বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট (পিআইবি)  সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ ও পেশাগত মানোন্নয়নের লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৬ সালের ১৮ আগস্ট এক গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে সাংবাদিকদের জন্য একটি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অবশেষে ১৯৭৬ সালে পিআইবি আত্মপ্রকাশ করে।

পিআইবি পরিচালনার জন্য সরকার কর্তৃক মনোনীত একজন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। মহাপরিচালক এই বোর্ডের সদস্য সচিব এবং তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান। পিআইবি পরিচালনা বোর্ড বিভিন্ন সাব-কমিটির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাংবাদিকদের জন্য পিআইবি বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ছাড়াও গণমাধ্যমের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ইস্যু নিয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে। পিআইবি ফিচার রচনা, বিতরণ এবং গণমাধ্যম সম্পর্কিত প্রকাশনা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। পিআইবি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে।

সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্স, কর্মশালা, সংলাপ, সেমিনার প্রভৃতি আয়োজন পিআইবি’র অন্যতম কাজ। ১৯৭৬ সাল থেকে ২০০৯-এর জুন পর্যন্ত পিআইবি ৭২১টি বিভিন্ন ধরনের কোর্স, কর্মশালা, সংলাপ ও সেমিনার আয়োজন করেছে যার মধ্যে ২৫৭টি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মোট ১৮,৩৫৭ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী অংশগ্রহণ করেছেন যার মধ্যে নারী সংখ্যা ২,৩৫৬।

পিআইবি নিয়মিত বুনিয়াদি ও সম্পাদনা বিষয়ক প্রশিক্ষণ কোর্সের পাশাপাশি শিশু ও মহিলা, নারীপুরুষ সম্পর্ক ও অধিকার, প্রজনন স্বাস্থ্য, এইডস, পরিবেশ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, মানবাধিকার, জনসংখ্যা, যোগাযোগ, জনসংযোগ ও তথ্য, নারী সাংবাদিকতা, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস রিপোর্টিং, জ্বালানি বিষয়ক রিপোর্টিং, অর্থনৈতিক রিপোর্টিং, স্পোর্টস রিপোর্টিং, সংস্কৃতি বিষয়ক রিপোর্টিং, অপরাধ বিষয়ক রিপোর্টিং, উন্নয়ন ও অ্যাডভোকেসি রিপোর্টিং, অনুসন্ধানমূলক রিপোর্টিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও অনলাইন রিপোর্টিং প্রভৃতি বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্স ও কর্মশালা পরিচালনা করে থাকে। পিআইবি ফটোসাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র ব্যবস্থাপনার উপরও বিশেষ প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে থাকে।

কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়ন (সিপিইউ), কমনওয়েলথ সাংবাদিক সমিতি (CJA), টমসন ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর জার্নালিজম (IIJ), কাউন্সিল অব এশিয়া প্যাসিফিক প্রেস ইনস্টিটিউট (CAPPI), এশিয়ান মিডিয়া ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন সেন্টার (AMIC), প্রেস ফাউন্ডেশন অব এশিয়া (PFA) প্রভৃতি আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক এবং অন্যান্য গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পিআইবি আন্তঃসহযোগিতা প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে।

সাংবাদিকতায় দীর্ঘমেয়াদি একাডেমিক/প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে পিআইবি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি নিয়ে ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষে (১০ মাস মেয়াদি) সাংবাদিকতায় ডিপ্লোমা কোর্স চালু করে। ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে এ কোর্সের আটটি ব্যাচের অধীনে ৪০০ জন শিক্ষার্থী সাংবাদিকতার ওপর ডিপ্লোমা ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগ গণমাধ্যম ও গণযোগাযোগ এবং সমাজের ওপর এর প্রভাব ও কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। সংবাদপত্রে সমসায়িক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও বর্তমান সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী ইস্যু নিয়ে প্রকাশিত খবর, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, কলাম, নিবন্ধ ও বিজ্ঞাপন বিশ্লেষণ করা গবেষণা বিভাগের অন্যতম কাজ। পিআইবি’র গবেষণা ও তথ্য সংরক্ষণ বিভাগ এ পর্যন্ত ৭৫টি গবেষণা কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। ২০১১ সাল পর্যন্ত এই বিভাগে ২৬৫টি বিষয়ভিত্তিক নিউজ ক্লিপিং ও ফাইল সংরক্ষিত হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী, গবেষক, লেখক, শিক্ষক-ছাত্র, কলামিষ্ট ও নিবন্ধ লেখকগণ এই নিউজ ক্লিপিং ও ফাইল ব্যবহার করে থাকেন। গবেষণা বিভাগ প্রতিদিনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত ঘটনাপঞ্জি সংরক্ষণ করে।

পিআইবিতে একটি আধুনিক গ্রন্থাগার, সাইবার কর্নার ও নিউজ পেপার আর্কাইভস রযেছে। বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের গ্রন্থাগার সংবাদপত্র, গণমাধ্যম বিষয়ক গ্রন্থ ও অন্যান্য প্রকাশনা সমৃদ্ধ একটি বিশেষ গ্রন্থাগার। সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টদের চাহিদা পূরণে এবং তাদের অধ্যয়ন ও মননশীলতাকে বাস্তবমুখী করার লক্ষ্যে পিআইবি’র প্রতিষ্ঠা থেকেই এই গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়। দেশে বিদ্যমান গণমাধ্যমসমূহের চাহিদা পূরণে আধুনিক গ্রন্থাগার হিসেবে পিআইবি গ্রন্থাগারের উদ্দেশ্য, কর্ম, সংগ্রহ ও সেবার পরিধি যথেষ্ট বিস্তার লাভ করেছে।

কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রন্থাগারের বই ও পত্রপত্রিকার বিবলিওগ্রাফিক ডাটাবেইজ সংরক্ষণ করা হয়। পিআইবি গ্রন্থাগারটি ‘সাইবার কর্নারের’ মাধ্যমে পাঠকদের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকে। গ্রন্থাগারটি গণযোগাযোগ, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ৯৩১টি বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে গ্রন্থাগারে মোট ১১,০০০ বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া ইনস্টিটিউটের নিউজপেপার আর্কাইভসে দেশি-বিদেশি ২৭টি দৈনিক ও ২২টি ম্যাগাজিন রয়েছে।

পিআইবি’র প্রকাশনা ও ফিচার বিভাগ নিয়মিত একটি গণমাধ্যম সাময়িকী ‘নিরীক্ষা’ প্রকাশ করে থাকে। প্রকাশনা ও ফিচার বিভাগ ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত একাধিক সংস্করণসহ বাংলা ও ইংরেজিতে মোট ৬১টি বই ও ম্যানুয়াল প্রকাশ করেছে। শিশু ও মহিলা বিষয়ক ফিচার লেখাকে উৎসাহিত করার জন্য পিআইবিতে ‘পিআইবি- ইউনিসেফ’ ফিচার পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। ‘পিআইবি-ইউনিসেফ’ ফিচার সার্ভিস ছাড়াও পিআইবি’র নিজস্ব ফিচার সার্ভিস রয়েছে।

১৯৯৯ সাল থেকে পিআইবি মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান করে আসছে। এ ছাড়া পিআইবি সাংবাদিকদের সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সাল থেকে ‘পিআইবি-সোহেল সামাদ স্মৃতি ট্রাস্ট’ ফান্ডের আওতায় প্রতিবছর একজন কৃতী সাংবাদিককে পুরস্কার প্রদান করে আসছে।  [শেখ আব্দুস সালাম]