বৈদ্য

বৈদ্য  হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ। ‘বৈদ্য’ শব্দের অর্থ কবিরাজ বা ডাক্তার। প্রচলিত একটি মতে দেবাসুরের সমুদ্র মন্থনকালে ধন্বন্তরীর জন্ম হয় এবং বৈদ্যরা তার উত্তরপুরুষ। অন্য মতে ধন্বন্তরীর জন্ম হয় জনৈক মুনির বৈদিক মন্ত্র জপের মাধ্যমে খড়ের গাদা থেকে, তাই তিনি বৈদ্য নামে পরিচিত হন। যেহেতু তার পিতা ছিল না এবং তিনি এক পালিকা মায়ের আদর-যত্নে বড় হন, সেহেতু তাঁকে বলা হয় অম্বষ্ঠ। বৈদ্য সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একটি মতও প্রচলিত আছে যে, অম্বষ্ঠ নামে সিন্ধুনদের তীরে একটি স্থান ছিল; সেখান থেকে বৈদ্যদের একটি দল দক্ষিণ ভারতে এবং অন্য একটি দল বাংলায় আসে।

ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণের বর্ণনানুসারে ব্রাহ্মণ পিতা ও বৈশ্যমাতার সন্তানরা অম্বষ্ঠ, আর দেবচিকিৎসক অশ্বিনীকুমারের ব্রাহ্মণী স্ত্রীর সন্তানরা বৈদ্য। বৈদ্য ও অম্বষ্ঠ উভয়ই সৎশূদ্র। বৃহদ্ধর্মপুরাণে বৈদ্যবর্ণের উল্লেখ না থাকলেও অম্বষ্ঠদের উত্তম সংকর-শূদ্র উপবর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বৃত্তি চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদ চর্চা বিধায় তারা বৈদ্য নামে পরিচিত।

বৈদ্যরা নিজেদের ব্রাহ্মণ বলে দাবি করলেও শাস্ত্রীয়ভাবে তা প্রতিষ্ঠিত নয়। সেন, সেনগুপ্ত, রক্ষিত, দাশ, দাশগুপ্ত, দত্ত, সরকার, কর, রায়, মল্লিক প্রভৃতি উপাধিধারিগণ সাধারণত বৈদ্য। ব্রিটিশ শাসনামলে তারা বর্ণহিন্দু হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং শিক্ষায় বিশেষ উন্নতি লাভ করে। সে সময় তাদের শিক্ষিতের হার ব্রাহ্মণদের চেয়েও বেশি ছিল এবং তারা অত্যধিক হারে কৌলিক বৃত্তি পরিত্যার করে অন্যান্য উচ্চবৃত্তি গ্রহণ করে। বাংলাদেশে বৈদ্যদের সংখ্যা অতি অল্প।  [হীরালাল বালা]