ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা

ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা (Land Capability)  বর্তমান উৎপাদনশীলতা এবং কৃষি উৎপাদন সীমাবদ্ধতার নিরিখে ভূমির অর্থনৈতিক মূল্যায়ন। ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা মূল্যায়নের জন্য বাংলাদেশে দুটি শ্রেণীবিন্যাস পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে: মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট- এসআরডিআই (Soil Resources Development Institute-SRDI) কর্তৃক প্রচলিত পদ্ধতি, যা পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য এবং অন্যটি ফরেস্টাল টিম (Forestal Team) কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য প্রযোজ্য পদ্ধতি।

এসআরডিআই কর্তৃক প্রচলিত ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার শ্রেণীবিন্যাসটি বাংলাদেশের প্লাবনভূমির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে উদ্ভাবন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি সাধারণীকৃত মাত্রা চিহ্নিত করা হয়েছে: ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা শ্রেণি এবং ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা উপশ্রেণী। ভূমির উৎপাদন ক্ষমতা শ্রেণীটি রোমান হরফে ১ (I) থেকে ৫ (V) পর্যন্ত মাত্রায় বিভক্ত। প্রথম শ্রেণীর ভূমি (Class I land) অতি উত্তম মানের কৃষিভূমি হিসেবে চিহ্নিত এবং সারা বছর ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে খুবই সীমিত সীমাবদ্ধতা সম্পন্ন। এই শ্রেণীর ভূমি ব্যাপকভাবে কৃষিকার্যে ব্যবহূত হয়ে থাকে। এরপর শস্য উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার দিক থেকে ভূমিসমূহকে দ্বিতীয় (II), তৃতীয় (III) ও চতুর্থ (IV) শ্রেণীর মানে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে। এসকল ভূমিতে সন্তোষজনক ফসল ফলানোর জন্য মান অনুযায়ী অধিকতর প্রয়াস চালানোর প্রয়োজন হয়। যেসকল ভূমি অর্থনৈতিকভাবে কৃষি উৎপাদনের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে, সেসকল ভূমিকে পঞ্চম শ্রেণীভুক্ত (Class V) তথা অতি নিকৃষ্ট এবং অ-কৃষি ভূমি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভূমির উৎপাদন ক্ষমতার উপশ্রেণীর দ্বিতীয় পর্যায়ের সাধারণীকরণের বেলায় কৃষি উৎপাদনে প্রধান প্রধান সীমাবদ্ধতাবিশিষ্ট ভূমিকে একটি শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে নিয়মিত প্লাবনে প্লাবিত হওয়া অথবা না হওয়ার ভিত্তিতে ভূমিকে প্রাথমিকভাবে পৃথক করা হয়েছে। এ সকল বিভাগকে প্রধান উপশ্রেণী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং যে সকল ভূমি স্বাভাবিক প্লাবনসীমার উপরে অবস্থান করে, তাদেরকে ‘ডি’ (D) শ্রেণীভুক্ত করা হয় এবং অপরদিকে যে সকল ভূমি বছরের কোন অংশে অথবা সারাবছর প্লাবিত হয়ে থাকে তাদেরকে ‘ডব্লিউ’ (W) শ্রেণীভু্ক্ত করা হয়।

প্রধান উপশ্রেণীসমূহের মধ্যে সাধারণ উপশ্রেণীভুক্ত ভূমিসমূহকে ছোট হাতের অক্ষর দ্বারা পৃথকভাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে এবং এক্ষেত্রে প্রধান উপশ্রেণী চিহ্নের সঙ্গে প্রযোজ্য ছোট হাতের চিহ্ন সংযুক্ত করে সাধারণ উপশ্রেণীভুক্ত ভূমিকে নির্দেশ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের প্রাথমিক নিরীক্ষা মৃত্তিকা জরিপ পরিচালনার সময় ভূমির যে সকল সাধারণ উপশ্রেণী শনাক্ত করা হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে: d উপশ্রণী- শুষ্ক ঋতুতে খরার কারণে সীমিত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মৃত্তিকা; e উপশ্রেণী- ঢালু ভূমিতে ক্ষয়ীভবনের শিকার হওয়ার দরুন সীমিত উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন মৃত্তিকা; r উপশ্রেণী- স্থানীয়ভাবে অনিয়মিত ভূপ্রকৃতির দরুন সেচ, নিষ্কাশন অথবা কর্ষণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত মৃত্তিকা; s উপশ্রেণী- অত্যধিক দ্রবণীয় লবণবিশিষ্ট মৃত্তিকা; t উপশ্রেণী- উদ্ভিদের জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ ধারণকারী মৃত্তিকা; W উপশ্রেণী- অতিরিক্ত পানির উপস্থিতির দরুন সীমিত ব্যবহার উপযোগী মৃত্তিকা (শুষ্ক ঋতুতে প্রধান উপশ্রেণীভুক্ত ভূমি W-এর মৃত্তিকা এবং বর্ষা ঋতুতে প্রধান উপশ্রেণীভুক্ত ভূমি D-এর মৃত্তিকা); x উপশ্রেণী- নবীন পলল অথবা খুবই নবীন পাললিক মৃত্তিকা, যা দুর্বল ভৌত অবস্থা এবং নদীভাঙন অথবা নদীর প্লাবন দ্বারা পুনরায় অধিকতর পলল দ্বারা চাপা পড়ে যাওয়ার ফলে কৃষিকার্যের জন্য সীমিত ব্যবহারযোগ্য; z উপশ্রেণী- আকস্মিক বন্যা অথবা পানিপ্রবাহের দ্বারা শস্য ক্ষতির শিকার হয় এমন ভূমির মৃত্তিকা।  [এম. রেজাউর রহমান]