দিনাজপুর সদর উপজেলা
দিনাজপুর সদর উপজেলা (দিনাজপুর জেলা) আয়তন: ৩৫৪.৭৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৫°২৮´ থেকে ২৫°৪৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°৩৪´ থেকে ৮৮°৪৬´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কাহারোল এবং খানসামা উপজেলা, দক্ষিণে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, পূর্বে চিরিরবন্দর উপজেলা, পশ্চিমে বিরল উপজেলা।
জনসংখ্যা ৪৮৪৫৯৭; পুরুষ ২৪৭৭৯২, মহিলা ২৩৬৮০৫। মুসলিম ৩৯৮১৫৫, হিন্দু ৭৮০১৮, বৌদ্ধ ৬১, খ্রিস্টান ৫৩৯২ এবং অন্যান্য ২৯৭১।
জলাশয় পুনর্ভবা ও আত্রাই নদী এবং রামসাগর দীঘি উল্লেখযোগ্য।
প্রশাসন দিনাজপুর সদর থানা গঠিত হয় ১৮৯৯ সালে এবং থানা উপজেলায় রূপান্তরিত হয় ১৯৮৪ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
১ | ১০ | ২০৭ | ২০৭ | ১৯১৩২৯ | ২৯৩২৬৮ | ১৩৬৬ | ৬৮.৫ (২০০১) | ৫৬.৯ |
পৌরসভা | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | ওয়ার্ড | মহল্লা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার(%) | |||
১৯.২৩ (২০০১) | ১২ | ৮০ | ১৮৬৭২৭ | ৬৭৩৪ (২০০১) | ৭৫.৪ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৪.০২ (২০০১) | ৩ | ৪৬০২ | ২৩৫৩ (২০০১) | ৬২.২ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার(%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
আউলিয়াপুর ১৭ | ৮৩১৩ | ২৪১২২ | ২২৮০৩ | ৫৫.০ | ||||
আস্করপুর ১৬ | ৭৫০৩ | ১০৯২৩ | ১০৬০২ | ৫৯.৪ | ||||
উথরাইল ৯৪ | ৮৪৬৩ | ১২৫৩২ | ১২০৪৩ | ৬০.৫ | ||||
কমলপুর ৪৩ | ৮৪৪৩ | ১০৮৬৩ | ১০২২৩ | ৬১.০ | ||||
চেহেলগাজী ২৫ | ৯১০৯ | ২২৬২৯ | ২১০৬৮ | ৫৩.৪ | ||||
ফাজিলপুর ৩৪ | ৮৫১১ | ১৩৮৮৭ | ১৩৬৮৫ | ৬৮.৪ | ||||
শংকরপুর ৬০ | ৮৯৫৯ | ১১৮১৭ | ১১৫৪১ | ৫৮.১ | ||||
শশরা ৬৯ | ৬৮২০ | ১৩৫৩৭ | ১৩৩০৬ | ৫৬.০ | ||||
শেখপুরা ৭৭ | ৭৩৬৪ | ১৬৩৮২ | ১৫৯৭৫ | ৫০.৮ | ||||
সুন্দরবন ৮৬ | ৮৯৬৮ | ১৪৯৬১ | ১৪৯৭১ | ৫৪.৩ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদ রামসাগর দীঘি (১৭৫০ সালে খননকৃত), সিংহ দুয়ার প্রাসাদ, কান্তনগর মন্দির, শ্রীচন্দ্রপুর দুর্গ, চেহেল গাজী মাযার, দিনাজপুর রাজবাড়ি, গোলাপগঞ্জ জোড় মন্দির, দীঘন মাশান কালীমন্দির, চাউলিয়াপট্টি প্রাচীন মন্দির, গণেশতলা মহিষ মর্দিনী মন্দির, নিমতলা কালীমন্দির, গোরাশহীদ মসজিদ, কালীতলা মাশান কালী মন্দির।
মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭২ সালের ৬ জানুয়ারি মুক্তিযোদ্ধারা দিনাজপুর শহরের মহারাজা গিরিজানাথ হাইস্কুলে অস্ত্র ফেরত দিতে গিয়ে লাইন-আপ এ থাকার সময় অকস্মাৎ মাইন বিস্ফোরণে প্রায় ৫০০ মুক্তিযোদ্ধা নিহত হন। প্রায় ১০০ জন নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছিন্ন ভিন্ন লাশ চেহেলগাজী মাযারে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে দিনাজপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ কোতোয়ালীর কুতোর গ্রাম ও লালমাটিয়া এবং ঘুঘুডাঙ্গা, বড়গ্রাম, খানপুর প্রভৃতি স্থানে পাকসেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। উপজেলার ১টি স্থানে স্মৃতিসৌধ নির্মিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন দিনাজপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৪.৩%; পুরুষ ৬৭.৪%, মহিলা ৬১.০%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, ভেটারনেরি কলেজ ১, কলেজ ২৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৭৪, মাদ্রাসা ৩৬। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: উইলিয়ম কেরী নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল (১৭৯৯), দিনাজপুর জিলা স্কুল (১৮৫৪), দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৬৯), জুবিলি হাইস্কুল (১৮৮৭), মহারাজা গিরিজানাথ উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৩), সারদেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৭), দিনাজপুর হাইস্কুল (১৯৩০), একাডেমী হাইস্কুল (১৯৩৩), সেন্ট ফিলিপস হাইস্কুল, নুরজাহান আলিয়া মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: উত্তরা, প্রতিদিন, তিস্তা, জনমত, উত্তরবঙ্গ, আজকের প্রতিভা, পত্রালাপ; সাপ্তাহিক: অতঃপর, আজকের বার্তা; মাসিক: নওরোজ (অবলুপ্ত)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৩০৫, লাইব্রেরি ৬, জাদুঘর ১, সিনেমা হল ৭, নাট্যদল ৩, সাহিত্য চর্চা সংগঠন ১৫, মহিলা সংগঠন ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৩, সাঁওতাল একাডেমী ১।
