মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ  ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে ১৭ এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে বৈদ্যনাথতলা গ্রামের নামকরণ হয় মুজিবনগর। মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণের স্থানকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য পরবর্তী সময়ে সেখানে নির্মিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ।

মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরেই বাংলাদেশ সরকার মুজিবনগরকে স্মরণীয় করে রাখার উদ্যোগ নেয়। ১৯৭৩ সালের ৩১ আগস্ট সরকার মুজিবনগরে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নির্দেশ দেয়। ১৯৭৪ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবসে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এ প্রকল্পের কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে যায়। ১৯৮৬ সালে মুজিবনগরে স্মৃতিসৌধের কাজ সমাপ্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয় এবং এ লক্ষে প্রায় দুই কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ

মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধ ও আত্মত্যাগের প্রতীক। ২০.১০ একর জমির উপর স্মৃতিসৌধটি স্থাপিত। ২৩টি কংক্রিটের ত্রিকোণাকার স্তম্ভ সমন্বয়ে এ স্মৃতিসৌধ নির্মিত। স্থপতি তানভীর কবিরের নকশায় এ সৌধটিকে উদীয়মান সূর্যের প্রতীক বলে মনে হয়। ২৩টি স্তম্ভ পাকিস্তানের ২৩ বছর শাসনের প্রতীক। এই ২৩ বছরে বাঙালি জাতি ধীরে ধীরে যে সংগ্রাম গড়ে তোলে, তার প্রতীকও ২৩টি স্তম্ভ। ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতায় ১৬০ ফুট ব্যাসে বেদীটি নির্মিত। বেদীর অর্ধাংশে স্তম্ভগুলো সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান। সমকোণী ত্রিভুজাকৃতির এ স্তম্ভগুলোর প্রথমটির উচ্চতা ৯ ফুট এবং এর দৈর্ঘ্য ২০ ফুট। পরবর্তী প্রতিটি স্তম্ভ উচ্চতায় ১ ফুট এবং দৈর্ঘ্যে ৯ ইঞ্চি করে বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ তম স্তম্ভের উচ্চতা দাঁড়িয়েছে ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি এবং দৈর্ঘ্যও হয়েছে ২৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। গোলাকার বেদী ভূতল থেকে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চতায় তিনটি ভাগে বিভক্ত। প্রথমটির উচ্চতা ভূমি থেকে ২ ফুট ৬ ইঞ্চি, দ্বিতীয়টির ৩ ফুট ও তৃতীয়টির ৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ২ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার বেদীর অপরাংশ অসংখ্য গোলাকার বৃত্ত দ্বারা স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লক্ষ শহীদকে বুঝানো হয়েছে। তিন ফুট উচ্চতার বেদীর অপরাংশ অসংখ্য নুড়ি পাথরে আবৃত। এটি মুক্তিযোদ্ধা সাত কোটি বাঙালির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের প্রতীক। মুজিবনগর সরকারের শপথগ্রহণের স্থানটি লাল সিরামিকের ইট দ্বারা আয়তক্ষেত্রে চিহ্নিত করা হয়েছে। বেদীতে আরোহণের সোপান নয়টি ধাপে বিভক্ত। সোপানের এ নয়টি ধাপ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতির প্রতীক।

সরকারের গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে মেসার্স এভ্রি-ডে ইঞ্জিনিয়ারিং নামীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। ১৯৮৭ সালের ১৭ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ মুজিবনগর স্মৃতিসৌধের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে এখানে পাঠাগার, মসজিদ ও অতিথিশালা নির্মাণ করে একে মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সে রূপান্তরিত করা হয়।  [মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান]