মহীখাতীয় পর্ব

মহীখাতীয় পর্ব (Geosynclinal facies)  ব্যাপক পুরুত্ব, সাধারণত এঁটেল বৈশিষ্ট্য ও কিছু অঙ্গারী (carbonate) শিলার বৈশিষ্ট্যমন্ডিত একটি পাললিক পর্ব। মহীখাতীয় বৃদ্ধির বিভিন্ন স্তরে মজুতকৃত অবক্ষেপ বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট বৈচিত্র্যে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত, যা বিভিন্ন পর্বে শ্রেণীভুক্ত করা যেতে পারে। এগুলো হচ্ছে প্রাক-গিরিজনিক (pre-orogenic), প্রাক-ফ্লিশ (pre-flysch), ফ্লিশ এবং মোলাস (molasse)। বর্তমানে প্রকটিত অধিকাংশ অববাহিকীয় স্তরক্রম একটি ভিত্তিশিলা পর্যায়ের (pre-orogenic) মধ্য দিয়ে একটি বিস্তৃত প্রাক-ফ্লিশ পর্যায় এবং অববাহিকা যত গভীরতর হয়েছে ততই একটি গভীর সামুদ্রিক পর্যায় (flysch) থেকে চূড়ান্ত পর্বে মহাদেশীয় (molasse) পর্যায় অতিক্রম করে এসেছে। অবশ্য অববাহিকাসমূহের ভূ-গাঠনিক বিন্যাস যেহেতু খুবই পরিবর্তনশীল, সেহেতু দফায় দফায় উল্লেখযোগ্য প্রকারভেদ হতে পারে।

বঙ্গীয় মহীখাত পার্মিয়ান যুগের সমগিরিজনিক (synorogenic) অবক্ষেপণের একটি উদাহরণ। পার্মিয়ান যুগে যখন গন্ডোয়ানাল্যান্ডের ভিত্তিশিলায় চ্যুতিজাত অববাহিকার সৃষ্টি হয়, সে সময়ে এই বঙ্গীয় মহীখাতের সূচনা। পার্মিয়ান ও মেসোজোয়িক যুগে মহাদেশীয় পর্বের কয়লার সঙ্গে গন্ডোয়ানা অবক্ষেপ ভিত্তিশিলার চ্যুতিজাত অববাহিকায় সঞ্চিত হয়। জুরাসিক থেকে প্রবীণ ক্রিটেসিয়াস যুগে ভারতীয় উপমহাদেশ ব্যাপক ব্যাসল্টিয় প্রবাহ, হিমালয়ের প্রাথমিক উত্থান ও বঙ্গীয় অববাহিকার অবনমনের কারণে ব্যাপক বিচলনের মধ্যে ছিল। ক্রিটেসিয়াস যুগে নদীজ, জোয়ারভাটা গঠিত সমভূমি, বদ্বীপীয় ও উপহ্রদীয় পরিবেশে সুস্থিত সোপানে (stable shelf) এঁটেল ও বালুময় অবক্ষেপ সঞ্চিত হয়েছিল। আর পুরঃখাত (foredeep) ও পরিপ্লব বলয়ে (mobile belt) অবক্ষেপণ গভীর সামুদ্রিক পরিবেশে সংঘটিত হয়েছিল এবং ঘনস্রোত-অবক্ষেপ (turbidite) সম্ভবত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। প্যালিওসিন থেকে ইয়োসিন যুগের মধ্যে সুস্থিত সোপান ও গভীর অববাহিকায় জৈন্তিয়া শিলাদল অবক্ষেপ সঞ্চিত হয়েছিল এবং পরিপ্লব বলয়ে আসামের ডিসাং শিলাদলের অনুরূপ সামুদ্রিক কর্দম অপক্ষেপিত হয়েছিল। ওলিগোসিন যুগে পুরঃখাত অববাহিকা ও পরিপ্লব বলয়ে সামুদ্রিক থেকে মোহনার পরিবেশে বড়াইল শিলাদল মজুত হয়েছিল। মায়োসিন যুগে গভীর অববাহিকা, অবনমন ও সামুদ্রিক স্ফীতি পূর্ণ ছিল এবং বদ্বীপীয় থেকে অগভীর সামুদ্রিক ও মহাদেশীয় পরিবেশে সুরমা ও টিপাম শিলাদল সঞ্চিত হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক পশ্চাদ্গতি নবীন মায়োসিন যুগের বৈশিষ্ট্য। এরপর নদীজ থেকে বদ্বীপীয় পর্বে প্লায়োসিন ডুপিটিলা ও ডিহিং শিলাদল অবক্ষেপণ চলতে থাকে, যদিও সমুদ্র সন্নিকটে তা একটি প্লায়োসিন সামুদ্রিক স্ফীতি দ্বারা সামুদ্রিক কর্দম ও পলিতে পরিবর্তিত হয়। কোয়াটারনারী যুগে, সাধারণ সামুদ্রিক পশ্চাদ্গতির সঙ্গে প্রচলিত হিমযুগীয় বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক পশ্চাদ্গতির মিথস্ক্রিয়ার কম্পনের কারণে অববাহিকায় কয়েকটি ক্ষুদ্র বদ্বীপ গঠিত হয়।  [আ.স.ম উবাইদ উল্লাহ]