হার্ডিঞ্জ, লর্ড চার্লস

হার্ডিঞ্জ, লর্ড চার্লস (১৮৫৮-১৯৪৪)  ভারতের গভর্নর জেনারেল এবং ভাইসরয় (১৯১০ থেকে ১৯১৬)। তিনি ছিলেন লর্ড  হার্ডিঞ্জ (ভারতের গভর্নর জেনারেল, ১৮৪৪-১৮৪৮)এর পৌত্র। চার্লস হার্ডিঞ্জ (পরবর্তীসময়ে ব্যারন অব পেন্সহার্স্ট) ১৮৮০ সালে ইংল্যান্ডের কূটনৈতিক পেশায় যোগ দেন এবং ১৯০৪ সালে রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। ১৯০৬ সালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯১০ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল ও ভাইসরয় হন। ১৯১১ সালে তাঁর শাসনামলে রাজা পঞ্চম জর্জ এবং রাণী মেরী ভারত সফর করেন এবং দিলি­ দরবারে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের রাজ্যাভিষেক হয়। এই অনুষ্ঠানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণা তিণটি হল, বেঙ্গভঙ্গ রদ, বাংলা একটি গভর্নর শাসিত প্রদেশে উন্নীত হওয়া এবং ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা হতে দিলি­তে স্থানান্তর।

লর্ড চার্লস হার্ডিঞ্জ

ভারতে হার্ডিঞ্জ-এর প্রশাসনের প্রথম দিক  বঙ্গভঙ্গ বাতিলের লক্ষ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য পরিচিত ছিল। ১৯১২ সালের ডিসেম্বরে দিলি­তে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রবেশের সময় তিনি বোমা বিস্ফোরণে আহত হন। তথাপি তাঁর সময়ে সরকার ও জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যেকার সর্ম্পকের বেশ উন্নতি পরিলক্ষিত হয়। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার কর্তৃক পাসকৃত অ্যান্টি ইন্ডিয়া ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট (Anti India Immigration Act) সম্পর্কে তাঁর সমালোচনা এবং মহাত্মা গান্ধীর  আইন অমান্য আন্দোলনের প্রতি তাঁর সহানুভূতি প্রদর্শনের জন্য তিনি জনসমর্থন লাভ করেন। পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর নিকটে পদ্মানদীর উপরে  হার্ডিঞ্জ সেতুটির (উদ্বোধন ১৯১৭) নামকরণ তাঁর নামানুসারে করা হয়।

১৯১৪ সালের আগস্টে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ছিল তাঁর সময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এবং এযুদ্ধে ভারতীয়রা অংশগ্রহণ করায় হার্ডিঞ্জ ভারতে কর্মরত প্রায় সকল ইউরোপীয় সৈনিক এবং বহু সংখ্যক ভারতীয় সৈনিককে ব্রিটিশদের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য প্রেরণ করেন। এর ফলে নিজের দেশে তিনি দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। কারণ যুদ্ধের সময়ে তাঁর চেষ্টার ফলেই এ যুদ্ধে ব্রিটিশদের পক্ষে ভারতীয়দের সমর্থন লাভ সম্ভব হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

১৯১৬ সালে ইংল্যান্ড ফিরে গিয়ে তিনি আবারও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী আন্ডার সেক্রেটারি হন এবং পরবর্তীকালে প্যারিসে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন। অবশেষে ১৯২২ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৪৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৪৮ সালে তাঁর স্মৃতিকথা My Indian Years, 1910-1916  প্রকাশিত হয়। [কে.এম মোহসীন]