বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড

বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড সনাতন পদ্ধতিতে সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনাকারী একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গীয় সংস্কৃত পরিষদ (Bengal Sanskrit Association) নামে কলকাতায় এটি প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর মাধ্যমেই সংস্কৃত ও পালিতে আদ্য, মধ্য ও উপাধি পরীক্ষা প্রচলিত হতো। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাগের সময় উক্ত পরিষদ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়: বঙ্গীয় সংস্কৃত শিক্ষা পরিষদ (পশ্চিমবঙ্গ), আসাম সংস্কৃত সভা (আসাম) এবং ইস্ট পাকিস্তান সংস্কৃত সভা। তখন থেকে এ অঞ্চলের সংস্কৃত ও পালি টোলের সকল পরীক্ষা ইস্ট পাকিস্তান সংস্কৃত সভার অধীনে অনুষ্ঠিত হতো। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে এ বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হলেও মূলত এটি ছিল তখন পরীক্ষা পরিচালনার মতো একটি এডভাইজরি বোর্ড। ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে এর নামকরণ করা হয় ‘পাকিস্তান সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’, যা বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরে ‘বাংলাদেশ সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড’ নাম ধারণ করে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এ বোর্ডের অবস্থান ঢাকার কমলাপুর ধর্মরাজিক বৌদ্ধ বিহারে। বোর্ড পরিচালনার জন্য ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদাধিকার বলে এর সভাপতি। বোর্ডের প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই বিশিষ্ট সমাজহিতৈষী ও শিক্ষাব্রতিগণ অবৈতনিকভাবে এর সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। প্রথম সচিব ছিলেন অভয়াচরণ চক্রবর্তী, পরে যথাক্রমে গোবিন্দচন্দ্র দেব, বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো এবং বর্তমানে আছেন শুদ্ধানন্দ মহাথেরো। বোর্ডটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ধারাতেই পরিচালিত হয়। বোর্ডের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের স্পেশাল এডুকেশন সেকশন থেকে বার্ষিক লক্ষাধিক টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়। বোর্ডের অধীনস্থ প্রতিটি কলেজ ও টোলের শিক্ষকসংখ্যা যথাক্রমে তিনজন ও দুজন। তাদের মাসিক বেতন যথাক্রমে ১১৫ ও ১০০ টাকা। এর ওপর ৩০ ভাগ মহার্ঘ্য ভাতা এবং সামান্য পরিমাণে গ্রান্ট-ইন-এইড দেওয়া হয়।

এ বোর্ডের অধীনে সংস্কৃতে পুরাণ, কাব্য, স্মৃতি, জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ এবং পালিতে সূত্র, বিনয়, অভিধম্ম ইত্যাদি বিষয়ে আদ্য, মধ্য ও উপাধি পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। আদ্য, মধ্য ও উপাধি তিনটি কোর্সই এক বছর মেয়াদি। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের সনদপত্রও প্রদান করা হয়। আদ্য ও মধ্য উভয় পরীক্ষায় দুটি পত্রে ২০০ নম্বর এবং উপাধি পরীক্ষায় ৪টি পত্রে ৪০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। বোর্ডের সব পরীক্ষাই তত্ত্বীয়, ব্যবহারিক পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই।  [সুকোমল বড়ুয়া]