ত্রিশাল উপজেলা

ত্রিশাল উপজেলা (ময়মনসিংহ জেলা)  আয়তন: ৩৩৮.৪৫ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°২৮´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১৮´ থেকে ৯০°৩২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা, দক্ষিণে ভালুকা ও গফরগাঁও উপজেলা, পূর্বে ঈশ্বরগঞ্জ, নান্দাইল ও গফরগাঁও উপজেলা, পশ্চিমে ফুলবাড়ীয়া উপজেলা।

জনসংখ্যা ৪১৯৩০৮; পুরুষ ২০৮৬৬২, মহিলা ২১০৬৪৬। মুসলিম ৪০৭৬৯৫, হিন্দু ১১৩২৩, বৌদ্ধ ৩, খ্রিস্টান ৭১ এবং অন্যান্য ২১৬।

জলাশয় প্রধান নদনদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র, খির, মেদুয়ারী, নাগেশ্বরী, পাগারিয়া ও বরেরা; হাওর: বিল গলহর, শুকনী, সিঙ্গাদুলী, দুর্বাচোরা, কুমুঈড়া।

প্রশাসন ত্রিশাল থানা গঠিত হয় ১৯০৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১২ ৮৯ ১৫৮ ৫৬০০২ ৩৬৩৩০৬ ১২৩৯ ৪৭.৭ (২০০১) ৩৭.৮
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৫.৪৮ (২০০১) ১২ ৩৪৭৪৭ ১৬৪৩ (২০০১) ৬১.০
পৌরসভার বাইরে উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৯.৩৫ (২০০১) ২১২৫৫ ৯৩৮ (২০০১) ৪২.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার(%)
পুরুষ মহিলা
আমিরাবাড়ী ১৩ ৫১১১ ১০৭৪৪ ১০৪৩৩ ৪৫.৯
কাঁঠাল ৫৭ ৫৮৪৪ ১৪০৯১ ১৪৫০৪ ৪৪.০
কানিহারী ৪৭ ৮৩৮০ ১৮৪৪৭ ১৯৩৮৭ ৩২.০
ত্রিশাল ৮৫ ৭২৮৪ ১৭৮৫৫ ১৭৮৭০ ৩৯.৬
ধানীখোলা ২৮ ৭৭৬০ ২২০৫৭ ২২৭৭২ ৪১.১
বালিপাড়া ১৯ ৭৬২৫ ২১৬৮১ ২২১২৫ ৩৫.৪
বৈলর ১৫ ৬২৯৪ ১৮৫১৯ ১৮৪৬৫ ৪১.৫
মঠবাড়ী ৬১ ৯৩০৬ ১৩৮১০ ১৪২১৪ ৩৫.১
মোক্ষপুর ৬৩ ৭০০৭ ১২৫৫৫ ১২৭৩৯ ৩৭.৪
রামপুর ৬৬ ৪৯৮৮ ১৬০১৭ ১৫৯৪৪ ৪২.৬
সাখুয়া ৭৬ ৪৩৩০ ১২২৪৩ ১২৫২০ ২৬.৪
হরিরামপুর ৩৮ ৫৮৮০ ১২৭০০ ১২৮৬৯ ৩৫.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি  দরিরামপুর জামে মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), মোক্ষপুর ইউনিয়নের সানকীভাঙ্গা গ্রামে রাজবাড়ির ইন্দিরা, প্রাচীর ও পুলের নিদর্শন।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় রায়ের গ্রামে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিবাহিনীর লড়াইয়ে ১১ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ৭ জুন কাটাখালী বাজারে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকবাহিনীর লড়াইয়ে প্রায় অর্ধশত পাকসেনা নিহত হয়। আগস্ট মাসে মঠবাড়ি ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি বাজারে লড়াইয়ে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ভাংনামারি চরে পাকসেনাদের সঙ্গে লড়াইয়ে আবদুর রহমান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

বিস্তারিত দেখুন ত্রিশাল উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৪।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪২১, মন্দির ৩৫, তীর্থস্থান ২, মাযার ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.০%; পুরুষ ৪০.৮%, মহিলা ৩৯.৩%। বিশ্ববিদ্যালয় ১, কলেজ ৬, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫৬, ভোকেশনাল বিদ্যালয় ১২, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৬৪, স্যাটেলাইট বিদ্যালয় ১০, কিন্ডার গার্টেন ৫, কমিউনিটি বিদ্যালয় ১০, মাদ্রাসা ৯৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় (২০০৫), নজরুল কলেজ (১৯৬৭), ত্রিশাল মহিলা ডিগ্রি কলেজ (১৯৯০), দরিরামপুর হাইস্কুল (১৯১৩, বর্তমানে নজরুল একাডেমী), ত্রিশাল আববাসিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৩১)।

পত্র-পত্রিকা বর্তমান: দৈনিক বিশ্বের মুখপত্র, সাপ্তাহিক ত্রিশাল বার্তা, মাসিক বাংলার মুখপত্র, ত্রৈমাসিক সপ্তসিন্ধু, ত্রৈমাসিক ধলাবাজার।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৯০, লাইব্রেরি ১০, সিনেমা হল ৪, মহিলা সংগঠন ১, খেলার মাঠ ২১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৬৯%, অকৃষি শ্রমিক ৩.৫৮%, শিল্প ০.৬৬%, ব্যবসা ১২.৯৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.৭৯%, চাকরি ৫.৪৫%, নির্মাণ ১.০৮%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৬% এবং অন্যান্য ৮.৯৩%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, গম, ডাল, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, তিল, তিসি, কার্পাস, পাট, আখ।

প্রধান ফল-ফলাদি  আম, জাম, কাঁঠাল, লেবু, কলা, আনারস, পেঁপে, কুল, জলপাই, নারিকেল, সুপারি।

মৎস্য, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার  মৎস্য ৯, গবাদি পশু ১৪, হাঁস-মুরগি ৮৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকা রাস্তা ১৬০ কিমি, কাঁচা রাস্তা ৭৫৯ কিমি, আধাপাকা রাস্তা ৫ কিমি, রেল পথ ১৫ কিমি; নৌপথ ১৫ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, মাফা, ঘোড়া ও গরুর গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বরফকল, ডালকল, স’মিল, রাইস মিল, বিড়িশিল্প, লেদ মেশিন, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩১, মেলা ৪। ত্রিশাল হাট, বালিপাড়া হাট, ধলা হাট, কালীর বাজার, পোড়াবাড়ী হাট, কাশীগঞ্জ হাট, ধানীখোলা হাট, চকরামপুর হাট, বগারবাজার হাট, কাটাখালী হাট, বৈলর বাজার এবং লালপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  ধান, কলা, আখের গুড়, কুটিরশিল্পজাত দ্রব্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫১.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৩.২%, ট্যাপ ০.৮% এবং অন্যান্য ৬.০% ।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৩৭.২% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫২.১% পরিবার অস্বাস্থাকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১০.৭% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, হাসপাতাল ২, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ২, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৪, ইউনিয়ন কমিউনিটি ক্লিনিক ১২ পশু হাসপাতাল ১।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, আইটিসিএল।  [মো. খবিরুজ্জামান]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ত্রিশাল উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা রিপোর্ট ২০০৭।