শিবগঞ্জ উপজেলা (নবাবগঞ্জ)

শিবগঞ্জ উপজেলা (নবাবগঞ্জ জেলা)  আয়তন: ৫২৫.৪২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৩৪´ থেকে ২৪°৫৪´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°১০´ থেকে ৮৮°১৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে ভোলাহাট উপজেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য, দক্ষিণে নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য , পূর্বে ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও নবাবগঞ্জ সদর উপজেলা, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য।

জনসংখ্যা ৫৯১১৭৮; পুরুষ ২৯৫৩৩৮, মহিলা ২৯৫৮৪০। মুসলিম ৫৭৪৪০২, হিন্দু ১৬৬৯০, বৌদ্ধ ১, খ্রিস্টান ৪ এবং অন্যান্য ৮১।

জলাশয় পদ্মা, মহানন্দা ও পাগলা নদী এবং গড়াইল ও দামাশ বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন শিবগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৯১৩ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ৭ নভেম্বর ১৯৮২ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১৮৩ ৪০৭ ৪৯৮৩৩ ৫৪১৩৪৫ ১১২৫ ৪১.৪ (২০০১) ৩৮.৩
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
২৩.৫৯ (২০০১) ৩১ ৪২৬৯৩ ১৫২৩ (২০০১) ৫১.৯
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৩.২২ (২০০১) ৭১৪০ ২০০২ (২০০১) ৪৫.০
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
উজিরপুর ৯৫ ৩৫৪৯ ৫৯৪৮ ৫৬২২ ৪৮.০
কানসাট ৪১ ৭৬৩৯ ২০৩৪৮ ২০১৭৬ ৩৩.৪
ঘোড়াপাখিয়া ৩৫ ৫৪৮৬ ৭৯০৪ ৯২৩২ ৪৪.৯
চককীর্ত্তি ১১ ৮৪০৭ ১৮৫৬৭ ১৮৯৫৩ ৩০.৫
ছত্রজিতপুর ৭১ ২৫৬৫ ৯৯৪৮ ১০৭৫২ ৫০.৭
দাইপুকুরিয়া ১৭ ১০৬২৯ ২০২৯৪ ২০২১৪ ৩৩.৪
দুর্লভপুর ২৯ ১২৭৮৫ ২৮৩০০ ২৭৭১১ ৩৫.৯
ধাইনগর ২৩ ৬৮১৭ ১৯৪৭০ ২০২৩৩ ৪১.৮
নয়া নাওভাঙ্গা ৫৯ ৫৫১৯ ২০৮৫৫ ২১৮৫৪ ৪৬.৫
পাঁকা ৬৫ ১২৪১৭ ১১০১৮ ১১০৭৪ ৩০.৯
বিনোদপুর ১০ ৭২৪৩ ২১১৯৯ ২০৮৬০ ৩৯.৭
মনাকষা ৫৩ ১২৫৯৭ ২৭২০০ ২৬৬৬৪ ৪১.১
মোবারকপুর ৪৭ ৭৬১১ ১৫৫৫৭ ১৫১২১ ৩৪.১
শাহবাজপুর ৭৭ ১৩০১৫ ২৭৬৬০ ২৬২৪১ ৩৯.১
শ্যামপুর ৮৯ ৭৪২৬ ২১০৬৫ ২০৩০৫ ৩৬.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ ছোট সোনা মসজিদ, দরশবাড়ি মসজিদ ও মাদ্রাসা (১৪৭৯), ধনাইচকের মসজিদ ও খঞ্জনদিঘি মসজিদ, দাখিল দরওয়াজা, শাহ সুজার কাছাড়ি বাড়ি (তাহাখানা), তাহাখানা মসজিদ, শাহ নিয়ামতুল্লাহর (রঃ) মাযার।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১০ অক্টোবর পাকবাহিনী দোরাশিয়া, মোল্লাটোলা, লম্পট ও রাধাকান্তপুর গ্রামের ৪৭ জন লোককে নির্মমভাবে হত্যা করে। শিবগঞ্জ উপজেলায় দুর্লভপুর, জামিলপুর, অদিনা, কলাবাড়ি, শিকারপুর প্রভৃতি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ৬ অক্টোবর কানসাট শিকারপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের লড়াইয়ে প্রায় ২০০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি গণকবর (সোনা মসজিদ এল সি স্টেশন সংলগ্ন বালিয়াদিঘির পশ্চিমপাড়ের গণকবর) ও ২টি স্মৃতিফলক (ছত্রজিতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে শহীদ স্মৃতিফলক ও শিবগঞ্জ উপজেলা স্মৃতিফলক) রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন শিবগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৫৯১, মন্দির ৩০, মাযার ২, তীর্থস্থান ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মহাস্থান মাযার জামে মসজিদ, বিহার হাট জামে মসজিদ, শিবগঞ্জ চৌধুরীবাড়ী জামে মসজিদ, হযরত শাহ সুলতান বদিউদ্দিন মাহী সাওয়ার বলখীর (রঃ) মাযার, দেউলী চাকীবাড়ী সার্বজনীন কাত্যায়নী পূজা মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৩৯.