বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)  বাংলাদেশের সড়ক পরিবহণ সেক্টরের সার্বিক তত্ত্বাবধায়ন, ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণের সরকারি সংস্থা। মহাসড়ক, সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা-ঘাটের সংখ্যা বৃদ্ধি ও এগুলির দ্রুত উন্নয়ন, সম্প্রসারণ এবং এগুলিতে চলমান মোটরযানের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৮৭ সালে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) গঠন করা হয়। বিআরটিএ আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯০ সালে এর কার্যক্রম শুরু করে। এর মূল লক্ষ্য হচ্ছে: সারাদেশে নিরাপদ, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক, অর্থ ও সময় সাশ্রয়ী, আরামদায়ক, পরিবেশ বান্ধব, টেকসই ও আইটি বেইজড তথা ডিজিটাল সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা; প্রয়োজনীয় সকল সেবা আইটি-এর মাধ্যমে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং এর এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম অটোমেশিনের আওতায় নিয়ে আসা। ইতিমধ্যে এ সংস্থাটি অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর সড়ক পরিবহণ সেক্টরে শৃঙ্খলা ও গতি আনয়নে অনেকটা সক্ষম হয়েছে। কেননা ১৯৮৯ সালে মোটরযান ও কর ফিস খাতে রাজস্ব আয় ছিল ৩০ কোটি টাকা। অথচ ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে মোটরযান ও কর ফিস খাতে ৫৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। বিগত ৬ বছরে মোটরযান কর ও ফিস নন-ট্যাক্স রেভিনিউ খাতে বিআরটিএ কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ও আদায়ের তুলনামূলক বিবরণী নিম্নের সারণিতে দেখানো হলো:

অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা(কোটি টাকায়) আদায়(কোটি টাকায়) আদায়ের শতকরা হার(%)
২০০৩-০৪ ২৪০.০০ ২৪৫.০০ ১০২.০৮
২০০৪-০৫ ২৬১.০০ ২৫১.০০ ৯৬.১৭
২০০৫-০৬ ৩২৬.০০ ৩৩৫.০০ ১০২.৭৬
২০০৬-০৭ ২৩৮২.০০ ৪০১.০০ ১০৫.০০
২০০৭-০৮ ৪৪১.০০ ৪৯০.০০ ১১১.১১
২০০৮-০৯ ৫৫০.০০ ৬৪৭.০০ ১১৭.৬৪
২০০৯-১০ ৬৬০.০০ ৩৮৪.৫০ (জুলাই-ফেব্রুয়ারি)

বিআরটিএর সদরদপ্তর বর্তমানে পুরাতন বিমান বন্দর সড়ক, এলেনবাড়ী, তেজগাঁও, ঢাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের ৬টি বিভাগীয় শহরে এর ৬টি বিভাগীয় অফিস এবং সাবেক বৃহত্তর জেলা শহরসহ অন্যান্য জেলায় ৩১টি রিজিওনাল (সার্কেল) অফিসের কার্যক্রম চালু রয়েছে। একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ২৯১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে এ সংস্থাটির কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

এ প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হচ্ছে (ক) সড়ক পরিবহণ সংক্রান্ত যাবতীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন এবং উহার বাস্তবায়ন করা এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা; (খ) মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন ও মালিকানা বদলি; (গ) মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন; (ঘ) মোটরযানের ফিটনেস সনদ ইস্যু ও নবায়ন; (ঙ) পরিবহণ যানের রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন; (চ) সড়ক নিরাপত্তা ও এনফোর্সমেন্ট নিশ্চিত করা; (ছ) ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুল রেজিস্ট্রেশন ও তদারকি করা; (জ) সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান ও তথ্য সংরক্ষণ করা এবং (ঝ) মোটরযান কর ও ফিস আদায় সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পন্ন এবং অন্যান্য কার্যাদি।

বিআরটিএ কর্তৃক ২০০৯ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রেকৃত মোটরযানের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ ৫০ হাজার। এ ছাড়া বিআরটিএ হতে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে।

সড়ক নিরাপত্তা জোরদার ও পরিবহণ সেক্টরের সমস্যা নিরসনকল্পে বিআরটিএ নিম্নরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:

জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল পুনর্গঠন ও সক্রিয় করা এবং প্রতিটি জেলা ও উপজেলার সড়ক নিরাপত্তা কমিটি গঠন;

National Road Safety Action Plan 2004-2010 প্রণয়ন এবং ২৪টি Lead Agency ‰ Action Plan বাস্তবায়ন;

ঢাকা শহর থেকে পর্যায়ক্রমে পুরানো ও ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন তুলে দেবার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে রাজধানী থেকে ২০ বছরের অধিক পুরাতন বাস ও ২৫ বছরের অধিক পুরাতন ট্রাক চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে;

মোটরযানের উপযুক্ততা নির্ণয়ের জন্য Computerzed Vehicle Inspection Center সচল এবং এর অপারেশন ও মেরামত বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ঢাকা শহরের বিভিন্ন মোটরযান মেরামত ওয়ার্কশপের মাধ্যমে মোটরযানের উপযুক্ততা নির্ণয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট বিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে;

ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পুরানো ও ত্রুটিপূর্ণ মোটরযান এবং অদক্ষ লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর ক্ষমতাবলে বিআরটিএ-এর ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরী এলাকায় প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। বিআরটিএ-এর ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগরী এলাকায় প্রতিদিন (ছুটির দিন ব্যতীত) মোটরযান অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ ও ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে বিআরটিএ-এর ২টি মোবাইল কোর্ট বিগত ০৩/০৮/২০০৯ থেকে ১৮/০৪/২০১০ পর্যন্ত সর্বমোট ৩২২৩টি মামলা, ৬০,৪১,২৩০ টাকা জরিমানা, ২ জন আসামিকে কারাদন্ড এবং ১৫৭টি যানবাহন ডাম্পিং স্টেশনে প্রেরণ করেছে;

বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের মোটরযান রেজিস্ট্রেশন পরিসংখ্যান নিম্নের সারণিতে দেখানো হলো:

মোটরযানের ধরন ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২০০৪ ২০০৫ ২০০৬ ২০০৭ ২০০৮ ২০০৯ সর্বমোট
মোটর কার ১১৬১৯৬ ৫৪১০ ৬৪৩১ ৮৪৪৭ ১১৯৪১ ১৬৯২৭ ২১৪৬১ ১৮৬৮১৩
জিপ/স্টেশনওয়াগন/মাইক্রোবাস ৪৯৩৬৪ ২৫১৪ ৩৯৬৩ ৫৫৪০ ৫৬৫০ ৬৫৩৭ ৯০২৭ ৮২৫৯৫
ট্যাক্সি ১০৯৩২ ৫৪০ ৫১৫ ২৭৫ ১৫ ১২ ১২২৯৮
বাস ৩০৬১৭ ৮৫৭ ৭৮৩ ১০২০ ১৩৬৮ ১৩৪২ ১১৮৪ ৩৭১৭১
মিনিবাস ৩৩৩৬৪ ৬২২ ৩৬১ ২৪১ ৩৮২ ৩০৭ ৩২০ ৩৫৫৯৭
ট্রাক ৫১৩৭৫ ২৫৮৩ ২৭৯১ ৩০৬৫ ২৫২১ ২৬০৯ ৬৫৬১ ৭১৫০৫
অটোরিক্সা/অটোটেম্পু ৯৮৪৭৯ ৮৯৭৪ ৪৮৭৭ ৬৮৯৮ ১০৫৩০ ১৯০৭১ ১৪৯০২ ১৬৩৭৬১
মোটর সাইকেল ৩২১৩৪৭ ২৪৯৪১ ৪৩২২৬ ৫১১০৬ ৮৫১৩১ ৯৩৫৪১ ৪৫১৪২ ৭০৪৪৩৪
অন্যান্য ২৫৭২৬ ২৭৬১ ২৯৩১ ৩৭১৩ ৩৭৩৪ ৪০৭৬ ৬৬৩৪ ৪৯৫৭৫
মোট ৭৩৭৪০০ ৪৯২০২ ৬৫৮৭৮ ৮০৩০৫ ১২১২৭২ ১৪৪৪১৯ ১৪৫২৪৩ ১৩৪৩৭১৯

