মাদারীপুর সদর উপজেলা

মাদারীপুর সদর উপজেলা (মাদারীপুর জেলা)  আয়তন: ২৮৩.১৪ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°০৬´ থেকে ২৩°১৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°০১´ থেকে ৯০°১৫´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে শিবচর ও জাজিরা উপজেলা, দক্ষিণে কালকিনি ও কোটালিপাড়া উপজেলা, পূর্বে শরিয়তপুর সদর উপজেলা, পশ্চিমে রাজৈর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩৪৫৭৬৪; পুরুষ ১৭১৩২৯, মহিলা ১৭৪৪৩৫ । মুসলিম ৩২১১৭৫, হিন্দু ২৪৪৭৫, বৌদ্ধ ২৪, খ্রিস্টান ৭৯ এবং অন্যান্য ১১।

জলাশয় আড়িয়াল খাঁ, ঘাঘর ও কুমার নদী উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন থানা গঠিত হয় ১৯৪৬ সালে। বর্তমানে এটি উপজেলা।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৫ ১৪৭ ১৮৫ ৬২৬৯০ ২৮৩০৭৪ ১২২১ ৭৩.১ ৪৬.১
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
১৪.২২ ৩৪ ৬২৬৯০ ৪৪০৯ ৭৩.১
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কালিকাপুর ৪১ ৫১৮৬ ১০৫৭৬ ৯৮০৭ ৪৬.০
কুনিয়া ৫৯ ৪০৯৪ ৮৮৯৫ ৯০৯৮ ৪৬.১
কেন্দুয়া ৪৭ ৫৮৯০ ১২৩৪৭ ১২৩২৩ ৪৫.৫
খোয়াজপুর ৫৩ ৬৩৮৭ ১১৪৪৪ ১১৭৮৫ ৪২.০
ঘটমাঝি ২৯ ৪১৬৭ ১২৮৮৫ ১২৮০৩ ৪৮.০
ছিলার চর ১১ ৫৩৭২ ৮৫৭৩ ৯৪১৯ ৪৪.৯
ঝাউদি ৩৫ ৪৬৭৭ ১১৯৩৯ ১২৩৫৪ ৪২.০
দুধখালী ২৩ ৩৭৩৩ ৭৫৬১ ৮১৫৮ ৫৪.৮
ধুরাইল ১৭ ৩২৯৩ ৪১০৩ ৪৪৮৪ ৪১.০
পাঁচখোলা ৭৭ ৬০৪৫ ১১৮৫৬ ১১৮৭৩ ৫২.০
পেয়ারপুর ৮৩ ৩৪৫০ ৭০৯৫ ৭৬০৭ ৪৯.৪
বাহাদুরপুর ১০ ২৫৩১ ৫৩৬৩ ৫৪৭৫ ৪৭.৪
মস্তফাপুর ৭১ ৪৪১২ ১১৯৮৩ ১১৭৬৫ ৪১.১
রাস্তি ৮৯ ১৮০৬ ৭৫৭৪ ৭৪৮৫ ৪৬.৫
শিরখাড়া ৯৪ ৫২৫২ ৮০৬৫ ৮৩৭৯ ৪৫.৬

