হিজলা উপজেলা
হিজলা উপজেলা (বরিশাল জেলা) আয়তন: ৫১৫.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°৫০´ থেকে ২৩°০৫´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৫´ থেকে ৯০°৪৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে গোঁসাইরহাট ও হাইমচর উপজেলা, দক্ষিণে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে রায়পুর উপজেলা, পশ্চিমে মুলাদী উপজেলা।
জনসংখ্যা ১৪৬০৭৭; পুরুষ ৭২৭৮৯, মহিলা ৭৩২৮৮। মুসলিম ১৪২৪১৯, হিন্দু ৩৬৫৪, বৌদ্ধ ০, খ্রিস্টান ৩ এবং অন্যান্য ১।
জলাশয় প্রধান নদী: মেঘনা, জয়ন্তি, নয়াভাঙ্গা, আজিমপুর।
প্রশাসন হিজলা থানা গঠিত হয় ১৯১১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
উপজেলা | ||||||||
পৌরসভা | ইউনিয়ন | মৌজা | গ্রাম | জনসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||
শহর | গ্রাম | শহর | গ্রাম | |||||
- | ৬ | ৯২ | ৯৪ | ১৪১৮৪ | ১৩১৮৯৩ | ২৮৩ | ৫৬.৪ | ৩৯.১ |
উপজেলা শহর | ||||||||
আয়তন (বর্গ কিমি) | মৌজা | লোকসংখ্যা | ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) | শিক্ষার হার (%) | ||||
৮.৩৬ | ৩ | ১৪১৮৪ | ১৬৯৭ | ৫৬.৪ |
ইউনিয়ন | ||||||||
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড | আয়তন (একর) | লোকসংখ্যা | শিক্ষার হার (%) | |||||
পুরুষ | মহিলা | |||||||
গুয়াবাড়িয়া ৫৪ | ১৬০৫৫ | ১৪৩১৯ | ১৫৬০১ | ৫০.৯ | ||||
ধুলখোলা ২৭ | ৯৮৮০ | ৬৯২৮ | ৬৪৭১ | ৪৩.৫ | ||||
বড় জালিয়া ১৩ | ১৪০৭৯ | ১৫৭১১ | ১৫৯৩২ | ৫৬.৪ | ||||
মেমানিয়া ৯৪ | ১৭২৯০ | ১২৩৮৭ | ১২৩৪৮ | ৩১.২ | ||||
হরিনাথপুর ৬৭ | ১৪৮২০ | ১২০৬২ | ১২৫৬৪ | ৪৫.১ | ||||
হিজলাগৌরবদী ৮১ | ১৭৭৮৪ | ১১৩৮২ | ১০৩৭২ | ২২.৭ |
সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ প্রস্তর নির্মিত বাসুদেব মূর্তি (গোবিন্দপুর)।
মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে এই উপজেলার হিজলা-মুলাদী অঞ্চলে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে বেস কমান্ডার কুতুবউদ্দিন ও কাজী আনোয়ার বীর প্রতীকের নেতৃত্বে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সংঘবদ্ধ হয়। পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন সংঘর্ষে হাবিলদার শাহ আলম, নায়েক আজিজুর রহমান, হাবিলদার নূর মোহাম্মদ ও সিপাহী আবদুল ওয়াজেদ শহীদ হন। তাছাড়া পাল পাড়ার শিক্ষক হোসেন আলী ও দাদপুরের সুলতান জমাদ্দারসহ ৮ জন নিহত হন। উপজেলায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন হিজলা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ১০।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩২৬, মন্দির ১২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: শ্রী রামপুর ও শাহনাজপুর গ্রামের মুসলমান জমিদার বাড়ীর মসজিদ, গঙ্গাপুর গ্রামে সুলতান খার মসজিদ ও দরগা।
শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪০.৮%; পুরুষ ৩৯.২ %, মহিলা ৪২.৪%। কলেজ ১, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৮৮, মাদ্রাসা ৪১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হিজলা কলেজ, কাউরিয়া বন্দর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সংহতি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মহিষখোলা সিনিয়র মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী হিজলা উপজেলা বার্তা।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৩, ক্লাব ১৪, মহিলা সংগঠন ২, সিনেমা হল ১, খেলার মাঠ ১০।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৭৩.৪৩%, অকৃষি শ্রমিক ২.৬১%, শিল্প ০.৫৬%, ব্যবসা ১০.৭%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.০২%, চাকরি ৫.৭২%, নির্মাণ ১.২০%, ধর্মীয় সেবা ০.৩১%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮% এবং অন্যান্য ৩.৬৫%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.০৫%, ভূমিহীন ৩৩.৯৫%। শহরে ৬৬.০৬% এবং গ্রামে ৬৬.০৫% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আখ, হলুদ, মাছ, আলু, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি সূর্যমুখী, মুগ, কাউন, চীনা, হোগলা পাতা।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, কুল, লিচু, জাম, তাল, খেজুর, নারিকেল, পেঁপে, সুপারি, আমড়া।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪, গবাদিপশু ২০, হাঁস-মুরগি ৪০।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ২৭০ কিমি; নৌপথ ১৮০ কিমি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা ধানকল, বিড়ি ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, মাছ ধরার জাল তৈরির কাজ, নকশী কাঁথা, পটারী শিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ, পাটের হস্তশিল্প, পাটি ও মাদুর শিল্প, আখের গুড় প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, শীতল পাটি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩৫। ধুন সিকদার হাট, একতা বাজার, কাইসমা বাজার, চরকিলার হাট উল্লেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য দুগ্ধজাত দ্রব্য, আমড়া, শীতল পাটি, চিংড়ি, সুপারি, ধান, চাল।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪১.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে ।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৮%, ট্যাপ ০.৩% এবং অন্যান্য ১১.৯%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৮০.১% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ১৮.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৩, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৭০ সালের জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৬২ সালের দুর্ভিক্ষে বহু লোকের প্রাণহানি ঘটে।
এনজিও দিশা, আলোর দিশা। [কে.এম সাইফুল ইসলাম]
তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; হিজলা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।