মুকাদ্দম

মুকাদ্দম  সুলতানী শাসনামলের গ্রাম প্রধান। সরকার মুকাদ্দমদের মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। কোন কোন অঞ্চলে মুকাদ্দমদের মুখিয়া নামেও অভিহিত করা হত। শেরশাহের সময়ে, মুকাদ্দমগণ গ্রামের অপরাধ দমনের জন্য দায়িত্ব প্রাপ্ত হতেন এবং তাঁরা অপরাধীদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি প্রদান করার ক্ষমতা রাখতেন। এর বিনিময়ে মুকাদ্দমগণকে নগদ অর্থ, ভূমি বা উৎপাদিত পণ্যের অংশবিশেষ পারিশ্রমিক হিসেবে প্রদান করা হত। শেরশাহ (১৫৪০-১৫৪৫) এবং ইসলাম শাহের সময়ে মুকাদ্দম তাঁর নিজ গ্রামের নিরাপত্তা রক্ষা করতেন, অন্তত চোর বা ডাকাত বা শত্রু কর্তৃক কোন পর্যটক আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে বা এর কারণে ধ্বংসাত্মক ও মৃত্যুর মত ঘটনা ঘটলে, তা প্রতিরোধ করার দায়িত্ব পালন করতেন। এই সময়েই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা রক্ষার মাধ্যমে বাংলার পুলিশ ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাশ করা হয়। শেরশাহই প্রথম মুসলিম শাসক যিনি ভারতীয় সাধারণ জনগনের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিলেন।

সুলতানী আমলের মুকাদ্দম পদটি  মুগল আমলে পরিবর্তিত হয়ে চৌধুরী বা রায় অথবা কুট এ পরিণত হয়। যদিও সরকারী রেকর্ডে এই নামসমূহ আর খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে বিশ শতকের প্রথম দুই দশক নির্দিষ্ট কিছু প্রদেশে গ্রামের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বুঝাতে উক্ত শব্দগুলির ব্যবহার হত। এ সময়ে চৌধুরীগণ একজন গ্রাম্য প্রধান হিসেবে পরিগণিত হন। [নাসরীন আক্তার]