মালাধর বসু

মালাধর বসু (১৫শ-১৬শ শতক)  মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের কবি। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কুলীনগ্রামে এক  কায়স্থ বংশে তাঁর জন্ম। তিনি ছিলেন গৌড়েশ্বর হুসেন শাহের মন্ত্রী এবং তাঁরই সহায়তায়  রূপ গোস্বামী ও সনাতন গোস্বামী উক্ত রাজসভায় নিয়োগ লাভ করেন।

মালাধরের একমাত্র কাব্য শ্রীকৃষ্ণবিজয়ের রচনাকাল ১৩৯৫-১৪০২ শকাব্দ (১৪৭৩-১৪৮০ খ্রি)। কবিত্বগুণের সম্মাননাস্বরূপ মালাধর বসু গৌড়েশ্বরের নিকট থেকে ‘গুণরাজ খান’ উপাধি লাভ করেন। সুলতান বারবক শাহ (১৪৫৯-৭৪) অথবা সুলতান শামসউদ্দীন ইউসুফ শাহ (১৪৭৪-৮০) কবিকে এই উপাধি প্রদানের মাধ্যমে কাব্যরচনায় উৎসাহিত করেন।

শ্রীকৃষ্ণবিজয় সংস্কৃত ভাগবতের অংশবিশেষের (প্রথম ও একাদশ স্কন্ধ) অনুবাদ। এতে অবতাররূপী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ঐশ্বর্য ও মহিমা কীর্তন করা হয়েছে। মালাধর বসু তাঁর কাব্যে শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যভাব অপেক্ষা ঐশ্বর্যভাবের ওপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ইসলামের ক্রমবর্ধমান প্রভাব থেকে হিন্দুধর্মকে রক্ষা করার বাসনা নিয়ে মালাধর কাব্যখানি রচনা করেন।

চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৩) সন্ন্যাস গ্রহণের পূর্বে ভাগবতকে প্রথম বাংলায় প্রচার ও জনপ্রিয় করে তোলার কৃতিত্ব মালাধর বসুর। প্রাঞ্জল ও হূদয়স্পর্শী ভাষায় তিনি আবহমান বাংলার ঐতিহ্য ও পরিবেশের মনোরম বর্ণনা দিয়েছেন এবং সর্বোচ্চ মর্যাদায় হিন্দু পুরাণের কাহিনীসমূহ উপস্থাপন করেছেন। ফলে গ্রন্থটি খুবই রসপূর্ণ ও সুখপাঠ্য হয়েছে। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের প্রবর্তক  চৈতন্যদেব শ্রীকৃষ্ণবিজয়ের প্রেমময় বাক্য থেকে ভক্তিরস আস্বাদন করতেন।

‘শ্রীধর্ম-ইতিহাস’, ‘লক্ষ্মী চরিত্র’, ‘যোগসার’ এবং  রামায়ণ ও  মহাভারত-এর বিবিধ উপাখ্যানের রচয়িতা হিসেবে একজন গুণরাজের নাম পাওয়া যায়। তবে উভয়ে একই ব্যক্তি কি-না সে সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু বলা যায় না।  [ওয়াকিল আহমদ]