গোমস্তাপুর উপজেলা

গোমস্তাপুর উপজেলা (নবাবগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৩১৮.১৩ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪৪´ থেকে ২৪°৫৮´ উত্তর অক্ষাংশ  এবং ৮৮°১৩´ থেকে ৮৮°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে পশ্চিমবঙ্গ (ভারত) ও পোরশা উপজেলা, দক্ষিণে শিবগঞ্জ (নবাবগঞ্জ) ও নাচোল উপজেলা, পূর্বে নিয়ামতপুুুুুুুর ও নাচোল উপজেলা, পশ্চিমে ভোলাহাট ও শিবগঞ্জ (নবাবগঞ্জ) উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ।

জনসংখ্যা ২৭৫৮২৩; পুরুষ ১৩৬৩২১, মহিলা ১৩৯৫০২। মুসলিম ২৫৬৬৫৮, হিন্দু ১৫৯৮৫, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ২৪১৫ এবং অন্যান্য ৭৬৪। এ উপজেলায় সাঁওতাল, মুন্ডা, ওঁরাও, মাহালী প্রভৃতি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় মহানন্দা ও পূণর্ভবা নদী এবং কোলার বিল, কুয়ারিয়া বিল, বড় বিল, বারান বিল, কোরাল বিল, লিখরিয়া বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন গোমস্তাপুর থানা গঠিত হয় ১৮৩৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা	ইউনিয়ন	মৌজা	গ্রাম	জনসংখ্যা		ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)	শিক্ষার হার (%)
				শহর	গ্রাম		শহর	গ্রাম
১	৮	১৬৩	২৩৪	৫৮৬২৪‬	২১৭১৯৯	৮৬৭	৪৪.৭ (২০০১)	৩৮.৮

পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি)	ওয়ার্ড	মহল্লা	লোকসংখ্যা	ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)	শিক্ষার হার(%)
১৪.৩৮ (২০০১)	৯	৩৩	৩৪৯৪১	২১১৯ (২০০১)	৫৬.৫

উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি)	মৌজা	লোকসংখ্যা	ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি)	শিক্ষার হার (%)
৯.৫৭ (২০০১)	২	২৩৬৮৩	২১৪৪ (২০০১)	৪০.৫

ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড	আয়তন (একর)	লোকসংখ্যা		শিক্ষার হার (%)
		পুরুষ	মহিলা
আলীনগর ১০	৩৮৫৩	৭৩৭৯	৭৯০১	৪০.৬
গোমস্তাপুর ৫২	৬৯৪৬	২০১১৭	২০৬৫৯	৩৯.২
চৌডালা ৪২	৪৫৯৪	১৭২৯৩	১৭৯৫৪	৩৪.১
পার্বর্তীপুর ৬৩	১৮৭৩৫	১৮৪৬৩	১৮৪৬৮	৪২.৬
বাঙ্গাবাড়ী ২১	৪৮৯৩	১২৫৭৫	১৩০৬৩	৩৬.৫
বোয়ালিয়া ৩১	৭৪৪০	১৩০৯৯	১৩৮২১	৪১.২
রাধানগর ৭৩	২০০৪৪	২০১৬১	২০৩০৪	৪২.২
রহনপুর ৮৪	৮৫০৯	৯৮৪৩	৯৭৮২	৩২.৭

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ নওদা স্ত্তপ (নওদা গ্রাম), এক গম্বুজ বিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (রহনপুর), শাহাপুর গড় (শাহাপুর)।

মুক্তিযুদ্ধ উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা রহনপুরে অবস্থিত পাকসেনাদের ঘাঁটিতে জুলাই মাসে প্রথম আঘাত আনে। এই যুদ্ধে বেশ কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য হতাহত হয়। আগস্ট মাসে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের অপর একটি যুদ্ধ হয় কালপুরে। উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যান্য যুদ্ধ ছিল বোয়ালিয়া, নন্দলালপুর, আলীনগর, শাহপুর গড় প্রভৃতি স্থানে। উপজেলায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন গোমস্তাপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৩।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪১.২%; পুরুষ ৪০.০%, মহিলা ৪২.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: রহনপুর ইউসুফ আলী কলেজ ১৯৬৭, গোমস্তাপুর সোলেমান মিঞা কলেজ (১৯৮৪), রহনপুর এ. বি. সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪২), গোমস্তাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৪৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী প্রতিভা বিকাশ, রহনপুর বার্তা প্রভৃতি।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১০, শরীর চর্চা ক্লাব ১, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ২০।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৪৫%, অকৃষি শ্রমিক ৪.৭৫%, শিল্প ১.৬১%, ব্যবসা ১৬.৮৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৩৩%, চাকরি ৩.৪৫%, নির্মাণ ১.১৬%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১১% এবং অন্যান্য ৮.১০%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৩৮.৩০%, ভূমিহীন ৬১.৭০%। শহরে ৩৬.৩১% এবং গ্রামে ৩৮.৮১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, গম, ভুট্টা, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সরিষা, কাউন, অড়হর, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, তরমুজ।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার এ উপজেলায় গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৯৪ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৪৫৯ কিমি; রেলপথ ১১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা বিস্কুট ফ্যাক্টরি, আইস ফ্যাক্টরি।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ১৭, মেলা ২। রহনপুর হাট, সন্তোষপুর হাট, গোমস্তাপুর হাট, চৌডালা বাজার, পার্বর্তীপুর বাজার এবং  কালুপুর ও পার্বর্তীপুর আড্ডা মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানি দ্রব্য  আম, টমেটো, ধান, চাল।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪২.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৬%, ট্যাপ ৬.৯% এবং অন্যান্য ২.৫%। এ উপজেলার ৫৭২৪ অগভীর নলকূপের মধ্যে ৮৬১ নলকূপের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২২.৪% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৫৮.৪% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৯.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, চক্ষু হাসপাতাল ও খ্রিস্টান মিশন।

এনজিও কারিতাস, প্রশিকা,  ব্র্যাক, আশা,  বাইক, বাইস, প্রয়াস।  [মাহবুবুর রহমান রানা]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; গোমস্তাপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।