ভেড়ামারা উপজেলা

ভেড়ামারা উপজেলা (কুষ্টিয়া জেলা)  আয়তন: ১৫৩.৭১ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৩°৫৯´ থেকে ২৪°০৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮°০০´ থেকে ৮৯°১২´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে লালপুর উপজেলা, দক্ষিণে মিরপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া), পূর্বে ঈশ্বরদী উপজেলা, পশ্চিমে দৌলতপুর উপজেলা (কুষ্টিয়া)।

জনসংখ্যা ২০০০৮৪; পুরুষ ৯৮৮২২, মহিলা ১০১২৬২। মুসলিম ১৯৫৬০৩, হিন্দু ৪৪৩৩, খ্রিস্টান ১০, বৌদ্ধ ৩৬ এবং অন্যান্য ২।

জলাশয় প্রধান নদী: পদ্মা। দামোদর বিল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন ভেড়ামারা থানা গঠিত হয় ১৯০৬ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ৭ নভেম্বর ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
৪২ ৭৭ ৩০৭৪৭ ১৬৯৩৩৭ ১৩০২ ৬২.৭ (২০০১) ৪৫.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার(%)
৩.২৬ (২০০১) ১৫ ২২১২৪ ৬২৫৮ (২০০১) ৭১.৪
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.১০ (২০০১) ৮৬২৩ ১২৪৪ (২০০১) ৫২.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
চাঁদগ্রাম ৪০ ২৫০৬ ৮৪৫৭ ৮৬১৭ ৪৭.৯
জুনিয়াদহ ৬৭ ৮৫৬৫ ১৭০৫৯ ১৭৬৩৪ ৪২.২
ধরমপুর ৫৪ ৫২৫০ ১৮৪৩৯ ১৮৩৮১ ৪৭.৪
বাহাদুরপুর ১৩ ৪১৭৯ ১৪২৯৮ ১৪৭২৫ ৪৩.৮
বাহিরচর ২৭ ৬৩৯৯ ১২২২৭ ১২৬৮৮ ৫১.৬
মোকারিমপুর ৮১ ১০০৯৮ ১৭৪০২ ১৮০৩৩ ৪৪.৫

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

thumgb
thumgb

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ চন্ডীপুর গ্রামের জর্জবাড়ি (১৮৮৯), জগৎজননী মন্দির।

ঐতিহাসিক ঘটনা ভেড়ামারা উপজেলায় ১৮৬০ সালের নীল বিদ্রোহে শালঘর মধুয়ার কৃষকরা এবং ফারায়েজী আন্দোলনে বহু লোক অংশগ্রহণ করে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ভেড়ামারার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও এ সময় এ এলাকায় ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা সংঘটিত হয়। উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের ষোলদাগ গ্রাম ও ভেড়ামারা পৌরসভার রেলগেট গোরস্থানের কাছে পাকসেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ২টি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। উপজেলা এলাকায় ১টি গণকবরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বিস্তারিত দেখুন ভেড়ামারা উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান  মসজিদ ৬২০, মন্দির ১০, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: সাতবাড়ীয়া মসজিদ।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৭%; পুরুষ ৪৮.৭%, মহিলা ৪৮.৭%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৭, প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫৫, মাদ্রাসা ৮। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: ভেড়ামারা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, জুনিয়াদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৮৭২), বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেড়ামারা মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৬৯)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী দৈনিক: কুষ্টিয়া দর্পণ; সাপ্তাহিক: সীমান্ত কথা, মুকুর (অনিয়মিত), অবরুদ্ধ কণ্ঠ (অনিয়মিত); মাসিক: কাকলী; দ্বিমাসিক: অভিযান।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি, ক্লাব, প্রেসক্লাব, নাট্যদল, মহিলা সংগঠন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সঙ্গীত স্কুল, শিল্পকলা একাডেমি, থিয়েটার, সিনেমা হল।

গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান হার্ডিঞ্জ ব্রিজ (১৯১২), ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র, গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প, জিকে পাম্প হাউজ, সোলাইমান শাহের মাযার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪৬.৫৭%, অকৃষি শ্রমিক ৬.২৬%, শিল্প ২.১২%, ব্যবসা ১৭.৬২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৩৬%, চাকরি ৯.২৫%, নির্মাণ ১.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.১৬%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ০.৫৬% এবং অন্যান্য ১১.১৯%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪২.৮৬%, ভূমিহীন ৫৭.১৪%। শহরে ৩৮.৩১% এবং গ্রামে ৪৩.৬৮% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, সরিষা, মিষ্টি আলু, সূর্যমুখী, পান, তামাক, আখ, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, কাউন, তিসি।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কলা, কাঁঠাল, পেঁপে, কামরাঙ্গা, কুল, তরমুজ, জাম।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৮০, গবাদিপশু ৫, হাঁস-মুরগি ৫৯।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ১৫৬ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৩১ কিমি, কাঁচারাস্তা ৩৫৩ কিমি; রেলওয়ে ১০ কিমি; নৌপথ ১০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা লবণ ফ্যাক্টরি, বিড়ি ফ্যাক্টরি, কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।

কুটিরশিল্প তাঁতশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ২। সাতবাড়ীয়া হাট, জুনিয়াদহ হাট, গোলাপনগর হাট, কুচিয়ামুড়া হাট, বাহাদুরপুর হাট, আড়কান্দি হাট এবং ঘোড়া শাহ’র মাযারের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য তামাক, পান।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচীর আওতাধীন। তবে ৬৭.৩% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৫.০%, ট্যাপ ১.৯% এবং অন্যান্য ৩.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৬৭.৮% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২৯.৯% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ২.৩% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, ক্লিনিক ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৮।

এনজিও ব্র্যাক, উদ্দীপন, আশা।  [আরিফ নিশির]

তথ্যসূত্র  আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; ভেড়ামারা উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।