মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড

মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড বাংলাদেশের তৃতীয় প্রজন্মের ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি তফসিলি বাণিজ্যিক ব্যাংক। ১৯৯৯ সালের ২০ মে নিবন্ধিত এই ব্যাংকটি ১৯৯৯ সালের ২ জুন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। বিভিন্ন সেক্টরের ২৭ জন নামকরা ব্যবসায়ী এই ব্যাংকের উদ্যোক্তা। ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন মো. আবদুল জলিল এম.পি এবং কুশলী ব্যাংকার এম তাহেরউদ্দিন ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। ঢাকার ৬১ দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় অবস্থিত।

ব্যাংকটির প্রারম্ভিক অনুমোদিত মূলধন ছিল ১০০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ২৪.৫০ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠার পরবর্তী ২২ বছরে ব্যাংকটির অনুমোদিত ও পরিশোধিত মূলধন দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১,২০০ কোটি এবং ৯৮৪০ কোটি টাকায়। মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড তার সাধারণ এবং কর্পোরেট গ্রাহকদের বৃহৎ পরিসরে ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে। ব্যাংকটির ডিপোজিট সেবাগুলির মধ্যে আছে: ফিক্সড ডিপোজিট, স্কিম ডিপোজিট, সেভিংস্ ডিপোজিট এবং স্বল্পমেয়াদি ডিপোজিট।

ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি উৎপাদনমূলক খাত যেমন কৃষি এবং কর্পোরেট, এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণসহ ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ঋণ প্রদান করে। এমবিএল কর্পোরেট গ্রাহকদের নিবন্ধীকরণের আওতায় সুযোগ প্রদান করে থাকে। ব্যাংকটির পুঁজি বিনিয়োগের অন্যান্য খাত হলো: ব্যবসায়, ইঞ্জিনিয়ারিং, ঠিকাদারি অর্থায়ন, লিজ ফাইন্যান্সিং, ফার্মসিউটিক্যালস, আবাসন, পরিবহন, বস্ত্রশিল্প, কাঁচ ও কাঁচজাত শিল্প, প্লাস্টিক ও প্লাস্টিকজাত শিল্প ইত্যাদি। এমবিএল ২০০৯ সালে ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক ব্রোকারেজ হাউজ’ নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে ব্যবসায় পরিচালনা করছে।

প্রথাগত ব্যবসা, ম্যানুফ্যাকচারিং, আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা ছাড়াও মার্কেন্টাইল ব্যাংক ডাবল বেনিফিট ডিপোজিট স্কিম, মাসিক সেভিংস স্কিম, মাসিক বেনিফিট ডিপোজিট স্কিম, স্পেশাল সেভিংস স্কিম এবং নিম্ন ও মধ্য আয়ের লোকদের জন্য জামানতবিহীন দুটি বিশেষ লোন স্কিম, যেমন কনজুমার ক্রেডিট স্কিম ও স্মল লোন স্কিম চালু করেছে।

মৌল তথ্য ও পরিসংখ্যান (মিলিয়ন টাকায়)