দর্শনীয় স্থান দিনাজপুর রাজবাড়ি, আনন্দসাগর, শুকসাগর, মাতাসাগর, রামসাগর দীঘি।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৩.২৫%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৩২%, শিল্প ১.০১%, ব্যবসা ১৬.০২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.০১%, চাকরি ১৪.৭৩%, নির্মাণ ১২.৮৯%, ধর্মীয় সেবা ০.২১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৬৫% এবং অন্যান্য ১১.৯১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.১৫%, ভূমিহীন ৫৭.৮৫%। শহরে ৩৫.০৫% এবং গ্রামে ৪৬.৫৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, আখ, আলু, সরিষা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি পাট, তিল, কাউন।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, লিচু,।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪২, গবাদিপশু ১৫, হাঁস-মুরগি ১২৫।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২২২.৬৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১০ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬১৮.৮৭ কিমি; রেল লাইন ৮ কিমি; নৌপথ ২২ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা কটনমিল, রাইসমিল, ইটভাটা, অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, আইস ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সুচিশিল্প, কাঠের কাজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২০, মেলা ৮। রেলবাজার হাট, বাহাদুরবাজার হাট, শিকদারগঞ্জ হাট, গোদাগাড়ী হাট, সাহেবগঞ্জ হাট, সাহেবডাঙ্গা হাট, ফাসিলা হাট, পাঁচবাড়ি হাট, খানপুর হাট, নশীপুর হাট ও লক্ষীতলার হাট এবং চেরাডাঙ্গী মেলা, মুরাদপুর মেলা ও গোয়ালেরহাট মেলা উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য চাল, লিচু, আম, কলা।
বিদ্যুৎ ব্যবহার উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৪.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.২%, ট্যাপ ৪.৭% এবং অন্যান্য ২.১%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৪.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৩.০% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২২.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ৬, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এবং পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১০, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ৩, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ১, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ২, চক্ষু হাসপাতাল ১, শিশু হাসপাতাল ১, হার্ট ফাউন্ডেশন ও রিসার্স সেন্টার ১, ব্লাড ট্রাসফিউশন সেন্টার ১, পশু হাসপাতাল ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দিনাজপুরের অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংসসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৬৮ সালের বন্যায় এ জেলার ৯৫% ঘরবাড়ি ও ৯০% ফসলের ক্ষতি হয়। এছাড়াও জেলার রেল যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এনজিও ব্র্যাক, আশা, কারিতাস, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ। [জুবায়েরুর রহমান]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; দিনাজপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।