শাজাহানপুর উপজেলা

শাজাহানপুর উপজেলা (বগুড়া জেলা)  আয়তন: ২২১.৬৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°৪১´ থেকে ২৪°৫০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°১৬´ থেকে ৮৯°২৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বগুড়া সদর উপজেলা, দক্ষিণে শেরপুর উপজেলা, পূর্বে গাবতলী ও ধুনট উপজেলা, পশ্চিমে নন্দীগ্রাম ও কাহালু উপজেলা।

জনসংখ্যা ২৮৯৮০৪; পুরুষ ১৪৯৪৫৮, মহিলা ১৪০৩৪৬। মুসলিম ২৭৮১৩৯, হিন্দু ১১৫৫৭, বৌদ্ধ ৪২, খ্রিস্টান ৪১ এবং অন্যান্য ২৫।

জলাশয় প্রধান নদী: করতোয়া, চামতি, বাঙালি, ভদাই। ডাকাতিয়া, লটকী, হাতীগাড়া, বড়দীঘি, ছোটদীঘি, জয়ঁচাদ দীঘি, পদ্ম পুকুর ও রানী পুকুর পোড়াদহ খাল উল্লেখযাগ্য।

প্রশাসন ২০০৩ সালের ২১ জানুয়ারি শাজাহানপুর উপজেলা গঠিত হয়।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ১২০ ১৬৬ ৬২১৪০ ২২৭৬৬৪ ১৩০৭ ৭৩.৬ ৫৩.৩
বগুড়া পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
২২.৬৩ ১+২ (আংশিক) ১৬ ৬২১৪০ ২৭৪৬ ৭৩.৬
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আড়িয়া ১৭ ৫৮২৯ ১৮৭১০ ১৮৭১০ ৬৫.৮
আমরুল ১৬ ৬১০৬ ১১৬৩৩ ১১৬৩৩ ৪৭.৭
আশেকপুর ১৮ ৬৩০১ ১৪২৯৬ ১৪২৯৬ ৫৭.৫
খোট্টাপাড়া ৪৩ ৩৭৫২ ১১৫৮৯ ১১২৫৯ ৪৮.৭
খরনা ৩৮ ৯০৩৩ ১৪০৬৪ ১৪১০৮ ৪৭.৯
গোহাইল ৩০ ৮৪২৮ ১৩০৪৭ ১৩০৪৭ ৪৩.৭
চোপিনগর ১৯ ৪০৪৮ ১১২৩৭ ১১২৩৭ ৫১.১
মাঝিড়া ৫৬ ২২৬৪ ১০৪৩৫ ১০০১৭ ৬২.১
মাদলা ৫১ ৩১৭৪ ৯৩৬০ ৯১৬১ ৪৯.০

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ খাদাশ রাজবাড়ি (গোহাইল ইউনিয়ন), পন্ডিত শাহ নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট গোহাইল জামে মসজিদ, বৌদ্ধ মঠ (বেতগাড়ি গ্রাম), উল্লাহ আকন্দ পাড়া জামে মসজিদ।

মুক্তিযুদ্ধ ২৩ এপ্রিল পাকবাহিনী ঢাকা থেকে ট্যাঙ্কবহর নিয়ে বগুড়া শহরে প্রবেশ করে এবং স্থানীয় বিহারিদের সহযোগিতায় গ্রামের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। ১১ নভেম্বর রাজাকার ও পাকবাহিনী ঠনঠনিয়া খান্দার এলাকা থেকে ২১ জন বাঙালিকে ধরে নিয়ে ১৪ জনকে বাবুর পুকুর নামক স্থানে গুলি করে হত্যা করে। উপজেলার বাবুর পুকুরে ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন শাজাহানপুর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৯।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩৭১, মন্দির ৪৫, মঠ ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: গোহাইল জুম্মা মসজিদ, জামে মসজিদ, বৌদ্ধ মঠ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৭.৭%; পুরুষ ৬০.৫%, মহিলা ৫৪.৭%। বিএড কলেজ ১, কৃষি কলেজ ১, কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩, কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩১, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১২১, মাদ্রাসা ৬২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ (১৯৭৯), ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯৮৬), রাণীরহাট কারিগরি কলেজ (২০০০), খোট্টাপাড়া সিদ্দিকিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৫), ডোমনপুর আমিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯০৮), জোড়া নজমুল উলুম ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১০), বিহিগ্রাম এডিইউ সেন্ট্রাল ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সাহিত্য পত্রিকা: চাষী।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, সিনেমা হল ২।

বিশেষ আকর্ষণ  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক যাদুঘর বিজয়াঙ্গন, ঢাকা-নাটোর রোডের ব-দ্বীপ কর্ণারে অবস্থিত পার্ক।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫৫.৪৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৫২%, শিল্প ১.৩৭%, ব্যবসা ১৩.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৬.৪৯%, চাকরি ১০.৯৮%, নির্মাণ ২.৫০%, ধর্মীয় সেবা ০.১৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৩৯% এবং অন্যান্য ৭.০৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৫৭.৩৫%, ভূমিহীন ৪২.৬৫%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, ডাল, আলু, ভুট্টা, শাকসবজি।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার গবাদিপশু ৬২, হাঁস-মুরগি ৬৫, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১০২.২৫ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩.৭৮ কিমি, কাঁচারাস্তা ৭৯১.৯৭।

শিল্প ও কলকারখানা ধাতব-শিল্প, আসবাব তৈরির কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৯, মেলা ৩। দুরলাগাড়ী হাট, সুলতানগঞ্জ হাট, রানীর হাট, নগর হাট, দোমন পুকুর হাট, মাদলা বাজার, আড়িয়া বাজার, মাঝিড়া বাজার এবং মাঝিড়া মন্দির মেলা (ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী দিবসে), আড়িয়া গ্রামের জামুন্না মেলা, আমরুল ইউনিয়নের ডেমাজানি মেলা উল্লেখযোগ্য।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৬.৯% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯০.৬%, ট্যাপ ৭.৯% এবং অন্যান্য ১.৫%। এ উপজেলায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭১.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২২.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৫.৬% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র ২, মা ও শিশুকেন্দ্র ১০, কমিউনিটি ক্লিনিক ৩০।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৮৬৪ সালের ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার অনেক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ১৯৫৫, ১৯৬৯, ১৯৭০ ও ১৯৮৪ সালের বন্যায় প্রাণহানির ঘটনাসহ ফসলের ক্ষতি হয়।

এনজিও পল্লী-উন্নয়ন প্রকল্প, গ্রামীণ উন্নয়ন প্রকল্প। [একেএম জসিমউদ্দিন]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, শাজাহানপুর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।