হস্তরেখাবিদ্যা

হস্তরেখাবিদ্যা  হাত ও হাতের রেখা বিশ্লেষণের মাধ্যমে কারও মানসিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের শুভাশুভ নির্ধারণ করার বিদ্যা। প্রাচীন ব্যাবিলন ও কালদিয়া ( Chaldea) অঞ্চলে এ বিদ্যার শুরু বলে মনে করা হয় এবং সেখান থেকে তা সমগ্র পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে।

হস্তরেখাবিদ্যা দুরকমের: ক. Cheirognomy বা হাতের বিশ্লেষণ এবং খ. Cheiromancy বা হস্তরেখার বিশ্লেষণ। প্রথমটিতে হাতের বিচার করা হয়। এতে হাতের ত্বক ও গঠন, বৃদ্ধাঙ্গুলসহ অন্যান্য আঙ্গুলের নমনীয়তা এবং দৈর্ঘ্য ও দূরত্ব বিশ্লেষণ করা হয়। কারও বৃদ্ধাঙ্গুল নমনীয় হলে তার দ্বারা বোঝায় যে, তার মনোবৃত্তিও নমনীয় এবং সে আপোষকামী। কিন্তু আঙ্গুলটি অনমনীয় হলে বোঝায় যে, সে আপোষহীন এবং নিজের সিদ্ধান্তে অনড়। এ ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলের সঙ্গে অন্যান্য আঙ্গুলের দূরত্ব থেকেও ব্যক্তির অপর গুণাগুণ জানা যায়। অন্যান্য আঙ্গুল থেকে বৃদ্ধাঙ্গুল যদি বেশি দূরে অবস্থিত হয় তাহলে বুঝতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উদার প্রকৃতির ও বন্ধুভাবাপন্ন এবং অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু যেহেতু ব্যক্তিটি স্বাধীনচেতা স্বভাবের তাই সে অন্যদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা পছন্দ করে না। আবার সুবিন্যস্ত তর্জনী স্বাধীন মনোবৃত্তিকে সূচিত করে।

এ পদ্ধতিতে আঙ্গুলের মধ্যবর্তী ফাঁকের পরিমাণও বিশ্লেষণ করা হয়। তর্জনী ও মধ্যমার মধ্যে তুলনামূলকভাবে বেশি ফাঁক থাকলে বুঝতে হবে ব্যক্তিটি চিন্তাভাবনায় স্বাধীন এবং কেবল যুক্তিতর্কের সাহায্যেই কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অনুরূপভাবে কনিষ্ঠা ও অনামিকার মধ্যে যথেষ্ট ফাঁক থাকলে তার দ্বারা বোঝায় যে, ব্যক্তিটি স্বাধীন মত অনুসারে কাজ করে থাকে। এ ধরনের ব্যক্তিকে দিয়ে তার মতের বিরুদ্ধে জোর করে কোনো কাজ করানো সম্ভব নয়। সে একাকী কাজ করতে পছন্দ করে, সহযোগী বা দলের সঙ্গে নয়। সব আঙ্গুলের মধ্যেই ফাঁক থাকলে বুঝতে হবে সে প্রচলিত নিয়মের বাইরে নতুন নতুন উপায়ে প্রথাবিরোধী কাজ করতে উৎসাহী। আবার আঙ্গুলের মধ্যে কোনো ফাঁক না থাকলে বুঝতে হবে ব্যক্তিটি প্রচলিত নিয়ম-কানুনের বাইরে যায় না এবং সে একজন কৃপণ ও স্বার্থপর।

Cheiromancy পদ্ধতিতে প্রধানত হস্তরেখা বিশ্লেষণ করা হয় এবং এ ক্ষেত্রে করতলের স্ফীতির (swelling or mount) সঙ্গে রেখাগুলির অবস্থানও বিচার করা হয়। হাতের রেখাগুলি মানুষের বিভিন্ন গুণাগুণ নির্দেশ করে। হাতের তালুতে বেশ কতগুলি লম্বা ও গভীর রেখা থাকে যেগুলিকে বলা হয় মাথা, হূদয় এবং জীবনরেখা। এছাড়া আরও কতগুলি রেখা আছে যেগুলি ভাগ্যরেখা, সূর্যরেখা ও বিবাহরেখা নামে পরিচিত। হস্তরেখাবিদ কারও হাত দেখার সময় প্রধান রেখাগুলি কত মোটা বা সরু, হাতের তালুতে কোথায় এগুলির অবস্থান, কোথায় এগুলির শুরু ও শেষ এবং এগুলি কোন কোন রেখার সঙ্গে মিলিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয় বিচার করেন।

বাংলাদেশের সর্বত্রই হস্তরেখাবিদ বা গণকদের দেখা যায়। গ্রামে এক ধরনের গণক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভাগ্য গণনা করে। তাদের বলা হয় হাটা-গণক। তাদের অধিকাংশই অশিক্ষিত, তবে মক্কেলকে খুশি এবং বিশ্বস্ত করার কাজে তারা দক্ষ। তারা বিশেষ ধরনের পোশাক বা পাগড়ি পড়ে এবং তাদের হাতে থাকে একটি ছড়ি। এর ফলে অতি সহজেই তাদের চেনা যায়। তারা সাধারণত মক্কেলদের উদ্বুদ্ধ করে তাদের কাছ থেকে তাবিজ বা পাথর নিয়ে পরতে; কারণ তাদের ধারণা এতে তাদের শনির দশা (দুর্ভাগ্য) দূর হবে। এই গণকরা আরও বলে যে, তারা সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে, যেমন শনির দশা, আশা পূরণ, শত্রুকে পরাস্ত করা, শাপমুক্তি বা শাপ দেওয়া, অবাধ্যকে বাধ্য করা, উচ্ছৃঙ্খল নারীকে বশীভূত করা ইত্যাদি। তারা নগদ বা দ্রব্যের মাধ্যমে তাদের ফি নিয়ে থাকে। এমনকি শহরাঞ্চলে অনেক শিক্ষিত, উচ্চশিক্ষিত হস্তরেখাবিদ ও তাদের মক্কেল রয়েছে।   [এ.আর হাওলাদার]