মনসবদারি

মনসবদারি  ‘মনসব’ থেকে ‘মনসবদারি’ শব্দের উৎপত্তি। এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল পদবি। মুগল সম্রাট আকবর সমগ্র সামরিক বিভাগকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন এবং তা মনসবদারি প্রথা নামে পরিচিত। প্রতিটি মনসবের অধিকারী ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত ছিলেন এবং আদেশ মতো কর্মসম্পাদনে বাধ্য থাকতেন। রাষ্ট্রের সকল সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারী এই প্রথা মতে পদমর্যাদা পেতেন। এই প্রথায় ১০ থেকে ১০,০০০ পর্যন্ত বাহিনীর পরিচালকগণ ৩৩টি পদমর্যাদায় বিন্যস্ত ছিলেন। আকবরের রাজত্বের মধ্যভাগ পর্যন্ত সাধারণ কর্মকর্তাগণ বড়জোর ৫০০০ সৈন্য পরিচালনার পদ পেতে পারতেন। ৭০০০ এবং ১০,০০০ সৈন্য পরিচালনার পদমর্যাদা শুধু শাহজাদাদের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। আকবরের পরবর্তী সম্রাটদের আমলে এই পদমর্যাদা বেড়ে ২০,০০০ বা তারও বেশিতে পৌঁছায়।

মনসবদারদের নিয়োগ, পদোন্নতি, পদচ্যুতি বা সাময়িক পদচ্যুতি সম্পূর্ণরূপে সম্রাটের খেয়ালখুশির উপর নির্ভরশীল ছিল। মনসবদার হিসেবে তাঁরা যে সকল সুযোগ-সুবিধা পেতেন তা কখনও বংশানুক্রমিক ছিল না। তাঁদের উত্তরাধীকারীদের নতুন করে কর্মজীবন শুরু করতে হতো। মনসবদারগণ সব সময় নিম্নতম পদ থেকে কর্মজীবন শুরু করতেন না। পছন্দ হলে সম্রাট কোন ব্যক্তিকে উচ্চতর, এমনকি উচ্চতম পদমর্যাদায় সরাসরি নিয়োগ দিতেন। মনসবদারি প্রথায় সামরিক ও বেসামরিক বিভাগের মধ্যে কোন পার্থক্য ছিল না, উভয় বিভাগের কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ মনসবের অধিকারী ছিলেন। প্রয়োজন মতো তাঁদেরকে এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে বদলি করা যেত। পদমর্যাদা মতো প্রত্যেক মনসবদার নির্ধারিত সংখ্যায় ঘোড়া, হাতি, যন্ত্রপাতি প্রভৃতি রাখতেন। প্রথম দিকে এই নিয়ম পালনের কড়াকড়ি ছিল, কিন্তু পরবর্তীসময়ে এ সকল নিয়ম অনেকটা  শিথিল হয়ে পড়ে।  [আবদুল করিম]