বেলাবো উপজেলা

বেলাবো উপজেলা (নরসিংদী জেলা)  আয়তন: ১১৭.৯০ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২৪°০২´ থেকে ২৪°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°৪৬´ থেকে ৯০°৫৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে কটিয়াদি ও কুলিয়ারচর উপজেলা, দক্ষিণে রায়পুরা উপজেলা, পূর্বে কুলিয়ারচর ও ভৈরব উপজেলা এবং পশ্চিমে শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলা।

জনসংখ্যা ১৯০০৮৬; পুরুষ ৯২৮৭৬, মহিলা ৯৭২১০। মুসলিম ১৮৪৯৬৯, হিন্দু ৫০৯৪, খ্রিস্টান ১ এবং অন্যান্য ২২।

জলাশয় প্রধান নদী: পুরাতন ব্রহ্মপুত্র এবং আড়িয়াল খাঁ।

প্রশাসন মনোহরদী থেকে ৩টি এবং রায়পুরা থেকে ৪টি ইউনিয়নের সমন্বয়ে এ উপজেলা গঠিত।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব(প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
- ৫১ ১০০ ২০৮৬৯ ১৬৯২১৭ ১৬১২ ৪৮.৪ ৪৮.৫
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৯.৪১ ২০৮৬৯ ২২১৮ ৪৮.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
আমলাবো ১১ ৩৭৬৯ ১০৬৪১ ১১১৪৯ ৫৫.৭
চর উজিলাবো ৩১ ১৬৬২ ৭৫৭৪ ৭৫২২ ৫১.২
বাজনবা ১৩ ৩৩৪৫ ৮১৭৬ ৮৭৮৫ ৫৪.৫
বেলাবো ২০ ২২৩৫ ৯৭৭২ ৯৯২৭ ৪৮.৩
বিনয়বৈদ ২৫ ৪৮৫২ ১৩৬৩৯ ১৪৬৬৮ ৪৩.১
নারায়ণপুর ৫৯ ৪৭৯৯ ১৮৮৭৯ ১৯৭৬৬ ৪৬.৫
পাটুলি ৭১ ৫৪০৩ ১০৯২২ ১১৫৯১ ৫০.৬
সাল্লাবাদ ৮৩ ৩০৭০ ১৩২৭৩ ১৩৮০২ ৪৩.৯

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ হাবাশপুরে সুলতানী আমলের মসজিদ (ধ্বংসপ্রাপ্ত) ও শাহ ইরানী (রঃ) মাযার, মাহমুদাবাদের নীলকুঠির সুউচ্চ চিমনী এবং ওয়ারী ও বটেশ্বর গ্রামে প্রাগৈতিহাসিক যুগ ও মৌর্য আমলের বিপুলসংখ্যক প্রত্নসম্পদ পাওয়া গিয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ১৪ জুলাই উপজেলা সদরের নিকটবর্তী স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর প্রধান আবুল বাসারসহ ৫ জন শহীদ হন। সাল্লাবাদ ইউনিয়নের কালিয়াকান্দিতে গণহত্যা সংঘটিত হয়। পাকবাহিনী এ উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন চালায়। ১২ ডিসেম্বর এ উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়। উপজেলার সাল্লাবাদ ইউনিয়নের কালিয়াকান্দি গ্রামে ১টি গণকবর আছে, বড়িবাড়িতে ১টি স্মৃতিসৌধ ও মাটিয়ালপাড়ায় ১টি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বেলাবো উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৭।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৩০৮, মন্দির ৩, মাজার ৫। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: শাহ ইরানীর মসজিদ, বেলাবো বাজার জামে মসজিদ, বেলাবো মামুদ আলী বেপারী মসজিদ, জালালাবাদ আখড়া ও মন্দির।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৮.৫%; পুরুষ ৪৯.৫%, মহিলা ৪৭.৫%। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নারায়ণপুর রাবেয়া কলেজ (১৯৮৬), পোড়াদিয়া মুসলিম হাইস্কুল (১৯৩০), নারায়ণপুর সরাফতউল্লাহ হাইস্কুল (১৯৪১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত: মাসিক সবুজ পল্লী (১৯২৬), বেলাবো সমাচার (১৯৮৩)।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ক্লাব ৫৪, শিল্পগোষ্ঠী ১, বাউল একাডেমি ১, যাত্রাদল ২, মহিলা সংগঠন ৩, জাদুঘর ও প্রত্নসংগ্রহশালা ১, সিনেমা হল ২, খেলার মাঠ ২৬।

দর্শনীয় স্থান আমলাবো ইউনিয়নের উয়ারী-বটেশ্বর জাদুঘর ও প্রত্নসংগ্রহশালা, বেলাবো বাজার জামে মসজিদ, পাটুলী ইউনিয়নের শাহ ইরানীর মাযার।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৬২.৬৮%, অকৃষি শ্রমিক ২.৭২%, শিল্প ১.৩১%, ব্যবসা ১৫.১২%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ২.৬৫%, চাকরি ৫.৪০%, নির্মাণ ০.৯১%, ধর্মীয় সেবা ০.২৭%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ১.০২% এবং অন্যান্য ৭.৯২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৯.০৪%, ভূমিহীন ৩০.৯৬%। শহরে ৬০.১৬% এবং গ্রামে ৭০.১০% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, পাট, আদা, হলুদ, বাদাম, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি তিল, তিসি, কাউন, চীনাবাদাম, আখ, অড়হর, নীল।

প্রধান ফল-ফলাদি কাঁঠাল, পেঁপে, লটকন, পেয়ারা, ডেফল, করমচা, বাতাবি লেবু, কামরাঙ্গা।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১১০, গবাদিপশু ২৫, হাঁস-মুরগি ৬৮।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ২৪৩ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১, কাঁচারাস্তা ২৯১ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরুর গাড়ি।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ২৩, মেলা ৬। পোড়াদিয়া হাট, বেলাবো হাট, নারায়ণপুর হাট, বাজনবা হাট, পাটুলি হাট এবং শাহ ইরানীর মেলা, আমলাবো মেলা ও নারায়ণপুর মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  কাঁঠাল, পেঁপে, পেয়ারা, লটকন, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৭.৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৬.৭%, ট্যাপ ০.২% এবং অন্যান্য ৩.১%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৫৬.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩০.২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৪, ক্লিনিক ১৪, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৪।

এনজিও আশা, প্রশিকা, দেশসেবা। [মো. ইফতেখার উদ্দিন ভূঞা]

'তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বেলাবো উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।