৪%; পুরুষ ৩৮.০%, মহিলা ৪০.৮%। কলেজ ১৭, কারিগরি কলেজ ২, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৭১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩১, কিন্ডার গার্টেন ২৯, মাদ্রাসা ৬৪। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজ (১৯৩৮), কানসাট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৭), দাদনচক এইচ এম উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৯), হরিনগর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৯), নয়া নাওভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৭০), ছত্রজিতপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৪৪), রাধাকান্তপুর সিনিয়র মাদ্রাসা (১৯৫০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাপ্তাহিক: গৌড়বাণী, পূর্বরাগ, কাঠখড়, অশনি, মুক্তকণ্ঠ, পাগলা, প্রত্যয় (অবলুপ্ত)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১, নাট্যদল ৪, সিনেমা হল ৬, মহিলা সংগঠন ১, ক্লাব ৩৪, খেলার মাঠ ১১।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৯.২৫%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৬৩%, শিল্প ১.৫৯%, ব্যবসা ১৮.৮৯%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.১৯%, চাকরি ৩.৫০%, নির্মাণ ১.৭৩%, ধর্মীয় সেবা ০.১২%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.১৭% এবং অন্যান্য ৭.৯৩%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫১.২৯%, ভূমিহীন ৪৮.৭১%। শহরে ৪০.২৩% এবং গ্রামে ৫২.৩৪% পরিবারের  কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আখ, গম, ভুট্টা, আলু, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি  তিল, অড়হর, কাউন, চীনা, কোদা, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, লিচু।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৩, হাঁস-মুরগি ৩৭।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৩৭২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৫৩ কিমি, কাঁচারাস্তা ৮৬৯ কিমি; নৌপথ ২০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা আটাকল, স’মিল, আইস ফ্যাক্টরি, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশের কাজ, কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৫৫, মেলা ৫। রাণীহাটি হাট, শিবগঞ্জ হাট, কানসাট হাট, মনাকষা হাট ও আঁড়গাড়া হাট এবং কানসাট মেলা, গাংনগর মেলা ও মহাস্থা্ন মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  আম, গুড়, সিল্ক শাড়ি, থান কাপড়, লাক্ষা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৬.৬% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৯%, ট্যাপ ০.৮% এবং অন্যান্য ৩.৩%। এ উপজেলার অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ২৭.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৬১.৫% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। তবে ১০.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৮, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২, মা ও শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৫, স্যাটেলাইট ক্লিনিক ১২৮, ক্লিনিক ১৮।

এনজিও ব্র্যাক, আশা, প্রশিকা, দিশা।  [মো. জালাল উদ্দিন আহমেদ]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; শিবগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।