ভাদু উৎসব

ভাদু উৎসব  বীজ বপন উপলক্ষে প্রধানত মেয়েদেরদ্বারা পালিত একটি  লোক উৎসব। বহুকাল আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি অঞ্চলে সমগ্র ভাদ্র মাস জুড়ে এ উৎসব পালিত হয়ে আসছে। পঞ্চকোট জেলার কাশীপুর রাজ্যের ভাদু বা ভদ্রেশ্বরী নামক এক রাজকন্যার কাহিনী থেকে এর উদ্ভব। বাগ্দত্ত এক রাজপুত্রের সঙ্গে বিয়ে না হওয়ায় রাজকন্যা ভাদু আত্মহত্যা করেন। এই শোকাবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজকন্যার স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যেই ভাদু উৎসব পালন প্রচলিত হয়।

ভাদু উৎসবে পূজারীরা ভদ্রেশ্বরীর একটি মূর্তি তৈরি করে এবং সারা মাস ধরে তার সম্মুখে নৃত্যগীত পরিবেশন করে। ভদ্রেশ্বরী কখনও কন্যা আবার কখনও জননীরূপেও পূজিত হন। ‘ভাদু ভাসান’ পর্ব অত্যন্ত বিষাদময়। ভাদ্র-সংক্রান্তিতে উপাসকরা মূর্তিসহ নদীর তীরে সমবেত হয়ে মূর্তি বিসর্জন দেয়।

বিবাহ-প্রধান গান ভাদু উৎসবের মূল আকর্ষণ; এর কারণ হলো কুমারী ভাদুর স্মৃতি রোমন্থন করা। পেশাদার নারীশিল্পী এবং সাধারণ সঙ্গীতশিল্পী উভয়েই গান পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। এ উৎসবে সমগ্র এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে এবং পুরো অঞ্চল জুড়ে মেলা,  লোকসংস্কৃতি বিষয়ক অনুষ্ঠানমালা ইত্যাদির আয়োজন করা হয়।  সেখশুভোদয়া গ্রন্থে একটি প্রাচীন ভাদু গানের নমুনা পাওয়া যায়। ভাদু বিষয়ে উল্লেখযোগ্য দুটি গ্রন্থ হলো রামশঙ্কর চৌধুরীকৃত ভাদু ও টুসু (১৯৭৭) এবং যুধিষ্ঠির মাজীকৃত ভাদুগীতির ইতিকথা (১ম খন্ড, ১৯৮৫)।  [অঞ্জলিকা মুখোপাধ্যায়]