনা, গোয়ালচামট শাহ সাহেব বাড়ি, মহিমবাবুর মঠ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২১ এপ্রিল পাকবাহিনী ফরিদপুর স্টেডিয়ামে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং শ্রী অঙ্গনের জগবন্ধু আশ্রমের ৮ জন ব্রহ্মচারীকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। ২ মে পাকবাহিনী ঈশান গোপালপুরের সরকার বাড়িতে ৩৪ জনকে হত্যা করে। ৯ ডিসেম্বর কানাইপুরের করিমপুর ব্রিজের কাছে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং ৬০ জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৪ ডিসেম্বর মমিনখাঁর হাটে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনা ও বিহারীদের যুদ্ধে ১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলার ফরিদপুর স্টেডিয়াম, ফরিদপুর হাউজিং এস্টেটে গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে; ১টি স্মারক ভাস্কর্য ও ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন ফরিদপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৬।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩২১, মন্দির ৩০, গির্জা ৩, তীর্থস্থান ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৫.৮%; পুরুষ ৫৮.০%, মহিলা ৫৩.৭%। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ১, মেডিকেল কলেজ ১, ল’কলেজ ১, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ১, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ১, টেকনিক্যাল এন্ড ভোকেশনাল কলেজ ১, পিটিআই ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, কলেজ ১৩, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪০, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৪৮, স্যাটেলাইট স্কুল ১৩, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১৪, এতিমখানা ৩,  মাদ্রাসা ৩৯। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ (১৯১৮), ফরিদপুর জেলা স্কুল (১৮৪০), ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), হিতৈষী উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৮৯), ঈশান বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৮), শিবরাম আর ডি একাডেমী (১৯১৭), ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৮), ময়েজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৬), আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: ঠিকানা, গণ সংহতি, ভোরের রানার, কুমার (২০০৬); সাপ্তাহিক: গণমন (১৩৭০ বাংলা), জাগরণ, আল মিজান, চাষীবার্তা, প্রগতির দিন (১৯৯৫), ইদানীং, ফরিদপুর কণ্ঠ, কালভাবনা (২০০৪), ফরিদপুর বার্তা, বাংলা সংবাদ, একাল (অবলুপ্ত), আল মোয়াজ্জিন (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান  লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১৪০, জাদুঘর ১, সিনেমা হল ৩, নাট্যমঞ্চ ৫, নাট্যদল ১৭, মহিলা সংগঠন ৪৫।

দর্শনীয় স্থান পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের বাড়ি, ময়েজ মঞ্জিল ও কবরস্থান, খান বাহাদুর আবদুল গণি মিয়ার বাড়ি, ফরিদপুরের টাউন থিয়েটার (১৯১৫), অম্বিকাচরণ মজুমদারের বাড়ি, নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাস (১৯৭৭), কানাইপুর শিকদার বাড়ি, গোয়ালচামট শাহ শাহের বাড়ি, স্লুইচ গেট।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৯.৭২%, অকৃষি শ্রমিক ৪.০৩%, শিল্প ১.৬৫%, ব্যবসা ১৭.৪৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৯.১৯%, চাকরি ১৪.২৩%, নির্মাণ ৩.৬৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৫%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.৪১% এবং অন্যান্য ৮.৪৫%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৭.৭৭%, ভূমিহীন ২২.২৩%। শহরে ৭২.২৮% এবং গ্রামে ৭৭.৯৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, আলু, আখ, পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, ডাল, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি কাউন, কুসুমফুল, তিল, সোনামুগ, চিনা, যব, অড়হর, মিষ্টিআলু।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ২২, গবাদিপশু ১০৯, হাঁস-মুরগি ৩২, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪৯ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১২৯ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৮৩ কিমি; রেলপথ ১৪ কিমি; নৌপথ ২৫ কিমি। সেতু ৭০, কালভার্ট ৯০।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও মহিষের গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা পাটজাতশিল্প, বস্ত্রশিল্প, ধানকল, ময়দাকল, ডালকল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৭, মেলা ৬। কানাইপুর হাট, টেপাখোলা হাট, মমিনখাঁর হাট, গেন্দু মোল্লার হাট, গজারিয়া হাট, তাম্বুলখানা হাট, বাখুন্ডা হাট, খলিলপুর হাট এবং আঙীনা মেলা, চৌধুরীবাড়ির মেলা, জসীম পল্লীমেলা ও আকপাড়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট, পিঁয়াজ, রসুন, গুড়, ডাল, শাকসবজি, হলুদ।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৬৭.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৮.০%, ট্যাপ ৯.৯% এবং অন্যান্য ২.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৭.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৭% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৯% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১, হাসপাতাল ১০, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৯, যক্ষা হাসপাতাল ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ১, ক্লিনিক ১৮, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩৮।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ  ১৯৬০ সালের ৯-১০ ও ৩০-৩১ অক্টোবর মেঘনা নদীর পূর্বাঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নদী ভাঙনে উপজেলার পূর্বাংশ হুমকির সম্মুখীন হয়।

এনজিও  আশা, ওয়ার্ল্ডভিশন অব বাংলাদেশ, এনজিও ফোরাম ফর ড্রিংকিং ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন। [মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ফরিদপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।