লুকোচুরি দরওয়াজা

লুকোচুরি দরওয়াজা  গৌড়-লখনৌতি নগর দুর্গের গুমতি গেট থেকে কিছুটা উত্তর দিকে অবস্থিত একটি মুগল স্থাপত্য। এটি সম্রাট শাহজাহানের পুত্র এবং বাংলার গভর্নর শাহ সুজা সতেরো শতকের মাঝামাঝিতে নির্মাণ করেছিলেন। এ দরওয়াজার নির্মাণশৈলী পরিপূর্ণভাবে মুগলরীতির। পরিকল্পনায় নগরদুর্গের অন্যান্য প্রবেশ পথের সাথে কিছুটা সাদৃশ্য থাকলেও গঠনগত দিক থেকে এটি সম্পূর্ণ পৃথক।

কেন্দ্রীয় প্রবেশপথটি চতুষ্কেন্দ্রিক খিলানযুক্ত ঈওয়ান-রীতি অনুযায়ী নির্মিত। এর উভয় পার্শ্বদেশে রয়েছে অনুরূপ খিলান প্রবেশপথ। প্রবেশপথটি ইট দ্বারা নির্মিত এবং আয়তাকার। এর পরিমাপ দৈর্ঘ্যে ১৯.৮০ মি এবং প্রস্থে ১২.৯০ মি। এটি উচ্চতায় তিন তলা বিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় তলায় নিচের তলার সদৃশ্য প্রবেশপথ রয়েছে। উপরে সমতল ছাদ বিশিষ্ট, যা নক্করখানা হিসেবে ব্যবহূত হতো। এখান থেকে নগর দুর্গে গভর্নরের প্রবেশ ও প্রস্থানের ঘোষণা দেওয়া হতো। সর্বোচ্চ তলায় নিচ (প্রথম তলা) ও দ্বিতীয় তলার অংশ জুড়ে বিস্তৃত কেন্দ্রীয় খিলানের উপরে তিনটি বড় জানালা আছে।

লুকোচুরি দরওয়াজা,গৌড়-লখনৌতি

এগুলি ম্যাসিকোলিস (বুরুজগাত্রে গ্যালারি) ধরনের এবং এর উপরে রয়েছে মুগল স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের মারলোন রীতির অলঙ্করণ। সম্পূর্ণ ইমারতটি পলেস্তারায় ঢাকা এবং আয়তাকার ফ্রেম নকশায় সজ্জিত। কেন্দ্রীয় খিলানের অভ্যন্তরভাগ মুগল রীতির ‘মুকারনাস’ নকশা দ্বারা অলংকৃত।

দক্ষিণদিকে এর নিকটে সুলতানি আমলের একটি প্রবেশপথ থাকা সত্ত্বেও লুকোচুরি দরওয়াজাটি নির্মিত হয়েছিল সম্ভবত এ কারণে যে, একজন মুগল সুবাহদার কখনও সুলতানি আমলের গঠনকে তাঁর রাজকীয় প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করবেন না। প্রবেশপথটি ছিল মুগল শাসনের প্রতীক এবং স্বাধীনতা ও সর্বত্র মুগলীকরণের ছাপের পরিচায়ক।

পুনঃপ্রতিষ্ঠিত ইলিয়াসশাহী বংশের সময় থেকে নগরটি দক্ষিণ দিকে বর্ধিত হতে থাকে। তখন এর গভর্নর ঐ দিকে প্রবেশপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তদুপরি আরও জানা যায় যে, শাহ সুজা তাঁর পৃষ্ঠপোষক পীর শাহ নিয়ামতুল্লাহ ওয়ালী, যিনি নগরীর দক্ষিণ দিকে ফিরোজপুর এলাকায় থাকতেন, সেখানে প্রায়ই যেতেন। এ প্রবেশপথটির নির্মাণে তাঁর যাতায়াতের পথ সংক্ষিপ্ত হয়েছিল এবং তাঁকে নগরের মধ্যদিয়ে যাতায়াত করার সুযোগ করে দিয়েছিল। নগরের মধ্যবর্তী স্থানটি তখন প্রবেশপথের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছিল। নগরের মধ্যবর্তী স্থানটি তখন প্রবেশপথের পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ছিল।

লুকোচুরি (বাংলা) নামটি সম্ভবত পরবর্তী সময়ে দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত শিশুদের লুকোচুরি খেলা থেকেই এ নামটির উৎপত্তি হয়েছে।  [এ.বি.এম হোসেন]