মুনিম খান, খান-ই-খানান

মুনিম খান, খান-ই-খানান মুগল সেনাপতি এবং  হুমায়ুন ও  আকবরের শাসনামলের একজন তুর্কি আমির। পিতার নাম মীরান বেগ আনদিজানী। তিনি হুমায়ুনের অধীনে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে সম্রাট আকবর তাঁকে খান-ই-খানান উপাধি দিয়ে ওয়াকিল পদে নিয়োগ করেন। তিনি ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। উজবেক বিদ্রোহ দমনের পর মুনিম খানকে জৌনপুরের গভর্নর পদে অধিষ্ঠিত করা হয় এবং পূর্বাঞ্চলের জেলাসমূহ তাঁর অধীনে ন্যস্ত করা হয়। ১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে আকবর মনসবদরি প্রথা প্রবর্তন করে মুনিম খানকে তৎকালীন সর্বোচ্চ পাঁচ হাজারী মনসবদারের মর্যাদা প্রদান করেন।

বাংলার সুলতান  দাউদ খান কররানী সম্রাট আকবরের বশ্যতা অস্বীকার করলে সম্রাট বাংলা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং মুনিম খানকে দাউদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। মুনিম খানের অভিযান ব্যর্থ হওয়ায় ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দে আকবর নিজেই দাউদের বিরুদ্ধে  অগ্রসর হন এবং হাজীপুর ও পাটনা থেকে দাউদকে বিতাড়ন করে রাজধানী প্রত্যাবর্তন করেন। দাউদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত অভিযানের ভার মুনিম খান ও টোডরমলের উপর ন্যস্ত করা হয়। মুনিম খান ২০,০০০ সৈন্য নিয়ে বাংলার দিকে অগ্রসর হন এবং বিনা বাধায় সুরজগড়, মুঙ্গের, ভাগলপুর ও কহলগাঁও অধিকার করে তেলিয়াগড়ি গিরিপথে পৌঁছেন। এখানে দাউদ প্রতিরোধ ব্যূহ রচনা করেন। মুনিম খানের নেতৃত্বে মুগল বাহিনী স্থানীয় জমিদারদের সাহায্যে রাজমহল পবর্তমালার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়। মুনিম খান ১৫৭৪ খ্রিস্টাব্দের ২৫ সেপ্টেম্বর  বাংলার রাজধানী তান্ডায় প্রবেশ করেন।

১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে ৩ মার্চ সুবর্ণরেখা নদীর নিকট সংঘটিত তুকারয়ের যুদ্ধে দাউদ পরাজিত হয়ে পালিয়ে যান। তাঁর পশ্চাদ্ধাবন করে রাজা টোডরমল ভদ্রকে উপস্থিত হন। দাউদ কটক দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করেন। রাজা টোডরমল কটক অবরোধ করলে দাউদ নিরুপায় হয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেন এবং ১২ এপ্রিল মুনিম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন। উভয়পক্ষে সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। মুনিম খান রাজধানী তান্ডা থেকে গৌড়ে সরিয়ে নেন। কিন্তু গৌড় বহুকাল পরিত্যক্ত থাকায় বাসোপযোগী ছিল না। মুনিম খান তান্ডায় ফিরে আসেন এবং ১৫৭৫ খ্রিস্টাব্দের ২৩ অক্টোবর তাঁর মৃত্যু হয়। [এ.কে.এম ইয়াকুব হোসাইন]