নাজিরপুর উপজেলা

নাজিরপুর উপজেলা (পিরোজপুর জেলা)  আয়তন: ২২৮.৬৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৪০' থেকে ২২°৫২' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫২' থেকে ৯০°০৩' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে টুঙ্গিপাড়া, কোটালিপাড়া ও উজিরপুর উপজেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর সদর ও কচুয়া উপজেলা (বাগেরহাট), পূর্বে নেছারাবাদ ও বানারীপাড়া উপজেলা, পশ্চিমে চিতলমারী উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৮০৪০৮; পুরুষ ৮৯৭১১, মহিলা ৯০৬৯৭। মুসলিম ১২৩৮৮২, হিন্দু ৫৬৪৭৭, খ্রিস্টান ৪৩ এবং অন্যান্য ৬ ।

জলাশয় প্রধান নদী: শৈলধা, কালীগঙ্গা, বলেশ্বর ও বিষারকান্দি। এছাড়া চাতার বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন নাজিরপুর থানা গঠিত হয় ১৯০৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৬৮ ১৭১ ৪৭৩০ ১৭৫৬৭৮ ৭৮৯ ৬৯.৬ ৫৯.০
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.৩৩ ৪৭৩০ ১৪২০ ৬৯.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
দীর্ঘা ১০ ৬৬৩৮ ৭৯৮১ ৮৩৯৭ ৬৮.৫
নাজিরপুর ৫২ ৫১৯১ ৯৬৭২ ৯৬৮৩ ৫৭.৮
পূর্ব দেউলবাড়ী ডোবড়া ২১ ৮৪৮৯ ২০৯১৩ ১৯৬৮৮ ৫৮.৭
মালিখালী ৩১ ৭৩৯৬ ১০৯৩৪ ১১০১৬ ৬০.৬
মাটিভাঙ্গা ৪২ ৫৯৭৫ ১০৯৩২ ১১৩২৪ ৫৩.২
শাখারীকাঠী ৭৩ ৬০৯৯ ৮৫১৫ ৯১৩৪ ৫৭.৩
সেখমাটিয়া ৬৩ ৬৯৩১ ১১৫০২ ১১৮৭৭ ৫৬.৮
শ্রীরামকাঠী ৮৪ ৬৩৪৩ ৯২৬২ ৯৫৭৮ ৬৪.৩

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ কুমারখালীর কালীমন্দির (অষ্টাদশ শতাব্দী)।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৫ মে পাকসেনারা দীর্ঘা ইউনিয়নে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা চালায়। ৩ ডিসেম্বর রাজাকার ও পাকসেনারা সাতকাছিমা ও বাইনকাঠি গ্রামে ৭ জন লোককে হত্যা করে। উপজেলার শ্রীরামকাঠি, সাতকাছিমা, মাদারবাড়ি প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের খ-যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। স্বর্গবাণী নামক স্থানে ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন নাজিরপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ২৮১, মন্দির ৩২০, তীর্থস্থান ২, মাযার ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  গড় হার ৫৯.৩%; পুরুষ ৬০.১%, মহিলা ৫৮.৫%। কলেজ ৫, টেকনিক্যাল কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২১, মাদ্রাসা ৪।  উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান:  মাটিভাঙ্গা ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), শহীদ জিয়া কলেজ (১৯৮২), শহীদ জননী মহিলা মহাবিদ্যালয় (২০০০), এসএস হালদার টেকনিক্যাল কলেজ (২০০১), মালিখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯০৭), শাখারীকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২১), দীঘিরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২১), ডুমুরিয়া নেছারিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৮০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী  অপরাজেয় বাংলা (১৯৯৪), রক্তকমল (২০০০), অনির্বাণ (২০০১), দিশারী (২০০১), বিজয় স্মরণিকা (১৯৯৪) ও রক্তাক্ত ফাল্গুন।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২৭, ক্লাব ১০, নাট্যদল ২,  সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ৮।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭০.০২%, অকৃষি শ্রমিক ২.৮৩%, ব্যবসা ১৩.৬৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৭%, চাকরি ৬.২২%, নির্মাণ ০.৭২%, ধর্মীয় সেবা ০.২৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.২২% এবং অন্যান্য ৪.৮৭%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৭৬.১০%, ভূমিহীন ২৩.৯০%। শহরে ৬৭.৮৮% এবং গ্রামে ৭৬.৩০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, ডাল, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তিল, তিসি, চিনা, কাউন।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, কাঁঠাল, কলা, পেঁপে, নারিকেল, তরমুজ, সুপারি, আমড়া।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১০৮৬, গবাদিপশু ৬৯, হাঁস-মুরগি ৪০, হ্যাচারি ১।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫০ কিমি, আধা-পাকা রাস্তা ৫৭ কিমি এবং কাঁচারাস্তা ৩৭২ কিমি; নৌপথ ২১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা আইসফ্যাক্টরি ২, স’মিল ৫, ফ্লাওয়ার মিল ২০, রাইসমিল ৪২, অয়েল মিল ২, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁত, বাঁশের কাজ, সেলাই কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৪। তুলার মেলা (সদর), পূর্ণচাঁদ সাধুর বাড়ি মেলা (লরা গ্রাম), মতুয়া সম্প্রদায়ের মেলা (কেনুয়াভাঙ্গা গ্রাম)।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  নারিকেল, সুপারি, ধান, হোগলা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ২৯.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯২.৫%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ৭.২%। এ উপজেলায় ২০১৪ টি অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৭১.৫% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৫.৮% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, কমিউনিটি ক্লিনিক ২৩, ইপিআই কেন্দ্র ১৯২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৭৬২ সালের ভূমিকম্পে এ উপজেলার নদীগুলোর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যায়, কোনো কোনো খাল-বিল ভরে যায়, আবার অনেক নতুন জলাভূমির সৃষ্টি হয়। ১৮২২, ১৮৩১, ১৯০৯, ১৯৬০, ১৯৭০ ও ১৯৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস এবং ১৭৭০ ও ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষে এখানকার বহু লোক মারা যায়। ১৭৮৬,  ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যায় উপজেলার উত্তরাঞ্চল প্লাবিত হয়।

এনজিও ব্র্যাক, আশা।  [মো. মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র   আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো;  নাজিরপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।