গাড়ি চালকদের ট্রাফিক আইন ও বিধি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া এবং সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিআরটিএ ব্যাপক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। বিগত ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে দেশব্যাপী বিআরটিএর ২৯টি সার্কেল অফিসে ড্রাইভারদের জন্য মোট ৩৪টি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সম্পন্ন এবং বিভাগীয়/জেলা পর্যায়ে ২০টি সেমিনার/কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে মোট ৩০৭০ জন পেশাজীবী গাড়ি চালককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং ২১টি সেমিনার/ওয়ার্কশপে ৪২৬১ জন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেছেন। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৬,০০০ পেশাজীবী গাড়িচালককে প্রশিক্ষণ প্রদান করাসহ ৩৩টি সেমিনার/কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে;

পেশাদার ও অপেশাদার উভয় ধরনের মোটরযান চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স হাইসিকিউরিটি প্লাস্টিক কার্ডে রূপান্তর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে;

বিআরটিএর বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম যেমন মোটরযান রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস ইস্যু ও নবায়ন, রুট পারমিট ইস্যু ও নবায়ন, মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম এর ডাটাবেজ তৈরির লক্ষ্যে BRTA-IS কাস্টমাইজড সফটওয়ার চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া বিআরটিএ-এর ওয়েব সাইটে (www.brta.gov.bd) BRTA Index Page, Frequently Ask Question (FAQ) অর্থাৎ সাধারণ জ্ঞাতব্য বিষয়াবলী, Organogram, Vehicle Search, Vehicle Search help আইটেমগুলি সংযুক্ত আছে। বিআরটিএর ওয়েব সাইট থেকে মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং বিভিন্ন আবেদন পত্রের ফরম ও ফ্রি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলী পাওয়া যাচ্ছে;

বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় Clean Air and Sustainable Environment (CASE) প্রকল্পের অধীনে ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন বোর্ড (DTCB)-এর মাধ্যমে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর পরিবর্তে নতুন ও যুগোপযোগী মোটরযান ও ট্রাফিক আইন, বিধিমালা প্রবিধানমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

এ ছাড়াও পরিবেশ দূষণরোধ ও যানজট হ্রাসকল্পে বিআরটিএ নিম্নরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে:

ঢাকা শহর থেকে ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে প্রায় ৩৫,০০০ টু-স্ট্রোক ইঞ্জিনচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তার বদলে দ্বিতল বাস এবং সিএনজি চালিত ফোর-স্ট্রোক অটোরিকশা চলাচল উৎসাহিত করা হয়েছে;

সিএনজি চালিত মোটরযান ব্যবহারে উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা শহরে সিএনজি চালিত বাস চলাচলের রুট পারমিট প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদান করা হচ্ছে। আরামদায়ক ও স্বচ্ছন্দ ভ্রমণের সুযোগ এবং ট্রাফিক জ্যাম কমানোর লক্ষ্যে ঢাকা শহরে ১৫ বছরের অধিক পুরাতন ডিজেলচালিত মিনিবাস, ২০ বছরের অধিক পুরাতন সিএনজি চালিত মিনিবাস, ৯ বছরের অধিক পুরাতন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা এবং ১০ বছরের অধিক পুরাতন ট্যাক্সি-ক্যাব এর রুট পারমিট নবায়ন বন্ধ রয়েছে।  [মো লোকমান হোসাইন মোল্লা]