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ আলগী কাজীবাড়ি মসজিদ (সতের শতক), কূলপদ্মী দুর্গামন্দির, শশী রায়ের মন্দির, ঝাউদি গিরি, আউলিয়াপুর নীলকুঠি, শাহ মাদার দরগাহ।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী আবদুর রশীদ খানকে সপরিবারে হত্যা করে। কমান্ডার খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে ‘খলিল বাহিনী’ নামে পরিচিত স্থানীয় একটি মুক্তিবাহিনী এলাকায় একাধিক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। ৮-১০ ডিসেম্বর খলিল বাহিনী মাদারীপুর টেকেরহাট সড়কে সোমাদ্দার ব্রিজে এক যুদ্ধে ১জন মেজর ও ১জন ক্যাপ্টেনসহ মোট ৪০জন পাকসেনাকে বন্দি করে। মুক্তিযুদ্ধে এ উপজেলার ৫৩ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। উপজেলায় হাওলাদার জুট মিলস, মিঠাপুর সাহাবাড়ি এবং চরকুলপন্দী নামক স্থানে ৩টি গণকবর রয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন মাদারীপুর সদর উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৭৯৩, মন্দির ১২, মাযার ১।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫১.১%; পুরুষ ৫৩.৯%, মহিলা ৪৮.৪%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি নাজিমউদ্দিন কলেজ (১৯৪৮), চরমুগুরিয়া কলেজ (১৯৭৮), সরকারি সুফিয়া মহিলা কলেজ (১৯৮৪), সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ (১৯৮৯), মাদারীপুর পাবলিক ইনস্টিটিউশন (১৯৫৩), মাদারীপুর হাইস্কুল (১৮৮৫), ডনোভান সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (১৯১৪), মিঠাপুর এলএস উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৫), চরমুগুরিয়া মার্চেন্টস হাইস্কুল (১৯৩১), ইউনাইটেড ইসলামিয়া সরকারি হাইস্কুল (১৯৫০), তাঁতীবাড়ি ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৪), এসি নর্থ কলাগাছিয়া উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬১), ঘটকচর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৩), বাহাদুরপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৬৮), জুলিও কুরি উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৭২), চরনাচনা ফাজিল মাদ্রাসা (১৯১২)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: সুবর্ণগ্রাম (১৯৯৮), প্রান্ত (২০০১), মাদারীপুর নিউজ (২০০৬), বিশ্লেষণ (২০০৯); সাপ্তাহিক: সুপ্রভাত (১৯৯১), শাহ মাদার (১৯৯৩), শরীয়তউল্লাহ (১৯৯৬), আজকাল (১৯৯৯), গণসচেতনতা (২০০৬), সুবার্তা (২০০৭); মাসিক: যুগচেতনা (১৯৯১), পোস্টার (১৯৯১), শান্তি সাময়িকী (১৯৯২), জাবল-ই-নূর (২০০৫); সাহিত্য পত্রিকা: সন্দীপন, কিশলয়, বৈশাখী, ক্যানভাস, বর্ণমালা, নবপ্রভাত; অবলুপ্ত: দৈনিক দিগন্ত (১৯৬০), সাপ্তাহিক জননী বাংলা (১৯৭২), সাপ্তাহিক মাদারীপুর বার্তা (১৯৮৬), সাপ্তাহিক আড়িয়াল খাঁ (১৯৮৯), পাক্ষিক বালারঞ্জিকা (১৮৬৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ১৩, নারী সংগঠন ৩, সিনেমা হল ৪, সাংস্কৃতিক সংগঠন ১৪।

দর্শনীয় স্থান আলগী কাজীবাড়ি মসজিদ, পর্বতের বাগান, শকুনি লেক, শাহ্ মাদার দরগ, চরমুগুরিয়া বন্দর, আউলিয়াপুর নীলকুঠি, মিঠাপুর জমিদার বাড়ি।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৫২.২৬%, অকৃষি শ্রমিক ৩.০৩%, শিল্প ০.৯৪%, ব্যবসা ১৮.০১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৩.২৬%, চাকরি ৯.৯৯%, নির্মাণ ১.৭৮%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৮৬% এবং অন্যান্য ৯.৭১%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৬.৭৭%, ভূমিহীন ৩২.৯৩%। শহরে ৪২.৯৩% এবং গ্রামে ৭১.৬৮% পরিবারের কৃষিভূমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, সরিষা, ডাল, গম, পিঁয়াজ, মিষ্টি আলু, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি নীল, পান, তরমুজ।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, আম, পেঁপে, নারিকেল, সুপারি, কলা।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৭৪ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬৪৫ কিমি; নৌপথ ৩৩ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা জুটমিল ২, বরফকল ৩, আটামিল ৫, বিস্কুট ফ্যাক্টরি ৫।

কুটিরশিল্প মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, দারুশিল্প, নকশীকাঁথা।

হাটবাজার ও মেলা মাদারীপুর, চরমুগুরিয়া, হবিগঞ্জ, কূলপদ্মী, কেন্দুয়া, মাদ্রা, খোয়াজপুর ও ঘটমাঝি হাট এবং দুর্গাপূজা, ফটিক সাধু, বাহাদুরপুর ও কলাগাছিয়া মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  পাট ও পাটজাত দ্রব্য, সুপারি, সুতা।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৬৮.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.৫%, ট্যাপ ২.০% এবং অন্যান্য ২.৫%। উপজেলার প্রায় ৭৮.৮৪% নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা ৬১.৭% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৭.৩% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সরকারি হাসপাতাল ১, ক্লিনিক ১০, যক্ষ্মা হাসপাতাল ১, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন ১, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৩।

এনজিও ব্র্যাক, প্রশিকা, কেয়ার, আশা, স্বনির্ভর বাংলাদেশ। [কাজী নাজমুল ইসলাম]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; মাদারীপুর সদর উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।