বিবরণ ২০১৮ ২০১৯ ২০২০
অনুমোদিত মূলধন ১২০০ ১২০০ ১২০০
পরিশোধিত মূলধন ৮১৪৯ ৯৩৭২ ৯৮৪০
রিজার্ভ ১০৫৩৪ ১১৫৩৭ ৫৪০৬২
আমানত ২২৯৯০৭ ২৪৭৬২৫ ২৪৫২৬৬
ক) তলবি আমানত ২৭৫৩৪ ২৮১৫৩ ৩২৬৩৭
খ) মেয়াদি আমানত ২০২৩৭৪ ২১৯৪৭১ ২১২৬২৯
ঋণ ও অগ্রিম ২২৪২৩১ ২৩৬৮৯১ ২৪৮৯৯৪
বিনিয়োগ ৩৮৯৭৮ ৪৯৭৫৬ ৪৮৯৫৪
মোট পরিসম্পদ ২৯১৩৮৬ ৩১৬৩৬৪ ৩৩০৭৮৬
মোট আয় ২৮১১৮ ৩১২৯২ ২৭২৭৬
মোট ব্যয় ২১৭৭২ ২৩৯৩৬ ২৩৩২৮
বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা পরিচালনা ৩৯০৬৪১ ৩৮৩০৪১ ৩৩৯০৮০
ক) রপ্তানি ১৫৮৩০৮ ১৬৩১৫২ ১৩৫৪১৩
খ) আমদানি ১৯৬৩৯০ ১৮৪৬৫০ ১৭২৭৭৪
গ) রেমিট্যান্স ৩৫৯৪৩ ৩৫২৩৯ ৩০৮৯৩
মোট জনশক্তি (সংখ্যায়) ২৩০৫ ২৪১৮ ২৪২০
ক) কর্মকর্তা ২২৭৮ ২৩৯০ ২৩৯৬
খ) কর্মচারি ২৭ ২৮ ২৪
বিদেশি প্রতিসংগী ব্যাংক (সংখ্যায়) ৬৩৫ ৬১৪ ৬২৪
শাখা (সংখ্যায়) ১৩৮ ১৪৮ ১৫০
ক) দেশে ১৩৮ ১৪৮ ১৫০
খ) বিদেশে
কৃষিখাতে
ক) ঋণ বিতরণ ১৭৩১ ৩৭১৮ ৩৫৫৫
খ) আদায় ২৬৭৯ ৩২৩৭ ৩২৬৩
শিল্প খাতে
ক) ঋণ বিতরণ ৪৯৪৪৫ ৪৮৪৭২ ২৭২৮১
খ) আদায় ৩৬২৭১ ৪৩৩৯৫ ২৪৪৯৩
খাত ভিত্তিক ঋণের স্থিতি
ক) কৃষি ও মৎস্য ২৪১৮ ৩১৬১ ৩৯৭১
খ) শিল্প ৮৩৫৫৯ ৮৭৬৩৯ ১০৩১০৩
গ) ব্যবসা বাণিজ্য ৩৭৭৪৩ ৩৫১২০ ৩৭৪৬৮
ঘ) দারিদ্র্য বিমোচন ১.১
সি.এস.আর ১২১ ১৫৭ ৩০৫

উৎস  আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার, বার্ষিক প্রতিবেদন, ২০১৯-২০২০ ও ২০২০-২১

দ্রুত ও নিরাপদ রেমিট্যান্স সেবা পৌঁছে দেবার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি এবং ব্যাংকের সাথে জোরদার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। রেমিট্যান্স সেবা স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য এমবিএল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, জাপান ইত্যাদি দেশের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এছাড়া বিশ্বের খ্যাতিমান মুদ্রা স্থানান্তরকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন সার্ভিসের সাথে আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। দেশের অভ্যন্তরে প্রাপকদের কাছে রেমিট্যান্স পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ পোস্ট অফিসের (বিপিও) সাথে ব্যাংকের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। বিপিও তার ৪৯০টি শাখার মাধ্যমে এ সেবা গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়। এভাবে এমবিএল রেমিট্যান্স সেবা সহজে, দ্রুত এবং নিরাপদে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য এই সার্ভিস গ্রুপ গড়ে তুলেছে। যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশিদের রেমিট্যান্স তাদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ব্যাংকটি ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংক এক্সচেঞ্জ হাউজ’ নামে একটি হাউজ চালু করতে যাচ্ছে।

শেয়ার হোল্ডার এবং অন্যান্য স্টক হোল্ডারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং আস্থা স্থাপনের জন্য ১২ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদ ব্যাংকটির সার্বিক তত্ত্বাবধান ও নীতিকৌশল প্রণয়ন করে। গ্রাহকসেবা ও অন্যান্য কার্যক্রমে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে ইতোমধ্যে মার্কেন্টাইল ব্যাংক বিভিন্ন পেশাজীবী ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সম্মাননা লাভ করেছে। ২০০৮ সালে প্রকাশিত ব্যাংকিং খাতের বার্ষিক প্রতিবেদনের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশে হিসাবরক্ষণ বিষয়ক সর্বোচ্চ পেশাজীবী সংস্থা ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি)-এর কাছ থেকে ‘সার্টিফিকেট অফ মেরিট’ লাভ করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এছাড়া রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনায় সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০০৯ সালে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিট-এর নিকট থেকে এই ব্যাংক পেয়েছে ‘সোনার মানুষ সেবা পুরস্কার’।

২০১৯ সালে ব্যাংকের আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির অংশ ছিল ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও ঋণ অগ্রিমের স্থিতির যথাক্রমে ১.৯ এবং ২.২ শতাংশ এবং আমানত ও ঋণ অগ্রিমের গড় সুদহার ব্যবধান দাঁড়ায় ৩.৩ শতাংশ। [মোহাম্মদ আবদুল মজিদ]