মুদ্রানীতি

মুদ্রানীতি বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রণয়ন করে। এক্ষেত্রে দারিদ্র বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর মত সামষ্টিক লক্ষ্যমাত্রাসমূহ বিবেচনায় রাখা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক বৈশ্বিক, অভ্যন্তরীণ এবং সামষ্টিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় রেখেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে, যা মূলত পরবর্তী কয়েকটি মাসের জন্য কার্যকর থাকে। পরবর্তী মাসগুলিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে ব্যাপক কোন পরিবর্তন ঘটলে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি সে অনুযায়ী সমন্বয় করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা অনিশ্চিত হলেও বাংলাদেশের বাণিজ্যের প্রধান অংশীদার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশের মুদ্রানীতির রূপরেখা তৈরিতে প্রভাব ফেলেছে প্রধানত মূল্যস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ ভোগ্যপণ্যের দামস্তর বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের উর্দ্ধগতিকে গুরুত্ব দিয়ে মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা মোকাবেলা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের বাস সেখানে খাদ্যদ্রব্য ও নিজ প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্রব্যমূল্য, দেশীয় উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা, বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি এবং দেশের আন্তর্জাতিক ক্রয়ক্ষমতা বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে বিবেচনায় নিয়ে এবং সেই সাথে ঋণদান ও মুদ্রা সরবরাহের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রেখে আগামী এক বছরের জন্য মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা হয়। তবে ছয় মাস পর অন্তরবর্তীকালীন মুদ্রানীতি সমন্বয় প্রথাও চালু আছে। মুদ্রানীতির মূল লক্ষই হলো ব্যাপক মুদ্রা (এম. ২) অর্থাৎ ব্যাংকের সকল চলতি এবং সঞ্চয়ী আমানতের সমষ্টির নিয়ন্ত্রণ। এম ২ প্রবৃদ্ধি নির্ভর করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি, সহনীয় মাত্রায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের বাস্তবমুখী প্রাক্কলনের ওপর। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে খোলাবাজার কার্যক্রম, সংবিধিবদ্ধ জমার অনুপাত পরিবর্তন এবং ব্যাংক হার পরিবর্তনের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। করোনা মহামারীর পূর্বে ২০০৬ থেকে ২০১৯ অর্থ বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ধবার্ষিক মুদ্রানীতি আদল (Monetary policy stance) প্রণয়ন করত। কোভিড মহামারীর পরে বাংলাদেশ ব্যাংক বার্ষিক মুদ্রানীতির অবস্থানে ফিরে এসেছে।।

২০২১ অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা শতকরা ৮.২ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৪ ভাগে সীমিত রাখার লক্ষ্য বিবেচনায় রেখে ব্যাপক মুদ্রা শতকরা ১৫.৬ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করে যা বাস্তবে শতকরা ১৩.৬ ভাগ বৃদ্ধি পায়। ২০২২ অর্থবছরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা শতকরা ৭.২ ভাগ এবং মূল্যস্ফীতি ৫.৩ ভাগে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়ে ব্যাপক মুদ্রা শতকরা ১৫.০ বৃদ্ধির লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।

করোনাকালীন ২০২১ অর্থবছরে সম্প্রসারণমূলক ও সংকুলানমূখী মুদ্রা নীতির আওতায় মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে ব্যাংকসমূহের ঋণ প্রদানযোগ্য তহবিল বাড়ানো হয়। এ সময় রেপো, রিভার্স রেপো এবং ব্যাংক রেইট যথাক্রমে ৫০, ৭৫ ও ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৪.৭৫, ৪.০০ ও ৪.০০ শতাংশে পুনঃনির্ধারণ করা হয়। করোনা কালীন ব্যাংক ঋণের কিস্তি আদায় বিলম্বিত করা হয়। এ সময় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে কাঙ্খিত মাত্রায় সচল রাখতে ব্যাংকিং খাতের ১২টি প্যাকেজসহ ১.৩৫ ট্রিলিয়ন টাকার ২৮টি সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হয়। [আমিরুল ইসলাম চৌধুরী]

গ্রন্থপঞ্জি 'Monetary Policy Statement' (২০২১-২২).