বাকেরগঞ্জ উপজেলা

বাকেরগঞ্জ উপজেলা (বরিশাল জেলা)  আয়তন: ৪৪১.৩৬ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°২৭´ থেকে ২২°৪০´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°১২´ থেকে ৯০°৩৩´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে নলছিটি ও বরিশাল সদর উপজেলা, দক্ষিণে মির্জাগঞ্জ, দুমকি এবং বাউফল উপজেলা, পূর্বে বাউফল ও ভোলা সদর উপজেলা, পশ্চিমে নলছিটি, বেতাগী ও রাজাপুর উপজেলা।

জনসংখ্যা ৩১৩৮৪৫; পুরুষ ১৪৮৯২৫, মহিলা ১৬৪৯২০। মুসলিম ২৮২৭৩০, হিন্দু ৩০০৯৩, বৌদ্ধ ৩৬, খ্রিস্টান ৯৮৩ এবং অন্যান্য ৩।

জলাশয় প্রধান নদী: তেঁতুলিয়া, বরিশাল, খাইরাবাদ, পান্ডো, চর আমাদ্দি, বিশখালী, রাঙ্গামাটিয়া, করখানা।

প্রশাসন বাকেরগঞ্জ থানা গঠিত হয় ১৮৭৪ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

উপজেলা
পৌরসভা ইউনিয়ন মৌজা গ্রাম জনসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
শহর গ্রাম শহর গ্রাম
১৪ ১৪৯ ১৭২ ১৯৪৯২ ২৯৪৩৫৩ ৭৬৩ ৬৬.৬ (২০০১) ৬২.৫
পৌরসভা
আয়তন (বর্গ কিমি) ওয়ার্ড মহল্লা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৬.২২ (২০০১) ১৭ ১৫৪১৮ ২৪৪০ (২০০১) ৭৬.৭
উপজেলা শহর
আয়তন (বর্গ কিমি) মৌজা লোকসংখ্যা ঘনত্ব (প্রতি বর্গ কিমি) শিক্ষার হার (%)
৭.৭৯ (২০০১) ৪০৭৪ ৫৮৭ (২০০১) ৭০.৪
ইউনিয়ন
ইউনিয়নের নাম ও জিও কোড আয়তন (একর) লোকসংখ্যা শিক্ষার হার (%)
পুরুষ মহিলা
কলসকাঠি ৬৭ ৬০৪৭ ১২০১১ ১২২১২ ৫৮.৯
কাবাই ৬১ ৭৩৩৮ ৯৯৪৩ ১১২৫৪ ৬৩.৯
গারুরিয়া ৫৪ ৮১২৬ ১১৫৯৪ ১৩৩৩৬ ৬১.৩
চরাদি ১৩ ৬৯৫৯ ৯০৭১ ১০১৬২ ৫৯.৫
চর আমাদ্দি ২০ ৬০০১ ৮৫৬৮ ৯৫৫৪ ৬৯.০
দরিয়াল ২৭ ৮৮৮২ ১২৮৩০ ১৩৭৯৮ ৬১.২
দুধাল ৩৩ ৭৪৯৫ ১০০৫৯ ১১৮৫০ ৬২.০
দুর্গাপাশা ৪০ ৫৮১৪ ৬৪২৭ ৬৯১১ ৫২.৪
নলুয়া ৭৪ ৩৮০৬ ৪২৪৮ ৫০২২ ৫৬.৫
নিয়ামতি ৮১ ৭৩৬৮ ১১২১৮ ১২৮৫৫ ৬৬.১
পাদ্রি শিবপুর ৮৮ ৭৫৩৭ ১১৭৮৭ ১৩৪৭১ ৬৫.৭
ফরিদপুর ৪৭ ৫৭১৩ ৮৮৯৩ ৯৭৫৬ ৫৯.৮
রঙ্গশ্রী ৯৪ ১০৩৭৯ ১৫৭৪০ ১৭১১৪ ৬৬.৭
ভরপাশা ১২ ৬২০৭ ৮৮৯২ ৯৮৫১ ৬৩.৮

সূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মেহেন্দিগঞ্জ জামে মসজিদ (মুগল আমলে নির্মিত), জগদ্বাত্রী পূজা মন্দির (দশম শতাব্দী), গান্ধী আশ্রম, রাম কৃষ্ণ আশ্রম।

মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের সময় এ উপজেলার কলসকাঠি বাজারে পাকবাহিনী ১৮১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। এছাড়াও এ এলাকায় ব্যাপক লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা সংঘটিত হয়। ২৯ এপ্রিল উপজেলার বাড়ৈ নগরে পাকবাহিনী অতর্কিত হামলা চালালে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরোধ করে। এছাড়া শ্যামপুর ও বাকেরগঞ্জ থানাসহ কয়েকটি স্থানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি যুদ্ধ হয়। উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে ১টি ভাস্কর্য স্থাপিত হয়েছে।

বিস্তারিত দেখুন বাকেরগঞ্জ উপজেলা, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জ্ঞানকোষ, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকা ২০২০, খণ্ড ৫।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৮৬৯, মন্দির ১২১, গির্জা ১, মাযার ২। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: বাকেরগঞ্জ বন্দর জামে মসজিদ, শিয়ালঘুনির মসজিদ, মেহেন্দীগঞ্জ জামে মসজিদ, নসরত গাজীর মসজিদ, নিয়ামতি বিবি চিনির মসজিদ, গোবিন্দপুর হরিরাম সংকীর্তন মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও পাদ্রী শিবপুরের খ্রিস্টানদের গির্জা, বার আউলিয়ার মাযার, বার আউলিয়ার দরগা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৬৩.৩%; পুরুষ ৬৪.৩%, মহিলা ৬২.৪%। কলেজ ৭, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৬, প্রাথমিক বিদ্যালয় ২৩৪, মাদ্রাসা ৭২। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বাদলপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ (১৯২৪), বাকেরগঞ্জ জেএসইউ হাইস্কুল (১৯০৯), চর আমাদ্দি ডব্লিউকে মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৪), কামারখালী কেএসইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৬), ডিজিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয় (১৯২৭), কাকধরা এ.কে.এম ইনস্টিটিউশন (১৯২৩), দুধাল ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা (১৯২১)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী সপ্তাকাশ, দর্পণ।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৭,  ক্লাব ৬০, মহিলা সংগঠন ৫, নাট্যদল ৪, সিনেমা হল ৩, খেলার মাঠ ৩২।

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৪২%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৭৬%, শিল্প ১.০৪%, ব্যবসা ১৭.৬৫%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ১.৬৭%, চাকরি ১৫.২৪%, নির্মাণ ২.২৭%, ধর্মীয় সেবা ০.২৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ২.৬৫% এবং অন্যান্য ১১.৪৮%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৬৯.৬৩%, ভূমিহীন ৩০.৩৭%। শহরে ৫৭.৮% এবং গ্রামে ৭০.২৯% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, গম, পাট, সরিষা, আলু, পান।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি ডাল, কাউন, তিসি, অড়হর।

প্রধান ফল-ফলাদি আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, সুপারি, পেঁপে, নারিকেল।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ৪৮৭, হাঁস-মুরগি ২০, গবাদিপশু ২০, হ্যাচারি ৩।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৯২ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ১৭০ কিমি, কাঁচারাস্তা ২২৫০ কিমি; নদীপথ ১২০ কিমি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি।

শিল্প ও কলকারখানা ফ্লাওয়ার মিল ১, স’মিল ৫০, রাইসমিল ৭৫, আইস ফ্যাক্টরি ২, ওয়েল্ডিং কারখানা ১২, ইটভাটা ২৮।

কুটিরশিল্প লৌহশিল্প ৭২, তাঁতশিল্প ১৫, মৃৎশিল্প ৯৭, বাঁশের কাজ ১৭৬।

হাটবাজার ও মেলা কলসকাঠি হাট, বোয়ালিয়া হাট, কালীগঞ্জ হাট, কামারখালি হাট, নিয়ামতি হাট ও চামটা হাট এবং রথের মেলা, রামকৃষ্ণ মিশনের মেলা ও প্রাদ্রী শিবপুরের মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য   পান, কলা, সুপারি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৫.৪% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯৭.৬%, ট্যাপ ০.১% এবং অন্যান্য ২.৩%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৭৭.৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ২০.৬% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১.৮% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র হাসপাতাল ১, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ৭, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৭।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯০৬ সালে পামড়ি পোকার আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষ।

এনজিও কেয়ার, ব্র্যাক, কারিতাস, আশা,  প্রশিকা।  [মো. মিজানুর রহমান]

তথ্যসূত্র আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১ ও ২০১১, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো; বাকেরগঞ্জ উপজেলা সাংস্কৃতিক সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০০৭।